আল মুরসালাত আয়াত ৪০
وَيْلٌ يَّوْمَىِٕذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ ࣖ ( المرسلات: ٤٠ )
Wailuny yawma'izil lilmukazzibeen (al-Mursalāt ৭৭:৪০)
English Sahih:
Woe, that Day, to the deniers. (Al-Mursalat [77] : 40)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
সেদিন দুর্ভোগ সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য। (আল মুরসালাত [৭৭] : ৪০)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যাজ্ঞানকারীদের জন্য।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য।
3 Tafsir Bayaan Foundation
মিথ্যারোপকারীদের জন্য সেদিনের দুর্ভোগ!
4 Muhiuddin Khan
সেদিন মিথ্যারোপকারীদের দুর্ভোগ হবে।
5 Zohurul Hoque
ধিক্ সেইদিন সত্যপ্রত্যাখ্যানকারীদের প্রতি!
6 Mufti Taqi Usmani
সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে।
7 Mujibur Rahman
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যা আরোপকারীদের জন্য।
8 Tafsir Fathul Mazid
২৯-৪০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
অত্র আয়াতগুলোতে তাদেরকে সম্বোধন করা হচ্ছে যারা আখিরাতের প্রতি অবিশ্বাসী-কাফির, জান্নাত-জাহান্নাম, হাশর-নাশর ইত্যাদি বিশ্বাস করে না। কিয়ামতের দিন দীর্ঘ অবরুদ্ধ ও আটক জীবন শেষে মুক্ত হয়ে রওনা দেবে কিন্তু কোথায় যাবে? মনে হয় সে মুক্তিলাভ ও রওনা হওয়ার চেয়ে অবরুদ্ধ ও আটক থাকাই ভাল ছিল। তাদেরকে বলা হবে :
( اِنْطَلِقُوْآ إِلٰي ظِلٍّ ذِيْ ثَلٰثِ شُعَبٍ)
“চল সে ছায়ার দিকে যার তিনটি শাখা রয়েছে।”
(ثَلٰثِ شُعَبٍ) অর্থাৎ এমন ছায়া যা তিন শাখাবিশিষ্ট অর্থাৎ জাহান্নাম থেকে যে ধোঁয়া বের হবে তা উঁচু হয়ে তিন দিকে ছড়িয়ে পড়বে। যেমন দেওয়াল অথবা গাছের ছায়া হয়। এ ধোঁয়ার ছায়ায় জাহান্নামীদের শাস্তি বৃদ্ধি ছাড়া কোন স্বস্তি লাভ হবে না। এ ছায়া ঠাণ্ডাও হবে না এবং জাহান্নামের উষ্ণতা থেকে রক্ষাও করবে না।
(إِنَّهَا تَرْمِيْ بِشَرَرٍ كَالْقَصْرِ)
ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : জাহান্নামের যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গগুলো উড়ে যায় সেগুলো এক একটা দুর্গের মত এবং বড় বড় গাছের লম্বা চওড়া কান্ডের মত হবে। আব্দুর রহমান বিন আবিস (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আমরা তিন গজ বা এর চেয়ে ছোট কাঠের খন্ড জোগাড় করে শীতকালের জন্য উঠিয়ে রাখতাম। এটাকেই আমরা বলতাম القصر। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৩২)
(كَأَنَّه۫ جِمَالَتٌ صُفْرٌ)
অর্থাৎ দর্শকদের কাছে ওগুলোকে মনে হবে যেন হলুদ রঙের উট বা নৌকার রজ্জু অথবা তামার টুকরো। (ইবনু কাসীর)
(ذَا يَوْمُ لَا يَنْطِقُوْنَ)
অর্থাৎ কিয়ামতের ভয়াবহতা দেখে কাফিররা কথা বলতে পারবে না। অথবা কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলবে ফলে তাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে। অথবা এমন পরিস্থিতি হবে যে, তারা কথা বলতেই জানবে না।
(وَلَا يُؤْذَنُ لَهُمْ فَيَعْتَذِرُوْنَ)
অর্থাৎ সেদিন তাদের কোন ওজর কবূল করা হবে না, যদিও তারা ওজর পেশ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(فَيَوْمَئِذٍ لَّا يَنْفَعُ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَعْذِرَتُهُمْ وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُوْنَ)
“সেদিন জালিমদের ওজর আপত্তি তাদের কোন উপকারে আসবে না এবং তাওবা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সুযোগও তাদেরকে দেওয়া হবে না।” (সূরা রূম ৩০ : ৫৭)
(هٰذَا يَوْمُ الْفَصْلِ)
‘এটা চূড়ান্ত ফায়সালার দিন,’ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে এ কথা বলবেন।
(فَإِنْ كَانَ لَكُمْ كَيْدٌ فَكِيْدُوْنِ)
‘তোমাদের কোন অপকৌশল থাকলে তা প্রয়োগ কর আমার বিরুদ্ধে।’ এটা আল্লাহ তা‘আলার ধমক, যদি তোমরা আমার পাাকড়াও থেকে বাঁচতে পার এবং আমার রাজত্ব থেকে বের হয়ে যেতে পার তাহলে চলে যাও?
