৪৪-৫২ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
কাফির-মুশরিকদের সামনে আল্লাহ তা‘আলার কালাম কুরআন তেলাওয়াত করা হলে তারা বলে এটা একটি সুস্পষ্ট জাদু। আর মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন জাদুকর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন
(وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلْحَقِّ لَمَّا جَا۬ءَهُمْ لا إِنْ هٰذَآ إِلَّا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ )
“আর কাফিরদের কাছে যখন এ সত্য (কুরআন) আসল তখন তারা বলল- এটা প্রকাশ্য জাদু ব্যতীত আর কিছুই নয়।।” (সূরা সাবা ৩৪:৪৩)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَمَّا جَا۬ءَهُمُ الْحَقُّ قَالُوْا هٰذَا سِحْرٌ وَّإِنَّا بِه۪ كٰفِرُوْنَ )
“যখন তাদের নিকট সত্য আসল তখন তারা বললো- এটা তো জাদু এবং আমরা অবশ্যই এর প্রতি অস্বীকার জ্ঞাপন করি।”
মূলত কাফিরদের এসব কথা দ্বারা উদ্দেশ্য- নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসব নিজের পক্ষ থেকে তৈরি করে এনেছেন।
আল্লাহ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে শিখিয়ে দিচ্ছেন, বলে দাও, যদি আমি নিজের পক্ষ থেকে তৈরি করে আনতাম তাহলে আল্লাহ তা‘আলার আযাব থেকে তোমরা আমাকে রক্ষা করতে পারতে না। যেমন তিনি বলেন, যদি সে নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিত, তবে অবশ্যই আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম, এবং কেটে দিতাম তার হৃৎপিণ্ডের শিরা। অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ থাকত না, যে তার থেকে আমাকে বিরত রাখতে পারে। (সূরা হাক্কাহ ৬৯ : ৪৪-৪৭)
(وَإِنَّهُ لَتَذْكِرَةٌ لِلْمُتَّقِينَ)
অর্থাৎ এ কুরআন মুত্তাকীদের জন্য উপদেশবাণী। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন :
(قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًي وَشِفَا۬ءٌ وَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ فِي آذَانِهِمْ وَقْرٌ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًي)
‘বল: মু’মিনদের জন্য এটা পথ-নির্দেশ ও ব্যাধির প্রতিকার; কিন্তু যারা অবিশ্বাসী তাদের কর্ণে রয়েছে বধিরতা এবং কুরআন হবে তাদের জন্য অন্ধত্ব।’ (সূরা মু’মিন ৪১ : ৪৪)
দীন সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা করে দেওয়ার পরেও এক শ্রেণির মানুষ থাকবে যারা কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে। কুরআন, ইসলাম ও রাসূল কোন কিছুই তারা মানবে না, এটা আল্লাহ তা‘আলা ভাল করেই জানেন। কাফিরদের এ মিথ্যা প্রতিপন্ন করাটা আখিরাতে আফসোসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আল্লাহ তা‘আলার এ কথা শত ভাগ সত্য। অবশ্যই এরূপ ঘটবে এতে কোন সন্দেহ নেই। অতএব হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তুমি তোমার প্রভুর নামে তাসবীহ পাঠ কর।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজের পক্ষ থেকে কোন কথা বানিয়ে যদি আল্লাহ তা‘আলার নামে চালিয়ে দিতেন তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ছাড়তেন না।
২. কিয়ামতের দিন কাফিররা কুরআন মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কারণে বড়ই আফসোস করবে কিন্তু এ আফসোস তাদের কোনই উপকারে আসবে না।
৩. سبحان ربي العظيم
দ্বারা তাসবীহ করা শরীয়তসম্মত। আর রুকুতে এ তাসবীহ পড়ার নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণ রয়েছে।