আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ যে শাস্তি তলব করছে ঐ শাস্তি ঐ তলবকারী কাফিরদের উপর ঐ দিনে আসবে যেই দিন আকাশ গলিত ধাতুর মত অথবা তেলের গাদের মত হয়ে যাবে এবং পর্বতসমূহ হবে ধূনিত পশমের মত। অন্য জায়গায় রয়েছেঃ
وَ تَكُوْنُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ الْمَنْفُوْشِ
অর্থাৎ “এবং পর্বতসমূহ হবে ধূনিত রঙ্গিন পশমের মত।” (১০১ :৫)
মহান আল্লাহ্ বলেনঃ সুহৃদ সুহৃদের তত্ত্ব নিবে না। অর্থাৎ কোন বন্ধু তার বন্ধুর অথবা কোন নিকট আত্মীয় তার নিকট আত্মীয়ের কোন খবর নিবে না। অথচ একে অপরকে মন্দ অবস্থায় দেখতে পাবে, কিন্তু নিজে এমন ব্যস্ত থাকবে যে, অন্য কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার খেয়ালই তার থাকবে না। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, একে অপরকে দেখবে এবং চিনতেও পারবে, কিন্তু সেখান থেকে পালিয়ে যাবে। যেমন আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ یَوْمَئِذٍ شَاْنٌ یُّغْنِیْهِ
অর্থাৎ “সেই দিন তাদের প্রত্যেকের হবে এমন গুরুতর অবস্থা যা তাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে।” (৮০:৩৭) আর এক জায়গায় বলেনঃ
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْ وَ اخْشَوْا یَوْمًا لَّا یَجْزِیْ وَالِدٌ عَنْ وَّلَدِهٖ وَ لَا مَوْلُوْدٌ هُوَ جَازٍ عَنْ وَّالِدِهٖ شَیْئًا اِنَّ وَعْدَ اللّٰهِ حَقٌّ
অর্থাৎ “হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর এবং এমন দিনকে ভয় কর যেই দিন পিতা পুত্রের কোন উপকার করবে না এবং পুত্রও পিতার কোন উপকার করবে না, নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য।” (৩১:৩৩) আরো বলেনঃ
وَ اِنْ تَدْعُ مُثْقَلَةٌ اِلٰى حِمْلِهَا لَا یُحْمَلْ مِنْهُ شَیْءٌ وَّ لَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰى
অর্থাৎ “কেউ কাউকেও তার বোঝা উঠাবার জন্যে আহ্বান করলে সে তার বোঝার কিছুই উঠাতে আসবে না, যদিও সে তার নিকটতম আত্মীয় হয়।” (৩৫:১৮) অন্য এক জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ
فَاِذَا نُفِخَ فِی الصُّوْرِ فَلَاۤ اَنْسَابَ بَیْنَهُمْ یَوْمَئِذٍ وَّ لَا یَتَسَآءَلُوْنَ
অর্থাৎ “যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে তখন তাদের পারস্পরিক আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে এবং তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করবে না।” (২৩:১০১)
আর এক জায়গায় বলেনঃ
یَوْمَ یَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ اَخِیْهِ ـ وَ اُمِّهٖ وَ اَبِیْهِ ـ وَ صَاحِبَتِهٖ وَ بَنِیْهِ ـ لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ یَوْمَئِذٍ شَاْنٌ یُّغْنِیْهِ
অর্থাৎ “সেই দিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভ্রাতা হতে, তার মাতা, তার পিতা, তার পত্নী ও তার সন্তান হতে। সেই দিন তাদের প্রত্যেকের হবে এমন গুরুতর অবস্থা যা তাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে।” (৮০:৩৪-৩৭)
মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ্ বলেনঃ অপরাধী সেই দিনের শাস্তির বদলে দিতে চাইবে তার সন্তান-সন্ততিকে, তার স্ত্রী ও ভ্রাতাকে, তার জ্ঞাতি-গোষ্ঠীকে, যারা তাকে আশ্রয় দিতে এবং পৃথিবীর সকলকে, যাতে এই মুক্তিপণ তাকে মুক্তি দেয়। না, কখনই নয়।' হায়! এটা কতই না মর্মান্তিক দৃশ্য! সেই দিন মানুষ। তার কলিজার টুকরা এবং নিজের শাখা ও মূলকে এবং সবকিছুকেই মুক্তিপণ হিসেবে প্রদান করতে প্রস্তুত থাকবে, যেন সে নিজে বেঁচে যায়! فَصِيْلَةِ-এর একটি অর্থ ধন-সম্পদও করা হয়েছে। মোটকথা, সেই দিন মানুষ আত্মরক্ষার জন্যে প্রিয় হতে প্রিয়তম জিনিসকেও মুক্তিপণ হিসেবে আন্তরিয্কভাবে দিতে চাইবে। কিন্তু কোন জিনিসই উপকারে আসবে না। কোন বিনিময় ও মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে না। বরং ঐ আগুনের শাস্তিতে নিক্ষেপ করা হবে যা হবে লেলিহান শিখাযুক্ত এবং ভীষণভাবে প্রজ্বলিত। তা গাত্র হতে চামড়া খসিয়ে দিবে। অস্থিকে করে দিবে মাংস শূন্য। শিরাগুলোকে করে দিবে নিষ্কাষিত, পদনালী হয়ে যাবে কর্তিত, চেহারাকে করে দিবে কুৎসিত ও বিবর্ণ, প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে নষ্ট করে দিবে, অস্থি হয়ে যাবে চূর্ণ-বিচূর্ণ। এই আগুন সুন্দর ভাষায় ও উচ্চস্বরে ঐ ব্যক্তিকে ডাকবে, যে সত্যের প্রতি পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেছিল ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। যে সম্পদ পুঞ্জীভূত এবং সংরক্ষিত করে রেখেছিল। যে মুখেও অস্বীকার করতো এবং দৈহিক দিক থেকেও আমল পরিত্যাগ করতো। যে মাল শুধু জমা করেই রাখতো এবং আল্লাহ তা'আলার জরুরী নির্দেশের ক্ষেত্রে তা খরচ করতো না। এমনকি যাকাত আদায় করতো না।
হাদীসে রয়েছেঃ “মাল পুঞ্জীভূত ও সংরক্ষিত করে রেখো না, অন্যথায় আল্লাহ্ও (পাপ) পুঞ্জীভূত ও সংরক্ষিত করে রাখবেন।” হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে উকায়েম (রঃ) এই হাদীসের উপর আমল করতে গিয়ে থলের মুখ বন্ধই করতেন না। ইমাম বসরী (রঃ) বলেনঃ “হে আদম সন্তান! আল্লাহ তা’আলার ভীতি-প্রদর্শনমূলক কথা শোনার পরেও মাল পুঞ্জীভূত করে রাখছো? হ্যরত কাতাদাহ্ (রঃ) وَجَمَعَ فَاَوْعٰى-এর অর্থ করেনঃ মাল পুঞ্জীভূত করার ব্যাপারে সে হালাল হারামের কোন পরোয়া করতো না এবং আল্লাহ্ তা'আলার নির্দেশ সত্ত্বেও খরচ করতো না।