ইব্রাহীম আয়াত ১৭
يَّتَجَرَّعُهٗ وَلَا يَكَادُ يُسِيْغُهٗ وَيَأْتِيْهِ الْمَوْتُ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ وَّمَا هُوَ بِمَيِّتٍۗ وَمِنْ وَّرَاۤىِٕهٖ عَذَابٌ غَلِيْظٌ ( ابراهيم: ١٧ )
Yatajarra'uhoo wa laa yakaadu yuseeghuhoo wa yaateehil mawtu min kulli makaaninw wa maa huwa bimaiyitinw wa minw waraaa'ihee 'azaabun ghaleez (ʾIbrāhīm ১৪:১৭)
English Sahih:
He will gulp it but will hardly [be able to] swallow it. And death will come to him from everywhere, but he is not to die. And before him is a massive punishment. (Ibrahim [14] : 17)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
সে তা খুব কষ্ট করে গিলতে চেষ্টা করবে, আর খুব কমই গিলতে পারবে। মৃত্যু যন্ত্রণা তার কাছে চতুর্দিক থেকে আসবে কিন্তু সে মরবে না, এরপর তার জন্য থাকবে এক কঠিন ‘আযাব। (ইব্রাহীম [১৪] : ১৭)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
যা সে অতি কষ্টে এক ঢোক এক ঢোক করে গিলতে থাকবে এবং তা গিলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে; সর্বদিক হতে তার নিকট আসবে মৃত্যু-যন্ত্রণা, কিন্তু তার মৃত্যু ঘটবে না[১] এবং তার পরে থাকবে কঠোর শাস্তি।
[১] অর্থাৎ, বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি আস্বাদন করতে করতে তারা মৃত্যু-কামনা করবে, কিন্তু সেথায় মৃত্যু কোথায়? সেখানে তো তাদের এই ধরনের অবিরাম শাস্তি হতেই থাকবে।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
যা সে অতি কষ্টে একেক ঢোক করে গিলবে এবং তা গিলা প্রায় সহজ হবে না। সকল স্থান থেকে তার কাছে আসবে মৃত্যু [১] অথচ তার মৃত্যু ঘটবে না [২। আর এরপরও রয়েছে কঠোর শাস্তি [৩]।
[১] ইবরাহীম আত-তাইমী বলেন, সবদিক থেকে মৃত্যু আসার অর্থ, শরীরের প্রতিটি লোমকূপ থেকে মৃত্যুর কষ্ট আসতে থাকবে। [তাবারী]
[২] আল্লাহ্ বলেন, “এবং তাদের জন্য থাকবে লোহার মুগুর।” [সূরা আল-হাজ্জঃ ২১], তারা সেটা গিলতে চেষ্টা করলেও সেটার দুর্গন্ধ, তিক্ততা, ময়লা আবর্জনা ও প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বা গরম হওয়ার কারণে সহজে গিলতে সমর্থ হবে না। এভাবে তার শাস্তি চলতেই থাকবে, তার সমস্ত শরীরে মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করবে কিন্তু মৃত্যু তার আসবে না। তার অগ্র, পশ্চাত, উপর বা নীচ সবদিক থেকে তার শাস্তি এমন হবে যে, এর সবগুলিই তার মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তার মৃত্যু হবে না। আল্লাহ্ তা’আলা অন্যত্র বলেনঃ “কিন্তু যারা কুফরী করে তাদের জন্য আছে জাহান্নামের আগুন। তাদের মৃত্যুর আদেশ দেয়া হবে না যে, তারা মরবে এবং তাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তিও লাঘব করা হবে না।” [সূরা ফাতিরঃ ৩৬|
[৩] অর্থাৎ এটাই তাদের শাস্তির শেষ নয়। এর পরও তাদের জন্য আরো ভয়াবহ, কঠোর ও মারাত্মক শাস্তি অপেক্ষা করছে। [ইবন কাসীর] অন্যত্র বলেছেনঃ “যাক্কুম গাছ, যালিমদের জন্য আমি এটা সৃষ্টি করেছি পরীক্ষাস্বরূপ, এ গাছ উদগত হয় জাহান্নামের তলদেশ হতে, এর মোচা যেন শয়তানের মাথা। তারা এটা থেকে খাবে এবং উদর পূর্ণ করবে এটা দিয়ে। তার উপর তাদের জন্য থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ। আর তাদের গন্তব্য হবে অবশ্যই প্রজ্বলিত আগুনের দিকে।” [সূরা আস-সাফফাতঃ ৬২-৬৮]
