আল মুরসালাত আয়াত ১৫
وَيْلٌ يَّوْمَىِٕذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ ( المرسلات: ١٥ )
Wailuny yawma 'izillilmukazzibeen (al-Mursalāt ৭৭:১৫)
English Sahih:
Woe, that Day, to the deniers. (Al-Mursalat [77] : 15)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
সে দিন দুর্ভোগ সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য। (আল মুরসালাত [৭৭] : ১৫)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যাজ্ঞানকারীদের জন্য। [১]
[১] وَيْلٌ অর্থাৎ, দুর্ভোগ, ধ্বংস। কেউ কেউ বলেন, وَيْلٌ জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম। এই আয়াতটির এই সূরাতে বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। কারণ, প্রত্যেক মিথ্যাবাদীর অপরাধ একে অপর হতে ভিন্ন ধরনের হবে এবং এই হিসাবে আযাবের ধরনও ভিন্ন ভিন্ন হবে। কাজেই এই 'ওয়াইল'-এরই বিভিন্ন ভাগ রয়েছে, যা ভিন্ন ভিন্ন মিথ্যাবাদীদের জন্য পৃথক পৃথকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর)
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য [১]।
[১] ويل দ্বারা উদ্দেশ্য ধ্বংস, দুর্ভোগ । অর্থাৎ কতই না দুর্ভোগ ও ধ্বংস রয়েছে সেসব লোকের জন্য, যারা সেদিনের আগমনের খবরকে মিথ্যা বলে মনে করেছিল। আল্লাহ্ তাদেরকে শপথ করে বলেছেন, কিন্তু তারা তা বিশ্বাস করে নি। ফলে তারা কঠোর ও কঠিন শাস্তির যোগ্য হয়ে উঠল। [সা‘দী]
3 Tafsir Bayaan Foundation
মিথ্যারোপকারীদের জন্য সেদিনের দুর্ভোগ!
4 Muhiuddin Khan
সেদিন মিথ্যারোপকারীদের দুর্ভোগ হবে।
5 Zohurul Hoque
ধিক্ সেইদিন সত্যপ্রত্যাখ্যানকারীদের জন্য!
6 Mufti Taqi Usmani
সে দিন বড় দুর্ভোগ হবে তাদের, যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে।
7 Mujibur Rahman
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যা আরোপকারীদের জন্য।
8 Tafsir Fathul Mazid
নামকরণ :
المرسلٰت শব্দটি المرسلة এর বহুবচন। অর্থ হল : প্রেরিত, যাকে প্রেরণ করা হয়েছে। এখানে মুরসালাত (المرسلٰت) বলতে ঐ সকল ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা বিশ্বজাহান পরিচালনা ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং শরয়ী বিষয় দিয়ে প্রেরণ করে থাকেন। এ শব্দটি অত্র সূরার প্রথম আয়াতে এসেছে। আর এখান থেকেই উক্ত নামে এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
গুরুত্ব :
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে মিনার গুহায় ছিলাম। এমনবস্থায় المرسلٰت সূরাটি অবতীর্ণ হয়। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরাটি তেলাওয়াত করলেন এবং আমি তাঁর মুখ থেকে শুনে মুখস্ত করে নিলাম। আর তাঁর মুখ এ সূরা দ্বারা সিক্ত ছিল। এমন সময় একটি সাপ আমাদের ওপর লাফিয়ে পড়ে। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : সাপটিকে মেরে ফেলো। আমরা তাড়াতাড়ি করে সাপটিকে মারতে গেলাম কিন্তু সে পালিয়ে গেল। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : সে তোমাদের অনিষ্ট হতে রক্ষা পেয়েছে এবং তোমরাও তার অনিষ্ট হতে রক্ষা পেয়েছো। (সহীহ বুখারী হা. ১৮৩০)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাঁর মাতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁর মা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাগরীবের সালাতে সূরা মুরসালাত পড়তে শুনেছেন। (মুত্তাফাকুন আলাইহি, মিশকাত হা. ৮৩২)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, ফজলের মা ইবনু আব্বাসকে এ সূরাটি পড়তে শুনতে পেলে বলেন : হে বৎস! তোমার এ ক্বিরাত আমাকে এ সূরা স্মরণ করিয়ে দিলো। এটা সবর্শেষ সূরা যা তিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখ থেকে মাগরীবের সালাতে পড়তে শুনেছেন। (সহীহ বুখারী হা. ৭৬৩)
