আল হুজরাত আয়াত ৮
فَضْلًا مِّنَ اللّٰهِ وَنِعْمَةً ۗوَاللّٰهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ ( الحجرات: ٨ )
Fadlam minal laahi wa ni'mah; wallaahu 'Aleemun Hakeem (al-Ḥujurāt ৪৯:৮)
English Sahih:
[It is] as bounty from Allah and favor. And Allah is Knowing and Wise. (Al-Hujurat [49] : 8)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
(যা) আল্লাহর করুণা ও অনুগ্রহ। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (আল হুজরাত [৪৯] : ৮)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
(এটা) আল্লাহর দান ও অনুগ্রহ; আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।[১]
[১] এ আয়াতটিও সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)দের ফযীলতের অধিকারী হওয়ার এবং তাঁদের ঈমান ও হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জ্বলন্ত প্রমাণ। {وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ}
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
আল্লাহর দান ও অনুগ্রহস্বরূপ ; আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, হিকমতওয়ালা।
3 Tafsir Bayaan Foundation
আল্লাহর পক্ষ থেকে করুণা ও নিআমত স্বরূপ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
4 Muhiuddin Khan
এটা আল্লাহর কৃপা ও নিয়ামতঃ আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।
5 Zohurul Hoque
আল্লাহ্র তরফ থেকে বদান্যতা ও অনুগ্রহ! আর আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাতা, পরমজ্ঞানী।
6 Mufti Taqi Usmani
আল্লাহর পক্ষ হতে দান ও অনুগ্রহস্বরূপ। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
7 Mujibur Rahman
এটা আল্লাহর দান ও অনুগ্রহ; আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।
8 Tafsir Fathul Mazid
৬-৮ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে, অলীদ বিন উকবা (রাঃ) সম্পর্কে এ আয়াত নাযিল হয়েছে। তাঁকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বানী মুসতালিক গোত্রের যাকাত আদায় করার জন্য প্রেরণ করেছিলেন। তিনি রাস্তা থেকে ফিরে এসেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলল, তারা যাকাত দিতে অস্বীকার করেছে এবং আমাকে হত্যা করার মনন্থ করেছে (উল্লেখ্য যে, অলীদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে উক্ত গোত্রের পূর্ব শত্র“তা ছিল)। এ সংবাদের ভিত্তিতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খালেদ বিন ওয়ালিদের নেতৃত্বে তাদের বিরুদ্ধে সৈন্য প্রেরণ করলেন। কিন্ত পরক্ষণে জানতে পারলেন যে, সংবাদটি ভুল ছিল। অলীদ (রাঃ) সেখানে যাননি। ঘটনাটি আরো বিস্তারিত রয়েছে। তবে ঘটনাকে অনেকে সনদ ও বাস্তবতার দিক দিয়ে দুর্বল বলেছেন। আবার অনেকে হাসান বলেছেন। তাই এ ধরণের কথা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীদের ব্যাপারে বলা ঠিক নয়। তবে আয়াতের শানে নূযুলের প্রতি লক্ষ্য করলে বুঝা যায় যে, এতে অতি গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি নীতি বর্ণনা করা হয়েছে যা বৈষয়িক ও সামাজিক জীবনে বড় গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক সাংবাদিক ও শাসকের উচিত যে-কোন সংবাদ গ্রহণের পূর্বে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেয়া। অন্যথায় পরবর্তীতে কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে। আয়াতটি প্রমাণ করছে পাপিষ্ট ব্যক্তির সংবাদ গ্রহণের পূর্বে যাচাই-বাছাই করতে হবে।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَّلَا تَقْبَلُوْا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا ج وَأُولٰ۬ئِكَ هُمُ الْفٰسِقُوْنَ)
“এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না; তারাই তো পাপাচারী।” (সূরা নূর ২৪ : ৪)
দীনের ব্যাপারে ফাসিক তথা পাপিষ্ঠ ব্যক্তির সংবাদ গ্রহণ করা যাবে না এ ব্যাপারে সকল আলেম একমত। আয়াতটি দুটি বিষয় প্রমাণ করছে :
১. ফাসিক ব্যক্তি কোন সংবাদ দিলে তার সত্য-মিথ্যা যাচাই করা ওয়াজিব।
২. ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির সংবাদ গ্রহণ করা আবশ্যক।
উক্ত আয়াতের আলোকে মুহাদ্দিসীনে কেরাম হাদীসে গ্রহণের ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই, সংরক্ষণ ও অন্যের কাছে বর্ণনার সময় সতর্কতা অবলম্বন এবং বর্ণনাকারীদের বিশস্ততার প্রতি খেয়াল রেখেছেন।
সুতরাং একজন ব্যক্তির কোন বিষয়ে আমল করার পূর্বে সে সম্পর্কে সঠিক প্রমাণ জেনে নেয়া আবশ্যক। অন্যথায় কখন যে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে নিজেও বুঝতে পারবে না। আর ধর্মসহ যে-কোন বিষয়ে কেউ কোন সংবাদ দিলে তা যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। বিশেষ করে বর্তমানে মিডিয়াগুলো অমুসলিম ও বামপন্থিদের কর্তৃত্বাধীন, তারা কোনদিন মুসলিমদের কল্যাণ ও উন্নতি চায় না, তাই তারা মুসলিমদের ব্যাপারে সঠিক সংবাদ প্রচার করবে না। তিলকে তাল বানাবে, সত্য গোপন করে মিথ্যাকে সত্য বলে প্রচার করবে। মুসলিম সাংবাদিকদের উচিত সঠিক তথ্য প্রচার করা, সত্য গোপন না করা।
نٰدِمِيْنَ অর্থাৎ সংবাদ যাচাই বাছাই না করত : তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে মিথ্যা সংবাদকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করে সত্য সংবাদকে মিথ্যা বলে, মুসলিমদের ব্যাপারে খারাপ ধারণা পোষণ করে এবং সমাজে ভুল সংবাদ প্রচারের জন্য পরে আফসোস করবে।
সাহাবীদের ন্যায়পরায়ণতা : সাহাবীরা নিষ্পাপ নন, তাদের দ্বারাও কবীরা গুনাহ হতে পারে যা তাৎক্ষণিক ঈমানী দুর্বলতার প্রমাণ বহন করে। তাদের দ্বারাও কবীরা গুনাহ হলে দুনিয়াতে শরীয়ত নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করা হত, যেমন স্বয়ং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবী মায়েযকে ব্যভিচার করার কারণে পাথর মেরে হত্যা করে ছিলেন। কিন্তু কুরআন ও সুন্নাহর বর্ণনানুপাতে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদাহ হল সাহাবী গুনাহ করতে পারেন, তবে এমন কোন সাহাবী নেই যিনি গুনাহ থেকে তাওবা করেননি। সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর সন্তুষ্টি ঘোষণা করেছেন-
((رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ
“আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।” (সূরা বাইয়্যিনাহ ৯৮ : ৮) গুনাহ ক্ষমা করা ব্যতীত আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট হন না। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা জানেন যে, তারা সন্তুষ্টির ওপরই মৃত্যুবরণ করবেন।
তাছাড়া সাহাবীদের নেকীর কাজের তুলনায় গুনাহর কাজ খুবই কম ছিল। তারা ইসলামের জন্য নিজেদের জান-মাল উৎসর্গ করেছেন, নিজেদের ঘর-বাড়ি বিসর্জন দিয়েছেন; এরূপ দৃষ্টান্ত প্রচুর। তাদের ভাল কাজের নেকী সাধারণ মুসলিমদের থেকে বহুগুণ বেশি। তারা এমন মুহূর্তে ইসলামকে সহযোগিতা করেছেন যখন ইসলামের নাবীকে হত্যা ও ইসলামকে বিদায় করার জন্য কাফিররা ঐক্যবদ্ধ ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : সে সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ তোমাদের কেউ উহুদ পরিমাণ স্বর্ণ ব্যয় করলেও তাদের এক মুদ অথবা তার অর্ধেক পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। (সহীহ বুখারী হা. ৩৬৭৩)