এভাবেই তারা কখনো যাক্কুম গাছ থেকে খাবে, আবার কখনো তারা ফুটন্ত পানি পান করবে যা তাদের পেটের নাড়ীভুঁড়ি ছিন্নভিন্ন করে ফেলবে। আবার কখনো তাদেরকে জাহান্নামের কঠোর শাস্তির দিকে ফেরত পাঠানো হবে। এভাবে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে তাদের শাস্তি হতে থাকবে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ “এটাই সে জাহান্নাম, যা অপরাধীরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করত, ওরা জাহান্নামের আগুন ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটোছুটি করবে।” [সূরা আর-রাহমানঃ ৪৩-৪৪]
আরো বলেনঃ “নিশ্চয়ই যাক্কুম গাছ হবে---পাপীর খাদ্য; গলিত তামার মত, তাদের পেটে ফুটতে থাকবে ফুটন্ত পানির মত। তাকে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে, তারপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে শাস্তি দাও- এবং বলা হবে, ‘আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, অভিজাত!’ এ তো তা-ই, যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ করতে।” [সূরা আদ-দোখানঃ ৪৩-৪৯]
আরো বলেনঃ “আর বাম দিকের দল, কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! ওরা থাকবে অত্যন্ত উষ্ণ বায়ু ও উত্তপ্ত পানিতে, কালোবর্ণের ধোঁয়ার ছায়ায়, যা শীতল নয়, আরামদায়কও নয়। [সুরা আল-ওয়াকি’আহঃ ৪১-৪৪]
আরো বলেনঃ “আর সীমালংঘনকারীদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্টতম পরিণাম--- জাহান্নাম, সেখানে তারা প্রবেশ করবে, কত নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল! এটা সীমালংঘনকারীদের জন্য। কাজেই তারা আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পুঁজ। আরো আছে এরূপ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি।” [সূরা ছোয়াদঃ ৫৫-৫৮]।
3 Tafsir Bayaan Foundation
সে তা গিলতে চাইবে এবং প্রায় সহজে সে তা গিলতে পারবে না। আর তার কাছে সকল স্থান থেকে মৃত্যু ধেঁয়ে আসবে, অথচ সে মরবে না। আর এর পরেও রয়েছে কঠিন আযাব ।
4 Muhiuddin Khan
ঢোক গিলে তা পান করবে। এবং গলার ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। প্রতি দিক থেকে তার কাছে মৃত্যু আগমন করবে এবং সে মরবে না। তার পশ্চাতেও রয়েছে কঠোর আযাব।
5 Zohurul Hoque
সে তা চুমুক দিয়ে পান করবে, আর সে তা সহজে গলাধঃকরণ করতে পারবে না, আর মরণ যন্ত্রণা তার কাছে আসবে সব দিক থেকে, কিন্তু সে মরবে না। আর তার সামনে রয়েছে কড়া শাস্তি।
6 Mufti Taqi Usmani
সে তা ঢোক গিলে গিলে পান করবে, মনে হবে যেন সে তা গলা থেকে নামাতে পারছে না। মৃত্যু তার দিকে চারদিক থেকে এসে পড়বে, কিন্তু সে মরবে না এবং তার সামনে (সর্বদা) থাকবে এক কঠিন শাস্তি।
7 Mujibur Rahman
যা সে অতি কষ্টে গলধঃকরণ করবে এবং তা গলধঃকরণ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। সর্ব দিক হতে তার নিকট আসবে মৃত্যু যন্ত্রণা, কিন্তু তার মৃত্যু ঘটবেনা এবং সে কঠোর শাস্তি ভোগ করতেই থাকবে।
8 Tafsir Fathul Mazid
১৩-১৭ আয়াতের তাফসীর:
পূর্বের আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, কাফিরগণ যখন যুক্তিতর্কে হেরে গেল আর রাসূলগণ দাওয়াতী কার্যক্রম চালিয়েই যাচ্ছেন এবং তাতে অটল অবস্থানে রয়ে গেলেন তখন তারা ধমক ও ভয় দেখিয়ে বলল: আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দেব যদি আমাদের ধর্মের অনুসরণ না কর। শু‘আইব (عليه السلام) ও লূত (عليه السلام)-এর জাতির লোকেরা বলেছিল যে, আমাদের বাসভূমি থেকে তাদেরকে বের করে দাও। যেমন সূরা আ‘রাফের ৮৮ নং আয়াত এবং সূরা নামলের ৫৬ নং আয়াতে উল্লেখ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ব্যাপারে মক্কার কুরাইশরাও এরূপ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং বলেছিল তাকে বন্দী কর, হত্যা কর অথবা দেশ থেকে তাড়িয়ে দাও।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِيُثْبِتُوْكَ أَوْ يَقْتُلُوْكَ أَوْ يُخْرِجُوْكَ ط وَيَمْكُرُوْنَ وَيَمْكُرُ اللّٰهُ ط وَاللّٰهُ خَيْرُ الْمٰكِرِيْنَ )
