Skip to main content

لَقَدْ مَنَّ اللّٰهُ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ اِذْ بَعَثَ فِيْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ اٰيٰتِهٖ وَيُزَكِّيْهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَۚ وَاِنْ كَانُوْا مِنْ قَبْلُ لَفِيْ ضَلٰلٍ مُّبِيْنٍ   ( آل عمران: ١٦٤ )

Certainly
لَقَدْ
নিশ্চয়
bestowed a Favor
مَنَّ
অনুগ্রহ করেছেন
Allah
ٱللَّهُ
আল্লাহ
upon
عَلَى
উপর
the believers
ٱلْمُؤْمِنِينَ
মু'মিনদের
as
إِذْ
যখন
He raised
بَعَثَ
প্রেরণ করেন
among them
فِيهِمْ
তাদের মধ্যে
a Messenger
رَسُولًا
একজন রাসূল
from
مِّنْ
মধ্য হতে
themselves
أَنفُسِهِمْ
তাদের নিজেদের
reciting
يَتْلُوا۟
সে পাঠ করে
to them
عَلَيْهِمْ
তাদের কাছে
His Verses
ءَايَٰتِهِۦ
তাঁর নিদর্শনগুলো
and purifying them
وَيُزَكِّيهِمْ
ও পরিশুদ্ধ করে তাদেরকে
and teaching them
وَيُعَلِّمُهُمُ
এবং শিক্ষা দেয় তাদেরকে
the Book
ٱلْكِتَٰبَ
কিতাব
and the wisdom
وَٱلْحِكْمَةَ
ও প্রজ্ঞা
although
وَإِن
এবং যদিও
they were
كَانُوا۟
তারা ছিল
from
مِن
(থেকে)
before (that)
قَبْلُ
ইতিপূর্বে
certainly in
لَفِى
অবশ্যই মধ্যে
(the) error
ضَلَٰلٍ
বিভ্রান্তির
clear
مُّبِينٍ
সুস্পষ্ট

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

নিশ্চয় আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অত্যন্ত অনুকম্পা প্রদর্শন করেছেন, যখন তাদের নিকট তাদের নিজস্ব একজনকে রসূল করে পাঠিয়েছেন, সে তাদেরকে আল্লাহর আয়াত পড়ে শুনাচ্ছে, তাদেরকে পরিশোধন করছে, তাদেরকে কিতাব ও হিকমাত (সুন্নাহ) শিক্ষা দিচ্ছে, যদিও তারা পূর্বে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে ছিল।

English Sahih:

Certainly did Allah confer [great] favor upon the believers when He sent among them a Messenger from themselves, reciting to them His verses and purifying them and teaching them the Book [i.e., the Quran] and wisdom, although they had been before in manifest error.

1 Tafsir Ahsanul Bayaan

আল্লাহ অবশ্যই বিশ্বাসীদের প্রতি তাদের নিজেদের মধ্যে হতে রসূল প্রেরণ করে অনুগ্রহ করেছেন। [১] সে (নবী) তার আয়াতগুলি তাদের নিকট আবৃত্তি করে তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে এবং তাদেরকে গ্রন্থ ও প্রজ্ঞা[২] শিক্ষা দেয়। আর অবশ্যই[৩] তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে ছিল।

