আশ-শামস আয়াত ১৫
وَلَا يَخَافُ عُقْبٰهَا ࣖ ( الشمس: ١٥ )
Wa laa yakhaafu'uqbaahaa (aš-Šams ৯১:১৫)
English Sahih:
And He does not fear the consequence thereof. (Ash-Shams [91] : 15)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আর তিনি (তাঁর এ কাজের) কোন খারাপ পরিণতির ভয় মোটেই পোষণ করেন না। (আশ-শামস [৯১] : ১৫)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
আর তিনি ওর পরিণামকে ভয় করেন না। [১]
[১] অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলার সে ভয় নেই যে, তিনি তাদেরকে শাস্তি দিয়েছেন, ফলে কোন বৃহৎ শক্তি তার প্রতিশোধ নেবে। তিনি এ শাস্তির পরিণাম থেকে ভয়শূন্য। যেহেতু তাঁর অপেক্ষা বড় অথবা তাঁর সমতুল্য এমন কোন শক্তি নেই, যা তাঁর নিকট হতে প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারে।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর তিনি এর পরিণামকে ভয় করেন না [১]।
[১] অর্থাৎ তাদের প্রতি যে আযাব নাযিল করেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা এর কোন পরিণামের ভয় করেন না। কেননা, তিনি সবার উপর কর্তৃত্বশালী, সর্ব-নিয়ন্ত্রণকারী ও একচ্ছত্র অধিপতি। তাঁর আধিপত্য, কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার বাইরে কোন কিছুই হতে পারে না। তাঁর হুকুম-নির্দেশ তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞারই নিদর্শন। [সা‘দী]
3 Tafsir Bayaan Foundation
আর তিনি এর পরিণামকে ভয় করেন না।
4 Muhiuddin Khan
আল্লাহ তা’আলা এই ধ্বংসের কোন বিরূপ পরিণতির আশংকা করেন না।
5 Zohurul Hoque
আর তিনি এর পরিণামের জন্য ভয় করেন না।
6 Mufti Taqi Usmani
আর তিনি এর কোন মন্দ পরিণামের ভয় করেন না।
7 Mujibur Rahman
আর তিনি ওর পরিণামকে ভয় করলেন না।
8 Tafsir Fathul Mazid
নামকরণ:
الشَّمْسِ অর্থ সূর্য। সূরার প্রথম আয়াতের الشَّمْسِ শব্দ থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
সূরায় সফলকামদের বৈশিষ্ট্য এবং ব্যর্থদের ব্যর্থতার কারণ বর্ণনা করা হয়েছে।
১-১৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
কারা আখিরাতে সফলকাম আর কারা ব্যর্থ সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা ধারাবাহিকভাবে তাঁর সাতটি বড় বড় মাখলুক নিয়ে শপথ করেছেন। প্রথমেই আল্লাহ তা‘আলা সূর্যের শপথ করেছেন। এটা আল্লাহ তা‘আলার একটি অন্যতম বড় মাখলুক এবং নিদর্শন।
وَضُحٰهَا অর্থ : ضوءها বা সূর্যের আলোর শপথ। কাতাদাহ (রহঃ) বলেন : এখানে যুহা দ্বারা সারা দিন উদ্দেশ্য। ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন : এটাই সঠিক। অর্থাৎ সূর্য ও তার কিরণের শপথ, যে কিরণ সারাদিন থাকে। মূলত বিষয়টি গুরুত্ব দেয়ার জন্য কিরণের শপথ পৃথকভাবে করেছেন।
إِذَا تَلٰهَا ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : يتلو النهار বা শপথ চন্দ্রের যা সূর্য অস্তমিত হবার সাথে সাথে আগমন করে। এখান থেকে বিজ্ঞানীরা বলেছেন : চন্দ্রের নিজস্ব কোন আলো নেই, বরং সে সূর্যের আলো ধার করে চলে সে জন্য চন্দ্র সূর্যের পরে আসে।
إِذَا جَلّٰهَا অর্থ : إذا جلي الظلمة و كسفها
বা যখন অন্ধকার দূরীভূত ও মোচন করে দেয়।
إِذَا يَغْشٰهَا অর্থ : إذا يغشى الشمس حين تغيب
বা সূর্য অস্তমিত হবার সময় যখন তাকে রাত আচ্ছদিত করে নেয়।
وَمَا بَنٰهَا এখানে ما শব্দটি من বা ‘যিনি’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ শপথ আকাশের এবং যিনি তা বানিয়েছেন। তিনি হলেন আল্লাহ তা‘আলা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَالسَّمَا۬ءَ بَنَيْنٰهَا بِأَيْدٍ وَّإِنَّا لَمُوْسِعُوْنَ)