“স্মরণ কর! যখন কাফিরগণ তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তোমাকে বন্দী করার বা হত্যা করার অথবা নির্বাসিত করার জন্য। আর তারা ষড়যন্ত্র করে এবং আল্লাহও কৌশল করেন; আর আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।” (সূরা আনফাল ৮:৩০)
কাফিরদের এসব কথায় আল্লাহ তা‘আলা রাসূলদেরকে সাহস দিয়ে ওয়াহী প্রেরণ করলেন যে, তোমাদেরকে সাহায্য করব আর জালিমদেরকে ধ্বংস করব।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ سَبَقَتْ کَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِیْنَﯺﺊ اِنَّھُمْ لَھُمُ الْمَنْصُوْرُوْنَﯻﺕ وَاِنَّ جُنْدَنَا لَھُمُ الْغٰلِبُوْنَﯼ )
“আমার রাসূল বান্দাদের সম্পর্কে আমার এ কথা আগেই নির্ধারিত হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। এবং আমার বাহিনী, অবশ্যই তারাই জয়ী হবে।” (সূরা স্বফফাত ৩৭:১৭১-১৭৩)
এরূপ সূরা আ‘রাফের ১২৮ নং এবং সূরা মুজাদালার ২১ নং আয়াতে বলা হয়েছে।
আমরা দৃষ্টিপাত করলেই দেখতে পাব যুগে যুগে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলদেরকে সহযোগিতা করেছেন, কাফির-মুশরিকদেরকে ধ্বংস করেছেন। নূহ, হূদ, সালেহ, লূত, ইবরাহীম, ঈসা ও মূসা আলাইহিমুস সালাম-সহ সকল নাবীদেরকে আল্লাহ তা‘আলা সাহায্য করেছেন। আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কেও আল্লাহ তা‘আলা সাহায্য করেছেন। যখন মক্কার কাফিররা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছিল তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে সুন্দরভাবে মদীনায় পৌঁছে দিলেন এবং সেখানে দীনের সাহায্যকারী সহচর্য বানিয়ে দিলেন, তারা তাঁর সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ইসলামকে ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে নিয়ে যায় এমনকি শেষ পর্যন্ত যে মক্কা থেকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বের করে দেয়া হয়েছিল সে মক্কাই তারা জয় করেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদের গুণাগুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন:
(مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللّٰهِ ط وَالَّذِيْنَ مَعَه۫ أَشِدَّا۬ءُ عَلَي الْكُفَّارِ رُحَمَا۬ءُ بَيْنَهُمْ)
“মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফিরদের ব্যাপারে কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে কোমল।” (সূরা ফাতহ ৪৮:২৯)
(وَلَنُسْكِنَنَّكُمُ الْأَرْضَ مِنْۭ بَعْدِهِمْ)
কাফিরদেরকে ধ্বংস করে, তাদেরকে হীন ও অপদস্ত করে পরাজয় বরণ করিয়ে সে দেশ তোমাদের অধীনস্থ করে দেব। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয় করলেন, উমার (রাঃ) অর্ধ-জাহান ইসলামের শাসনাধীনে নিয়ে এসেছিলেন।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِيْنَ كَانُوْا يُسْتَضْعَفُوْنَ مَشَارِقَ الْأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا الَّتِيْ بٰرَكْنَا فِيْهَا)
“যে সম্প্রদায়কে দুর্বল মনে করা হত তাদেরকে আমি আমার কল্যাণপ্রাপ্ত (সিরিয়া) রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী করেছি।” (সূরা আ‘রাফ ৭:১৩৭)
