আল ওয়াক্বিয়া আয়াত ৯৬
فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيْمِ ࣖ ( الواقعة: ٩٦ )
Fasabbih bismi rabbikal 'azeem (al-Wāqiʿah ৫৬:৯৬)
English Sahih:
So exalt the name of your Lord, the Most Great. (Al-Waqi'ah [56] : 96)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
কাজেই তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের গৌরব ও মহিমা ঘোষণা কর। (আল ওয়াক্বিয়া [৫৬] : ৯৬)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
অতএব, তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর। [১]
[১] হাদীসে এসেছে যে, দু'টি বাক্য আল্লাহর নিকট অতি প্রিয়, মুখে বলতে খুবই সহজ এবং দাঁড়ি-পাল্লায় হবে খুবই ভারী। আর তা হল, سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ)) (বুখারীঃ সর্বশেষ হাদীস, মুসলিম)
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
অতএব আপনি আপনার মহান রবের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন [১]।
[১] সুরার উপসংহারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলা হয়েছে যে, আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামে পবিত্ৰতা ঘোষণা করুন। এতে সালাতের ভিতরে ও বাইরের সব তাসবীহ দাখিল রয়েছে। খোদ সালাতকেও মাঝে মাঝে তসবীহ বলে ব্যক্ত করা হয়। এমতাবস্থায় এটা সালাতের প্রতি গুরুত্বদানেরও আদেশ হয়ে যাবে। তাসবীহ পাঠের বিভিন্ন ফযীলত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যদি কেউ বলে "সুবহানাল্লাহিল “আজিম ওয়া বিহামদিহী” জান্নাতে তার জন্য একটি খেজুর গাছ রোপন করা হয়।” [তিরমিয়ী; ৩৪৬৪, ৩৪৬৫] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “দু'টি এমন বাক্য রয়েছে যা জিহবার উপর হাল্কা, মীযানের পাল্লায় ভারী, রাহমানের নিকট প্রিয়, তা হচ্ছে, “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল ‘আযীম” ৷ [বুখারী; ৬৪০৬, ৬৬৮২, ৭৫৬৩, মুসলিম; ২৬৯৪]
3 Tafsir Bayaan Foundation
অতএব তোমার মহান রবের নামে তাসবীহ পাঠ কর।
4 Muhiuddin Khan
অতএব, আপনি আপনার মহান পালনকর্তার নামে পবিত্রতা ঘোষণা করুন।
5 Zohurul Hoque
সুতরাং তোমার সর্বশক্তিমান প্রভুর নামের জপতপ করো।
6 Mufti Taqi Usmani
সুতরাং (হে রাসূল!) তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নাম নিয়ে তার তাসবীহ পাঠ কর।
7 Mujibur Rahman
অতএব তুমি তোমার মহান রবের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।
8 Tafsir Fathul Mazid
৮৮-৯৬ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
এখানে আল্লাহ তা‘আলা প্রাগুক্ত তিন শ্রেণির মানুষের মৃত্যু ও পুনরুত্থানকালীন মর্যদাগত পার্থক্যের বর্ণনা করছেন। আলোচ্য আয়াতে তার প্রথম শ্রেণির কথা বলা হচ্ছে, যাদেরকে নৈকট্যপ্রাপ্ত বলা হয়। অর্থাৎ মুমূর্ষু ব্যক্তি যদি السَّابِقُوْنَ বা নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হয় তাহলে তার জন্য রয়েছে উত্তম রিযিক, সুঘ্রাণ ও সুখময় জান্নাত যার সুসংবাদ ফেরেশতাগ.ণ মৃত্যুকালীন সময়ে প্রদান করেন। যেমন হাদীসে এসেছে : নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তির আত্মা কবয করার সময় রহমতের ফেরেশতা বলবে : হে পবিত্রআত্মা যা পবিত্র দেহে ছিলে, তুমি তাকে উত্তমভাবে পরিচালনা করেছো, আরাম ও বিশ্রামের দিকে বেরিয়ে আস, তোমার প্রতিপালক কখনো তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হবেন না। (ইবনু মাযাহ হা. ৪২৬২, সহীহ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : رَوْحٌ অর্থ : বিশ্রাম رَيْحَانٌ অর্থ আরাম। এছাড়া এ ব্যাপারে অনেক উক্তি বর্ণিত আছে। (ইবনু কাসীর) আয়িশাহ (রাঃ) বলেন : নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) فَرُوحٌ (রা অক্ষরে পেশ দিয়ে) পড়তেন। (তিরমিযী হা. ২৯৩৮, আবূ দাঊদ হা. ৩৯৯১, সহীহ) অর্থ হল : জান্নাতে তার অবস্থান ও সাচ্ছন্দ্য জীবন, এটাই হল রহমত যা হাসান বাসরী (রহঃ) তাফসীর করেছেন (কুরতুবী)।