আমি আকাশ নির্মাণ করেছি আমার (নিজ) হাতে এবং আমি অবশ্যই মহা সম্প্রসারণকারী।” (সূরা জারিয়াত ৫১: ৪৭-৪৮)
وَمَا طَحٰهَا অর্থ : مد الارض ووسعها বা জমিনকে বি¯ৃ—ত ও প্রশস্ত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَالْأَرْضَ فَرَشْنٰهَا فَنِعْمَ الْمٰهِدُوْنَ )
“এবং আমি পৃথিবীকে বিছিয়ে দিয়েছি, সুতরাং আমি কত সুন্দরভাবে বিছিয়েছি।” (সূরা যারিয়াত ৫১: ৪৮)
وَّمَا سَوّٰٿھَا ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : শপথ মানুষের এবং তাকে যে সঠিক ফিতরাতের ওপর প্রতিষ্ঠিত করে সৃষ্টি করেছেন তার। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّيْنِ حَنِيْفًا ط فِطْرَتَ اللّٰهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا ط لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللّٰهِ ط ذٰلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ لا ق وَلٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ)
“অতএব তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখ; এটাই আল্লাহর ফিতরাত (প্রকৃতি) যার ওপর তিনি মানব সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল-সঠিক দীন কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।” (সূরা রূম ৩০ : ৩০)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন :
مَا مِنْ مَوْلُودٍ إِلَّا يُولَدُ عَلَي الفِطْرَةِ، فَأَبَوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ أَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ
প্রত্যেক সন্তান ফিতরাত বা ইসলামের উপর জন্ম গ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতামাতা তাকে হয় ইয়াহূদী বানায় অথবা খ্রিস্টান বা অগ্নিপূজক বানায়। (সহীহ বুখারী হা. ১৩৮৫)
(فَأَلْهَمَهَا فُجُوْرَهَا وَتَقْوٰـهَا)
অর্থাৎ মানুষকে সৃষ্টি করার পর অসৎ ও সৎ কর্মের পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর যারা অসৎ কাজ বর্জন করার মাধ্যমে নিজেকে পবিত্র করে নিতে পারল তারাই সফলকাম। পক্ষান্তরে যারা অসৎ কাজে জড়িত হয়ে নিজেকে কলুষিত করে নিয়েছে তারা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সৎ কাজ করার মাধ্যমে নিজেদের ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার তাওফীক দান করুন।
১১-১৫ নম্বর আয়াতে সালেহ -এর নিদর্শন উটনীর কথা বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে সূরা আ‘রাফের ৭৮-৮৩ নম্বর আয়াতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা যেসব জিনিসের শপথ করেন তার গুরুত্ব অপরিসীম।
২. প্রত্যেক সন্তান ইসলাম ধর্মের ওপর জন্ম নেয়। অতঃপর পিতা-মাতা যে ধর্ম বা প্রকৃতির হয় সন্তানকে সেভাবেই লালন-পালন করে গড়ে তুলে।
৩. যে ব্যক্তি নিজের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করে দীনের পথে জীবনকে অতিবাহিত করেছে সেই সফলকাম।
৪. যারা নিজেদের পাপের পংকিলতা থেকে মুক্ত করতে পারল না তারাই আখিরাতে ব্যর্থ।
9 Fozlur Rahman
তিনি এর পরিণতির ভয় করেন না।
10 Mokhtasar Bangla
১৫. আল্লাহ তাদেরকে এ ধ্বংসাত্মক শাস্তি প্রদানে কোন পরিণামকে ভয় করেন না।
11 Tafsir Ibn Kathir