মু’মিনদের জয় আর কাফিরদের পরাজয় দুনিয়াতেও হয়েছিল এবং হবে আখিরাতেও। কাফিররা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে যাবে, আর মু’মিনরা জান্নাতের ওয়ারিশ হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُوْرِ مِنْۭ بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصّٰلِحُوْنَ)
“আমি অবশ্যই লাওহে মাহফুযে যা লেখার তা লেখার পর নাযিলকৃত আসমানী কিতাবে লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্মশীল বান্দাগণ পৃথিবীর অধিকারী হবে।” (সূরা আম্বিয়া ২১:১০৫)
তবে এ জয় সে সকল মু’মিনদের যারা আল্লাহ তা‘আলার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে এবং আল্লাহ তা‘আলার শাস্তিকে ভয় করে। কারণ যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে চলে তারাই দীনের ওপর অটল থাকতে পারে। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّه۪ وَنَهَي النَّفْسَ عَنِ الْهَوٰي فَإِنَّ الْـجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوٰي)
“পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি নিজ প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোর ভয় রেখেছে এবং কুপ্রবৃত্তি হতে নিজেকে বিরত রেখেছে, অবশ্যই তার ঠিকানা হবে জান্নাত।” (সূরা নাযিআত ৭৯:৪০-৪১)
وَاسْتَفْتَحُوْا অর্থাৎ কাফির-মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে ফায়সালা কামনা করল। যদি নাবীদের দীন সঠিক হয় তাহলে আমাদেরকে পাথরের বৃষ্টি দ্বারা ধ্বংস করে দাও।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِذْ قَالُوا اللّٰهُمَّ إِنْ كَانَ هٰذَا هُوَ الْحَقَّ مِنْ عِنْدِكَ فَأَمْطِرْ عَلَيْنَا حِجَارَةً مِّنَ السَّمَا۬ءِ أَوِ ائْتِنَا بِعَذَابٍ أَلِيْمٍ)
“স্মরণ কর! যখন তারা বলছিল, ‘হে আল্লাহ! এটা যদি তোমার পক্ষ হতে সত্য হয়, তবে আমাদের ওপর আকাশ হতে প্রস্তর বর্ষণ কর কিংবা আমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দাও।” (সূরা আনফাল ৮:৩২)
যারা কুফরী করেছে, ঈমান আনতে অহংকার করেছে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। দুনিয়াতে পরাজয়ের গ্লানি আর (وَمِنْ وَّرَا۬ئِه۪) তথা আখিরাতে জাহান্নাম। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَلْقِيَا فِيْ جَهَنَّمَ كُلَّ كَفَّارٍ عَنِيْدٍ لا مَّنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ مُّرِيْبِ لا نِالَّذِيْ جَعَلَ مَعَ اللّٰهِ إلٰهًا اٰخَرَ فَأَلْقِيَاهُ فِي الْعَذَابِ الشَّدِيْدِ )
‘‘আদেশ করা হবে:) তোমরা উভয়ে নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক অবাধ্য কাফিরকে কল্যাণকর কাজে প্রবল বাধা দানকারী, সীমালঙ্ঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারীকে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য মা‘বূদ গ্রহণ করত তাকে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর।” (সূরা ক্বফ ৫০:২৪-২৬)
(مَّا۬ءٍ صَدِيْدٍ) বলা হয় জাহান্নামীদের শরীর ও চামড়া থেকে নির্গত পূঁজ ও রক্তকে। কতক হাদীসে এসেছে عُصَارَةِ أَهْلِ النَّارِ অর্থাৎ জাহান্নামীদের দেহ-নিঃসৃত রক্ত ও পূঁজ ইত্যাদি। আর কতক হাদীসে এসেছে উক্ত পুঁজ ও রক্ত এত গরম হবে যে, তাদের মুখ পর্যন্ত পৌঁছতেই তাদের মুখমণ্ডলের চামড়া খসে পড়বে এবং এর এক ঢোক পান করতেই তাদের পেটের নাড়িভুঁড়ি পায়খানার রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যাবে। (তিরমিযী হা: ২৪৯২, সহীহ)