দ্বিতীয় শ্রেণী হলো : যারা ডান হাতে আমলনামা পাবে। এরা হল সাধারণ মু’মিন। ফেরেশতাগণ এসব মু’মিনদের মৃত্যুকালীন সময়ে সুসংবাদ দিয়ে বলবে : তোমার প্রতি সালাম, অর্থাৎ তোমার কোন অসুবিধা নেই, তুমি শান্তিতে থাকবে, তুমি ডানপন্থীদের মধ্যে শামিল। কাতাদাহ ও ইকরিমা (রহঃ) বলেন : ফেরেশতারা সালাম দেবে। (ইবনে কাসীর)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
( اِنَّ الَّذِیْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللہُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَیْھِمُ الْمَلٰ۬ئِکَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِیْ کُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَﭭ نَحْنُ اَوْلِیٰ۬ؤُکُمْ فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَفِی الْاٰخِرَةِﺆ وَلَکُمْ فِیْھَا مَا تَشْتَھِیْٓ اَنْفُسُکُمْ وَلَکُمْ فِیْھَا مَا تَدَّعُوْنَﭮﺚنُزُلًا مِّنْ غَفُوْرٍ رَّحِیْمٍﭯ)
“নিশ্চয়ই যারা বলে : আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফেরেশতা এবং বলে : তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্র“তি দেয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ পেয়ে আনন্দিত হও। আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে; সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমরা চাইবে। এটা হল ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হতে আপ্যায়ন।” (সূরা ফুসসিলাত ৪১ : ৩০-৩২)
তৃতীয় শ্রেণী হলো : কাফির বেইমান। মৃত্যুকালীন সময়ে আযাবের ফেরেশতারা জাহান্নামের অসহনীয় শাস্তির ভয় দেখাবে এসব সত্য বিবরণ তুলে ধরার পর আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলছেন : সুতরাং তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।
(إِنَّ هٰذَا لَهُوَ حَقُّ الْيَقِيْنِ)
‘নিশ্চয়ই এটা চূড়ান্ত সত্য’ অর্থাৎ বান্দাদের আমলানুযায়ী ভাল মন্দ যে প্রতিদানের কথা আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করলেন তা সত্য, তাতে কোন সংশয় নেই। এটা অবশ্যই সংঘটিত হবে। প্রত্যেকে তা প্রত্যক্ষ করবে এবং আমলের প্রতিদান ভোগ করবে।
(فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِيْمِ)
‘অতএব, তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর’ উকবা বিন আমের আল জুহানী (রাঃ) বলেন : যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়, তখন তিনি বলেন : এটা তোমরা তোমাদের সালাতের রুকূতে রাখ। আর যখন
(سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَي)
অবতীর্ণ হলো তখন বললেন : এটা তোমরা তোমাদের সালাতের সিজদাতে রাখ। (আবূ দাঊদ হা. ৮৬৯, ইবনু মাযাহ হা. ৮৮৭ কিন্তু হাদীসটি দুর্বল)
জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : যে ব্যক্তি
سبحان الله العظيم وبحمده
এ দু’আটি পড়বে তার জন্য জান্নাতে খেজুর গাছ রোপণ করা হবে। (তিরমিযী হা. ৩৪৬৪, ৩৪৬৫, ইবনু হিব্বান হা. ২৩৩৫, সিলসিলা সহীহাহ হা. ৬৪)
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : দুটি বাক্য যা উচ্চারণ করতে খুবই সহজ নেকীর পাল্লায় ওজনে ভারী এবং দয়াময় আল্লাহ তা‘আলার কাছে অতি প্রিয়। বাক্য দুটি হলো :