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ إِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ تَنْفُذُوْا مِنْ أَقْطَارِ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ فَانْفُذُوْا لَا تَنْفُذُوْنَ إِلَّا بِسُلْطَانٍ)
“হে জিন ও মানুষ জাতি! আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সীমা হতে যদি তোমরা বের হতে পার, তবে বের হয়ে যাও; কিন্তু তোমরা তা পারবে না, শক্তি ব্যতিরেকে (আর সে শক্তি তোমাদের নেই)।” (সুুরা আর রহমান ৫৫ : ৩৩)
কিয়ামতের এমন কঠিন বিভীষিকাময় অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আমাদের দুনিয়াতে থাকতেই পাথেয় গ্রহণ করা উচিত। নয়তো সেদিন কোন কিছুই উপকারে আসবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. জাহান্নামীদের শাস্তির বিবরণ জানতে পারলাম।
২. কিয়ামতের মাঠে মিথ্যুকদের যে অবস্থা হবে তা জানতে পারলাম।
৩. হাশরের ময়দানে আল্লাহ তা‘আলা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষকে একত্রিত করবেন।
9 Fozlur Rahman
সেদিন অবিশ্বাসীদের জন্য বড় দুর্ভোগ রয়েছে।
10 Mokhtasar Bangla
৪০. সে দিন এর অস্বীকারকারীদের জন্য রয়েছে ধ্বংস, শাস্তি ও ভোগান্তি।
11 Tafsir Ibn Kathir
২৯-৪০ নং আয়াতের তাফসীর
যে কাফিররা কিয়ামতের দিনকে, পুরস্কার ও শাস্তিকে এবং জান্নাত ও জাহান্নামকে অবিশ্বাস করতো, তাদেরকে কিয়ামতের দিন বলা হবেঃ তোমরা দুনিয়ায় যে শাস্তি ও জাহান্নামকে মানতে না তা আজ বিদ্যমান রয়েছে। তাতে প্রবেশ কর। ওর অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত রয়েছে এবং উঁচু হয়ে হয়ে তাতে তিনটি টুকরো হয়ে গেছে। সাথে সাথে ধুম্রও উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে, ফলে মনে হচ্ছে যেন নীচে ছায়া পড়ে গেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ওটা ছায়াও নয় এবং এটা আগুনের তেজস্বিতা বা প্রখরতাকে কিছু কমিয়েও দিচ্ছে না। এই জাহান্নাম এতো তেজ, গরম এবং অধিক অগ্নি বিশিষ্ট যে, এর যে অগ্নি স্ফুলিঙ্গগুলো উড়ে যায় সেগুলো এক একটা দুর্গের মত এবং বড় বড় গাছের লম্বা চওড়া কাণ্ডের মত। দর্শকদের ওগুলোকে মনে হয় যেন কালো রঙের উট বা নৌকার রঞ্জু অথবা তামার টুকরো।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আমরা শীতকালে তিন হাত বা তার চেয়ে বেশী লম্বা কাষ্ঠ নিয়ে উঁচু করে ধরতাম এবং ওটাকে আমরা ‘কাসর’ বলতাম।" (এটা ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) নৌকার রশিগুলো একত্রিত করলে ওগুলো উঁচু দেহ বিশিষ্ট মানুষের সমান হয়ে যায়। এখানে এটাই উদ্দেশ্য। ঐদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্যে।
আজকের দিনে অর্থাৎ কিয়ামত দিবসে তারা কিছু বলতেও পারবে না এবং তাদেরকে কোন ওযর পেশ করার অনুমিতও দেয়া হবে না। কেননা, তাদের যুক্তি-প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েই গেছে এবং যালিমদের উপর আল্লাহর কথা সাব্যস্ত হয়ে গেছে। সুতরাং আর তাদের কোন কথা বলার অনুমতি নেই।
কুরআন কারীমে কাফিরদের কথা বলা এবং ওযর পেশ করারও বর্ণনা রয়েছে। সুতরাং তখন ভাবার্থ হবে এই যে, হুজ্জত বা যুক্তি-প্রমাণ কায়েম হয়ে যাওয়ার পূর্বে তারা ওযর ইত্যাদি পেশ করবে। অতঃপর যখন সবকিছু ভেঙ্গে দেয়া হবে এবং যুক্তি-প্রমাণ পেশ হয়ে যাবে তখন কথা বলার এবং ওযর-আপত্তি পেশ করার আর কোন সুযোগ থাকবে না। মোটকথা, হাশরের ময়দানের বিভিন্ন পরিস্থিতি এবং জনগণের বিভিন্ন অবস্থা হবে। কোন সময় এটা হবে এবং কোন সময় ওটা হবে। এজন্যেই এখানে প্রত্যেক কথা বা বাক্যের শেষে অবিশ্বাসকারীদের দুর্ভোগের খবর দেয়া হয়েছে।
