৫৩-৫৫ নং আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে উত্তম চরিত্র, আমল ও কথা বলার নির্দেশনা দিয়ে বলেন: যখন তোমরা কথা বলবে তখন যা ভাল সে কথা বলবে। মন্দ কথা বলা থেকে বিরত থাকবে, তা দীনের ব্যাপারে হোক আর দুনিয়ার ব্যাপারে হোক।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ
যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতে বিশ্বাসী সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে। (সহীহ বুখারী হা: ৬০১৮)
সুতরাং কথা বলার সময় খেয়াল করা উচিত, আমি যা বলছি তা কি দীন ও দুনিয়ার জন্য কল্যাণকর, মানুষের উপকারে আসবে, না কারো ক্ষতি বয়ে নিয়ে আসবে। এসব খেয়াল করে চললে সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে না, হানাহানি মারামারি হবে না, বরং সকলে ভাই ভাই হিসেবে বসবাস করা যাবে। তার পরেই আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, শয়তান চায় তোমাদের মুখ দিয়ে এমন কিছু কথা বের করতে যার দ্বারা সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করবে, কারণ তার কাজই হল তোমাদের অকল্যাণ করা, সে তোমাদের কল্যাণ দেখতে পারে না। কেননা সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্র“। তার ব্যাপারে সাবধান থাকবে।
এজন্যই হাদীসে বলা হয়েছে, আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের দিকে অস্ত্র দ্বারা ইশারা না করে। কেননা তার অজান্তে হয়তবা শয়তান ওটা তার ভাইয়ের গায়ে লাগিয়ে দেবে। আর এর ফলে সে জাহান্নামী হয়ে যাবে। (সহীহ বুখারী হা: ৭০৭২, সহীহ মুসলিম হা: ১২৬)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তিনি সমস্ত বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন, আকাশে ও জমিনে যারা অবস্থান করে তাদের সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত। তিনি চাইলে সকল মানুষের প্রতি দয়া করতে পারেন আবার ইচ্ছা করলে শাস্তিও দিতে পারেন। এতে বুঝা যায় যে, সকল ক্ষমতা আল্লাহ তা‘আলারই হাতে। অন্য কারো হাতে নয়।
(وَلَقَدْ فَضَّلْنَا بَعْضَ.... )
এখানে নাবীদের মর্যাদার তারতম্যের কথা বলা হয়েছে। কিছু কিছু নাবীর মর্যাদা কিছু কিছু নাবীদের থেকে বেশি। এ মর্যাদা স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা দিয়েছেন। যেমন আদম (عليه السلام)-কে নিজ হাতে সৃষ্টি করে মর্যাদা দিয়েছেন যা অন্য কোন নাবীর নেই, নূহ (عليه السلام)-কে প্রথম রাসূল হিসেবে মর্যাদা দিয়েছেন যা অন্য নাবীদের নেই, ইবরাহীম (عليه السلام)-কে খলীল বা অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে মর্যাদা দিয়েছেন যা অন্য কোন নাবীকে দেননি, মূসা (عليه السلام)-এর সাথে সরাসরি কথা বলে কালিমুল্লাহর মর্যাদা দিয়েছেন যা অন্য কাউকে দেননি, আমাদের নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে শেষ নাবী হিসেবে মর্যাদা দিয়েছেন যা অন্যদের থেকে পৃথক।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلٰي بَعْضٍۭ مِنْهُمْ مَّنْ كَلَّمَ اللّٰهُ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجٰتٍ)
“এ সকল রাসূল যাদের কারো উপর আমি কাউকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি, তাদের মধ্যে কারও সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং কারও মর্যাদাকে সমুন্নত করেছেন।” (সূরা বাক্বারাহ ২:২৫৩)
অতএব মর্যাদার দিক দিয়ে নাবীদের মধ্যে কম-বেশি রয়েছে, তবে নির্দিষ্টভাবে বলা যাবে না, কারণ নির্দিষ্টভাবে বলা নিষেধ রয়েছে। (সহীহ বুখারী হা: ৩৩৯৫)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন মন্দ কথা বলব না, কারণ মুখ শয়তানের অন্যতম একটি হাতিয়ার।
২. আল্লাহ তা‘আলার রহমত ও ক্রোধ নামে দুটি সিফাত রয়েছে।
৩. মর্যাদাগত দিক থেকে নাবীদের মাঝে পার্থক্য রয়েছে তবে তা ব্যাপকভাবে, নির্দিষ্টভাবে নয়।
৪. দাঊদ (عليه السلام)-এর মর্যাদার কথা জানা গেল।