সুতরাং সাহাবীদের ব্যাপারে আমাদের জবান ও অন্তর সম্পূর্ণ স্বচ্ছ থাকবে। আমরা বিশ্বাস করব আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তাঁরা উম্মাতের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ।
(وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللّٰهِ)
অর্থাৎ জেনে রেখো যে, তোমাদের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিদ্যমান রয়েছেন। সুতরাং তোমরা তাঁকে সম্মান কর, আদবের সাথে কথা বল। তাঁর দিক নিদের্শনা মেনে চল। কেননা তোমাদের কল্যাণ সম্পর্কে তিনি অধিক জানেন, তিনি তোমাদের প্রতি অধিক দয়ালু।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(اَلنَّبِيُّ أَوْلٰي بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ)
“নাবী মু’মিনদের কাছে তাদের নিজেদের চেয়েও অধিক ঘনিষ্ঠ।” (সূরা আহযাব ৩৩ : ৬)
(لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِنَ الْأَمْرِ لَعَنِتُّمْ)
অর্থাৎ যে সকল সংবাদ তোমরা দিয়ে থাক তিনি যদি সে সকল সংবাদের ব্যাপারে তোমাদের অনুসরণ করতেন তাহলে তোমরাই কষ্টে পতিত হতে।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَلَوِ اتَّبَعَ الْحَقُّ أَهْوَا۬ءَهُمْ لَفَسَدَتِ السَّمٰوٰتُ وَالْأَرْضُ وَمَنْ فِيْهِنَّ ط بَلْ أَتَيْنٰهُمْ بِذِكْرِهِمْ فَهُمْ عَنْ ذِكْرِهِمْ مُّعْرِضُوْنَ)
“সত্য যদি তাদের কামনা-বাসনার অনুগামী হত তবে বিশৃংখল হয়ে পড়ত আকাশসমূহ, পৃথিবী এবং তাদের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুই। বরং আমি তাদেরকে উপদেশ দিয়েছি, কিন্তু তারা উপদেশ হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়।” (সূরা মু’মিনুন ৪০ : ৭১)
(وَلَكِنَّ اللّٰهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ)
অর্থাৎ তোমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করে নিয়েছেন এবং তা তোমাদের জন্য হৃদয়গ্রাহী করেছেন। ফলে তোমাদের ঈমান বিনষ্ট হয় এমন কোন কাজ হবে না।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা সুস্পষ্ট করে বলেন যে, তিনি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন আবার যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(مَنْ يَّهْدِ اللّٰهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ ج وَمَنْ يُّضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَه۫ وَلِيًّا مُّرْشِدًا )
“আল্লাহ যাকে সৎপথে পরিচালিত করেন, সে সৎপথপ্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনও তার কোন পথপ্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবে না।” (সূরা কাহফ ১৮ : ১৭)
আর আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কাছে কুফরী ও পাপাচার অপছন্দনীয় করে দিয়েছেন। ফলে তোমরা পাপ কাজে লিপ্ত হবে না, শয়তানের প্রয়োচনায় লিপ্ত হলেও তাওবা করে আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা চেয়ে পাপের কলুষতা থেকে মুক্ত হয়ে যাবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘আ করে বলতেন :
اَللّٰهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الإِيمَانَ وَزَيِّنْهُ في قُلُوبِنَا وَكَرِّهْ إِلَيْنَا الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ وَاجْعَلْنَا مِنَ الرَّاشِدِينَ
