২৩-৩২ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে খবর দেয়া হচ্ছে যে, সামূদ সম্প্রদায় আল্লাহর রাসূল হযরত সালিহ (রাঃ)-কে মিথ্যাবাদী বলে এবং তার নবী হওয়াকে অসম্ভব মনে করে বিস্মিত হয়ে বলেঃ “এটা কি হতে পারে যে, আমরা আমাদেরই একটি লোকের অনুগত হয়ে যাবো? তার এতো বড় মর্যাদা লাভের কারণই বা কি?" এর চেয়ে আরো বেড়ে গিয়ে বলেঃ “আমরা এটা মেনে নিতে পারি না যে, আমাদের সবারই মধ্য হতে শুধুমাত্র এই লোকটিরই উপর আল্লাহর কালাম নাযিল হয়েছে।" তারপর এরও আগে পা বাড়িয়ে গিয়ে আল্লাহর নবী (আঃ)-কে প্রকাশ্যভাবে ও স্পষ্ট ভাষায় চরম মিথ্যাবাদী বলতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে ধমকের সুরে বলেন, এখন তোমরা যা চাও তাই বল, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মিথ্যাবাদী এবং মিথ্যায় সীমালংঘনকারী কে তা কালই প্রকাশিত হয়ে যাবে।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আমি তাদের পরীক্ষার জন্যে পাঠিয়েছি এক উষ্ট্ৰী। ঐ লোকদের চাহিদা অনুযায়ী পাথরের এক কঠিন পাহাড় হতে এক বিরাট গর্ভবতী উস্ত্রী বের হয় এবং আল্লাহ তা'আলা স্বীয় নবী (আঃ)-কে বলেনঃ তাদের পরিণাম কি হয় তা তুমি দেখে নিয়ে এবং তাদের কষ্টদায়ক কথার উপর ধৈর্য ধারণ করো। দুনিয়া ও আখিরাতে বিজয় তোমারই হবে। তুমি তাদেরকে বলে দাওঃ পানি এক দিন তোমাদের এবং এক দিন উষ্ট্ৰীর। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ
قَالَ هٰذِهٖ نَاقَةٌ لَّهَا شِرْبٌ وَّ لَكُمْ شِرْبُ یَوْمٍ مَّعْلُوْمٍ
অর্থাৎ “সালেহ বললোঃ এই যে উষ্ট্ৰী, এর জন্যে আছে পানি পানের পালা এবং তোমাদের জন্যে আছে পানি পানের পালা, নির্ধারিত এক এক দিনে।” (২৬:১৫৫)
كُلُّ شِرْبٍ مُّحْتَضَرٌ-এর তাফসীরে মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, যখন উষ্ট্ৰীটি অনুপস্থিত থার্কতো তখন তারা পানি পেতো, আর যখন উষ্ট্ৰীটি হাযির থাকতো তখন তারা ওর দুধ পেতো।
এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ অতঃপর তারা তাদের এক সঙ্গীকে আহ্বান করলো, সে ওকে ধরে হত্যা করলো। তাফসীরকারগণ বলেন যে, হত্যকারী লোকটির নাম ছিল কিদার ইবনে সালিফ। সে ছিল তার কওমের মধ্যে সর্বাধিক হতভাগ্য। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ اِذِ اِنْبَعَثَ اَشْقٰهَا অর্থাৎ তাদের মধ্যে যে সর্বাধিক হতভাগ্য, সে যখন তৎপর হয়ে উঠলো।” (৯১:১২)
মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ বলেনঃ “কি কঠোর ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী! আমি তাদেরকে আঘাত হেনেছিলাম এক মহানাদ দ্বারা; ফলে তারা হয়ে গেল খোয়াড় প্রস্তুতকারীর বিখণ্ডিত শুষ্ক শাখা-প্রশাখার ন্যায়।' অর্থাৎ যেভাবে জমির কর্তিত শুষ্ক পাতা উড়ে গিয়ে হারিয়ে যায় সেই ভাবে আল্লাহ তা'আলা তাদেরকেও নিশ্চিহ্ন করে দেন। শুষ্ক চারা ভুষি যেমনভাবে জঙ্গলে উড়ে উড়ে ফিরে, ঠিক তেমনিভাবে তাদেরকেও ধ্বংস করে দেয়া হয়। অথবা ভাবার্থ হচ্ছেঃ আরবের প্রথা ছিল যে, উটগুলোকে শুষ্ক কাঁটাযুক্ত বেড়ার মধ্যে রেখে দেয়া হতো। যখন ঐ বেড়াকে পদদলিত করা হতো তখন উটগুলোর যে অবস্থা হতো ঐ অবস্থা তাদেরও হয়ে যায়। তাদের একজনও রক্ষা পায়নি। দেয়াল হতে যেমন মাটি ঝরে পড়ে তেমনই তাদেরও মূলোৎপাটন ঘটে। এসব উক্তি হলো তাফসীরকারদের এই বাক্যটির তাফসীর। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই প্রবলতম। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।