سبحان الله وبحمده وسبحان الله العظيم
মহা পবিত্র আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর জন্য সমস্ত প্রশংসা; মহা পবিত্র আল্লাহ তা‘আলা, তিনি মহামহিয়ান। (সহীহ মুসলিম, সহীহ বুখারী হা. ৭৫৬৩)
অতএব প্রত্যেক মু’মিন ব্যক্তির নৈকট্যশীল ও ডানপন্থীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য যথাযথ সৎ আমল করা উচিত এবং আল্লাহ তা‘আলার কাছে বেশি বেশি দু’আ করা উচিত যেন তিনি আমাদেরকে তাদের কাতারে শামিল করেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. তিন শ্রেণির মানুষের মাঝে যারা নৈকট্যশীল ও ডানপন্থী হবে তাদের সুখের অন্ত থাকবে না।
২. নৈকট্যপ্রাপ্ত ও ডান হাতে আমলনামা প্রাপ্তদের মৃত্যুকালীন সুসংবাদের কথা জানলাম।
৩. কাফিরদের জন্য যে জাহান্নামের শাস্তি প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে তার বিবরণ জানা গেল।
৪. যারা ঈমান আনার পর তার ওপর অটল থাকে তাদের ফযীলত জানলাম।
৫. দুটি বাক্যের (দু‘আর) ফযীলত জানলাম।
9 Fozlur Rahman
অতএব, তুমি তোমার মহান প্রভুর নামের পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর।
10 Mokhtasar Bangla
৯৬. তাই আপনি নিজ রবের মহান নামের পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তাঁকে দোষ-ত্রæটি থেকে মুক্ত ঘোষণা করুন।
11 Tafsir Ibn Kathir
৮৮-৯৬ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে ঐ অবস্থার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যা মৃত্যুর সময়, মৃত্যু যন্ত্রণার সময় এবং দুনিয়ার শেষ মুহূর্তে মানুষের হয়ে থাকে। হয়তো সে উচ্চ পর্যায়ের আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত হবে বা তার চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের হবে, যার ডান হাতে আমলনামা দেয়া হবে, কিংবা হয়তো সে হতভাগ্য হবে, যে আল্লাহ তা'আলা সম্পর্কে অজ্ঞ থেকেছে এবং সত্য পথ হতে গাফেল থেকেছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যারা আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দা, যারা তাঁর আহকামের উপর আমলকারী ছিল এবং অবাধ্যাচরণের কাজ পরিত্যাগকারী ছিল তাদেরকে তাদের মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা নানা প্রকারের সুসংবাদ শুনিয়ে থাকেন। যেমন ইতিপূর্বে হযরত বারা (রাঃ) বর্ণিত হাদীস গত হয়েছে যে, রহমতের ফেরেশতারা তাদেরকে বলেনঃ “হে পবিত্র রূহ এবং হে পবিত্র দেহধারী রূহ! বিশ্রাম ও আরামের দিকে চল, পরম করুণাময় আল্লাহর দিকে চল যিনি কখনো অসন্তুষ্ট হবেন না।
رَوْح -এর অর্থ হলো বিশ্রাম এবং رَيْحَان -এর অর্থ হলো আরাম। মোটকথা, তারা দুনিয়ার বিপদাপদ হতে বিশ্রাম ও শান্তি লাভ করে থাকে। চিরস্থায়ী শান্তি ও প্রকৃত আনন্দ আল্লাহর গোলাম তখনই লাভ করে থাকে। তারা একটা প্রশস্ততা দেখতে পায়। তাদের সামনে রিযক ও রহমত থাকে। তারা জান্নাতে আদনের দিকে ধাবিত হয়। জান্নাতের একটি সবুজ সজীব শাখা প্রকাশিত হয় এবং তখনই আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দার রূহ কবয করা হয়। এটা হযরত আবুল আলিয়া (রঃ)-এর উক্তি। মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব (রঃ) বলেন যে, মৃত্যুর পূর্বেই মরণমুখী প্রত্যেক ব্যক্তিই সে জান্নাতী কি জাহান্নামী তা জানতে পারে।
মৃত্যু-যন্ত্রণার সময়ের হাদীসগুলো যদিও আমরা সূরায়ে ইবরাহীমের یُثَبِّتُ اللّٰهُ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ ـ ـ ـ এ আয়াতের তাফসীরে আনয়ন করেছি, কিন্তু এটা এর সর্বোত্তম স্থান বলে এখানেও একটা অংশ বর্ণনা করছি।