হে আল্লাহ তা‘আলা! তুমি আমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করে দাও এবং আমাদের অন্তরকে তা দ্বারা সুশোভিত করে দাও। আমাদের নিকট কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতা অপছন্দনীয় করে দাও। আমাদেরকে সুপথ প্রাপ্তদের মধ্যে শামিল করে নাও। (নাসাঈ হা. ৬০৯, সহীহ বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ) অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : যে ব্যক্তির ভাল কাজ তাকে আনন্দ দেয় এবং মন্দ কাজ তাকে কষ্ট দেয় সে ব্যক্তি মু’মিন। (তিরমিযী হা. ২১৬৫, সনদ সহীহ)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. যে কোন সংবাদ তড়িঘড়ি করে গ্রহণ না করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গ্রহণ করা উচিত। তবে আল্লাহ তা‘আলা যে সংবাদ দিয়েছেন তা যাচাইয়ের ঊর্ধ্বে।
২. সাহাবীদের ব্যাপারে এমন কথা বলা উচিত নয় যাতে তাদের ন্যায়পরায়ণতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
৩. নাবী-রাসূলদের পরেই সাহাবীদের মর্যাদা।
৪. অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার উৎসাহ পেলাম।
৫. সাংবাদিকদের করণীয় ও বর্জণীয় সম্পর্কে জানলাম।
9 Fozlur Rahman
এটা আল্লাহর কৃপা ও অনুগ্রহ। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, অসীম প্রজ্ঞাবান।
10 Mokhtasar Bangla
৮. তোমাদের অন্তরে কল্যাণকর কাজের প্রতি ভালোবাসা এবং মন্দ কাজের প্রতি অনিহা সৃষ্টি এটি কেবল আল্লাহর অনুগ্রহ বৈ আর কিছুই নয়। যদ্বারা তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং এ নিয়ামত দ্বারা তিনি তোমাদেরকে ধন্য করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে কে তাঁর নিআমতের শুকরিয়া আদায় করে তা জানেন। ফলে তিনি তাকে তাওফীক দ্বারা ধন্য করেন। আর তিনি প্রজ্ঞাবান বিধায় প্রত্যেক বস্তুকে তার স্ব স্ব অবস্থানে রাখেন।
11 Tafsir Ibn Kathir
৬-৮ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা মুমিনদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন পাপাচারীর খবরের উপর নির্ভর না করে। যে পর্যন্ত সত্যতা যাচাই ও পরীক্ষা করে প্রকৃত ঘটনা জানা না যায় সেই পর্যন্ত কোন কাজ করে ফেলা উচিত নয়। হতে পারে যে, কোন পাপাচারী ব্যক্তি কোন মিথ্যা কথা বলে দিলো বা সে ভুল করে ফেললো এবং তার খবর অনুযায়ী মুমিনরা কোন কাজ করে বসলো, এতে প্রকৃতপক্ষে তারই অনুসরণ করা হলো। আর পাপাচারী ও বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী লোকদের অনুসরণ করা আলেমদের মতে হারাম। এই আয়াতের উপর ভিত্তি করেই কোন কোন মুহাদ্দিস ঐ ব্যক্তির রিওয়াইয়াতকেও নির্ভরযোগ্য মনে করেন যার অবস্থা জানা নেই। কেননা, হতে পারে যে, প্রকৃতপক্ষে ঐ ব্যক্তি পাপাচারী। তবে কতক লোক এরূপ অজ্ঞাত লোকের রিওয়াইয়াতও গ্রহণ করেছেন এবং তারা বলেছেনঃ “ফাসিক বা পাপাচারী লোকের খবর কবুল করতে নিষেধ করা হয়েছে, আর যার অবস্থা জানা নেই তার ফাসিক হওয়া আমাদের নিকট প্রকাশিত নয়। আমরা শরহে বুখারীর কিতাবুল ইলমের মধ্যে এ মাসআলাটি, বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেছি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলারই প্রাপ্য।
অধিকাংশ তাফসীরকারের মতে এ আয়াতটি ওয়ালীদ ইবনে উকবা ইবনে আবি মুঈতের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়, যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বানু মুসতালিক গোত্রের নিকট যাকাত আদায় করার জন্যে পাঠিয়েছিলেন। যেমন মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, উম্মুল মুমিনীন হযরত জুওয়াইরিয়া (রাঃ)-এর পিতা হযরত হারিস ইবনে আবি যরার খুযায়ী (রাঃ) বর্ণনা করেছেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হলাম। তিনি আমাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। আমি তা কবূল করলাম এবং মুসলমান হয়ে গেলাম। অতঃপর তিনি যাকাত ফরয হওয়ার কথা