সূরার শুরুর দিকে কয়েক শ্রেণির ফেরেশতার শপথ করা হয়েছে যারা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। তারপর কিয়ামতের দৃশ্যপটের ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ চিত্র সে সময়কার যখন রাসূলগণ সবাই মানব জাতির সাথে সমবেত হয়ে হিসাব চুকিয়ে দেবেন। তারপর আল্লাহ তা‘আলা সত্যের দাওয়াত প্রত্যাখ্যানকারীদের সাথে কী নীতি অবলম্বন করে থাকেন সে কথা আলোচনা করা হয়েছে। অতঃপর দুনিয়ার জীবনে মানুষের সূচনা, পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্তসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
১-১৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টিকারী অনেকগুলো দৃশ্য ও সুতীব্র প্রভাব বিস্তারকারী বহু বক্তব্যে এ সূরাটি পরিপূর্ণ। মনে হয় যেন প্রত্যেকটি বাক্য এক একটি জ্বলন্ত আগুনের কাঠি। সূরা আর রহমানে যেমন প্রত্যেক নেয়ামতের কথা উল্লেখ করার পর “অতঃপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে?” কথাটি বর্ণিত হয়েছে তেমনি অত্র সূরায় “সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যা আরোপকারীদের জন্য।” কথাটি বর্ণিত হয়েছে। পুরো সূরায় দশবার এ ছন্দায়িত বাণীটি পেশ করা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের শপথ করে বলছেন : পুনরুত্থান, হিসাব-নিকাশ ও আমলের প্রতিদান অবশ্যই প্রদান করা হবে। عرفا শব্দটি المرسلٰت শব্দের অবস্থা বর্ণনা করছে। অর্থাৎ যে সকল ফেরেশতা জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও কল্যাণসহ প্রেরিত হয়েছে।
الْعَاصِفٰتِ এরাও ফেরেশতা যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা প্রেরণ করেছেন। এ প্রকার ফেরেশতার গুণ বর্ণনা করতে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন عَصْفًا বা যারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশনাবলী বাস্তবায়নে দ্রুতগামী। অথবা প্রচন্ড বেগে প্রবাহিত বায়ু।
النَّاشِرٰتِ এরাও ফেরেশতা যারা প্রকাশ করে তা যা প্রকাশ করার জন্য প্রস্তুত করে। অথবা এর দ্বারা উদ্দেশ্য মেঘমালা যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা জমিনকে পুনরুজ্জীবিত করেন।
الْمُلْقِيٰتِ এরা হল ফেরেশতা যারা উত্তম নির্দেশাবলী পৌঁছে দেয়। তাহল এমন যিকির যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে রহম করেন এবং এমন কিছু স্মরণ করিয়ে দেন যাতে তাদের কল্যাণ ও উপকারিতা রয়েছে।
(عُذْرًا أَوْ نُذْرًا) অর্থাৎ
إعذارا او إنذارا للناس
যে সকল ফেরেশতারা মানুষদের ভীতি প্রদর্শন করে। (তাফসীর সা‘দী)
আবূ সালেহ (রহঃ) বলেন,
العاصفات والناشرات والفارقات والملقيات
দ্বারা ফেরেশতাদেরকে বুঝোনো হয়েছে। (ইবনু কাসীর)
(إِنَّمَا تُوْعَدُوْنَ لَوَاقِعٌ)
এ আয়াত হল পূর্বের শপথের জবাব। অর্থাৎ তোমাদেরকে যে পুনরুত্থান, আমলের প্রতিদান এবং সকলকে একত্রিত করার প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয়েছিল তা অবশ্যই সংঘটিত হবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের নিদর্শন বর্ণনা করছেন যে, সেদিন তারকার আলো থাকবেনা। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
( وَإِذَا النُّجُوْمُ انْكَدَرَتْ)
“নক্ষত্ররাজি যখন খসে পড়বে” (সূরা তাকভীর ৮১ : ২)
