৯৩-৯৬ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আল্লাহ ইচ্ছা করলে দুনিয়ার মাযহাব ও চলার পথ একটাই হতো।” যেমন তিনি বলেছেনঃ “যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তবে হে মানুষ! তোমাদেরকে তিনি একই জাতি করতেন।” অর্থাৎ তিনি চাইলে তোমরা সবাই একই দলভূক্ত হতে। অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “তোমার প্রতিপালক যদি ইচ্ছা করতেন তবে যমীনে যত মানুষ আছে সবাই মুমিনহয়ে যেতো।” অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে প্রেম-প্রীতি ও মিল-মহব্বত থাকতো, পরস্পরের মধ্যে কোন হিংসা-বিদ্বেষ থাকতো না।
মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমার প্রতিপালক এতই ক্ষমতাবান যে, তিনি ইচ্ছা করলে সমস্ত মানুষকে একই জাতি করে দিতে পারেন। কিন্তু তোমার প্রতিপালকের যার উপর দয়া হবে সে ছাড়া সবারই মধ্যে এই মতানৈক্য ও মতবিরোধ থেকেই যাবে। এ জন্যেই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।” অনুরূপভাবেই এখানে তিনি বলেছেনঃ “কিন্তু যাকে ইচ্ছা, তিনি পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে ইচ্ছা, হিদায়াত দান করেন। অতঃপর তিনি কিয়ামতের দিন তোমাদের আমল সম্পর্কে তোমাদের সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করবেন এবং ছোট, বড়, ভাল ও মন্দ সমস্ত আমলের বিনিময় প্রদান করবেন।
এরপর তিনি মুসলমানদেরকে হিদায়াত করছেনঃ “তোমরা তোমাদের শপথ ও প্রতিশ্রুতিকে প্রবঞ্চনার মাধ্যম বানিয়ে নিয়ো না। অন্যথায় ধর্মে অটল থাকার পরেও তোমাদের পদস্খলন ঘটে যাবে। যেমন কেউ সরল সোজা পথ। থেকে ভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। আর তোমাদের এই কাজ অন্যদেরকে আল্লাহর পথ হতে বিরত রাখার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। ফলে এর দুর্ভোগ তোমাদেরকেই পোহাতে হবে। কেননা, কাফিররা যখন দেখবে যে, মুসলমানরা চুক্তি করে তা ভঙ্গ করে থাকে, তখন তাদের দ্বীনের উপর কোন আস্থা থাকবে না। সুতরাং তারা ইসলাম গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। আর যেহেতু এর কারণ হবে। তোমরাই, সেই হেতু তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।”
মহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “আল্লাহকে সামনে রেখে যে ওয়াদা অঙ্গীকার তোমরা কর এবং তাঁর শপথ করে যে চুক্তি তোমরা করে থাকো, পার্থিব লোভের বশবর্তী হয়ে তা ভঙ্গ করা তোমাদের জন্যে হারাম। যদিও এর বিনিময়ে সারা দুনিয়াও তোমাদের লাভ হয়, তথাপি ওর নিকটেও যেয়ো না। কেননা, দুনিয়া অতি নগণ্য ও তুচ্ছ। আল্লাহর নিকট যা রয়েছে তা অতি উত্তম। তার প্রতিদান ও পুরস্কারের আশা রাখো। যে ব্যক্তি আল্লাহর কথার উপর বিশ্বাস রাখবে, তাঁর কাছেই যা কিছু চাইবে এবং তাঁর আদেশ ও নিষেধ পালনার্থে নিজেরা ওয়াদা- অঙ্গীকারের হিফাযত করবে, তার জন্যে আল্লাহর কাছে যে পুরস্কার ও প্রতিদান রয়েছে তা সমস্ত দুনিয়া হতেও বহুগুণে বেশী ও উত্তম। সুতরাং এটাকে ভালরূপে জেনে নাও। অজ্ঞতা বশতঃ এমন কাজ করো না যে, তার কারণে আখেরাতের পুরস্কার নষ্ট হয়ে যায়। জেনে রেখো যে, দুনিয়ার নিয়ামত ধ্বংসশীল এবং আখেরাতের নিয়ামত অবিনশ্বর। তা কখনো শেষ হবার নয়।
আল্লাহপাক বলেনঃ “আমি শপথ করে বলেছি যে, যারা ধৈর্য ধারণ করবে, কিয়ামতের দিন আমি তাদেরকে সৎ আমলের অতি উত্তম প্রতিদান প্রদান করবো এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দেবো।”