এরপর ইরশাদ হচ্ছেঃ এটাই ফায়সালার দিন। এখানে আমি তোমাদেরকে এবং পূর্বদেরকে অর্থাৎ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলকেই একত্রিত করেছি। এখন আমার বিরুদ্ধে তোমাদের কোন অপকৌশল থাকলে তা প্রয়োগ কর। এটা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলার তাঁর বান্দাদের প্রতি কঠোর ধমক সূচক বাণী। তিনি কিয়ামতের দিন স্বয়ং কাফিরদেরকে বলবেনঃ তোমরা এখন নীরব রয়েছে কেন? আজ তোমাদের চালাকী-চতুরতার, সাহসিকতা এবং চক্রান্ত কোথায় গেল? দেখো, আজ আমি আমার ওয়াদা অনুযায়ী তোমাদের সকলকেই এক ময়দানে একত্রিত করেছি। যদি কোন কৌশল করে আমার হাত হতে ছুটে যাবার কোন পথ বের করতে পার তবে তাতে কোন ত্রুটি করো না। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ
یٰمَعْشَرَ الْجِنِّ وَ الْاِنْسِ اِنِ اسْتَطَعْتُمْ اَنْ تَنْفُذُوْا مِنْ اَقْطَارِ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ فَانْفُذُوْا لَا تَنْفُذُوْنَ اِلَّا بِسُلْطٰنٍ
অর্থাৎ “হে দানব ও মানব! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সীমা তোমরা যদি অতিক্রম করতে পার তবে অতিক্রম কর, কিন্তু তোমরা তা পারবে না শক্তি ব্যতিরেকে।” (৫৫:৩৩) অন্য এক জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ وَلَا تَضُرُّوْنَهٗ شَيْئًا অর্থাৎ “তোমরা তাঁর (আল্লাহর) কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না।”
হযরত আবূ আবদিল্লাহ জাদালী (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা আমি বায়তুল মুকাদ্দাসে গিয়ে দেখি যে, সেখানে হযরত উবাদাহ ইবনে সামিত (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) এবং হযরত কা'ব আহবার (রাঃ) বসে রয়েছেন এবং পরস্পর আলাপ আলোচনা করছেন। আমিও তাদের পাশে বসে পড়লাম। হযরত উবাদাহ ইবনে সামিত (রাঃ) বললেন যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলকেই এক সমতল ও পরিষ্কার ময়দানে একত্রিত করবেন। একজন আহ্বানকারী এসে সকলকে সতর্ক করে দিবেন। অতঃপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলবেনঃ ‘এটাই ফায়সালার দিন, আমি তোমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের একত্রিত করেছি। তোমাদের আমার বিরুদ্ধে কোন অপকৌশল থাকলে তা প্রয়োগ কর। জেনে রেখো যে, আজ কোন অহংকারী, উদ্ধত, অস্বীকারকারী এবং মিথ্যা প্রতিপন্নকারী আমার পাকড়াও হতে বাঁচতে পারে না। আর পারে না কোন নাফরমান শয়তান আমার আযাব হতে বাচতে।' তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেনঃ আমিও আপনাদেরকে একটি হাদীস শুনাচ্ছি। সেই দিন জাহান্নাম স্বীয় গ্রীবা উঁচু করে লোকদের মাঝে তা পৌঁছিয়ে দিয়ে উচ্চস্বরে বলবেঃ হে লোক সকল! তিন শ্রেণীর লোককে এখনই পাকড়াও করার আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি তাদেরকে ভালরূপেই চিনি। কোন পিতা তার পুত্রকে এবং কোন ভাই তার ভাইকে ততটা চিনে না যতটা আমি তাদেরকে চিনি। আজ তারা না নিজেরা আমার হতে লুকাতে পারে, না অন্য কেউ তাদেরকে আমার হতে লুকিয়ে রাখতে পারে। একশ্রেণীর লোক হলো ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক বানিয়ে নিয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক হলো ঐ ব্যক্তি যে অবিশ্বাসকারী ও অহংকারী। আর তৃতীয় শ্রেণী হলো প্রত্যেক নাফরমান শয়তান। অতঃপর সে ঘুরে ঘুরে বেছে বেছে এই গুণাবলীর লোকদেরকে হাশরের ময়দান হতে বের করে নিবে এবং এক এক করে ধরে ধরে নিজের মধ্যে ফেলে দিবে। হিসাব গ্রহণের চল্লিশ বছর পূর্বেই তারা জাহান্নামের পেটে চলে যাবে।" (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)