শুনালেন। আমি ওটাও মেনে নিলাম এবং বললামঃ আমি আমার কওমের নিকট ফিরে যাচ্ছি। আমি তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিবো। তাদের মধ্যে যারা ঈমান আনবে এবং যাকাত দিবে, আমি তাদের যাকাত জমা করবে। আপনি এতদিন পরে আমার নিকট কোন লোক পাঠিয়ে দিবেন। আমি তার হাতে যাকাতের জমাকৃত মাল দিয়ে দিবো। এভাবে যাকাতের মাল আপনার নিকট পৌঁছে যাবে।” হযরত হারিস (রাঃ) ফিরে গিয়ে তাই করলেন অর্থাৎ যাকাতের সম্পদ একত্রিত করলেন। যখন নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেল এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দূত তথায় গেলেন না, তখন তিনি তাঁর কওমের নেতৃস্থানীয় লোকদেরকে একত্রিত করলেন এবং তাদেরকে বললেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোন দূতকে যে আমাদের নিকট পাঠাবেন না এটা অসম্ভব। আমার ভয় হচ্ছে যে, কোন কারণে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হয়তো আমাদের উপর অসন্তুষ্ট হয়েছেন এবং এজন্যেই কোন দূতকে আমাদের নিকট যাকাতের মাল নেয়ার জন্যে পাঠাননি। সুতরাং যদি আপনারা একমত হন তবে আমি নিজেই এ মাল নিয়ে মদীনা শরীফ গমন করি এবং নবী (সঃ)-এর নিকট পেশ করি।” অতঃপর সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে গেল এবং হযরত হারিস (রাঃ) যাকাতের মাল নিয়ে মদীনার পথে যাত্রা শুরু করলেন। আর ওদিকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) ওয়ালীদ ইবনে উকবাকে স্বীয় দূত হিসেবে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সে ভয়ে রাস্তা হতেই ফিরে আসে এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে খবর দেয় যে, হারিস (রাঃ) যাকাতের মালও আটকিয়ে দিয়েছে এবং সে তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। এ খবর শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) অত্যন্ত অসন্তুষ্ট ও দুঃখিত হলেন এবং কিছু লোককে হযরত হারিস (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে পাঠিয়ে দিলেন। মদীনার কাছাকাছি পথেই এই ক্ষুদ্র সেনাবাহিনী হযরত হারিস (রাঃ)-কে পেয়ে গেলেন। হযরত হারিস (রাঃ) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ব্যাপার কি? তোমরা কোথা হতে আসছো এবং কোথায় যাচ্ছ?” তারা উত্তরে বললেনঃ “আমাদেরকে তোমারই বিরুদ্ধে পাঠানো হয়েছে।” “কেন?” তিনি জিজ্ঞেস করলেন। তারা উত্তরে বললেনঃ “কারণ এই যে, তুমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দূতকে যাকাতের মাল প্রদান করনি, এমনকি তাকে তুমি হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিলে।" হযরত হারিস (রাঃ) বললেনঃ “যে আল্লাহ হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে সত্য নবীরূপে প্রেরণ করেছেন তার শপথ! আমি তাকে দেখিওনি এবং আমার নিকট সে আসেওনি। চলো, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হচ্ছি।” অতঃপর সেখান হতে তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট হাযির হলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বললেনঃ “তুমি যাকাতের মাল আটকিয়ে রেখেছিলে এবং আমার প্রেরিত দূতকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিলে এটা কি সত্য?” তিনি জবাব দেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এটা কখনো সত্য নয়। যিনি আপনাকে সত্য রাসূলরূপে পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ! না আমি তাকে দেখেছি এবং না সে আমার কাছে এসেছিল। বরং আমি যখন দেখলাম যে, আপনার কোন লোক যাকাতের মাল নেয়ার জন্যে আমাদের ওখানে গেল না তখন আমি ভয় করলাম যে, না জানি হয়তো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সঃ) আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন এবং এই কারণেই হয়তো আমাদের কাছে কোন লোককে প্রেরণ করা হয়নি, তাই আমি স্বয়ং যাকাতের মাল নিয়ে আপনার খিদমতে হাযির হয়েছি।” তখন আল্লাহ তা'আলা یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْۤا اِنْ جَآءَكُمْ فَاسِقٌۢ بِنَبَاٍ হতে وَ اللّٰهُ عَلِیْمٌ حَكِیْمٌ পর্যন্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন।
