আল ওয়াক্বিয়া আয়াত ১২
فِيْ جَنّٰتِ النَّعِيْمِ ( الواقعة: ١٢ )
Fee Jannaatin Na'eem (al-Wāqiʿah ৫৬:১২)
English Sahih:
In the Gardens of Pleasure, (Al-Waqi'ah [56] : 12)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
(তারা থাকবে) নি‘মাতে পরিপূর্ণ জান্নাতে। (আল ওয়াক্বিয়া [৫৬] : ১২)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
তারা থাকবে সুখময় জান্নাতসমূহে।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
নি'আমতপূর্ণ উদ্যানে ;
3 Tafsir Bayaan Foundation
তারা থাকবে নিআমতপূর্ণ জান্নাতসমূহে ।
4 Muhiuddin Khan
অবদানের উদ্যানসমূহে,
5 Zohurul Hoque
আনন্দময় উদ্যানে।
6 Mufti Taqi Usmani
তারা থাকবে নি‘আমতপূর্ণ উদ্যানে।
7 Mujibur Rahman
সুখ উদ্যানের।
8 Tafsir Fathul Mazid
নামকরণ ও ফযীলত :
الْوَاقِعَةُ শব্দের শাব্দিক অর্থ সংঘটিতব্য, যা সংঘটিত হবে। এটি কিয়ামতের নামসমূহের অন্যতম একটি নাম। যেহেতু কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে তাই এ নামেও তাকে নামকরণ করা হয়েছে। সূরার প্রথম আয়াত থেকেই সূরাকে “ওয়াকি‘আহ্” নামে নামকরণ করা হয়েছে।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : একদা আবূ বক্র (রাঃ) বললেন : হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি তো বৃদ্ধ হয়ে পড়লেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : আমাকে সূরা হূদ, ওয়াকিআহ্, মুরসালাত, আম্মা ইয়াতাসাআলুন (নাবা) এবং ইযাশ্ শামসু কুওভিরাত (তাকভীর) বৃদ্ধ করে ফেলেছে। (তিরমিযী হা. ৩২৯৭, সহীহাহ্ হা. ৯৫৫)
এছাড়া সূরা আল ওয়াকি‘আহ্’র যত ফযীলতের হাদীস রয়েছে সবই দুর্বল। কোন গ্রহণযোগ্য বর্ণনা পাওয়া যায় না। এ সূরার ফযীলত সম্পর্কে একটি প্রসিদ্ধ হাদীস রয়েছে : যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা আল ওয়া-ক্বি‘আহ্ পাঠ করবে সে কখনো অভাবগ্রস্ত হবে না। এ হাদীসটিও দুর্বল। (সিলসিলা যয়ীফাহ্, হা. ২৮৯)
সূরার শুরুতে কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে, সে-সময় জমিন ও পাহাড়ের কী ভয়ানক অবস্থা হবে, মানুষ তিন দলে বিভক্ত হবে, যারা নৈকট্যশীল ও ডানপন্থী তাদের আরাম আয়েশ ও সুখের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। তারপর যারা বামপন্থী তাদের কষ্টের অন্ত থাকবে না এবং তাদের কষ্টের কারণ বর্ণনা করা হয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তাঁর কয়েকটি নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করার নির্দেশ দিয়েছেন যার মাধ্যমে তাঁকে চেনা অতি সহজ।
১-১২ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
আলোচ্য আয়াতগুলোতে কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে তা জোরালোভাবে উপস্থাপন, কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে জমিন, পাহাড় পর্বতে যে এক ভয়ানক অবস্থা দেখা দেবে এবং মানুষ তিন দলে বিভক্ত হয়ে যাবে সে কথা আলোচনা করা হয়েছে।
الْوَاقِعَةُ কিয়ামতের অন্যতম একটি নাম। وقع، يقع অর্থ সংঘটিত হওয়া, অর্থাৎ কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে। উদ্দেশ্য হল সর্বশেষ শিংগায় ফুঁৎকার। অন্যত্র আল্লাহ বলেন :
(فَيَوْمَئِذٍ وَّقَعَتِ الْوَاقِعَةُ)
“সেদিন যা সংঘটিত হওয়ার তা (অর্থাৎ কিয়ামত) সংঘটিত হয়ে যাবে।” (সূরা আল হা-ক্বক্বাহ্ ৬৯ : ১৫)
