আর রহমান আয়াত ৩০
فَبِاَيِّ اٰلَاۤءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ ( الرحمن: ٣٠ )
Fabi ayyi aalaaa'i Rabbikumaa tukazzibaan. (ar-Raḥmān ৫৫:৩০)
English Sahih:
So which of the favors of your Lord would you deny? (Ar-Rahman [55] : 30)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
অতএব (হে জ্বিন ও মানুষ!) তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নি‘মাতকে অস্বীকার করবে? (আর রহমান [৫৫] : ৩০)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে? [১]
[১] আর অতি মহান এই সত্তার প্রতিমুহূর্তে বান্দাদের যাবতীয় কার্যকলাপের ব্যবস্থাপনা করতে থাকা তাঁর একটি বড় অনুগ্রহ।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
কাজেই তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন্ অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে?
3 Tafsir Bayaan Foundation
সুতরাং তোমাদের রবের কোন্ নিআমতকে তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
4 Muhiuddin Khan
অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?
5 Zohurul Hoque
সুতরাং তোমাদের প্রভুর কোন্ অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে?
6 Mufti Taqi Usmani
সুতরাং তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নি‘আমতকে অস্বীকার করবে?
7 Mujibur Rahman
সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?
8 Tafsir Fathul Mazid
২৬-৩০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
পৃথিবীর বুকে যা কিছু আছে সব ধ্বংস হয়ে যাবে, অনুরূপ আকাশে যারা আছে তারাও ধ্বংস হবে কেবলমাত্র চেহারাবিশিষ্ট সত্ত্বা আল্লাহ তা‘আলা আর তিনি যাকে ইচ্ছা করবেন তিনি বাকী থাকবেন।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন :
(كُلُّ شَيْءٍ هَالِكٌ إِلَّا وَجْهَه۫)
“আল্লাহর চেহরা (সত্তা) ব্যতীত সমস্ত কিছুই ধ্বংসশীল।” (সূরা আল ক্বাসাস ২৮ : ৮৮)
وجه অর্থ চেহারা যা আমাদের সকলের কাছে সুপরিচিত, কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার চেহারা কেমন তা আমরা জানিনা যেমন অন্যান্য সকল সিফাতের ধরণ আমাদের কাছে অজ্ঞাত। কিন্তু আমরা ঈমান আনব যে, আল্লাহ তা‘আলার চেহারা রয়েছে যেমন বর্ণনা তিনি তাঁর কিতাবে এবং নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর হাদীসে দিয়েছেন।
حِجَابُهُ النُّورُ لَوْ كَشَفَهُ لَأَحْرَقَ سُبُحَاتُ وَجْهِهِ مَا انْتَهَي إِلَيْهِ بَصَرُهُ مِنْ خَلْقِهِ
আল্লাহ তা‘আলার হিজাব হল নূর, তা উন্মোচন করলে তাঁর দৃষ্টি যত দূর যাবে ততদূর পুড়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম হা. ১৭৯) সুতরাং এ চেহারা বিশাল চেহারা যা কোন সৃষ্টিজীবের সাথে তুলনা হতে পারে না। তাই আমরা বিশ্বাস করব আল্লাহ তা‘আলার প্রকৃত চেহারা রয়েছে যেমন তাঁর সত্তার জন্য উপযোগী। আমরা এটা সত্তা বা অন্য কিছু বলে ব্যাখ্যা করব না।
(يَسْأَلُه۫ مَنْ فِي السَّمٰوٰتِ)
‘আকাশসমূহ ও পৃথিবীতে যা আছে সবাই তাঁর নিকট প্রার্থনা করে’ অর্থাৎ সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী এবং তাঁর দয়ার ভিখারী।
(كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِيْ شَأْنٍ) ‘তিনি প্রতিদিন (সর্র্বদা) মহান কার্যে রত’ প্রতিদিন বলতে সবসময়। شان (শান) অর্থ পূর্ণ বিষয়। অর্থাৎ সব সময় তিনি কোন না কোন কাজে রত থাকেন।
কাউকে রোগী বানাচ্ছেন, কাউকে রোগ থেকে মুক্ত করছেন, কাউকে ধনী করছেন, আবার দরিদ্র করেন, কাউকে রাজা বানান, কাউকে মর্যাদা দেন আবার কাউকে অমর্যাদায় নিপতিত করেন। তিনি সর্বদাই কর্মরত।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(هُوَ اَلْحَيُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَأْخُذُه۫ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌ)
“যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। তন্দ্রা এবং নিদ্রা কিছুই তাঁকে স্পর্শ করে না।’ (সূরা বাকারাহ ২ : ২৫৫)
আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِيْ شَأْنٍ)
এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : ঐ শান হলো এই যে, তিনি গুনাহ মাফ করেন, দুঃখ-কষ্ট দূর করেন, কোন সম্প্রদায়ের উত্থান দেন এবং কোন সম্প্রদায়ের পতন ঘটান। (ইবনু মাযাহ হা. ২০২, হাসান)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. পৃথিবীর সব কিছু ধ্বংসশীল।
২. আল্লাহ তা‘আলার চেহারা রয়েছে তার প্রমাণ পেলাম।
৩. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত সবাই তার মুখাপেক্ষী।
9 Fozlur Rahman
অতএব, তোমরা তোমাদের প্রভুর কোন্ নেয়ামতটি অস্বীকার করবে?