হযরত তামীমুদ্দারী (রাঃ) নবী (সঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তা'আলা হযরত মালাকুল মাউত (আঃ)-কে বলেনঃ “তুমি আমার অমুক বান্দার নিকট যাও এবং তাকে আমার দরবারে নিয়ে এসো। আমি তাকে দুঃখ-সুখ, কষ্ট-আরাম, আনন্দ-নিরানন্দ ইত্যাদি সব কিছুরই মাধ্যমে পরীক্ষা করেছি এবং তাকে আমার চাহিদা মোতাবিক পেয়েছি। এখন আমি তাকে চিরস্থায়ী সুখ প্রদান করতে চাই। তাকে আমার খাস দরবারে পেশ কর।” মালাকুল মাউত পাঁচশ জন রহমতের ফেরেশতা এবং জান্নাতের কাফন ও জান্নাতী খোশবু সাথে নিয়ে তার নিকট আগমন করেন। যদিও রাইহান (খোশবু) একই হয়, কিন্তু এর মাথায় বিশ প্রকারের রঙ থাকে। প্রত্যেকটিরই পৃথক পৃথক সুগন্ধি রয়েছে। আর তাদের সাথে থাকে সাদা রেশম এবং তাতে থাকে মেশক বা মৃগনাভী (শেষ পর্যন্ত)।
মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে فَرَوْحٌ وَّرَيْحَانٌ অর্থাৎ رَوُح-এর رَاء অক্ষরকে পেশ দিয়ে পড়তে শুনেছেন। কিন্তু সমস্ত কারী فَرَوْح অর্থাৎ رَاء কে যবর দিয়ে পড়েছেন।
হযরত উম্মে হানী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ “মৃত্যুর পর কি আমরা পরস্পর মিলিত হবো এবং আমাদের একে অপরকে দেখবে?" উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “রূহ পাখী হয়ে যাবে যা গাছের ফল খাবে, শেষ পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে। ঐ সময় রূহ নিজ নিজ দেহের মধ্যে প্রবেশ করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। মুসনাদে আহমাদেই এ হাদীসের সহায়ক। রূপে আর একটি হাদীস রয়েছে, যার ইসনাদ খুবই উত্তম এবং মতনও খুব সবল) এ হাদীসে প্রত্যেক মুমিনের জন্যে বড়ই সুসংবাদ রয়েছে।
অন্য এক সহীহ রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, শহীদদের রূহগুলো সবুজ রঙ এর পাখীর অন্তরে অবস্থান করে, যে পাখী জান্নাতের সব জায়গায় ইচ্ছামত বিচরণ করে ও পানাহার করে এবং আরশের নীচে লটকানো লণ্ঠনে আশ্রয় নেয়।
মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, আবদুর রহমান ইবনে আবি লাইলা (রঃ) গাধায় সওয়ার হয়ে একটি জানাযার পিছনে পিছনে যাচ্ছিলেন। ঐ সময় তিনি বার্ধক্যে উপনীত হয়েছিলেন এবং তাঁর চুল দাড়ি সাদা হয়ে গিয়েছিল। ঐ সময় তিনি বলেন যে, অমুকের পুত্র অমুক তাঁর নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করে, আল্লাহ তাআলাও তার সাথে সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করে, তিনি তার সাথে সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন।” একথা শুনে সাহাবীগণ (রাঃ) মাথা ঝুকিয়ে দিয়ে কাঁদতে শুরু করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা কাঁদছো কেন?” উত্তরে তারা বলেনঃ “আমরা তো মৃত্যুকে অপছন্দ করি (তাহলে তো আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎকে আমাদের পছন্দ করা হলো না)?” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বললেনঃ “আরে, তা নয়, তা নয়। বরং এটা হলো মৃত্যুকালীন অবস্থার কথা। ঐ সময় আল্লাহর নৈক্য প্রাপ্ত বান্দাদেরকে সুখ-শান্তিময় ও আরামদায়ক জান্নাতের সুংবাদ দেয়া হয়, যার কারণে তারা লাফিয়ে উঠে এবং চায় যে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা আল্লাহর সাথে মিলিত হবে, যাতে তারা ঐ সব নিয়ামত লাভ করতে পারে। তখন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলাও তাদের সাক্ষাৎ কামনা করেন। আর যদি সে সত্য অস্বীকারকারী ও বিভ্রান্তদের অন্যতম হয় তবে তাদেরকে অত্যুষ্ণ পানির আপ্যায়ন ও জাহান্নামের দহনের সুসংবাদ দেয়া হয়, যার কারণে তারা মৃত্যুকে অপছন্দ করে এবং রূহ লুকাতে থাকে এবং তাদের মন চায় যে, কোনক্রমেই তারা আল্লাহ তাআলার নিকট হাযির হবে না। সুতরাং আল্লাহ তাআলাও তাদের সাক্ষাৎকে অপছন্দ করেন।”