(لَيْسَ لِوَقْعَتِهَا كَاذِبَةٌ)
‘(তখন) এর সংঘটন অস্বীকার করার কেউ থাকবে না।’ অর্থাৎ যখন আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামত সংঘটিত করার ইচ্ছা করবেন তখন তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কেননা কিয়ামতের আকলী ও নাকলী উভয় প্রকার দলীল দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট। আবার বলা হয়, তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারবে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(اِسْتَجِيْبُوْا لِرَبِّكُمْ مِّنْ قَبْلِ أَنْ يَّأْتِيَ يَوْمٌ لَّا مَرَدَّ لَه۫ مِنَ اللّٰهِ)
“তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের আহ্বানে সাড়া দাও সেই দিবস আসার পূর্বে যা আল্লাহর বিধানে অপ্রতিরোদ্ধ।” (সূরা শূরা ৪২ : ৪৭)
অন্যত্র আল্লাহ বলেন :
(سَأَلَ سَائِلٌ بِعَذَابٍ وَاقِعٍ لِلْكَافِرِينَ لَيْسَ لَهُ دَافِعٌ)
“এক ব্যক্তি আবেদন করল সেই আযাবের যা সংঘটিত হবেই, কাফিরদের হতে তা প্রতিরোধ করার কেউ নেই।” (সূরা মা‘আ-রিজ ৭০ : ১-২)
আল্লামা শানক্বীতি (রহঃ) এ আয়াতের তাফসীরে দুটি দিক বর্ণনা করেছেন-
(১) কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারটি মিথ্যা নয় এবং তার ব্যতিক্রমও হবে না। বরং এটি এমন বিষয় যা অবশ্যই সংঘটিত হবে। এ অর্থের ওপর প্রমাণ বহন করে অন্যান্য আয়াত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(اَللّٰهُ لَآ إِلٰهَ إِلَّا هُوَ ط لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلٰي يَوْمِ الْقِيٰمَةِ لَا رَيْبَ فِيْهِ ط وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللّٰهِ حَدِيْثًا)
“অবশ্যই আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন সঠিক ইলাহ নেই, তিনি তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন একত্রিত করবেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। কে আল্লাহ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী?” (সূরা নিসা ৪ : ৮৭)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
( وَّأَنَّ السَّاعَةَ اٰتِيَةٌ لَّا رَيْبَ فِيْهَا لا وَأَنَّ اللّٰهَ يَبْعَثُ مَنْ فِي الْقُبُوْرِ)
“এবং কিয়ামত অবশ্যই আসবে, এতে কোন সন্দেহ নেই এবং ক্ববরে যারা আছে তাদেরকে নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্থিত করবেন।” (সূরা হাজ্জ ২২ : ৭)
(২) কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে কোন ব্যক্তিই মিথ্যুক থাকবে না। বরং সকল মানুষ কিয়ামতের দিন কিয়ামতের সত্যতা স্বীকার করে নেবে।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা তা‘আলা বলেন :
(لَا يُؤْمِنُوْنَ بِه۪ حَتّٰي يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيْمَ)
“তারা এতে ঈমান আনবে না যতক্ষণ না তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।” (সূরা শু‘আরা- ২৬ : ২০১)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :
(وَلَا يَزَالُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا فِيْ مِرْيَةٍ مِّنْهُ حَتّٰي تَأْتِيَهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً أَوْ يَأْتِيَهُمْ عَذَابُ يَوْمٍ عَقِيْمٍ)