فُرِجَتْ অর্থ ফেটে যাবে, বিদীর্ণ হবে।
نُسِفَتْ অর্থ পাহাড়কে নিয়ে যাওয়া হবে, ফলে তার কোন আলামতই থাকবেনা।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَيَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنْسِفُهَا رَبِّيْ نَسْفًا لا فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا لا لَّا تَرٰي فِيْهَا عِوَجًا وَّلَآ أَمْتًا)
“তারা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল : ‘আমার প্রতিপালক তাদেরকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দেবেন। ‘অতঃপর তিনি তাকে পরিণত করবেন মসৃণ সমতল ময়দানে, ‘যাতে তুমি বক্রতা ও উচ্চতা দেখতে পাবে না।” (সূরা ত্বহা ২০ : ১০৫-১০৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :
(وَيَوْمَ نُسَيِّرُ الْجِبَالَ وَتَرَي الْأَرْضَ بَارِزَةً لا وَّحَشَرْنٰهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا)
“স্মরণ কর, যেদিন আমি পর্বতমালাকে করব সঞ্চালিত এবং তুমি পৃথিবীকে দেখবে উন্মুক্ত প্রান্তর, সেদিন তাদের সকলকে আমি একত্র করব এবং তাদের কাউকেও অব্যাহতি দেব না”। (সূরা কাহ্ফ ১৮ : ৪৭)
أُقِّتَتْ অর্থ : একত্রিত করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(يَوْمَ يَجْمَعُ اللّٰهُ الرُّسُلَ)
“স্মরণ কর! যেদিন আল্লাহ রাসূলগণকে একত্র করবেন।”
(لِأَيِّ يَوْمٍ أُجِّلَتْ)
‘কোন্ দিবসের জন্য বিলম্বিত করা হচ্ছে?’ যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(فَلَا تَحْسَبَنَّ اللہَ مُخْلِفَ وَعْدِھ۪ رُسُلَھ۫ﺚ اِنَّ اللہَ عَزِیْزٌ ذُو انْتِقَامٍﭾیَوْمَ تُبَدَّلُ الْاَرْضُ غَیْرَ الْاَرْضِ وَالسَّمٰوٰتُ وَبَرَزُوْا لِلہِ الْوَاحِدِ الْقَھَّارِ)
“তুমি কখনও মনে কর না যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের প্রতি প্রদত্ত প্রতিশ্র“তি ভঙ্গ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, দণ্ড-বিধায়ক। যেদিন এ পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশসমূহও; এবং মানুষ উপস্থিত হবে আল্লাহর সম্মুখে-যিনি এক, পরাক্রমশালী।” (ইবরাহীম ১৪ : ৪৭-৪৮) এটাই হল يَوْمِ الْفَصْلِ বা বিচারের দিন।
(وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ)
অর্থাৎ সে কিয়ামতের দিন কাফিরদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার শাস্তির দুর্ভোগ। বস্তুত সূরার প্রত্যেকটি আয়াত হচ্ছে এক একটি শিহরণ। ঠিক যেন কোন ব্যক্তিকে ঘড়ি ধরে এক একটা ঝাঁকুনি দিয়ে তার অপরাধ সম্পর্কে বা সত্য অস্বীকার করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, অতঃপর ‘সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যা আরোপকারীদের জন্য।’ বলে চরম একটা হুমকি দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মাখলুকের যেকোন জিনিস নিয়ে শপথ করতে পারেন, কিন্তু মানুষ আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করতে পারবে না।
২. কিয়ামত অবশ্যই পূর্ব প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী সংঘটিত হবে।
৩. যারা ঈমান ছাড়া কিয়ামতের মাঠে হাজির হবে তাদের জন্য সেদিন দুর্ভোগ।
৪. বিষাক্ত জন্তু হত্যা করা যায়েয।
9 Fozlur Rahman
সেদিন অবিশ্বাসকারীদের জন্য বড় দুর্ভোগ রয়েছে।
10 Mokhtasar Bangla
১৫. সে দিন আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলদের আনিত বিষয়াদির প্রতি মিথ্যারোপকারীদের জন্য রয়েছে ধ্বংস, শাস্তি ও বিনাশ।
11 Tafsir Ibn Kathir