10 Mokhtasar Bangla
৩০. তবে হে জিন ও মানব জাতি! তোমরা নিজেদের রবের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত পর্যাপ্ত নিআমতের কোন্ কোন্ নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?!
11 Tafsir Ibn Kathir
২৬-৩০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, যমীনের সমস্ত মাখলূকই ধ্বংসশীল। এমন একদিন আসবে যে, এই ভূ-পৃষ্ঠে কিছুই থাকবে না। প্রত্যেক সৃষ্টজীবের মৃত্যু হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে সমস্ত আকাশবাসীও মরণের স্বাদ গ্রহণ করবে, তবে আল্লাহ যাকে চাইবেন সেটা অন্য কথা। শুধু আল্লাহর সত্তা বাকী থাকবে। তিনি সর্বদা আছেন এবং সর্বদা থাকবেন। তিনি মৃত্যু ও ধ্বংস হতে পবিত্র। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, প্রথমে তো আল্লাহ তা'আলা জগত সৃষ্টির বর্ণনা দিলেন, অতঃপর সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা বর্ণনা করলেন।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে বর্ণিত দুআগুলোর মধ্যে একটি দু'আ নিম্নরূপও রয়েছেঃ
يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ يَا بَدِيْعُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ لَا اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ بِرَحْمَتِكَ نَسْتَغِيثُ اَصْلِحْ لَنَا شَاْنَنَا كُلَّهٗ وَلَا تَكِلْنَا اِلٰى اَنْفُسِنَا طَرْفَةَ عَيْنٍ وَلَا اَحَدٍ مِنْ خَلْقِكَ
অর্থাৎ “হে চিরঞ্জীব, হে স্বাধিষ্ট-বিশ্ববিধাতা! হে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা! হে মহিমময় ও মহানুভব! আপনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, আমরা আপনার করুণার মাধ্যমেই ফরিয়াদ করছি। আমাদের সমস্ত কাজ আপনি ঠিক করে দিন! চোখের পলক বরাবর সময়ও আমাদেরকে আমাদের নিজেদের কাছে সমর্পণ করবেন না এবং আপনার সৃষ্টির কারো কাছেও নয়।”
হযরত শা’বী (রঃ) বলেনঃ “যখন তুমি كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ পাঠ করবে তখন সাথে সাথে وَيَبْقٰى وَجْهُ رَبِّكَ ذُوالْجَلَالِ وَالْاِكْرَام এটাও পড়ে নিয়ো।” এ আয়াতটি আল্লাহ তাআলার নিম্নের উক্তির মতইঃ
كُلُّ شَىْءٍ هَالِكٌ اِلَّا وَجْهَهٗ
অর্থাৎ “তাঁর (আল্লাহর) চেহারা বা সত্তা ব্যতীত সবকিছুই ধ্বংসশীল।” (২৮:৮৮)।
এরপর আল্লাহু তা'আলা স্বীয় সত্তার প্রশংসায় বলেনঃ “তিনি মহিমময় ও মহানুভব।' অর্থাৎ তিনি সম্মান ও মর্যাদা লাভের যোগ্য। তিনি এই অধিকার রাখেন যে, তাঁর উচ্চপদ সুলভ মাহাত্ম্যকে স্বীকার করে নেয়া হবে, তার আনুগত্য মেনে নেয়া হবে এবং তার ফরমানের বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না। অন্য জায়গায় রয়েছেঃ
وَ اصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدٰوةِ وَ الْعَشِیِّ یُرِیْدُوْنَ وَجْهَهٗ
অর্থাৎ “যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে ডেকে থাকে এবং তাঁরই সন্তুষ্টি চায় তাদের সাথে তুমি নিজের নফসকে আটক রেখো৷” (১৮:২৮) আর যেমন তিনি দান-খয়রাতকারীদের সম্পর্কে খবর দিতে গিয়ে তাদের উক্তি উদ্ধৃত করেনঃ
اِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللّٰهِ
অর্থাৎ “শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদেরকে আহার্য দান করে থাকি।” (৭৬:৯)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ذُوالْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ -এর অর্থ হলো ذُوالْعَظْمَةِ وَالْكِبْرِيَآءِ অর্থাৎ তিনি শ্রেষ্ঠত্ব ও আড়ম্বরপূর্ণ।