“যারা কুফরী করেছে তারা তাতে সন্দেহ পোষণ করা হতে বিরত হবে না, যতক্ষণ না তাদের নিকট কিয়ামত এসে পড়বে আকস্মিকভাবে, অথবা এসে পড়বে এক বন্ধ্যা দিনের শাস্তি।” (সূরা হাজ্জ ২২ : ৫৫)
(خَافِضَةٌ رَّافِعَةٌ)
‘এটা কাউকেও করবে নীচ, কাউকেও করবে সমুন্নত’ অর্থাৎ কিয়ামত কিছু মানুষকে তাদের খারাপ আমলের জন্য লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবে। যেমন কাফিররা মুনাফিকরা কিয়ামতের দিন লাঞ্ছিত ও অপদস্থ হবে। আর যারা মু’মিন তারা সেদিন হবে সম্মানিত, সুউচ্চ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَمَنْ يَّأْتِه۪ مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصّٰلِحٰتِ فَأُولٰ۬ئِكَ لَهُمُ الدَّرَجٰتُ الْعُلٰي)
“এবং যারা তাঁর নিকট উপস্থিত হবে মু’মিন অবস্থায় সৎকর্ম করে, তাদের জন্য আছে সমুচ্চ মর্যাদা।” (সূরা ত্বা-হা ২০ : ৭৫)
(رُجَّتِ الْأَرْضُ رَجًّا)
‘যখন প্রবল কম্পণে পৃথিবী প্রকম্পিত হবে’ - رجا অর্থ নড়াচড়া করা, অস্থিরতা, কম্পন। যেমন সূরা আয্ যিলযালে বলা হয়েছে :
(إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ زِلْزَالَهَا)
“যখন পৃথিবীকে তার কম্পনে প্রকম্পিত করা হবে” (সূরা আয্ যিলযা-ল ৯৯ : ১)
بَسًّا অর্থ : চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ পাহাড়গুলো চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে তুলার মতো পাতলা হয়ে উড়বে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَتَكُوْنُ الْـجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوْشِ)
“এবং পর্বতমালা হবে ধুনিত রঙীন পশমের মত।” (সূরা আল ক্বা-রি‘আহ্ ১০১ : ৫)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(يَوْمَ تَرْجُفُ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ وَكَانَتِ الْجِبَالُ كَثِيْبًا مَّهِيْلًا)
“(এসব হবে) সেদিন যেদিন পৃথিবী ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ বহমান বালুকারাশির ন্যায় হবে।” (আল মুয্যাম্মিল ৭৩ : ১৪)
أَزْوَاجًا -এর অর্থ : أصناف তথা শ্রেণি, দল। অর্থাৎ তোমরা সেদিন তিন শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা সে তিন শ্রেণির কথা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরছেন :
(১) (فَأَصْحٰبُ الْمَيْمَنَةِ)
অর্থাৎ এরা সাধারণ মু’মিন, যাদেরকে তাদের আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে। এজন্য এদেরকে আসহাবুল ইয়ামিন বা ডানপন্থী বলা হয়।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَأَصْحٰبُ الْيَمِيْنِ مَآ أَصْحٰبُ الْيَمِيْنِ ط فِيْ سِدْرٍ مَّخْضُوْدٍ)
“আর ডান দিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! (তারা থাকবে এক উদ্যানে,) সেখানে আছে কাঁটাবিহীন বরই গাছ।” (সূরা ওয়াকিআহ্ ৫৬ : ২৭-২৮)
(২) (وَأَصْحٰبُ الْمَشْئَمَةِ)
এরা হলো কাফির শ্রেণি যারা আল্লাহ তা‘আলা, রাসূল ও পরকালে বিশ্বাস রাখত না। এদের আমলনামা বাম হাতে দেয়া হবে। এ জন্য এদেরকে বামপন্থীও বলা হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَأَصْحٰبُ الشِّمَالِ مَآ أَصْحٰبُ الشِّمَالِ فِيْ سَمُوْمٍ وَّحَمِيْمٍ)
“আর বাম দিকের দল, কত হতভাগা বাম দিকের দল! তারা থাকবে উত্তপ্ত বাতাস ও উত্তপ্ত পানিতে।” (আল ওয়াকিআহ্ ৫৬ : ৪১-৪২) এদের আমলনামা পিছন দিক থেকেও দেয়া হবে।
(৩) (وَالسَّابِقُوْنَ السَّابِقُوْنَ)