ইমাম তিবরানীর (রঃ) বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দূত যখন হযরত হারিস (রাঃ)-এর বস্তীর নিকট পৌছে তখন বস্তীর লোকেরা খুশী হয়ে তার অভ্যর্থনার বিশেষ প্রস্তুতি নিয়ে বের হয়ে পড়ে। ওদিকে ঐ লোকটির মনে এই শয়তানী খেয়াল চেপে যায় যে, ঐ লোকগুলো তাকে আক্রমণ করতে আসছে। সুতরাং সে ফিরে চলে আসে। লোকগুলো তাকে ফিরে চলে যেতে দেখে নিজেরাই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে এসে হাযির হয়ে যায়। যোহরের নামাযের পরে তারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আরয করেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি যাকাত আদায় করার জন্যে তোক পাঠিয়েছেন দেখে আমাদের চক্ষু ঠাণ্ডা হয়। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হই। কিন্তু আল্লাহ জানেন, কি হলো যে, আপনার প্রেরিত লোকটি রাস্তা হতেই ফিরে চলে আসে। তখন আমরা ভয় করলাম যে, আল্লাহ হয়তো আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছেন, তাই আমরা আপনার দরবারে হাযির হয়েছি। এভাবে তারা ওযর পেশ করতে থাকে। এদিকে হযরত বিলাল (রাঃ) যখন আসরের আযান দেন তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।
অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, ওয়ালীদ ইবনে উকবার এই খবরের পরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ বস্তী অভিমুখে কিছু লোক পাঠাবার চিন্তা করছিলেন এমতাবস্থায় তাদের প্রতিনিধিদল তার কাছে এসে পড়ে। তারা আরয করেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার দূত অর্ধেক রাস্তা হতেই ফিরে আসে। তখন আমরা ধারণা করলাম যে, আপনি হয়তো কোন অসন্তুষ্টির কারণে তাকে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছেন। এ জন্যেই আমরা আপনার খিদমতে হাযির হয়েছি। আমরা আল্লাহর ক্রোধ এবং আপনার অসন্তুষ্টি হতে আল্লাহ তা'আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।" তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করেন এবং তাদের ওযর সত্য বলে ঘোষণা দেন।
অন্য একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, দূত রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এ কথাও বলেছিলঃ “ঐ লোকগুলো আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে সৈন্যদেরকে একত্রিত করেছে এবং তারা ইসলাম ত্যাগ করেছে। তার এই খবর শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে তাদের বিরুদ্ধে একদল সেনাবাহিনী পাঠিয়ে দেন। কিন্তু হযরত খালিদ (রাঃ)-কে তিনি উপদেশ দেনঃ “প্রথমে ভালভাবে খবরের সত্যাসত্য যাচাই করবে, ত্বরিৎগতিতে আক্রমণ করে বসবে না।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এই উপদেশ অনুযায়ী হযরত খালিদ (রাঃ) সেখানে গিয়ে একজন গুপ্তচরকে শহরে পাঠিয়ে দেন। গুপ্তচর এ খবর আনেন যে, তারা দ্বীন ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। মসজিদে আযান হচ্ছে এবং তিনি স্বয়ং তাদেরকে নামায পড়তে দেখেছেন। সকাল হওয়া মাত্রই হযরত খালিদ (রাঃ) নিজে গিয়ে তথাকার ইসলামী দৃশ্য দেখে খুশী হন এবং ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে খবর দেন। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।
