আর রহমান আয়াত ৪৫
فَبِاَيِّ اٰلَاۤءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبٰنِ ࣖ ( الرحمن: ٤٥ )
Fabi ayyi aalaaa'i Rabbikumaa tukazzibaan. (ar-Raḥmān ৫৫:৪৫)
English Sahih:
So which of the favors of your Lord would you deny? (Ar-Rahman [55] : 45)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
অতএব (হে জ্বিন ও মানুষ!) তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ নি‘মাতকে অস্বীকার করবে? (আর রহমান [৫৫] : ৪৫)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
অতএব তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে মিথ্যাজ্ঞান করবে?
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
কাজেই তোমারা উভয়ে তোমাদের রবের কোন্ অনুগ্রহে মিথ্যারোপ করবে?
3 Tafsir Bayaan Foundation
সুতরাং তোমাদের রবের কোন্ নিআমতকে তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে ?
4 Muhiuddin Khan
অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?
5 Zohurul Hoque
তাই তোমাদের প্রভুর কোন্ অনুগ্রহ তোমরা উভয়ে অস্বীকার করবে?
6 Mufti Taqi Usmani
সুতরাং তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নি‘আমতকে অস্বীকার করবে?
7 Mujibur Rahman
সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের রবের কোন্ অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?
8 Tafsir Fathul Mazid
৩৭-৪৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
আলোচ্য আয়াতগুলোতে কিয়ামত ও জাহান্নামের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে। সেদিন জাহান্নামীদের কিরূপ দেখাবে সে কথাও বর্ণনা করা হয়েছে।
কিয়ামতের দিন আকাশ বিদীর্ণ হয়ে পড়বে, ফেরেশতাগণ পৃথিবীতে অবতরণ করবেন। সেদিন আকাশ জাহান্নামের আগুনের প্রচণ্ড তাপের কারণে গলে রঙানো চামড়ার মতো লাল হয়ে যাবে।
الدِّهَانِ বলা হয় তেল বা লাল চামড়া। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَانْشَقَّتِ السَّمَا۬ءُ فَهِيَ يَوْمَئِذٍ وَّاهِيَةٌ)
“এবং আকাশ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে নিস্তেজ অবস্থায় বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে।” (সূরা আল হা-ক্বক্বাহ্ ৬৯ : ১৬)
(فَيَوْمَئِذٍ لَّا يُسْأَلُ.....)
‘সেদিন মানুষ ও জিনকে তার অপরাধ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হবে না’ এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করলেন কিয়ামত দিবসে কোন মানুষ ও জিনকে তার অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে না। এরূপ অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَلَا يُسْأَلُ عَنْ ذُنُوْبِهِمُ الْمُجْرِمُوْنَ)
“অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে না? ” (সূরা আল ক্বাসাস ২৮ : ৭৮)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন : রাসূল এবং যাদের কাছে তাদেরকে প্রেরণ করা হয়েছে সবাইকে জিজ্ঞাসা করবেন। যেমন
(فَلَنَسْئَلَنَّ الَّذِيْنَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْئَلَنَّ الْمُرْسَلِيْنَ)
“অতঃপর যাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল তাদেরকে আমি অবশ্যই জিজ্ঞাসা করব এবং রাসূলগণকেও জিজ্ঞাসা করব।” (সূরা আল আ‘রাফ ৭ : ৬)
উভয়ের সমাধান হলো : যে আয়াতগুলোতে জিজ্ঞাসা করা হবে না উল্লেখ করা হয়েছে সে আয়াতগুলো খাস বা সীমাবদ্ধ। আর যে আয়াতগুলোতে জিজ্ঞাসা করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে তা আম বা ব্যাপক।
কেননা না বোধক আয়াতগুলোতে বলা হয়েছে শুধু পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে না। আর হ্যাঁ বোধক আয়াতগুলোতে বলা হয়েছে সকল আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। এছাড়াও ‘আলিমগণ বলেছেন যে, প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা করা দু প্রকার :
(১) তিরষ্কারমূলক জিজ্ঞাসা করা, এটা এক প্রকার শাস্তি।