এরা হলো বিশিষ্ট মু’মিন, যারা ঈমান ও আমলে অগ্রগামী। এদের মধ্যে নাবী, রাসূল, সিদ্দিক ও শহীদগণ শামিল।
এ তিন প্রকারের কথা উল্টাভাবে আবার এ সূরার ৮৮-৯৪ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : কিয়ামতের দিন মানুষ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত হবে।
(১) এক শ্রেণি আরশের ডান পাশে থাকবে। এরা আদম (আঃ)-এর ডান পার্শ্বদেশ থেকে জন্ম নিয়েছিল। এদের আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে। এদেরকে ডান দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। এরা হলো জান্নাতীদের সাধারণ দল।
(২) এ শ্রেণি আরশের বাম পাশে থাকবে। এরা আদম (আঃ)-এর বাম পার্শ্বদেশ থেকে জন্ম নিয়েছিল। এদেরকে বাম হাতে আমলনামা দেয়া হবে এবং এদেরকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। এরা জাহান্নামী।
(৩) এরা আল্লাহ তা‘আলার সামনে থাকবে। এরা হবেন বিশিষ্ট দল। এরা ডানপন্থীদের চেয়ে বেশি মর্যাদাবান ও নৈকট্য লাভকারী। এদের সংখ্যা ডানপন্থীদের চেয়ে কম হবে।
উপরোক্ত তিন শ্রেণির কথা অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা তুলে ধরে বলেন :
(ثُمَّ أَوْرَثْنَا الْكِتٰبَ الَّذِيْنَ اصْطَفَيْنَا مِنْ عِبَادِنَا ج فَمِنْهُمْ ظٰلِمٌ لِّنَفْسِه۪ ج وَمِنْهُمْ مُّقْتَصِدٌ ج وَمِنْهُمْ سَابِقٌۭ بِالْخَيْرٰتِ بِإِذْنِ اللّٰهِ ط ذٰلِكَ هُوَ الْفَضْلُ الْكَبِيْرُ)
“অতঃপর আমি এ কিতাবের অধিকারী করেছি তাদেরকে, যাদেরকে আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে পছন্দ করেছি। তবে তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের প্রতি অত্যাচারী, তাদের কেউ কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী এবং তাদের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর ইচ্ছায় নেক কাজে অগ্রবর্তী। এটাই বড় সাফল্য।” (সূরা আল ফাতির ৩৫ : ৩২, ইবনু কাসীর) মি‘রাজের হাদীসে এসেছে; নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : যখন আমরা দুনিয়ার আকাশে উঠলাম তখন এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম, তার ডান পাশে কিছু লোক ও বাম পাশে কিছু লোক। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : তিনি যখন ডান পাশে তাকান তখন হাসেন আর যখন বাম পাশে তাকান তখন কাঁদেন। তিনি বললেন : সৎ নাবী ও সৎ সন্তানকে স্বাগতম। আমি বললাম, হে জিরবীল এ ব্যক্তি কে? জিবরীল (আঃ) বলল : তিনি আদম (আঃ), তার ডান ও বাম পাশের লোকেরা তার সন্তান। ডান পাশের ব্যক্তিরা জান্নাতী আর বাম পাশের ব্যক্তির জাহান্নামী। (সহীহ বুখারী হা. ৩৪৯, সহীহ মুসলিম হা. ১৬৩)
আমরা যেন ডান পাশের ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হতে পারি সে জন্য যথাসম্ভব সৎ আমল করতে হবে। কেননা প্রত্যেককে সে আমলের জন্য সুযোগ করে দেওয়া হয় যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. কিয়ামত অবশ্যই ঘটবে। অতএব তার প্রতি ঈমান আনার সাথে সাথে সে দিনের ভয়াবহ অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য সৎ আমল করতে হবে।
২. কিয়ামতের পূর্বে জমিন, পাহাড়ের যে ভয়ানক অবস্থা হবে সে কথা জানতে পারলাম।
৩. সেদিন মানুষ তিন দলে প্রকাশ পাবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নৈকট্যশীলগণের মধ্যে শামিল করে নিন। আমীন!