[১] নবীর মানুষ হওয়া এবং মানব-জাতিভুক্ত হওয়াকে মহান আল্লাহ একটি অনুগ্রহ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আর বাস্তবিকই এটা একটি মহা অনুগ্রহ। কারণ, প্রথমতঃ তিনি তাঁর জাতির স্থানীয় ভাষায় আল্লাহর পায়গাম পৌঁছাতে পারবেন যা বুঝা প্রত্যেক মানুষের জন্য সহজ হবে। দ্বিতীয়তঃ একই জাতিভুক্ত হওয়ার কারণে মানুষ তাঁর ঘনিষ্ঠ হবে এবং তাঁর কাছ ঘেঁসবে। তৃতীয়তঃ মানুষের জন্য মানুষ হওয়াটাই সব দিক দিয়ে সমীচীন। কেননা, মানুষের পক্ষে মানুষের অনুসরণ করা সম্ভব, কিন্তু তাদের পক্ষে ফিরিশতাদের অনুসরণ করা সম্ভব নয়। অনুরূপ ফিরিশতাকুল মানুষের আবেগ ও অনুভূতির গভীরতা ও সূক্ষ্ণতা অনুধাবন করতে সক্ষম নন। কাজেই পয়গম্বর যদি ফিরিশতাদের মধ্য থেকে হতেন, তাহলে তিনি সেই সমূহ গুণাবলী থেকে বঞ্চিত হতেন, যা দ্বীনের দাওয়াতের জন্য অতি প্রয়োজন। আর এই জন্যই দুনিয়াতে যত নবী এসেছেন, তাঁরা সকলেই ছিলেন মানুষ। কুরআন তাঁদের মানুষ হওয়ার কথা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, [وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُوحِي] "তোমার পূর্বে আমি যতজনকে রসূল করে পাঠিয়েছি, তারা সবাই পুরুষ ছিল, তাদের প্রতি আমি অহী করেছি।" (সূরা ইউসুফ ১২;১০৯ আয়াত) তিনি আরো বলেন,[وَمَا أَرْسَلْنَا قَبْلَكَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا إِنَّهُمْ لَيَأْكُلُونَ الطَّعَامَ وَيَمْشُونَ فِي الْأَسْوَاقِ] "তোমার পূর্বে যত রসূল প্রেরণ করেছি, তারা সবাই খাদ্য গ্রহণ করত এবং হাটে-বাজারে চলাফেরা করত।" (সূরা ফুরকান ২৫;২০ আয়াত) অনুরূপ তিনি নবী করীম (সাঃ)-এর পবিত্র জবান দ্বারা ঘোষণা করলেন যে, [قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَى إِلَيَّ] "বল, আমিও তোমাদের মত একজন মানুষ আমার প্রতি অহী আসে।" (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৪১;৬ আয়াত) বর্তমানে বহু মানুষ এই (রসূলের মানুষ হওয়া) বিষয়টিকে মানতে না পেরে বিপথগামী হয়েছে।

[২] উক্ত আয়াতে নবী প্রেরণের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়েছে। যথা, (ক) আয়াতের তেলাঅত ও আবৃত্তি, (খ) পবিত্র ও পরিশুদ্ধকরণ, (গ) এবং কিতাব ও হিকমতের কথা শিক্ষা দেওয়া। কিতাবের শিক্ষায় তেলাঅত আপনা আপনিই এসে যায়। তেলাঅতের সাথেই শিক্ষা দেওয়া সম্ভব। তেলাঅত ব্যতীত শিক্ষার কথা ভাবাই যায় না। তা সত্ত্বেও তেলাঅতকে পৃথকভাবে উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হল এ কথা পরিষ্কার করে দেওয়া যে, তেলাঅত করাও একটি পবিত্র ও সৎ কাজ, তাতে তেলাঅতকারী তার অর্থ বুঝুক বা না-ই বুঝুক। প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কুরআনের অর্থ ও লক্ষ্য বুঝার চেষ্টা করা নিঃসন্দেহে একটি জরুরী বিষয়। তবুও তার অর্থ বুঝতে সমর্থ না হওয়া পর্যন্ত তা তেলাঅত করতে বৈমুখ থাকা বা তাতে অবহেলা প্রদর্শন করা বৈধ নয়। পবিত্রকরণ বলতে, আকীদা, আমল এবং নৈতিকতার সংশোধন। যেমন, নবী করীম (সাঃ) তাদেরকে শিরক থেকে বের করে তাওহীদের পথে প্রতিষ্ঠিত করেন। তদনুরূপ নেহাতই হীন চরিত্র ও জঘন্য আচরণে আলিপ্ত জাতিকে উচ্চ নৈতিকতার অধিকারী ও মহান কর্ম সম্পাদনকারী জাতি হিসাবে গড়ে তুলেন। 'হিকমত' (প্রজ্ঞা)র অর্থ অধিকাংশ মুফাসসিরের নিকট হাদীস।

[৩] إِنْ এখানে الْمُثَقَّلَةِ থেকে مُخَفَّفَةٌ রূপে ব্যবহূত হয়েছে। অর্থাৎ, إِنَّ ছিল। এর অর্থ হল, অবশ্যই, নিঃসন্দেহে।