(২) তদন্তমূলক জিজ্ঞাসা, তথ্য সংগ্রহ করার জন্য জিজ্ঞাসা করা।
যে আয়াতগুলোতে জিজ্ঞাসা করবেন না বলা হয়েছে তা দ্বিতীয় প্রকারের অন্তর্ভুক্ত। কেননা আল্লাহ তা‘আলার তদন্ত করার প্রয়োজন নেই তিনি সবকিছু জানেন। অতএব আয়াতের অর্থ হলো : সেদিন কোন মানুষ ও জিনকে তার অপরাধ সম্পর্কে জানার জন্য জিজ্ঞাসা করা হবে না অর্থাৎ, তারা যে আমলনামা হাতে পেয়েছে এবং তাতে তাদেরযে অপরাধের কথা উল্লেখ রয়েছে তা তারা করেছে কিনা এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজনই হবে না, বরং তা সেদিন বিভিন্ন সাক্ষীর মাধ্যেমে প্রমাণিত হবে। যেমন তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও নবীদের সাক্ষ্য ইত্যাদি। (আযওয়াউল বায়ান)
بِسِيْمَاهُمْ- অর্থাৎ আলামত যা তাদের ওপর প্রকাশ পাবে, তা দ্বারা অপরাধীদের চেনা যাবে।
হাসান বাসরী ও কাতাদাহ্ (রহঃ) বলেন : অপরাধীদের চেনা যাবে কালো চেহারা ও নীল বর্ণ বিশিষ্ট চোখ দেখে। যেমন মু‘মিনদেরকে চেনা যাবে তাদের ওযূর অঙ্গসমূহে চাঁদের আলোর মতো চমকাতে দেখে।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
( یَّوْمَ تَبْیَضُّ وُجُوْھٌ وَّتَسْوَدُّ وُجُوْھٌﺆ فَاَمَّا الَّذِیْنَ اسْوَدَّتْ وُجُوْھُھُمْﺤ اَکَفَرْتُمْ بَعْدَ اِیْمَانِکُمْ فَذُوْقُوا الْعَذَابَ بِمَا کُنْتُمْ تَکْفُرُوْنَ)
“সেদিন কিছু চেহারা হবে উজ্জ্বল এবং কিছু চেহারা হবে কালো। অতঃপর যাদের চেহারা কালো হবে (তাদেরকে বলা হবে), তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফরী করেছিলে? সুতরাং তোমাদের কুফরী করার কারণে শাস্তি ভোগ কর।” (সূরা আলি ‘ইমরান ৩ : ১০৬)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ تَرَي الَّذِيْنَ كَذَبُوْا عَلَي اللّٰهِ وُجُوْهُهُمْ مُّسْوَدَّةٌ ط أَلَيْسَ فِيْ جَهَنَّمَ مَثْوًي لِّلْمُتَكَبِّرِيْنَ)
“তুমি কিয়ামতের দিন যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, তাদের মুখ কাল দেখবে। অহংকারীদের আবাসস্থল কি জাহান্নাম নয়?” (সূরা যুমার ৩৯ : ৬০)
(فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِيْ وَالْأَقْدَامِ)
অর্থাৎ ফেরেশতারা তাদের ললাট ও পা একসাথে মিলিয়ে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন এবং বলবেন : এটা হল সে জাহান্নাম যা তোমরা অস্বীকার করতে।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : ললাট ও উভয় পা ধরা হবে, অতঃপর তা কাঠের মতো ভেঙ্গে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। যহহাক (রহঃ) বলেন : জাহান্নামীদের ললাট ও উভয় পা পেছন দিক থেকে শিকল দ্বারা বাধা হবে। (ইবনু কাসীর)
(يَطُوْفُوْنَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ حَمِيْمٍ اٰنٍ)
‘তারা জাহান্নামের ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটোছুটি করবে’ অর্থাৎ কখনো তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি দেয়া হবে, আবার কখনো ফুটন্ত পানি পান করার শাস্তি দেয়া হবে।
اٰنٍ গরম পানি, যে পানি নাড়ীভূঁড়ি গলিয়ে দেয়। ==
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(إِذِ الْأَغْلٰلُ فِيْٓ أَعْنَاقِهِمْ وَالسَّلٰسِلُ ط يُسْحَبُوْنَ- فِي الْحَمِيْمِ ثُمَّ فِي النَّارِ يُسْجَرُوْنَ)
“যখন তাদের গলদেশে বেড়ি ও শৃঙ্খল থাকবে, তাদেরকে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে। ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে দগ্ধ করা হবে অগ্নিতে।” (সূরা মু’মিন ৪০ : ৭১-৭২)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. কিয়ামতের দিন আকাশের কী ভয়াবহ অবস্থা হবে তা জানতে পারলাম।
২. পাপাচারীদের কী লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি হবে তাও জানতে পারলাম।
9 Fozlur Rahman
অতএব, তোমরা তোমাদের প্রভুর কোন্ নেয়ামতটি অস্বীকার করবে?
10 Mokhtasar Bangla
৪৫. তবে হে জিন ও মানব জাতি! তোমরা নিজেদের রবের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত পর্যাপ্ত নিআমতের কোন্ কোন্ নিয়ামতকে অস্বীকার করবে?!