9 Fozlur Rahman
সুখের জান্নাতে (থাকবে)।
10 Mokhtasar Bangla
১২. তারা ভোগসামগ্রী দ্বারা পরিপূর্ণ উদ্যানসমূহে অবস্থান করবে। যথায় তারা নানারূপ ভোগসামগ্রী উপভোগ করবে।
11 Tafsir Ibn Kathir
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, একদা হযরত আবু বকর (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি তো বৃদ্ধ হয়ে পড়লেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “হ্যাঁ, আমাকে সূরায়ে হূদ, সূরায়ে ওয়াকিআহ, সূরায়ে মুরসালাত, সূরায়ে আম্মা ইয়াতাসাআলুন এবং সূরায়ে ইশ শামসু কুওভিরাত বৃদ্ধ করে ফেলেছে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এটাকে হাসান গারীব বলেছেন)
হযরত আবু যাবিরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবদুল্লাহ রোগাক্রান্ত হন, যে রোগে তিনি মৃত্যুবরণ করেন, তাঁর ঐ রোগের সময় হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) তাঁকে দেখতে যান। তাকে তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “আপনার অভিযোগ কি?” হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ “আমার পাপরাশি।” হযরত উসমান আবার প্রশ্ন করেনঃ “আপনার আকাক্ষা কি?" তিনি জবাব দেনঃ “আমার প্রতিপালকের রহমত।” হযরত উসমান (রাঃ) প্রশ্ন করেনঃ “কোন ডাক্তারকে পাঠিয়ে দেবো কি?" উত্তরে তিনি বললেনঃ “ডাক্তারই তো আমাকে রোগাক্রান্ত করেছেন?” হযরত উসমান (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ “আপনার জন্যে কিছু মাল পাঠাবার নির্দেশ দিবো কি?” তিনি উত্তর দিলেনঃ “আমার মালের কোন প্রয়োজন নেই।” হযরত উসমান (রাঃ) বলেনঃ “আপনার পরে আপনার সন্তানদের কাজে লাগবে?” তিনি বললেনঃ “আমার সন্তানরা দরিদ্র হয়ে পড়বে আপনি এ আশংকা করেন? তাহলে জেনে রাখুন যে, আমি আমার সন্তানদেরকে প্রতি রাত্রে সূরায়ে ওয়াকিআহ পাঠের নির্দেশ দিয়েছি। আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “যে ব্যক্তি প্রতি রাত্রে সূরায়ে ওয়াকিআহ পাঠ করবে সে কখনো অভাবগ্রস্ত হবে না বা না খেয়ে থাকবে না।” (এ হাদীসটি ইবনে আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এ হাদীসের বর্ণনাকারী আবূ যাবিয়াহ (রাঃ) কখনো এ সূরাটি রাত্রে পাঠ ছাড়তেন না।
হযরত সাম্মাক ইবনে হারব (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি হযরত জাবির ইবনে সামরা (রাঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “তোমরা আজ যেভাবে তোমাদের নামায পড়ছে, রাসূলুল্লাহও (সঃ) এভাবেই নামায পড়তেন। তবে তোমাদের নামাযের চেয়ে তাঁর নামায তিনি হালকা করতেন। তিনি ফজরের নামাযে সূরায়ে ওয়াকিআহ এবং এ ধরনের সূরাগুলো তিলাওয়াত করতেন।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)
১-১২ নং আয়াতের তাফসীর:
ওয়াকিয়াহ কিয়ামতের নাম। কেননা, এটা সংঘটিত হওয়া সুনিশ্চিত। যেমন অন্য আয়াতে আছেঃ
فَیَوْمَىٕذٍ وَّقَعَتِ الْوَاقِعَةُ
অর্থাৎ “সেই দিন কিয়ামত সংঘটিত হয়ে যাবে।” (৬৯:১৫) এটার সংঘটন অবশ্যম্ভাবী। না এটাকে কেউ টলাতে পারে, না কেউ হটাতে পারে। এটা নির্ধারিত সময়ে সংঘটিত হবেই। যেমন অন্য আয়াতে আছেঃ
اِسْتَجِیْبُوْا لِرَبِّكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ یَّاْتِیَ یَوْمٌ لَّا مَرَدَّ لَهٗ مِنَ اللّٰهِ
অর্থাৎ “তোমাদের প্রতিপালকের ডাকে সাড়া দাও ঐ দিন আসার পূর্বে যাকে কেউ প্রতিরোধ করতে পারবে না।” (৪২:৪৭) অন্য জায়গায় রয়েছেঃ
سَاَلَ سَآىٕلٌۢ بِعَذَابٍ وَّاقِعٍ ـ لِّلْكٰفِرِیْنَ لَیْسَ لَهٗ دَافِعٌ
অর্থাৎ “এক ব্যক্তি চাইলো সংঘটিত হোক শাস্তি যা অবধারিত কাফিরদের জন্যে, এটা প্রতিরোধ করার কেউ নেই।” (৭০:১-২) অন্য আয়াতে আছেঃ