আর তাদের নিকট সর্বদিক থেকে আসবে মৃত্যু যন্ত্রণা, কিন্তু তারা তথায় মৃত্যু বরণ করবেনা। বরং এরপরেও তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হবে। সুতরাং যারা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কঠিন শাাস্তি আস্বাদন করাবেন, আর যদি মু’মিন হয়ে সঠিক ঈমান ও আমলের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দুনিয়াতেও প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং আখিরাতেও তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাফির-মুশরিকরা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে ক্ষতিগ্রস্ত ও লাঞ্ছিত হবে।
২. কাফিরদের ধ্বংস ও পরাজিত করে পৃথিবীতে মু’মিনগণ ক্ষমতাসীন থাকবেন।
৩. পানীয় হিসেবে তথায় (জাহান্নামে) থাকবে গলিত পুঁজ।
৪. কাফিররা তথায় মৃত্যু যন্ত্রণা উপভোগ করবে কিন্তু মৃত্যু বরণ করবে না।
৫. মু’মিনদের বিরুদ্ধাচরণ করা যাবে না।
9 Fozlur Rahman
সে তা ঢোক গিলে (অনিচ্ছায়) পান করবে এবং তা গেলা সহজসাধ্য হবে না। আর সব দিক থেকে তার কাছে মৃত্যু (মৃত্যুর যন্ত্রণা) আসতে থাকবে, কিন্তু সে মরবে না। তার পেছনে (ভাগ্যে) রয়েছে কঠিন শাস্তি।
10 Mokhtasar Bangla
১৭. সে তা পান করার বারবার কসরত করবে। তবে অতি তিক্ততা, গরম ও গন্ধের দরুন সে তা গিলতে পারবে না। শাস্তি ভোগের ভয়াবহতার দরুন মৃত্যু তার চতুর্দিক থেকে ঘিরে আসবে। অথচ সে কখনো মরে যাবে না। বরং সে জীবিত থেকেই শাস্তি ভোগ করবে। তার সামনে আরো কঠিন শাস্তি রয়েছে, সে যার অপেক্ষায় থাকবে।
11 Tafsir Ibn Kathir
১৩-১৭ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, কাফিরগণ যখন যুক্তিতর্কে হেরে গেল তখন নবীদেরকে ধমক দিতে ও ভয় দেখাতে লাগলো যে, তাদেরকে তারা দেশ থেকে তাড়িয়ে দিবে। হযরত শুআইবের (আঃ) কওমও তাদের নবী ও মুমিনদের এ কথাই বলেছিলঃ “আমরা তোমাদের বাসভূমি হতে বের করে দিবো।' হযরত লূতের (আঃ) সম্প্রদায়ও অনুরূপ কথাই বলেছিলঃ ‘নূত (আঃ) ও তার অনুসারীদেরকে তোমাদের গ্রাম থেকে বের করে দাও। কুরাইশ মুশরিকরাও এইরূপই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল এবং বলেছিলঃ ‘তাকে বন্দীকর, হত্যা কর অথবা দেশ থেকে বের করে দাও। তাদের সম্পর্কে খবর দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَ اِنْ كَادُوْا لَیَسْتَفِزُّوْنَكَ مِنَ الْاَرْضِ لِیُخْرِجُوْكَ مِنْهَا وَ اِذًا لَّا یَلْبَثُوْنَ خِلٰفَكَ اِلَّا قَلِیْلًا অর্থাৎ “তারা তোমাকে দেশ হতে উৎখাত করবার চুড়ান্ত চেষ্টা করেছিল তোমাকে সেথা হতে বহিষ্কার করবার জন্যে; তা হলে তোমার পর তারাও সেথায় অল্পকাল টিকে থাকতো।” (১৭:৭৪)।
আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ وَ اِذْ یَمْكُرُ بِكَ الَّذِیْنَ كَفَرُوْا لِیُثْبِتُوْكَ اَوْ یَقْتُلُوْكَ اَوْ یُخْرِجُوْكَؕ-وَ یَمْكُرُوْنَ وَ یَمْكُرُ اللّٰهُؕ-وَ اللّٰهُ خَیْرُ الْمٰكِرِیْنَ অর্থাৎ “যখন কাফিরগণ চক্রান্ত করে তোমাকে বন্দী করার অথবা হত্যা করার এবং দেশে হতে) বের করে দেয়ার, তারা চক্রান্ত করেছিল, আল্লাহও কৌশল করেন আর আল্লাহ চক্রান্তের উত্তম প্রতিফল প্রদানকারী।” (৮:৩০) তিনি স্বীয় নবীকে (সঃ) নিরাপদে মক্কায় পৌছিয়ে দিলেন। মদীনাবাসীকে তাঁর আনসার বা সাহায্যকারী বানিয়ে দিলেন। তাঁরা তাঁর সেনাবাহিনীর অন্তভূক্ত হয়ে তাঁর পতাকা তলে এসে কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করেন এবং ধীরে ধীরে আল্লাহ তাআলা তাঁকে উন্নতি দান করেন। এমন কি শেষ পর্যন্ত তিনি মক্কাও জয় করে