এই ঘটনা বর্ণনাকারী হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সত্যতা পরীক্ষা, সহনশীলতা এবং দূরদর্শিতা আল্লাহর পক্ষ হতে এবং তাড়াহুড়া ও দ্রুততা শয়তানের পক্ষ হতে।” হযরত কাতাদা (রঃ) ছাড়াও আরো বহু মনীষীও এটাই বর্ণনা করেছেন। যেমন ইবনে আবি লাইলা (রঃ), ইয়াযীদ ইবনে রূমান (রঃ), যহহাক (রঃ), মুকাতিল ইবনে হাইয়ান (রঃ) প্রমুখ। এঁদের সবারই বর্ণনা এই যে, এই আয়াত ওয়ালীদ ইবনে উকবার ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
এরপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তোমরা জেনে রেখো যে, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল (সঃ) রয়েছেন। তোমাদের উচিত তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং তাঁর নির্দেশাবলী ঠিক ঠিকভাবে মেনে চলা। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী। তোমাদেরকে তিনি খুবই ভালবাসেন। তোমাদেরকে বিপদে ফেলতে তিনি কখনই চান না। তোমরা নিজেদের ততো কল্যাণকামী নও যতোটা তিনি তোমাদের কল্যাণকামী। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ اَلنَّبِیُّ اَوْلٰى بِالْمُؤْمِنِیْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ অর্থাৎ “নবী (সঃ) মুমিনদের সাথে তাদের নিজেদের চেয়েও বেশী সম্পর্কযুক্ত।” (৩৩:৬)
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ যদি মুহাম্মাদ (সঃ) বহু বিষয়ে তোমাদের কথা শুনতেন এবং সেই মুতাবেক কাজ করতেন তবে তোমরাই কষ্ট পেতে এবং তোমাদেরই ক্ষতি সাধিত হতো। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ
وَ لَوِ اتَّبَعَ الْحَقُّ اَهْوَآءَهُمْ لَفَسَدَتِ السَّمٰوٰتُ وَ الْاَرْضُ وَ مَنْ فِیْهِنَّ بَلْ اَتَیْنٰهُمْ بِذِكْرِهِمْ فَهُمْ عَنْ ذِكْرِهِمْ مُّعْرِضُوْنَ
অর্থাৎ “যদি সত্য প্রতিপালক তাদের চাহিদা বা প্রবৃত্তি অনুযায়ী চলেন তবে আকাশ ও পৃথিবী এবং এতোদুভয়ের মধ্যস্থিত সবকিছু বিনষ্ট হয়ে যেতো, বরং আমি তাদের কাছে তাদের উপদেশ পৌঁছিয়ে দিয়েছি, কিন্তু তারা তাদের উপদেশ হতে বিমুখ হয়ে যায়।” (২৩:৭১)
অতঃপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ আল্লাহ তোমাদের নিকট ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং ওটাকে তোমাদের হৃদয়গ্রাহী করেছেন।
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ইসলাম প্রকাশ্য এবং ঈমান অন্তরের মধ্যে রয়েছে।” অতঃপর তিনি তিনবার বীয় হাত দ্বারা স্বীয় বক্ষের দিকে ইশারা করেন। তারপর বলেনঃ “তাকওয়া এবানে, তাকওয়া এখানে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
মহান আল্লাহ এরপর বলেনঃ কুফরী, পাপাচার, অবাধ্যতাকে করেছেন তোমাদের নিকট অপ্রিয়। আর এই ভাবে ক্রমান্বয়ে তিনি তোমাদের উপর স্বীয় নিয়ামত পূর্ণ করে দিয়েছেন। অতঃপর আল্লাহ পাক বলেনঃ ওরাই সৎপথ অবলম্বনকারী।
মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, উহুদের যুদ্ধের দিন যখন মুশরিকরা ফিরে যায় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় সাহাবীদেরকে বলেনঃ “তোমরা সোজাভাবে ঠিকঠাক হয়ে যাও, আমি মহামহিমান্বিত আল্লাহর প্রশংসা কীর্তন করবে।” তখন জনগণ তার পিছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যান। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিম্নের দুআটি পাঠ করেনঃ
اَللّٰهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كُلُّهٗ، اَللّٰهُمَّ لَا قَابِضَ لِمَا بَسَطْتَ، وَلَا بَاسِطَ لِمَا قَبَضْتَ، وَلَا هَادِيَ لِمَنْ اَضْلَلْتَ، وَلَا مُضِلَّ لِمَنْ هَدَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا مَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ، وَلَا مُقَرِّبَ لِمَا بَاعَدْتَ، وَلَا مُبَاعِدَ لِمَا قَرَّبْتَ، اَللّٰهُمَّ ابْسُطْ عَلَيْنَا مِنْ بَرَكَاتِكَ وَرَحْمَتِكَ وَفَضْلِكَ وَرِزْقِكَ، اَللّٰهُمَّ، اِنِّيْ اَسْاَلُكَ النَّعِيْمُ الْمُقِيْمُ الَّذِيْ لَا يَحُوْلُ وَلَا يَزُوْلُ، اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ اَسْاَلُكَ النَّعِيْمَ يَوْمَ العَيْلَة، وَالْاَمْنَ يَوْمَ الْخَوْفِ، اَللّٰهُمَّ اِنَّىْ عَائِذٌ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا اَعْطَيْتَنَا، وَمِنْ شَرٍّ مَا مَنَعْتَنَا، اَللّٰهُمَّ حَبِّبْ اِلَيْنَا الْاِيمَانَ وَزَيِّنْهُ فِيْ قُلُوْبِنَا، وَكَرِّهْ اِلَيْنَا الْكُفْرَ وَالْفُسُوْقَ وَالْعِصْيَانَ، وَاجْعَلْنَا مِنَ الرَّاشِدِيْنَ. اَللّٰهُمَّ، تَوَفَّنَا مُسْلِمِيْنَ، وَاَحْيِنَا مُسْلِمِيْنَ، وَاَلْحِقْنَا بِالصَّالِحِيْنَ، غَيْرَ خَزَايَا وَلَا مَفْتُوْنِيْنَ. اَللّٰهُمَّ، قَاتِلِ الْكَفَرَةَ الَّذِيْنَ يُكَذِّبُوْنَ رُسُلَكَ وَيَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِكَ، وَاجْعَلْ عَلَيْهِمْ رِجْزَكَ وَعَذَابَكَ، اَللّٰهُمَّ قَاتِلِ الْكَفَرَةَ الَّذِيْنَ اُوْتُوا الْكِتَابَ، اِلٰهَ الْحَقِّ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা আপনারই প্রাপ্য। আপনি যাকে প্রশস্ততা দান করেন তার কেউ সংকীর্ণতা আনয়ন করতে পারে না, আর আপনি যাকে সংকীর্ণতা দেন তার কেউ প্রশস্ততা আনয়ন করতে পারে না। আপনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না, আর আপনি যাকে পথ প্রদর্শন করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না। আপনি যাকে বঞ্চিত করেন তাকে কেউ দিতে পারে না, আর আপনি যাকে দেন তাকে কেউ বঞ্চিত করতে পারে। আপনি যাকে দূরে করেন তাকে কেউ কাছে করতে পারে না, আর আপনি যাকে কাছে করেন তাকে কেউ দূরে করতে পারে না। হে আল্লাহ! আমাদের উপর আপনি আপনার বরকত, রহমত, অনুগ্রহ ও জীবিকা প্রশস্ত করে দিন! হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ঐ চিরস্থায়ী নিয়ামত যাজ্ঞা করছি যা না এদিক। ওদিক হবে এবং না নষ্ট হবে। হে আল্লাহ! দারিদ্র ও প্রয়োজনের দিন আমি আপনার নিকট নিয়ামত প্রার্থনা করছি এবং ভয়ের দিন আমি আপনার নিকট শান্তি ও নিরাপত্তা চাচ্ছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যা দিয়েছেন এবং যা দেননি এসবের অনিষ্ট হতে আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমাদের অন্তরে আপনি ঈমানকে প্রিয় করে দিন এবং কুফরী, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে আমাদের নিকট অপ্রিয় করুন! আর আমাদেরকে সৎপথ অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। হে আল্লাহ! মুসলমান অবস্থায় আমাদের মৃত্যু ঘটান, মুসলমান অবস্থায় জীবিত রাখুন এবং সৎ লোকদের সাথে আমাদেরকে মিলিত করুন। আমাদেরকে অপমানিত করবেন না এবং ফিত্রায় ফেলবেন না। হে আল্লাহ! আপনি ঐ কাফিরদেরকে ধ্বংস করুন যারা আপনার রাসূলদেরকে অবিশ্বাস করে ও আপনার পথ হতে নিবৃত্ত করে এবং তাদের উপর আপনার শাস্তি ও আযাব নাযিল করুন। হে আল্লাহ! আপনি আহলে কিতাবের কাফিরদেরকেও ধ্বংস করুন, হে সত্য মাবূদ!”
মারফু হাদীসে রয়েছেঃ “যার কাছে পুণ্যের কাজ ভাল লাগে এবং পাপের কাজ মন্দ লাগে সে মুমিন।”
এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ “এটা আল্লাহর দান ও অনুগ্রহ।” সপথ প্রাপ্তির হকদার ও পথভ্রষ্ট হওয়ার হকদারদেরকে তিনি ভালরূপেই জানেন। তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।