وَ یَوْمَ یَقُوْلُ كُنْ فَیَكُوْنُ قَوْلُهُ الْحَقُّ وَ لَهُ الْمُلْكُ یَوْمَ یُنْفَخُ فِی الصُّوْرِ عٰلِمُ الْغَیْبِ وَ الشَّهَادَةِ وَ هُوَ الْحَكِیْمُ الْخَبِیْرُ
অর্থাৎ যেই দিন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ হয়ে যাও, তখন হয়ে যাবে। তারই কথা সত্য, রাজত্ব তাঁরই, যেই দিন শিঙ্গায় ফুস্কার দেয়া হবে, তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি বিজ্ঞানময়, সম্যক অবগত।” (৬:৭৩)
কিয়ামত সংঘটনে কোন সন্দেহ নেই, বরং এটা চরম সত্য, এটা অবশ্যই সংঘটিত হবে।
كَاذِبَة 'শব্দটি مَصْدَر যেমন عَاقِبَة ও عَافِيَة শব্দ দুটি মাসদার। এটা কাউকেও করবে নীচ, কাউকেও করবে সমুন্নত। ঐদিন বহু লোক নীচতম ও হীনতম হয়ে যাবে এবং জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে যারা দুনিয়ায় সম্মানিত ও মর্যাদাবান ছিল। পক্ষান্তরে বহু লোক সেদিন সমুন্নত হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে যদিও তারা দুনিয়ায় নিম্নশ্রেণীর লোক ছিল এবং মর্যাদার অধিকারী ছিল না। সেই দিন আল্লাহর শত্রুরা লাঞ্ছিত ও অপদস্থ অবস্থায় জাহান্নামে চলে যাবে। আর তাঁর বন্ধু ও ভক্তরা সম্মানিত অবস্থায় জান্নাতে চলে যাবে। ঐদিন অহংকারীরা হবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত এবং বিনয়ীরা হবে সম্মানিত। এই কিয়ামত নিকটের ও দূরের লোকদেরকে সতর্ক করে দিবে। এটা নীচু হবে এবং নিকটের লোকদেরকে শুনিয়ে দিবে। তারপর উঁচু হবে এবং দূরের লোকদেরকে শুনাবে। পৃথিবী প্রবল কম্পনে প্রকম্পিত হবে এবং হেলা দোলা শুরু করবে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ
اِذَا زُلْزِلَتِ الْاَرْضُ زِلْزَالَهَا
অর্থাৎ “পৃথিবী যখন আপন কম্পনে প্রবলভাবে প্রকম্পিত হবে।" (৯৯:১) আর এক জায়গায় আছেঃ
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْ اِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَیْءٌ عَظِیْمٌ
অর্থাৎ “হে মানবমণ্ডলী! ভয় কর তোমাদের প্রতিপালককে, কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ংকর ব্যাপার।” (২২:১)।
এরপর বলেনঃ পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়বে। অন্য জায়গায় রয়েছেঃ كَثِيْبًا مَّهِيْلًا অর্থাৎ “পর্বতসমূহ বহমান বালুকারাশিতে পরিণত হবে।" (৭৩:১৪) আর এখানে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ ফলে ওটা পর্যবসিত হবে উৎক্ষিপ্ত ধূলি-কণায়।
هَبَآءً ঐ অগ্নিস্ফুলিঙ্গকেও বলা হয় যেগুলো আগুন জ্বালাবার সময় পতঙ্গের মত উড়তে থাকে এবং উড়তে উড়তে নীচে পড়ে গিয়ে হারিয়ে যায়, কিছুই থাকে না।
مُنْبِت ঐ জিনিসকে বলা হয় যাকে বাতাস উপরে তোলে নেয় এবং ছড়িয়ে দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। যেমন শুষ্ক পাতার গুঁড়াকে বাতাস এদিক-ওদিক করে দেয়। এই ধরনের আরো বহু আয়াত রয়েছে যেগুলো দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, পাহাড় স্বীয় জায়গা হতে সরে পড়বে এবং চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমরা বিভক্ত হয়ে পড়বে তিন শ্রেণীতে। একটি দল আরশের ডান দিকে হবে। তারা হবে ঐসব লোক যারা হযরত আদম (আঃ)-এর ডান পার্শ্বদেশ হতে বের হয়েছিল এবং যাদের ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে। তাদেরকে ডান দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। এটা হবে জান্নাতীদের সাধারণ দল। দ্বিতীয় দলটি আরশের বাম দিকে হবে। এরা হবে ঐসব লোক যাদেরকে হযরত আদম (আঃ)-এর বাম পার্শ্বদেশ হতে বের করা হয়েছিল। এদের বাম হাতে। আমলনামা দেয়া হবে এবং এদেরকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। এরা সব জাহান্নামী। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে রক্ষা করুন!