সহীহ বুখারীতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ “একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে মিনার গুহায় ছিলাম এমতাবস্থায় وَالْمُرْسَلَاتِ সূরাটি অবতীর্ণ হয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) সূরাটি তিলাওয়াত করছিলেন এবং আমি তা শুনে মুখস্থ করছিলাম। হঠাৎ একটি সর্প আমাদের উপর লাফিয়ে পড়ে। তখন নবী (সঃ) বলেনঃ “সাপটিকে মেরে ফেলো।” আমরা তাড়াতাড়ি করে সাপটিকে মারতে গেলাম, কিন্তু দেখি যে, সে পালিয়ে গেছে। তখন নবী (সঃ) বললেনঃ “সে তোমাদের অনিষ্ট হতে রক্ষা পেয়েছে এবং তোমরাও তার অনিষ্ট হতে রক্ষা পেয়েছো।”
মুসনাদে আহমাদে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তাঁর মাতা (হযরত উম্মে ফযল রাঃ) নবী (সঃ)-কে وَالْمُرْسَلَاتِ عُرْفًا সূরাটি মাগরিবের নামাযে পাঠ করতে শুনতে পান। অন্য
হাদীসে আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে এ সূরাটি পড়তে শুনে হযরত উম্মে ফযল (রাঃ) বলেনঃ “হে আমার প্রিয় বৎস! তুমি এই সূরাটি পাঠ করে আমাকে এ কথাটি স্মরণ করিয়ে দিলে যে, আমি শেষ বার রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এ সূরাটি মাগরিবের নামাযে পাঠ করতে শুনেছি।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদ, সহীহ বুখারী এবং সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)
১-১৫ নং আয়াতের তাফসীর
কতকগুলো বুযুর্গ সাহাবী, তাবেয়ী প্রমুখ হতে তো বর্ণিত আছে যে, উল্লিখিত শপথগুলো এসব গুণ বিশিষ্ট ফেরেশতাদের নামে করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন যে, প্রথম চারটি শপথ হলো বায়ুর এবং পঞ্চমটি হলো ফেরেশতাদের। وَالْمُرْسَلَاتِ দ্বারা ফেরেশতারা উদ্দেশ্য কি বায়ু উদ্দেশ্য এ ব্যাপারে কেউ কেউ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা মুলতবি রেখেছেন। আর عَاصِفَات-এর ব্যাপারে বলেন যে, এর দ্বারা বায়ু উদ্দেশ্য। কেউ عَاصِفَات-এর ব্যাপারে এটাই বলেছেন, কিন্তু نَاشِرَات-এর ব্যাপারে কোন ফায়সালা করেননি। এটাও বলা হয়েছে যে, نَاشِرَات দ্বারা বৃষ্টি উদ্দেশ্য। বাহ্যতঃ তো এটাই বুঝা যাচ্ছে যে, مُرْسَلَات দ্বারা বায়ু উদ্দেশ্য। যেমন অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ وَاَرْسَلْنَا الرِّیٰحَ لَوَاقِحَ অর্থাৎ “আমি বায়ু প্রবাহিত করে থাকি যা মেঘকে (বৃষ্টিতে) ভারী করে থাকে।" (১৫:২২) আর এক জায়গায় বলেনঃ
وَ هُوَ الَّذِیْ یُرْسِلُ الرِّیٰحَ بُشْرًۢا بَیْنَ یَدَیْ رَحْمَتِهٖ
অর্থাৎ “আল্লাহ তিনিই যিনি তাঁর রহমত (বর্ষণের)-এর পূর্বে সুসংবাদদাতা হিসেবে ঠাণ্ডা বায়ু প্রবাহিত করে থাকেন।” عَاصِفَات দ্বারাও বায়ুকে বুঝানো হয়েছে। এটা হচ্ছে নরম, হালকা এবং মৃদু মন্দ বায়ু। এটা সামান্য জোরে প্রবহমান এবং অল্প শব্দকারী বায়ু। نَاشِرَات দ্বারাও উদ্দেশ্য হলো বায়ু, যা মেঘমালাকে আকাশের চতুর্দিকে ছড়িয়ে দেয় এবং আল্লাহ পাক যেদিকে হুকুম করেন সেই দিকে নিয়ে যায়। فَارِقَات এবং مُلْقِيَات দ্বারা অবশ্যই ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহ তা’আলার নির্দেশক্রমে রাসূলদের কাছে ওহী নিয়ে আসেন। যার দ্বারা সত্য-মিথ্যা, হালাল-হারাম এবং গুমরাহী ও হিদায়াতের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়, যাতে লোকদের ওযরের কোন অবকাশ না থাকে এবং সত্য প্রত্যাখ্যানকারীরা সতর্ক হয়ে যায়।