১১-১৫ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ সামূদ গোত্রের লোকেরা হঠকারিতা করে এবং অহংকারের বশবর্তী হয়ে তাদের রাসূল (আঃ) কে অবিশ্বাস ও অস্বীকার করেছে। মুহাম্মদ ইবনে কাব (রঃ) বলেন, بِطَغْوٰهَا এর ভাবার্থ হলোঃ তারা সবাই মিথ্যাপ্রতিপন্ন করেছে। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই অধিক উত্তম। হযরত মুজাহিদ (রঃ) এবং হযরত কাতাদা ও (রঃ) এ কথাই বলেছেন। এ হঠকারিতা এবং মিথ্যাচারের কারণে তারা এমন দুর্ভাগ্যের সম্মুখীন হয়েছিল যে, তাদের মধ্যে যে ছিল সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে প্রস্তুত হয়ে যায়। তার নাম ছিল কিদার ইবনে সালিফ। সে হযরত সালিহর (আঃ) উন্ত্রীকে কেটে ফেলে। এ সম্পর্কে কুরআন কারীমে বলা হয়েছেঃ
فَنَادَوْا صَاحِبَهُمْ فَتَعَاطٰى فَعَقَرَ
অর্থাৎ “তারা তাদের সঙ্গীকে আহ্বান করলো, তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সে এসে গেল এবং উস্ত্রীকে মেরে ফেললো।” (৫৪:২৯) এ লোকটিও তার কওমের মধ্যে সম্মানিত ছিল। সে ছিল সদ্বংশজাত, সম্ভ্রান্ত এবং কওমের নেতা।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যামআহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একবার তাঁর ভাষণে ঐ উস্ত্রীর এবং ওর হত্যাকারীর বিষয়ে আলোচনা করেন এবং এ আয়াত তিলাওয়াত করেন। তারপর বলেনঃ “ঠিক যেন আবু যামআ’হ। এ লোকটিও কিদারের মতই নিজের কওমের নিকট প্রিয়, সম্মানিত এবং সম্ভ্রান্ত ছিল।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় তাফসীরে, ইমাম মুসলিম (রঃ) সিফাতুন্নারের মধ্যে এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম নাসাঈ (রঃ) তাফসীরের মধ্যে বর্ণনা করেছেন)
মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আলীকে (সঃ) বলেনঃ “আমি তোমাকে সারা পৃথিবীর সবচেয়ে পাপী ও নিকৃষ্ট দু’টি লোকের কথা বলছি। এক ব্যক্তি হলো সামূদ জাতির সেই নরাধম যে হযরত সালিহ্র (আঃ) উষ্ট্রীকে হত্যা করেছে, আর দ্বিতীয় হলো ঐ ব্যক্তি যে তোমার কপালে যখম করবে। তাতে তোমার শ্মশু রক্ত রঞ্জিত হয়ে যাবে।”
আল্লাহর রাসূল হযরত সালিহ (আঃ) তাঁর কওমকে বললেনঃ হে আমার কওম! তোমরা আল্লাহর উস্ত্রীর কোন ক্ষতি করা হতে বিরত থাকো। তার পানি পান করার নির্ধারিত দিনে জুলুম করে তার পানি বন্ধ করো না। তোমাদের এবং তার পানি পানের দিন তারিখ এবং সময় নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু ঐ দুবৃত্তরা নবীর (আঃ) কথা মোটেই গ্রাহ্য করলো না। এই পাপের কারণে তাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেল। তারপর তারা তাদের প্রকাশ্য মুকাবিলার জন্যে প্রস্তুত হয়ে গেল এবং ঐ উস্ত্রীকে হত্যা করলো, যাকে আল্লাহ পিতা মাতা ছাড়াই পাথরের একটা টুকরোর মধ্য হতে সৃষ্টি করেছিলেন। ঐ উষ্ট্ৰীটি ছিল হযরত সালিহ্র (আঃ) একটি মু'জিযা। এবং আল্লাহর কুদরতের পূর্ণ নিদর্শন। ফলে আল্লাহ তা'আলাও তাদের উপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হন এবং পাইকারী হারে আযাব দিয়ে তাদের সবাইকে ধ্বংস করে দেন। নবী (আঃ)-এর উষ্ট্রী হত্যাকারী ব্যক্তিকে তার সম্প্রদায়ের ছোট বড় নারী পুরুষ সবাই এ ব্যাপারে সমর্থন করেছিল এবং সবারই পরামর্শক্রমেই সেই নরাধম উষ্ট্রীকে হত্যা করেছিল। এ কারণে আল্লাহর আযাবে সবাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।
وَلَا يَخَافُ শব্দটি فَلَا يَخَافُ রূপেও পঠিত হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা কাউকে শাস্তি দিয়ে তার পরিণাম কি হবে তা চিন্তা করেন না। তারা বিগড়ে বসে কিনা সেটারও আল্লাহ তাবারাকাওয়া তাআলা কোন পরোয়া করেন না। এখানে এও অর্থ হতে পারে যে ঐ দুবৃত্ত উস্ত্রীকে মেরে ফেলেছে, কিন্তু এর পরিণামকে ভয় করেনি। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই উত্তম। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।