তৃতীয় দলটি মহামহিমান্বিত আল্লাহর সামনে হবেন। তারা হবেন বিশিষ্ট ল। তারা আসহাবুল ইয়ামীনের চেয়েও বেশী মর্যাদাবান ও নৈকট্য লাভকারী ।। ভরা হবেন জান্নাতবাসীদের নেতা। তাদের মধ্যে রয়েছেন নবী, রাসূল, সিদ্দীক ও শহীদগণ। ডান দিকের লোকদের চেয়ে তারা সংখ্যায় কম হবেন। সুতরাং হাশরের ময়দানে সমস্ত মানুষ এই তিন শ্রেণীরই থাকবে, যেমন এই সূরার শেষে সংক্ষিপ্তভাবে তাদের এই তিনটি ভাগই করা হয়েছে। অনুরূপভাবে অন্য জায়গায় বর্ণিত হয়েছেঃ
ثُمَّ اَوْرَثْنَا الْكِتٰبَ الَّذِیْنَ اصْطَفَیْنَا مِنْ عِبَادِنَا فَمِنْهُمْ ظَالِمٌ لِّنَفْسِهٖ وَ مِنْهُمْ مُّقْتَصِدٌ وَ مِنْهُمْ سَابِقٌۢ بِالْخَیْرٰتِ بِاِذْنِ اللّٰهِ
অর্থাৎ “অতঃপর আমি কিতাবের অধিকারী করলাম আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে যাদেরকে আমি মনোনীত করেছি; তবে তাদের কেউ নিজের প্রতি অত্যাচারী, কেউ মধ্যপন্থী এবং কেউ আল্লাহর ইচ্ছায় কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী।” (৩৫:৩২) সুতরাং এখানেও তিন শ্রেণী রয়েছে। এটা ঐ সময়, যখন ظَالِمٌ لِّنَفْسِهٖ-এর ঐ তাফসীর নেয়া হবে যা এটা অনুযায়ী হয়, অন্যথায় অন্য একটি উক্তি রয়েছে যা এই আয়াতের তাফসীরের স্থলে গত হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ গুরুজনও এটাই বলেছেন। দু'টি দল তো জান্নাতী এবং একটি দল জাহান্নামী।
হযরত নুমান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ
وَ اِذَا النُّفُوْسُ زُوِّجَتْ
অর্থাৎ “দেহে যখন আত্মা পুনঃ সংযোজিত হবে” (৮১:৭) বিভিন্ন প্রকারের অর্থাৎ প্রত্যেক আমলের আমলকারীর একটি দল হবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ তোমরা বিভক্ত হবে তিন শ্রেণীতে। ডান দিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল! আর বাম দিকের দল, কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! আর অগ্রবর্তীগণই তো অগ্রবর্তী, তারাই নৈকট্য প্রাপ্ত।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)
وَ اَصْحٰبُ الْیَمِیْنِ مَاۤ اَصْحٰبُ الْیَمِیْنِ ـ ـ ـ وَ اَصْحٰبُ الشِّمَالِ مَاۤ اَصْحٰبُ الشِّمَالِ
আয়াতগুলো পাঠ করেন, অতঃপর তার হস্তদ্বয়ের মুষ্টি বন্ধ করেন এবং বলেনঃ এগুলো জান্নাতী এবং আমি কোন পরোয়া করি না, আর এগুলো জাহান্নামী এবং আমার কোন পরোয়া নেই।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহর ছায়ার দিকে সর্বপ্রথম কোন্ লোকগুলো যাবে তা তোমরা জান কি?” সাহাবীগণ (রাঃ) উত্তর দেনঃ “আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই (সঃ) ভাল জানেন। তিনি তখন বললেনঃ “তারা হলো ঐ লোক যে, যখন তাদেরকে তাদের হক প্রদান করা হয় তখন তারা তা কবুল করে, তাদের উপর অন্যের হক থাকলে তা চাওয়া মাত্রই দিয়ে দেয় এবং তারা লোকদেরকে ঐ হুকুম করে যে হুকুম তাদের নিজেদেরকে করে।” (এ হাদীসটিও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)