এই শপথগুলোর পর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যেই দিনের তোমাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে, যেই দিন তোমরা প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত সবাই নিজ নিজ কবর হতে পুনর্জীবিত হয়ে উথিত হবে ও নিজেদের কৃতকর্মের ফল পাবে, পূণ্যকর্মের পুরস্কার ও পাপকর্মের শাস্তি প্রাপ্ত হবে, শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং এক সমতল ময়দানে তোমরা সবাই একত্রিত হবে, এই ওয়াদা নিশ্চিত রূপে সত্য, এটা অবশ্যই হবে। ঐদিন তারকারাজি কিরণহীন হয়ে যাবে এবং ওগুলোর ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে যাবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَ اِذَا النُّجُوْمُ انْكَدَرَتْ
অর্থাৎ “যখন নক্ষত্ররাজি খসে পড়বে।” (৮১:২) আর এক জায়গায় বলেনঃ
وَ اِذَا الْكَوَاكِبُ انْتَثَرَتْ
অর্থাৎ “যখন নক্ষত্ররাজি বিক্ষিপ্তভাবে ঝরে পড়বে।” (৮২:২)।
মহান আল্লাহ বলেনঃ যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও টুকরো টুকরো হয়ে যাবে এবং পবর্তমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে উড়ে যাবে। এমনকি ওর কোন নাম নিশানাও থাকবে না। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ
وَ یَسْئَلُوْنَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ یَنْسِفُهَا رَبِّیْ نَسْفًا
অর্থাৎ “তারা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। তুমি বলে দাও- আমার প্রতিপালক ওগুলোকে সমূলে উৎপাটিত করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন।” (২০:১০৫)
ইরশাদ হচ্ছেঃ রাসূলগণকে যখন নিরূপিত সময়ে উপস্থিত করা হবে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ
یَوْمَ یَجْمَعُ اللّٰهُ الرُّسُلَ
অর্থাৎ “যেই দিন আল্লাহ রাসূলদেরকে একত্রিত করবেন।” (৫:১০৯) যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ
وَ اَشْرَقَتِ الْاَرْضُ بِنُوْرِ رَبِّهَا وَ وُضِعَ الْكِتٰبُ وَ جِایْٓءَ بِالنَّبِیّٖنَ وَ الشُّهَدَآءِ وَ قُضِیَ بَیْنَهُمْ بِالْحَقِّ وَ هُمْ لَا یُظْلَمُوْنَ
অর্থাৎ “যমীন স্বীয় প্রতিপালকের নূরে চমকিত হয়ে উঠবে, আমলনামা আনয়ন করা হবে এবং নবীগণ ও সাক্ষীগণকে উপস্থিত করা হবে। ও ইনসাফের সাথে ফায়সালা করা হবে এবং তারা অত্যাচারিত হবে না।” (৩৯:৬৯)
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ এই সমুদয় স্থগিত রাখা হয়েছে কোন্ দিবসের জন্যে? বিচার দিবসের জন্যে। বিচার দিবস সম্বন্ধে তুমি কী জান? সেই দিন দুর্ভোগ মিথ্যা আরোপকারীদের জন্যে। ঐ রাসূলদেরকে থামিয়ে রাখা হয়েছিল এই জন্যে যে, কিয়ামতের দিন ফায়সালা করা হবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
فَلَا تَحْسَبَنَّ اللّٰهَ مُخْلِفَ وَعْدِهٖ رُسُلَهٗ اِنَّ اللّٰهَ عَزِیْزٌ ذُو انْتِقَامٍ ـ یَوْمَ تُبَدَّلُ الْاَرْضُ غَیْرَ الْاَرْضِ وَ السَّمٰوٰتُ وَ بَرَزُوْا لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
অর্থাৎ “তুমি কখনো মনে করো না যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলদের প্রতি প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী। আল্লাহ পরাক্রমশালী, দণ্ড বিধায়ক। যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমণ্ডলীও , আর মানুষ উপস্থিত হবে আল্লাহর সম্মুখে, যিনি এক, পরাক্রমশালী।” (১৪:৪৭-৪৮) ঐদিনকেই এখানে ফায়সালার দিন বলা হয়েছে। স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! আমার জানিয়ে দেয়া ছাড়া তুমিও ঐ দিনের হাকীকত সম্বন্ধে অবগত হতে পার না। ঐদিনকে অস্বীকারকারীর জন্যে বড় দুর্ভোগ! একটি হাদীসে এটাও গত হয়েছে যে, অয়েল’ জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম। কিন্তু হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়।