সমস্ত জগতবাসী ধ্বংস হয়ে যাবে এই খবর দেয়ার পর আল্লাহ তা'আলা এই সংবাদ দিচ্ছেন যে, এরপরে তাদেরকে পরকালে মহামহিমান্বিত আল্লাহর নিকট পেশ করা হবে। অতঃপর তিনি আদল ও ইনসাফের সাথে তাদের মধ্যে ফায়সালা করবেন। এরপরে আল্লাহ পাক পুনরায় বলেনঃ হে দানব ও মানব! সুতরাং তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে।
অতঃপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ আল্লাহ তা'আলা সমস্ত মাখলূক হতে বেপরোয়া ও অভাবমুক্ত, বরং সমস্ত মাখলূক তারই মুখাপেক্ষী। সবাই তার কাছে ভিক্ষুক। তিনি ধনী, আর সবাই দরিদ্র। তিনি সবারই অভাব পূরণকারী। প্রত্যেক সৃষ্টজীব তাঁর দরবারে স্বীয় অভাব ও প্রয়োজনের কথা তুলে ধরে এবং ওগুলো পূরণের জন্যে তার কাছে আবেদন জানায়। তিনি প্রত্যহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যে রত। তিনি প্রত্যেক আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন, প্রত্যেক প্রার্থীকেই তিনি দান করেন। যাদের অবস্থা সংকীর্ণ তাদেরকে প্রশস্ততা প্রদান করেন। বিপদগ্রস্তদেরকে পরিত্রাণ দেন, রোগীদেরকে দান করেন সুস্থতা, দুঃখীদের দুঃখ দূর করেন, অসহায়ের প্রার্থনা কবূল করেন ও তাকে প্রশান্তি দান করেন, পাপীরা যখন তাদের পাপের জন্যে তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে তখন তিনি তাদের পাপ ক্ষমা করে দেন। জীবন তিনিই দান করেন এবং মৃত্যুও তিনিই ঘটিয়ে থাকেন। সমস্ত আকাশবাসী ও পৃথিবীবাসী তাঁর সামনে তাদের হস্ত প্রসারিত করে রয়েছে এবং অঞ্চল পেতে আছে। ছোটদেরকে তিনিই বড় করেন। তিনিই বন্দীদেরকে মুক্তি দেন। সৎলোকদের প্রয়োজন পৌঁছানোর শেষ সীমা, তাদের প্রার্থনার লক্ষ্যস্থল এবং তাদের অভাব অভিযোগের প্রত্যাবর্তন স্থল তিনিই। গোলামদের মুক্তিদান তিনিই করেন এবং সক্কাজের প্রতি আগ্রহীদেরকে তিনিই পুরস্কার দান করে থাকেন। এটাই তার মাহাত্ম্য।
হযরত মুনীব ইযদী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِىْ شَاْنٍ-এ আয়াতটি পাঠ করেন। তখন আমরা জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ঐ শান কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ “ওটা হলো পাপরাশি ক্ষমা করে দেয়া, দুঃখ করা এবং লোকেদের উত্থান ও পতন ঘটানো।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “মহামহিমান্বিত আল্লাহ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِىْ شَاْنٍ) একথা বলেছেন।” অতঃপর তিনি বলেনঃ ঐ শান হলো এই যে, তিনি গুনাহ মাফ করেন, দুঃখ-কষ্ট দূর করেন, কোন সম্প্রদায়ের উত্থান দেন এবং কোন সম্প্রদায়ের পতন ঘটান। (ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনে আসাকির (রঃ)-ও প্রায় এরূপই বর্ণনা করেছেন। সহীহ্ বুখারীতেও এ রিওয়াইয়াতটি মুআল্লাক রূপে হযরত আবু দারদা (রাঃ)-এর উক্তিতে বর্ণিত আছে। মুসনাদে বারেও কিছু কম বেশীর সাথে মার’রূপে এটা বর্ণিত আছে)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা'আলা লাওহে মাহফুকে সাদা মুক্তা দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, যার দানা দুটি লাল পদ্মরাগের তৈরী। ওর কলম জ্যোতি, ওর কিতাব জ্যোতি, ওর প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের সমান। তিনি প্রত্যহ ওটাকে তিনশত বার দেখে থাকেন। প্রত্যেক দর্শনে তিনি জীবনদান করেন, মৃত্যু ঘটান, ইযত দেন, লাঞ্ছিত করেন এবং যা ইচ্ছা করেন তা-ই করে থাকেন।