১২০-১২৩ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দা, রাসূল, তার বন্ধু, নবীদের পিতা এবং বড় মর্যাদা সম্পন্ন রাসূল হযরত ইবরাহীমের (আঃ) প্রশংসা করছেন এবং মুশরিক, ইয়াহূদী ও খৃস্টানদের থেকে তাঁকে পৃথক করছেন। اُمَّة এর অর্থ হলো ইমাম, যার অনুসরণ করা হয়। قَانِت বলা হয় অনুগত ও বাধ্যকে। حَنِيْف এর অর্থ হচ্ছে শিরক থেকে সরে গিয়ে তাওহীদের দিকে আগমনকারী। এজন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেন যে, তিনি ছিলেন মুশরিকদের থেকে বিমুখ।
হযরত ইবনু মাসঊদকে (রাঃ) اُمَّة قَانِتًا এর অর্থ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “মানুষকে ভাল শিক্ষাদানকারী এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য স্বীকারকারী। হযরত ইবনু উমার (রাঃ) বলেন যে, اُمّت এর অর্থ হলো লোকদের দ্বীনের শিক্ষক।
একবার হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ “হযরত মুআয (রাঃ) اُمّت قَانِت ও حَنِيف ছিলেন।” তখন একজন লোক মনে মনে বলেনঃ “হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) ভুল বলছেন। আল্লাহর সাক্ষ্য অনুযায়ী তো এই গুনের অধিকারী ছিলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ)।” তারপর প্রকাশ্যভাবেও তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা হযরত ইবরাহীমকে (আঃ) তো اُمّت বলেছেন?” তাঁর এ কথার জবাবে হযরত ইবনু মাসউদ (রাঃ) তাঁকে বললেনঃ “তুমি اُمَّت এর অর্থ قانِت এর অর্থ জান কি? ‘উম্মত তাকেই বলা হয়, যিনি লোকদেরকে মঙ্গল শিক্ষা দেন আর ‘কানেত’ তাঁকে বলা হয় যিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সঃ) আনুগত্যের কাজে লেগে থাকেন। নিশ্চয়ই হযরত মুআয (রাঃ) এই রূপই ছিলেন।” মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ) একাকী উম্মাত ছিলেন এবং আল্লাহর হুকুমের অনুগত ছিলেন। তাঁর যুগে তিনি একাই একত্ববাদী ছিলেন, বাকী সব লোকই ছিল সেই সময় কাফির। কাতাদা (রঃ) বলেন যে, তিনি ছিলেন হিদায়াতের ইমাম এবং আল্লাহর গোলাম। তিনি আল্লাহর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন এবং তাঁর সমস্ত হুকুম মেনে চলতেন। যেমন মহান আল্লাহ স্বয়ং বলেনঃ وَ اِبْرٰهِیْمَ الَّذِیْ وَفّٰۤى অর্থাৎ “সেই ইবরাহীম (আঃ) যে পূর্ণ করেছে।” (৫৩:৩৭) অর্থাৎ আল্লাহর সমস্ত হুকুম পালন করেছে। যেমন তিনি বলেন وَ لَقَدْ اٰتَیْنَاۤ اِبْرٰهِیْمَ رُشْدَهٗ مِنْ قَبْلُ وَ كُنَّا بِهٖ عٰلِمِیْنَ অর্থাৎ “ইতিপূর্বে আমি অবশ্যই ইবরাহীমকে (আঃ) রুশ ও হিদায়াত। দান করেছিলাম এবং তাকে আমি খুব ভাল রূপেই জানতাম।” (২১:৫১)।
মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি তাকে সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করেছিলাম। সে শুধু এক ও অংশীবিহীন আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্য করতো এবং তাঁর পছন্দনীয় শরীয়তের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। আমি তাকে দ্বীন ও দুনিয়ার মঙ্গল দান করেছিলাম। পবিত্র জীবনের সমস্ত প্রয়োজনীয় উত্তমগুণ তার মধ্যে বিদ্যমান ছিল। আর আখেরাতেও নিশ্চয়ই সে সংশীলদের অন্যতম।”
তাঁর পবিত্র যিকর দুনিয়াতেও বাকী রয়েছে এবং আখেরাতেও তিনি বিরাট মর্যাদার অধিকারী হবেন। তাঁর চরমোৎকর্ষ, তার শ্রেষ্ঠত্ব তাঁর তাওহীদের প্রতি ভালবাসা এবং তাঁর ন্যায় পথে প্রতিষ্ঠিত থাকার প্রতি এমন ভাবে আলোকপাত করা হয়েছে যে, মহামহিমান্বিত আল্লাহ স্বীয় শেষ নবী হযরত মুহাম্মদকে (সঃ) নির্দেশ দিচ্ছেনঃ “হে নবী (সঃ)! তুমি একনিষ্ঠ ইবরাহীমের (আঃ) অনুসরণ কর এবং জেনে রেখো যে, সে মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না।” সূরায়ে আনআ’মে এরশাদ হয়েছেঃ قُلْ اِنَّنِیْ هَدٰىنِیْ رَبِّیْۤ اِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍ دِیْنًا قِیَمًا مِّلَّةَ اِبْرٰهِیْمَ حَنِیْفًاۚ-وَ مَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِیْنَ অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তুমি বলঃ নিশ্চয় আমার প্রতিপালক আমাকে সরল-সঠিক পথ প্রদর্শন করেছেন, যা হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত ধর্ম ও একনিষ্ঠ ইবরাহীমের (আঃ) ধর্ম, আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না।” (৬:১৬১) অতঃপর ইয়াহূদীদের উক্তির প্রতিবাদে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