নেন। ফলে এখন দ্বীনের দুশমনদের চক্রান্ত নস্যাৎ হয়ে যায় এবং তাদের আশার গুড়ে বালি পড়ে যায়। লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে শুরু করে এবং আল্লাহর কালেমা এবং তার দ্বীন অল্প সময়ের মধ্যে পূর্বে ও পশ্চিমে সমস্ত দ্বীনের উপর বিজয় লাভ করে। এ জন্যেই আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “রাসূলদের কাছে তাদের প্রতিপালক ওয়াহী করলেনঃ যালিমদেরকে আমি অবশ্যই ধ্বংস করবো। আর তাদের পরে আমি তোমাদেরকে দেশে প্রতিষ্ঠিত করবই। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য এক জায়গায় বলেছেনঃ وَ لَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِیْنَ ـ اِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنْصُوْرُوْنَ ـ وَ اِنَّ جُنْدَنَا لَهُمُ الْغٰلِبُوْنَ অর্থাৎ “আমার প্রেরিত বান্দাদের সম্পর্কে আমার এই বাক্য পূর্বেই স্থিরহয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্য প্রাপ্ত হবে এবং আমার বাহিনীই হবে। বিজয়ী।” (৩৭:১৭১-১৭৩) মহান আল্লাহ অন্য এক জায়গায় বলেনঃ كَتَبَ اللّٰهُ لَاَغْلِبَنَّ اَنَا وَ رُسُلِیْ اِنَّ اللّٰهَ قَوِیٌّ عَزِیْزٌ অর্থাৎ “আল্লাহ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেনঃ অবশ্যই আমি এবং আমার রাসূলগণ জয়যুক্ত হবো, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমতাবান, পরাক্রমশালী।” (৫৮:২১) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ وَ لَقَدْ كَتَبْنَا فِی الزَّبُوْرِ مِنْۢ بَعْدِ الذِّكْرِ اَنَّ الْاَرْضَ یَرِثُهَا عِبَادِیَ الصّٰلِحُوْنَ অর্থাৎ “আমি উপদেশের পর কিতাবে লিখে দিয়েছিঃ আমার যোগ্যতা সম্পন্ন বান্দাগণ পৃথিবীর অধিকারী হবে।” (২১:১০৫)
হযরত মূসা (আঃ) তাঁর কওমকে বলেছিলেনঃ “তোমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং ধৈর্য ধারণ করো, নিশ্চয় যমীন আল্লাহর, তিনি তাঁর বান্দাদের যাকে চান যমীনের উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন এবং ভাল পরিণাম খোদাভীরুদের জন্যেই।” আর এক জায়গায় ঘোষণা করা হয়েছেঃ “দুর্বল লোকদেরকে আমি যমীনের পূর্ব ও পশ্চিমের ওয়ারিস বানিয়ে দিয়েছি, যেখানে আমি বানী ইসরাঈলের ধৈর্য ধারণের কারণে আমার উত্তম ওয়াদা পুরণার্থে বরকত দান করেছিলাম; আর তাদের শত্রু ফিরাউন ও তার কওমের শিল্প এবং তাদের নির্মিত প্রাসাদসমূহ ধ্বংস করে দিয়েছিলাম।”
ঘোষিত হয়েছেঃ “যমীন তোমাদের অধিকারে চলে আসবে, এই ওয়াদা ঐ লোকদের জন্যে যারা কিয়ামতের দিন আমার সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে এবং আমার শাস্তিকে ভয় করে।” যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ فَاَمَّا مَنْ طَغٰى ـ وَ اٰثَرَ الْحَیٰوةَ الدُّنْیَا ـ فَاِنَّ الْجَحِیْمَ هِیَ الْمَاْوٰى অর্থাৎ “যে ব্যক্তি সীমা লংঘন করলো ও পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিলো, তার বাসস্থান জাহান্নাম।” (৭৯:৩৭-৩৯) তিনি আরো বলেনঃ وَ لِمَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهٖ جَنَّتٰنِ অর্থাৎ “যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার ভয় রাখে তার জন্যে রয়েছে দুটি উদ্যান।” (৫৫:৪৬)
