২০১-২০২ নং আয়াতের তাফসীর:
যেসব বান্দা আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলে এবং নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকে, তাদেরকে যদি কোন সময় শয়তান কুমন্ত্রণা দিয়ে খারাপ কাজে নিমগ্ন করে তবে সত্বরই তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। طَائِفٌ শব্দটিকে কেউ কেউ طيِّفٌ পড়েছেন। এই দু' কিরআতই প্রসিদ্ধ। এ দু'টোর অর্থও একই। আবার কেউ কেউ বলেছেন যে, অর্থে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ এর অর্থ ক্রোধ বলেছেন। অন্য কেউ বলেছেন যে, এর অর্থ হচ্ছে- ‘শয়তান যখন তাকে কোন দুর্ঘটনায় ফেলে। আবার এর অর্থ ‘পাপের কারণে লজ্জা ও দুঃখ’ এরূপও করা হয়েছে। কোন কোন লোক এর অর্থ ‘পাপ কার্যে লিপ্ত হয়ে পড়া করেছেন। এই লোকদের আল্লাহর শাস্তি, দান, সওয়াব, তাঁর ওয়াদা, ভয় প্রদর্শন ইত্যাদি স্মরণ হয়ে যায়। ফলে তৎক্ষণাৎ তারা তাওবা করে ফেলে এবং আল্লাহর দিকে ঝুঁকে পড়ে। আর ঐ মুহূর্তেই তার দিকে প্রত্যাবর্তন করতঃ তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে শুরু করে। সাথে সাথেই তাদের অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায়। অজ্ঞান থাকলে তাদের জ্ঞান ফিরে আসে।
কথিত আছে যে, একজন নারী নবী (সঃ)-এর নিকট আগমন করে। তার। মৃগীর রোগ ছিল। সে আরয করেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার আরোগ্যের জন্যে আল্লাহর নিকট দুআ করুন।” তিনি বললেনঃ “আমি যদি দুআ করি তবে আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। কিন্তু তুমি যদি ধৈর্যধারণ কর তবে কিয়ামতের দিন তোমাকে হিসাব দিতে হবে না।” তখন ঐ মহিলাটি বললোঃ “আচ্ছা, ঠিক আছে, আমি রোগের উপর ধৈর্য অবলম্বন করবো, কেননা এর বিনিময়ে আমি জান্নাত পাবো। তবে আমার মৃগী ও মুৰ্ছা রোগ রয়েছে বলে আমার জ্ঞান লোপ পেয়ে যায় এবং শরীর থেকে কাপড় খুলে পড়ে। তাই আপনি আমার জন্যে দুআ করুন যেন রোগ দূর না হলেও কমপক্ষে আমার দেহ থেকে কাপড় খুলে না যায়। তার একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার জন্যে দুআ করেন এবং তখন থেকে আর কখনও ঐ রোগ উঠার সময় তার দেহ থেকে কাপড় খুলে যেতো না। (এ হাদীসটি ইবনে মিরদুওয়াই ও একাধিক আহলে সুনান বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম হাকিম (রঃ) এটা তাখরীজ করেছেন। তিনি বলেছেন যে, এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ)-এর শর্তের উপর বিশুদ্ধ)
বর্ণিত আছে যে, একজন যুবক মসজিদে বসে ইবাদত করতো। একটি মহিলা তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে এবং তাকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সে একদা তার বাড়ীতে এসেই পড়ে। সাথে সাথে اِنَّ الَّذِیْنَ اتَّقَوْا اِذَا مَسَّهُمْ طٰٓىٕفٌ مِّنَ الشَّیْطٰنِ تَذَكَّرُوْا فَاِذَاهُمْ مُّبْصِرُوْنَ তার এ আয়াতটি স্মরণ হয়ে যায় এবং তৎক্ষণাৎ সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। জ্ঞান ফিরলে আবার সে এ আয়াতটি পাঠ করে এবং এবার সে মারাই যায়। হযরত উমার (রাঃ) এসে তার পিতার নিকট সমবেদনা প্রকাশ করেন। রাত্রিকালে তাকে দাফন করা হয়। হযরত উমার (রাঃ) তাঁর কয়েকজন সাথীকে নিয়ে তার কবরের কাছে গমন। করেন এবং তার জানাযার নামায আদায় করেন। অতঃপর তিনি তাকে সম্বোধন করে বলেনঃ হে যুবক!
وَ لِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهٖ جَنَّتٰنِ অর্থাৎ “যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করলো, তার জন্যে দু’টি জান্নাত রয়েছে।” (৫৫:৪৬) এ আয়াতটি শুনে যুবকটি কবরের মধ্য থেকেই উত্তর দিলোঃ “হে উমার (রাঃ)! মহা মহিমান্বিত আল্লাহ আমাকে দু’টি জান্নাতই দান করেছেন!” (হাফিয ইবনে আসাকির (রঃ) এটা তাখরীজ করেছেন)
আল্লাহ পাকের উক্তিঃ وَ اِخْوَانُهُمْ یَمُدُّوْنَهُمْ অর্থাৎ তাদের সঙ্গী মানবরূপী শয়তানরা তাদেরকে বিভ্রান্তির পথে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যায়। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ اِنَّ الْمُبَذِّرِیْنَ كَانُوْۤا اِخْوَانَ الشَّیٰطِیْنِ অর্থাৎ “অপব্যয়কারীরা হচ্ছে শয়তানদের ভাই।” (১৭:২৭) অর্থাৎ তাদের অনুসারীদেরকে ও তাদের কথা মান্যকারীদেরকে তারা গুমরাহীর দিকে নিয়ে যায়। পাপকাজ তাদের কাছে তারা সহজ করে দেয় এবং তাদের দৃষ্টিতে শোভনীয় করে তোলে। مَدٌّ শব্দের অর্থ হচ্ছে বাড়াবাড়ি। অর্থাৎ অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তিতে তারা বাড়াবাড়ি করে।
ثُمَّ لَا یُقْصِرُوْنَ অর্থাৎ এই শয়তানরা তাদের চেষ্টায় মোটেই কোন ত্রুটি করে । হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- মানুষ অসৎ কাজ সম্পাদনে আদৌ অবহেলা প্রদর্শন করে না এবং শয়তানরাও তাদেরকে বিপথে চালিত করার কাজে মোটেই ক্রটি করে না। গুমরাহীর দিকে আকৃষ্টকারীরা হচ্ছে। জ্বিন ও শয়তান , যারা নিজেদের মানব বন্ধুদের কাছে অহী পাঠিয়ে থাকে এবং ঐ কাজে মোটেই ক্রটি করে না। কারণ তাদের প্রকৃতি ও স্বভাবই এই রূপ। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ اَلَمْ تَرَ اَنَّاۤ اَرْسَلْنَا الشَّیٰطِیْنَ عَلَى الْكٰفِرِیْنَ تَؤُزُّهُمْ اَزًّا অর্থাৎ “হে নবী (সঃ) ! তুমি কি দেখনি যে, আমি শয়তানদেরকে কাফিরদের নিকট পাঠিয়ে থাকি, যারা ঐ কাফিরদেরকে নাফরমানীর দিকে আকৃষ্ট করে। থাকে?” (১৯:৮৩)