‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে রাজত্ব দান করেছ, আর আমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিখিয়েছ। আসমান যমীনের সৃষ্টিকর্তা! তুমিই দুনিয়ায় আর আখেরাতে আমার অভিভাবক, তুমি মুসলিম অবস্থায় আমার মৃত্যু দান করো এবং আমাকে সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করো।’
English Sahih:
My Lord, You have given me [something] of sovereignty and taught me of the interpretation of dreams. Creator of the heavens and earth, You are my protector in this world and the Hereafter. Cause me to die a Muslim and join me with the righteous."
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে রাজ্য দান করেছ[১] এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছ; [২] হে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা! তুমিই ইহলোক ও পরলোকে আমার অভিভাবক। তুমি আমাকে আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) হিসাবে মৃত্যু দান কর এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত কর।’ [৩]
[১] অর্থাৎ মিসরের রাজত্ব দান করেছ; যেমন পূর্বে বিস্তারিত উল্লেখ হয়েছে।
[২] ইউসুফ (আঃ) আল্লাহর পয়গম্বর ছিলেন, যাঁর উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে অহী অবতীর্ণ হতো এবং বিশেষ বিশেষ কথার জ্ঞান তাঁকে প্রদান করা হতো। অতএব উক্ত নবুঅতী জ্ঞানের আলোকে পয়গম্বর স্বপ্নের ব্যাখ্যাও সঠিকভাবে করে নিতেন। তথাপি মনে হচ্ছে যে, স্বপ্ন ব্যাখ্যার বিষয়ে তাঁর বিশেষ অভিজ্ঞতা ছিল। যেমন কয়েদখানার সঙ্গীদের স্বপ্নের এবং সাতটি গাভীর স্বপ্নের ব্যাখ্যা পূর্বে উল্লেখ হয়েছে।
[৩] মহান আল্লাহ ইউসুফ (আঃ)-এর উপর যেসব অনুগ্রহ করেছিলেন সেগুলিকে তিনি স্মরণ করে এবং আল্লাহর অন্যান্য গুণাবলী উল্লেখ করে দু'আ করছেন যে, মুসলিম অবস্থায় যেন আমার মৃত্যু হয় এবং আমাকে সজ্জনদের সাথে মিলিত কর। সজ্জনগণ অর্থাৎ ইউসুফ (আঃ)-এর পূর্বপুরুষ ইবরাহীম ও ইসহাক আলাইহিমাস সালাম প্রভৃতি। কতক লোক এখান হতে সংশয়ে পতিত হয়েছে যে, ইউসুফ (আঃ) মৃত্যুর দু'আ করেছিলেন। অথচ এটা মৃত্যুর দু'আ নয়, বরং আমরণ ইসলামের উপর অটল থাকার দু'আ।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
‘হে আমার রব! আপনি আমাকে রাজ্য দান করেছেন এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছেন। হে আসমানসমূহ ও যমীনের সষ্টা! আপনিই দুনিয়া ও আখিরাতে আমার অভিভাবক। আপনি আমাকে মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দিন এবং আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করুন [১]।’
[১] পিতা-মাতা ও ভাইদের সাথে সাক্ষাতের ফলে যখন জীবনে শান্তি এল, তখন সরাসরি আল্লাহ্র প্রশংসা, তাঁর কাছে দো'আয় মশগুল হয়ে গেলেন এবং বললেনঃ “হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে রাষ্ট্রক্ষমতা দান করেছেন এবং আমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিখিয়েছেন। হে আসমান ও যমীনের স্রষ্টা! আপনিই দুনিয়া ও আখেরাতে আমার কাৰ্যনির্বাহী। আমাকে পূর্ণ আনুগত্যশীল অবস্থায় দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিন এবং আমাকে পরিপূর্ণ সৎ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত রাখুন।” ‘পরিপূর্ণ সৎ বান্দা’ নবীগণই হতে পারেন। এ দো’আয় ‘খাতেমা বিলখায়ের’ অর্থাৎ অন্তিম সময়ে পূর্ণ আনুগত্যশীল হওয়ার প্রার্থনাটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। আল্লাহ্ তা'আলার প্রিয়জনদের বৈশিষ্ট্য এই যে, তারা দুনিয়া ও আখেরাতে যত উচ্চ মর্যাদাই লাভ করুন এবং যত প্রভাব-প্রতিপত্তি ও পদমর্যাদাই তাদের পদচুম্বন করুক, তারা কখনো গর্বিত হন না; বরং সর্বদাই এসব অবস্থা বিলুপ্ত হওয়ার অথবা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করতে থাকেন। তাই তারা দো’আ করতে থাকেন, যাতে আল্লাহ্-প্রদত্ত বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ নেয়ামতসমূহ জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত অব্যাহত থাকে, বরং সেগুলো আরো যেন বৃদ্ধি পায়।
3 Tafsir Bayaan Foundation
‘হে আমার রব, আপনি আমাকে কিছু রাজত্ব দান করেছেন এবং স্বপ্নের কিছু ব্যাখ্যা শিখিয়েছেন। হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, দুনিয়া ও আখিরাতে আপনিই আমার অভিভাবক, আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দিন এবং নেককারদের সাথে আমাকে যুক্ত করুন’।
4 Muhiuddin Khan
হে পালনকর্তা আপনি আমাকে রাষ্ট্রক্ষমতাও দান করেছেন এবং আমাকে বিভিন্ন তাৎপর্য সহ ব্যাখ্যা করার বিদ্যা শিখিয়ে দিয়েছেন। হে নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের স্রষ্টা, আপনিই আমার কার্যনির্বাহী ইহকাল ও পরকালে। আমাকে ইসলামের উপর মৃত্যুদান করুন এবং আমাকে স্বজনদের সাথে মিলিত করুন।
5 Zohurul Hoque
''আমার প্রভু! তুমি ইতিমধ্যেই আমাকে রাজত্বের অধিকার প্রদান করেছ এবং ঘটনাবলীর তাৎপর্য সম্পর্কে আমাকে শিক্ষাদান করেছ, হে মহাকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর আদি-স্রষ্টা! তুমিই এই দুনিয়া ও আখেরাতে আমার মনিব, আমাকে মুসলিম অবস্থায় মরতে দাও এবং আমাকে সৎকর্মীদের সঙ্গে সংযুক্ত করো।’’