রাসূলগণ তাঁদের প্রতিপালকের কাছে সাহায্য, বিজয় ও ফায়সালা প্রার্থনা করলেন অথবা তাদের কওম এইরূপ প্রার্থনা করলো। রাসূলদের এইরূপ প্রার্থনা করা এটা হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) উক্তি। আর তাঁর কওমের এইরূপ প্রার্থনা করা এটা হযরত আবদুর রহমান ইবনু যায়েদ ইবনু আসলামের (রঃ) উক্তি। যেমন মক্কার মুশরিক কুরায়েশরা বলেছিলঃ “হে আল্লাহ! যদি এটা সত্য হয় তবে তুমি আকাশ হতে আমাদের উপর পাথর বর্ষণ কর অথবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আমাদের উপর নাযিল করো।” আবার এও হতে পারে যে, এদিকে কাফিররা এটা প্রার্থনা করলো, আর ওদিকে রাসূলগণও দুআ করলেন। যেমন বদরের যুদ্ধের দিন ঘটেছিল যে, একদিকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আল্লাহ তাআলার নিকট কাতর কণ্ঠে দুআ করেছিলেন, আর অপরদিকে কাফির নেতৃবর্গই প্রার্থনা করছিলঃ “হে আল্লাহ! আজ তুমি হক বা সত্যকে জয়যুক্ত কর।” হয়েছিলও তাই। মুমিনরা হক পথে ছিলেন, কাজেই তাঁরাই বিজয়ী হয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের বলেছিলেনঃ “তোমরা বিজয় প্রার্থনা করছিলে, তাতো এসে গেছে এবং এখনও যদি তোমরা (দুষ্কর্ম থেকে) বিরত থাক তবে এটাই হবে তোমাদের জন্যে কল্যাণকর।” এ সব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান এক মাত্র আল্লাহ তাআলারই রয়েছে।
মহান আল্লাহর উক্তিঃ “উদ্ধত স্বৈরাচারী ব্যর্থ মনোরথ হলো।” যেমন তিনি এক জায়গায় বলেছেনঃ “(আদেশ করা হবে) নিক্ষেপ কর, নিক্ষেপ কর জাহান্নামে প্রত্যেক উদ্ধত কাফিরকে কল্যাণকর কাজে প্রবল বাধাদানকারী, সীমালংঘনকারী ও সন্দেহ পোষণকারী। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য মা'বুদ গ্রহণ করতো তাকে কঠিন শাস্তিতে নিক্ষেপ কর।”
হাদীসেও রয়েছে যে, কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে আনয়ন করা হবে, তখন সে সমস্ত মাখলুককে ডাক দিয়ে বলবেঃ “আমি প্রত্যেক অহংকারী ও হঠকারীর জন্যে নির্ধারিত রয়েছি।” সেই দিন এ মন্দলোকদের কতইনা দূরাবস্থা হবে যেই দিন নবীগণ পর্যন্ত মহা প্রতাপান্বিত আল্লাহ তাআলার সামনে কড়জোড়ে দাড়িয়ে থাকবেন।
এখানে وَرَاءٌ শব্দটি اَمَامٌ (সামনে) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন এক জায়গায় আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ وَ كَانَ وَرَآءَهُمْ مَّلِكٌ یَّاْخُذُ كُلَّ سَفِیْنَةٍ غَصْبًا অর্থাৎ “তাদের সামনে ছিল এক রাজা, যে বল প্রয়োগে নৌকা সকল ছিনিয়ে নিতো।” (১৮:৭৯)
হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) কিরআত اَمَامَهُمْ مَلِكٌ এইরূপই রয়েছে। মোটকথা, সামনে জাহান্নাম তার অপেক্ষায় থাকবে, যেখানে প্রবেশ করার পর আর বের হতে হবে না। কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তো জাহান্নাম সকাল-সন্ধ্যায় সামনে আসতেই থাকবে। তারপর ওটাই স্থায়ী ঠিকানা বা বাসস্থান হয়ে যাবে। অতঃপর সেখানে তার জন্যে পানির পরিবর্তে আগুনের মত পুঁজ রয়েছে এবং সীমাহীন ঠাণ্ডা এবং দুর্গন্ধময় পানি রয়েছে, যা জাহান্নামীদের ক্ষতস্থান হতে নির্গত হয়ে আসবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ هٰذَا فَلْیَذُوْقُوْهُ حَمِیْمٌ وَّ غَسَّاقٌ অর্থাৎ “এটা হচ্ছে ফুটন্ত পানি ও পূজ সুতরাং এটার যেন তারা স্বাদ গ্রহণ করে।” (৩৮:৫৭)
صَدِيْدٌ বলা হয় পুঁজ ও রক্তকে যা জাহান্নামীদের গোশতও চামড়া থেকে বয়ে আসবে। এটাকেই طِيْنَةُ الْخَبَال ও বলা হয়ে থাকে। এটা কাতাদা’র (রঃ) উক্তি।