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ যদি সে ডান দিকের লোকদের একজন হয় তবে মৃত্যুর ফেরেশতা তাকে সালাম দেয় এবং বলেঃ তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, তুমি আসহাবুল ইয়ামীনের অন্তর্ভুক্ত। তুমি আল্লাহর আযাব হতে নিরাপত্তা লাভ করবে। তাকে বলা হবেঃ হে দক্ষিণ পার্শ্ববর্তী! তোমার প্রতি সালাম বা শান্তি। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ
اِنَّ الَّذِیْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللّٰهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَیْهِمُ الْمَلٰٓئِكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَ لَا تَحْزَنُوْا وَ اَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِیْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ ـ نَحْنُ اَوْلِیٰٓؤُكُمْ فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَ فِی الْاٰخِرَةِ وَ لَكُمْ فِیْهَا مَا تَشْتَهِیْۤ اَنْفُسُكُمْ وَ لَكُمْ فِیْهَا مَا تَدَّعُوْنَ ـ نُزُلًا مِّنْ غَفُوْرٍ رَّحِیْمٍ
অর্থাৎ “যারা বলেঃ আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর অবিচলিত থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফেরেশতা এবং বলেঃ তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্যে আনন্দিত হও। আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে; সেথায় তোমাদের জন্যে রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং যা তোমরা ফরমায়েশ কর। এটা হলো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ হতে আপ্যায়ন।” (৪১:৩০-৩২)
ইমাম বুখারী (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলোঃ তোমার জন্যে স্বীকৃত যে, তুমি আসহাবুল ইয়ামীনের অন্তর্ভুক্ত। এটাও হতে পারে যে, সালাম এখানে দু'আর অর্থে এসেছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ কিন্তু সে যদি সত্য অস্বীকারকারী ও বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত হয় তবে তার জন্যে আপ্যায়ন রয়েছে অত্যুষ্ণ পানির দ্বারা এবং জাহান্নামের দহন রয়েছে যা নাড়ী-ভূড়ি ঝলসিয়ে দিবে।
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এটা তো ধ্রুব সত্য। অতএব, তুমি তোমার মহান প্রতিপালকের নামের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।
হযরত উকবা ইবনে আমির জুহনী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর فَسَبِّحْ بِاسْمِ رَبِّكَ الْعَظِیْمِ অবতীর্ণ হয় তখন তিনি বলেনঃ “এটা তোমরা তোমাদের রুকূতে রাখো।” আর যখন سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْاَعْلَى (৮৭:১) অবতীর্ণ হয় তখন বলেনঃ “এটাকে তোমরা তোমাদের সিজদায় রাখো।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি سُبْحَانَ اللهِ العَظِيْمِ وَبِحَمْدِهٖ বলে তার জন্যে জান্নাতে একটি গাছ রোপণ করা হয়।” ((এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দুটি বাক্য আছে যা উচ্চারণ করতে খুবই সহজ, ওযন দণ্ডের পরিমাণে খুবই ভারী এবং করুণাময় আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়, বাক্য দুটি হলোঃ سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهٖ سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ অর্থাৎ “মহা পবিত্র আল্লাহ, তার জন্যে সমস্ত প্রশংসা। মহাপবিত্র আল্লাহ, তিনি মহামহিম।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) তাঁর কিতাবের শেষে আনয়ন করেছেন)