11 Tafsir Ibn Kathir
৩৭-৪৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ যেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে অর্থাৎ কিয়ামতের দিন। এটা অন্যান্য আয়াতগুলোতেও বর্ণিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ পাকের উক্তিঃ
وَ انْشَقَّتِ السَّمَآءُ فَهِیَ یَوْمَىٕذٍ وَّاهِیَةٌ
অর্থাৎ “আকাশ বিদীর্ণ হয়ে বিশ্লিষ্ট হয়ে পড়বে।" (৬৯:১৬) আর এক জায়গায় বলেনঃ
وَ یَوْمَ تَشَقَّقُ السَّمَآءُ بِالْغَمَامِ وَ نُزِّلَ الْمَلٰٓىٕكَةُ تَنْزِیْلًا
অর্থাৎ “যেদিন আকাশ মেঘপুঞ্জসহ বিদীর্ণ হবে এবং ফেরেশতাদেরকে নামিয়ে দেয়া হবে।” (২৫:২৫) অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ
اِذَا السَّمَآءُ انْشَقَّتْ ـ وَ اَذِنَتْ لِرَبِّهَا وَ حُقَّتْ
অর্থাৎ “যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও তার প্রতিপালকের আদেশ পালন করবে এবং এটাই তার করণীয়।” (৮৪:১-২) চাদি ইত্যাদিকে যেমন গলিয়ে দেয়া হয় তেমনই আকাশের অবস্থা হবে। সেই দিন আকাশ লাল, হলদে, নীল, সবুজ ইত্যাদি বিভিন্ন রঙ ধারণ করবে। এটা হবে কিয়ামতের দিনের কঠিন ও ভয়াবহ অবস্থার কারণে।
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন লোকদেরকে উঠানো হবে এবং ঐ অবস্থায় তাদের উপর আকাশ হতে হালকা বৃষ্টি বর্ষিত হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) فَكَانَتْ وَرْدَةً كَالدِّهَانِ-এর তাফসীরে বলেছেন। যে, সেদিন আকাশ লাল চামড়ার মত হয়ে যাবে। অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, গোলাপী রঙ এর ঘোড়ার মত আকাশের রঙ হবে। আবু সালেহ (রঃ) বলেন যে, প্রথমে গোলাপী রঙ এর হবে, তারপর লাল হয়ে যাবে। গোলাপী রঙ এর ঘোড়ার রঙ বসন্তকালে হলদে বর্ণের দেখা যায় এবং শীতকালে ঐ রঙ পরিবর্তিত হয়ে লাল বর্ণ হয়ে যায়। ঠাণ্ডা বৃদ্ধি হওয়ার সাথে সাথে তার রঙ পরিবর্তিত হতে থাকে। অনুরূপভাবে আকাশের রঙও বিভিন্ন রঙএ পরিবর্তিত হতে থাকবে। ওর রঙ গলিত তামার মত হয়ে যাবে, যেমন গোলাপী রাওগানের (তেলের) রঙ হয়ে থাকে।আসমান এই রঙ হয়ে যাবে। আজ এটা সবুজ রঙ এর আছে, কিন্তু ঐদিন এর রঙ লাল হয়ে যাবে। এটা যয়তুন তেলের তলানি বা গাদের মত হয়ে যাবে। জাহান্নামের আগুনের তাপ ওকে গলিয়ে দিয়ে তেলের মত করে দিবে।
প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ সেই দিন না মানুষকে তার অপরাধ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হবে, না জিনকে। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ
هٰذَا یَوْمُ لَا یَنْطِقُوْنَ ـ وَ لَا یُؤْذَنُ لَهُمْ فَیَعْتَذِرُوْنَ
অর্থাৎ “এটা ঐ দিন যে, কেউ কথা বলতে পারবে না এবং তাদেরকে কোন ওযর পেশ করার অনুমতি দেয়া হবে না।” (৭৭:৩৫-৩৬) আবার অন্য আয়াতে তাদের কথা বলা, ওযর পেশ করা, তাদের হিসাব গ্রহণ করা ইত্যাদিরও বর্ণনা রয়েছে। বলা হয়েছেঃ
فَوَرَبِّكَ لَنَسْــئَـلَنَّهُمْ اَجْمَعِیْنَ
অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালকের শপথ! আমি অবশ্যই তাদের সকলকেই প্রশ্ন করবে।" (১৫:৯২) তাহলে ভাবার্থ এই যে, এক অবস্থা বা পরিস্থিতিতে এরূপ হবে এবং অন্য অবস্থা বা পরিস্থিতিতে ঐরূপ হবে। প্রশ্ন করা হবে, হিসাব গ্রহণ করা হবে এবং ওযর-আপত্তির সুযোগে শেষ হয়ে যাবে। অতঃপর মুখে মোহর লাগিয়ে দেয়া হবে এবং হাত, পাও দেহের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দান করবে। এরপরে আর জিজ্ঞাসাবাদের কোন প্রয়োজনই থাকবে না। ওযর-আপত্তিরও কোন সুযোগে থাকবে না। অথবা সমাধান এভাবে হতে পারে। যে, অমুক অমুক কাজ করেছে কি করেনি এ প্রশ্ন কাউকে করা হবে না। কেননা, আল্লাহ তা'আলার ওটা খুব ভালরূপেই জানা আছে। হ্যাঁ, তবে প্রশ্ন যা করা হবে তা হলোঃ “তুমি এ কাজ কেন করেছিলে?' তৃতীয় উক্তি এই যে, ফেরেশতারা তাদেরকে কিছুই জিজ্ঞেস করবেন না। কেননা, তাঁরা তো তাদের চেহারা দেখেই তাদেরকে চিনে ফেলবেন এবং জাহান্নামের জিঞ্জীরে বেঁধে উল্টো মুখে টেনে নিয়ে গিয়ে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
কেননা, এরপরেই রয়েছেঃ ‘অপরাধীদের পরিচয় পাওয়া যাবে তাদের চেহারা হতে।' মুখ হবে কালো ও মলিন এবং চোখ হবে নীল বর্ণ বিশিষ্ট। অপরপক্ষে মুমিনদের চেহারা হবে মর্যাদা মণ্ডিত। তাদের অনূর অঙ্গগুলো চন্দ্রের ন্যায় চমকাতে থাকবে। জাহান্নামীদেরকে পাকড়াও করা হবে এবং পা ও মাথার ঝুটি ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, যেমনভাবে বড় জ্বালানী কাষ্ঠকে দুই দিকে ধরে চুল্লীতে নিক্ষেপ করা হয়। তাদের পিঠের দিক হতে জিঞ্জীর লাগিয়ে গর্দান ও পা-কে এক করে বেঁধে ফেলা হবে, কোমর ভেঙ্গে দেয়া হবে এবং পা ও কপালকে মিলিয়ে দেয়া হবে এবং এই ভাবে শৃংখলিত করা হবে।
কিন্দা গোত্রের একটি লোক হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট আগমন করেন। পর্দার পিছনে বসে তাকে তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে শুনেছেন যে, এমন এক সময় আসবে যখন তিনি কারো জন্যে কোন সুপারিশ করার অধিকার রাখবেন না?” উত্তরে হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, হ্যাঁ, একদা একই কাপড়ে আমরা দুই জন ছিলাম, ঐ সময় আমি তাঁকে এই প্রশ্নই করেছিলাম। জবাবে তিনি বলেছিলেনঃ “হ্যাঁ, যখন পুলসিরাত রাখা হবে ঐ সময় আমাকে কারো জন্যে শাফাআত করার অধিকার দেয়া হবে না। যে পর্যন্ত না আমি জানবো যে, স্বয়ং আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর যেই দিন কারো চেহারা হবে উজ্জ্বল এবং কারো চেহারা হবে মলিন, শেষ পর্যন্ত আমি চিন্তা করবে যে, আমার ব্যাপারে কি করা হবে বা আমার প্রতি কি অহী করা হবে! আর পুলসিরাতের নিকট, যখন ওটাকে তীক্ষ ও গরম করা হবে! তীক্ষ্ণতা ও প্রখরতার সীমা যে কি?” আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ওর তীক্ষতা ও গরমের সীমা কি? তিনি উত্তর দিলেনঃ “তরবারীর ধারের মত তীক্ষ্ণ হবে এবং আগুনের অঙ্গারের মত গরম হবে। মুমিন তো সহজেই পার হয়ে যাবে, তার কোনই ক্ষতি হবে না। আর মুনাফিক লটকে যাবে। যখন সে মধ্যভাগে পৌঁছবে তখন তার পা জড়িয়ে যাবে। সে তার হাত তার পায়ের কাছে নিয়ে যাবে। যেমন যখন কেউ নগ্ন পদে চলে, তখন যদি তার পায়ে কাঁটা ফুটে যায় এবং এতো জোরে ফুটে যে, যেন পা-কে ছিদ্র করে দিয়েছে, তখন সে যেভাবে অধৈর্য হয়ে তাড়াতাড়ি মাথা ও হাত ঝুকিয়ে দিয়ে পায়ের দিকে ঝুঁকে পড়ে, অনুরূপভাবে সেও ঝুঁকে পড়বে। এদিকে সে এভাবে ঝুঁকে পড়বে আর ওদিকে জাহান্নামের দারোগা তার পা ও মাথার ঝুঁটি ধরে জাহান্নামের জিঞ্জীর দ্বারা বেঁধে ফেলবেন। অতঃপর তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন। ওর মধ্যে সে পঞ্চাশ বছর পর্যন্ত পড়তে থাকবে।” আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! লোকটি কি পরিমাণ ভারী হবে? তিনি জবাবে বললেনঃ “দশটি গর্ভবতী উষ্ট্রীর মত।” অতঃপর তিনি