হযরত আবু উমামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) وَيُسْقٰى مِنْ مَّاءٍ صَدِيْدٍ يَّتَجَرَّعُهٗ (গলিত পুঁজ পান করানো হবে যা সে অতি কষ্টে গলাধঃকরণ করবে) এই উক্তির ব্যাখ্যায় বলেন যে, যখন তার কাছে তা নিয়ে যাওয়া হবে তখন তার খুব কষ্ট হবে। মুখের কাছে পৌছা মাত্রই সমস্ত চেহারার চামড়া ঝলসে গিয়ে তাতে পড়ে যাবে। এক চুমুক নেয়া মাত্রই পেটের নাড়িভূড়ি পায়খানার দ্বার দিয়ে বেরিয়ে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে যা তাদের নাড়ি কেটে দিবে। আল্লাহ পাক আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “প্রার্থনাকারীর চাহিদা গলিত তামার ন্যায় ফুটন্ত গরম পানি দ্বারা মেটানো হবে যা তার চেহারা দগ্ধিভূত করবে।” অতিকষ্টে সে চুক চুক করে গলাধঃকরণ করবে। ফেরেশতারা লোহার ঘন মেরে মেরে পান করাবে। বিস্বাদ, দুর্গন্ধ, গরমের তীব্রতা বা ঠাণ্ডার তীব্রতার কারণে গলা থেকে নামা অসম্ভব হয়ে যাবে। দেহে, অঙ্গ-প্রতঙ্গে, জোড়ে জোড়ে ব্যথা ও কষ্ট হবে। মনে হবে যেন মৃত্যু চলে আসছে। কিন্তু মৃত্যু হবে না। শিরায় শিরায় শাস্তি দেয়া হবে, কিন্তু প্রাণ বের হবে না। এক একটি পশম অসহনীয় শাস্তিতে পতিত, কিন্তু আত্মাদেহ হতে বের হতে পারবে না। সামনে, পেছনে, ডানে ও বামে হতে যেন মৃত্যু চলে আসছে, কিন্তু এসে পড়ছে না। বিভিন্ন প্রকারের শাস্তি, জাহান্নামের আগুন পরিবেষ্টন করে রয়েছে। কিন্তু মৃত্যুকে ডেকেও আসে না। মৃত্যুও আসে না, শাস্তিও সরে না, যেন সার্বক্ষণিক শাস্তি হতে থাকে। প্রত্যেক শাস্তি এমন যে, তা মৃত্যুর জন্যে যথেষ্ট হওয়ার চাইতেও বেশী। কিন্তু সেখানে তো মৃত্যুও হয়ে যাবে। এসব শাস্তির সাথে আরো কঠিন ও বেদনাদায়ক শাস্তি রয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা যাককুম বৃক্ষ সম্বন্ধে বলেছেনঃ “এই বৃক্ষ উদ্গত হয় জাহান্নামের তলদেশ হতে। এর মোচা যেন শয়তানের মাথা। তারা এটা হতে ভক্ষণ করবে এবং এর দ্বারা উদরপূর্ণ করবে। তদুপরি তাদের জন্যে থাকবে ফুটন্ত পানির মিশ্রণ। আর তাদের গন্তব্য হবে অবশ্যই প্রজ্জ্বলিত অগ্নির দিকে।” মোট কথা, কখনো যাককুম খাওয়া, কখনো গরম ফুটন্ত পানি পান করা, কখনো আগুনে পোড়ানো, কখনো পুঁজ পান করানো ইত্যাদি বিভিন্ন শাস্তি তাদেরকে দেয়া হবে। আমরা এর থেকে আল্লাহ তাআলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। অনুরূপ আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেনঃ هٰذِهٖ جَهَنَّمُ الَّتِیْ یُكَذِّبُ بِهَا الْمُجْرِمُوْنَ ـ یَطُوْفُوْنَ بَیْنَهَا وَ بَیْنَ حَمِیْمٍ اٰنٍ অর্থাৎ “এটাই সেই জাহান্নাম, যা অপরাধীরা অবিশ্বাস করে। তারা জাহান্নামের অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে” (৫৫:৪৩-৪৪) প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই যাকুম বৃক্ষ হবে পাপীদের খাদ্য। গলিত তারে মত, ওটা তার উদরে ফুটতে থাকবে, ফুটন্ত পানির মত। (ফেরেস্তাদেরকে বলা হবে) তাকে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে। অতঃপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দিয়ে শাস্তি দাও। আর বলা হবেঃ আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, অভিজাত। এটাতো ওটাই, যে বিষয়ে তুমি সন্দেহ করতে।” তিনি আর এক জায়গায় বলেছেনঃ “এটাই, আর সীমালংঘনকারীদের জন্যে রয়েছে নিকৃষ্টতম পরিণাম জাহান্নাম, সেথায় তারা প্রবেশ করবে, কত নিকৃষ্ট বিশ্রামস্থল। এটা সীমালংঘনকারীদের জন্যে, সুতরাং তারা আস্বাদন করুক ফুটন্ত পানি ও পূজ। আরো আছে এইরূপ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি।” এমন আরো বহু শাস্তি রয়েছে যা মহা মহিমান্বিত ও প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না। আল্লাহ পাক বলেনঃ وَ مَا رَبُّكَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِیْدِ অর্থাৎ “(হে মুহাম্মদ সঃ!) তোমার প্রতিপালক বান্দাদের প্রতি কোন অবিচার করেন না।” (৪১:৪৬)