সাবেকুন বা অগ্রবর্তী তোক কারা এ ব্যাপারে বহু উক্তি রয়েছে। যেমন নবীগণ, ইল্লীঈনবাসীগণ, হয়রত ইউশা ইবনে নুন যিনি হযরত মূসা (আঃ)-এর উপর সর্বপ্রথম ঈমান এনেছিলেন, ঐ মুমিনরা যাদের বর্ণনা সরায়ে ইয়াসীনে। রয়েছে, যারা হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর প্রথমে ঈমান এনেছিলেন, হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর প্রতি অগ্রগামী ছিলেন, ঐ লোকগুলো, যারা দুই কিবলামুখী হয়ে নামায পড়েছেন, প্রত্যেক উম্মতের ঐ লোকগুলো যারা নিজ নিজ নবীর উপর পূর্বে ঈমান এনেছিলেন, ঐ লোকগুলো, যারা সর্বাগ্রে জিহাদে গমন করেন। প্রকৃতপক্ষে এই উক্তিগুলো সবই সঠিক অর্থাৎ এই লোকগুলোই অগ্রবর্তী। যারা আগে বেড়ে গিয়ে অন্যদের উপর অগ্রবর্তী হয়ে আল্লাহ তা'আলার ফরমান কবুল করে থাকেন তারা সবাই সাবেকুনের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ
وَ سَارِعُوْۤا اِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَ جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ
অর্থাৎ “তোমরা ধাবমান হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও যমীনের ন্যায়।” (৩:১৩৩) আর এক জায়গায় বলেনঃ
سَابِقُوْۤا اِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَ جَنَّةٍ عَرْضُهَا كَعَرْضِ السَّمَآءِ وَ الْاَرْضِ
অর্থাৎ “তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে অগ্রগামী হও এবং এমন জান্নাতের দিকে যার প্রস্থ বা বিস্তৃতি আকাশ ও পৃথিবীর বিস্তৃতির মত।” (৫৭:২১) সুতরাং এই দুনিয়ায় যে ব্যক্তি পুণ্যের কাজে অগ্রগামী হবে, সে আখিরাতে আল্লাহ তা'আলার নিয়ামতের দিকেও অগ্রবর্তীই থাকবে। প্রত্যেক আমলের প্রতিদান ঐ শ্রেণীরই হয়ে থাকে। যেমন সে আমল করে তেমনই সে ফল পায়। এ জন্যেই মহান আল্লাহ এখানে বলেনঃ তারাই নৈকট্য প্রাপ্ত, তারাই থাকবে সুখদ উদ্যানে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ফেরেশতাগণ আল্লাহ তাআলার নিকট আরয করেনঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! আদম সন্তানের জন্যে আপনি দুনিয়া বানিয়েছেন, সেখানে তারা পানাহার করে থাকে এবং বিয়ে-শাদী করে থাকে। সুতরাং আখিরাত আপনি আমাদের জন্যেই করুন।” উত্তরে আল্লাহ তা'আলা বললেনঃ “আমি এরূপ করবে না।” ফেরেশতারা তিনবার প্রার্থনা করলেন। তখন আল্লাহ তা'আলা বললেনঃ “যাকে আমি নিজের হাতে সৃষ্টি করেছি তাকে কখনো তাদের মত করবে না যাদেরকে আমি শুধু كُنْ শব্দ দ্বারা সৃষ্টি করেছি।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম রাযীও (রঃ) তার কিতাবুররাদ্দে আলাল জাহমিয়্যাহ’ নামক কিতাবে এই আসারটি আনয়ন করেছেন। এর শব্দগুলো হলোঃ মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “যাকে আমি আমার নিজের হাতে সৃষ্টি করেছি তার সৎ সন্তানদেরকে ওর মত করবে না যাকে আমি বলেছিঃ হয়ে যাও’ তখন হয়ে গেছে”)