يُعْرَفُ الْمُجْرِمُوْنَ بِسِيْمٰهُمْ فَيُؤْخَذُ بِالنَّوَاصِىْ وَالْاَقْدَامِ
(অর্থাৎ অপরাধীদের পরিচয় পাওয়া যাবে তাদের চেহারা হতে, তাদেরকে পাকড়াও করা হবে পা ও মাথার ঝুঁটি ধরে)। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি খুবই গরীব বা দুর্বল। এর কতকগুলো শব্দ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কথা হওয়া অস্বীকৃত। এতে এমন একজন বর্ণনাকারী রয়েছেন যার নাম নীচের বর্ণনাকারী নেননি। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)
ঐ পাপী ও অপরাধীদেরকে বলা হবেঃ এটা সেই জাহান্নাম যা তোমরা অস্বীকার ও অবিশ্বাস করতে। এখন তোমরা ওটা স্বচক্ষে দেখছে। একথা তাদেরকে বলা হবে লাঞ্ছিত ও অপমাণিত করার জন্যে এবং তাদেরকে খাটো করে দেখাবার জন্যে। অতঃপর তাদের অবস্থা এই দাঁড়াবে যে, কখনো তাদের আগুনের শাস্তি হচ্ছে, কখনো গরম পানি পান করানো হচ্ছে যা গলিত তাম্রের মত শুধু অগ্নি, যা নাড়ী-ভূঁড়ি কেটে ফেলবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ
اِذِ الْاَغْلٰلُ فِیْۤ اَعْنَاقِهِمْ وَ السَّلٰسِلُ یُسْحَبُوْنَ ـ فِی الْحَمِیْمِ ثُمَّ فِی النَّارِ یُسْجَرُوْنَ
অর্থাৎ “যখন তাদের গলায় গলাবন্ধ থাকবে এবং পায়ে বেড়ী থাকবে। তাদেরকে গরম পানি হতে জাহান্নামে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হবে এবং বারবার জ্বালানো হবে।” (৪০:৭১-৭২) হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, আসমান ও যমীন সৃষ্টির প্রাথমিক সময় থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত ওটা গরম করা। হচ্ছে। হযরত মুহাম্মদ ইবনে কা'ব (রঃ) বলেন যে, অপরাধী ব্যক্তির মাথার খুঁটি ধরে তাকে গরম পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হবে। ফলে দেহের সমস্ত গোশত খসে যাবে ও হাড় পৃথক হয়ে যাবে। সুতরাং দুই চক্ষু ও অস্থির কাঠামো বা ঠাট শুধু রয়ে যাবে। এটাকেই فِى الْحَمِيْمِ ثُمَّ فِى النَّارِ يُسْجَرُوْنَ বলা হয়েছে। اٰن -এর অর্থ বর্তমানও করা হয়েছে। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ تُسْقٰى مِنْ عَيْنٍ اٰنِيَةٍ
অর্থাৎ “বিদ্যমান কঠিন গরম পানির নহর হতে তাদেরকে পান করানো হবে।” (৮৮:৫) যা কখনো পান করা যাবে না। কেননা, ওটা আগুনের মত সীমাহীন গরম। কুরআন কারীমের অন্য জায়গায় রয়েছেঃ غَيْرَ نٰظِرِيْنَ اِنٰهُ (৩৩:৫৩) এখানে এর দ্বারা খাদ্যের প্রস্তুতি ও রান্না হয়ে যাওয়া বুঝানো হয়েছে। যেহেতু পাপীদের শাস্তি এবং পুণ্যবানদের পুরস্কারও আল্লাহর ফযল, রহমত, ইনসাফ ও স্নেহ, নিজের এই শাস্তির বর্ণনা পূর্বে দিয়ে দেয়া যাতে শিরক ও অবাধ্যাচরণকারীরা সতর্ক হয়ে যায়, এটাও তার নিয়ামত, সেই হেতু আবারও তিনি প্রশ্ন করেনঃ সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করবে?