হা-মীম সেজদাহ আয়াত ৪৮

আর আগে তারা যাদেরকে ডাকত তারা তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে যাবে এবং তারা বিশ্বাস করবে যে, তাদের পলায়নের কোন উপায় নেই।

আর পূর্বে যাদেরকে তারা ডাকত তারা তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে যাবে এবং তারা বিশ্বাস করবে, তাদের পলায়নের কোন জায়গা নেই।

পূর্বে তারা যাদের পূজা করত, তারা উধাও হয়ে যাবে এবং তারা বুঝে নেবে যে, তাদের কোন নিস্কৃতি নেই।

আর এর আগে যাদের তারা ডাকত তারা তাদের থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে, আর তারা বুঝবে যে তাদের জন্য কোনো আশ্রয় নেই।

পূর্বে তারা যাদেরকে (অর্থাৎ যেই মিথ্যা উপাস্যদেরকে) ডাকত এখন আর তারা তাদের কোন হদিস পাবে না। তারা উপলব্ধি করবে যে, তাদের আর নিষ্কৃতি নেই।

পূর্বে তারা যাদেরকে আহবান করত তারা অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং অংশীবাদীরা উপলদ্ধি করবে যে, তাদের নিস্কৃতির কোন উপায় নেই।

৪৭-৪৮ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

এখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : কিয়ামত কখন সংঘঠিত হবে তার জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার কাছে। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(وَعِنْدَه۫ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَآ إِلَّا هُوَ)

“সকল গায়েবের চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জানে না।” (সূরা আন‘আম ৬ : ৫৯)

অতঃপর তিনি বলেন : দুনিয়াতে যা কিছু হয় সবকিছু আল্লাহ তা‘আলা জানেন, এমনকি কোন মহিলা গর্ভ ধারণ করে কি করে না এবং কখন করে, কখন প্রসব করবে সে সম্পর্কেও তিনি অবগত আছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(اَللّٰهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ أُنْثٰي وَمَا تَغِيْضُ الْأَرْحَامُ وَمَا تَزْدَادُ ط وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَه۫ بِمِقْدَارٍ‏)‏

“প্রত্যেক নারী যা গর্ভে ধারণ করে এবং জরায়ুতে যা কিছু কমে ও বাড়ে আল্লাহ তা জানেন এবং তাঁর কাছে প্রত্যেক বস্তুরই এক নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে।” (সূরা রা‘দ ১৩ : ৮)

এরপর আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করছেন যে, যারা দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্যকে শরীক করত, আল্লাহ তা‘আলার পরিবর্তে অন্যের ইবাদত করত তারা কিয়ামতের মাঠে মুক্তি পাবার কোনই পথ খুঁজে পাবে না এবং তারা যাদের ইবাদত করত তারা সেদিন তাদের থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে।

আল্লাহ বলেন,

(وَرَأَي الْمُجْرِمُوْنَ النَّارَ فَظَنُّوْآ أَنَّهُمْ مُّوَاقِعُوْهَا وَلَمْ يَجِدُوْا عَنْهَا مَصْرِفًا ‏)‏

“অপরাধীরা আগুন দেখে বুঝবে যে, তারা তথায় পতিত হবে এবং তারা সেখান হতে কোন পরিত্রাণস্থল পাবে না।” (সূরা কাহ্ফ ১৮ : ৫৩)

ظن অর্থ يقين বা দৃঢ় বিশ্বাস, এখানে ধারণার অর্থ দিবে। কারণ কাফিররা যখন আযাব প্রত্যক্ষ করবে এবং প্রকৃত ব্যাপার অনুধাবন করতে পারবে তখন তারা দৃঢ়তার সাথে জানতে পারবে তাদের মুক্তির কোন পথ নেই।

যারা আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদত করছে, যাদের পূজা করছে তারা কিয়ামতের দিন নাজাতের কোন পথ পাবে না। সেদিন তারা সত্য অনুধাবণ করতে পারবে যে তারা যা কিছু করেছে তা সবই ছিল ভুল। তাই সেদিন তাদের পক্ষে কোন সাক্ষী থাকবে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. কিয়ামতের জ্ঞান আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কারো নেই।
২. প্রত্যেক জিনিস আল্লাহর দৃষ্টির মধ্যেই রয়েছে, এমন কোন কিছু নেই যা তিনি জানেন না।
৩. মুশরিকদের কিয়ামতের মাঠে নাজাতের কোনই পথ খোলা থাকবে না।

পূর্বে (দুনিয়ায়) তারা (আল্লাহ ব্যতীত) যাদেরকে ডাকত তারা তাদের কাছ থেকে উধাও হয়ে যাবে এবং তারা বুঝতে পারবে যে, তাদের কোন নিষ্কৃতি নেই।

৪৮. আজ তাদের থেকে আহŸানকৃত দেবতারা উধাও হয়ে গেছে এবং তারা বিশ্বাস করে নিয়েছে যে, আল্লাহর শাস্তি থেকে তাদের পালানোর কোন জায়গা ও সুযোগ নেই।

৪৭-৪৮ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে এর জ্ঞান আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। যেমন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে যখন ফেরেশতাদের নেতা হযরত জিবরাঈল (আঃ) কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে তা জিজ্ঞেস করেছিলেন তখন তিনি সমস্ত মানুষের নেতা হওয়া সত্ত্বেও উত্তরে বলেছিলেনঃ “জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে অধিক জ্ঞান রাখেন না।” মহামহিমান্বিত আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ اِلٰى رَبِّكَ مُنْتَهٰهَا অর্থাৎ “এর চরম জ্ঞান আছে। তোমার প্রতিপালকেরই নিকট।”(৭৯:৪৪) অন্য এক আয়াতে রয়েছেঃ لَا یُجَلِّیْهَا لِوَقْتِهَاۤ اِلَّا هُوَ অর্থাৎ “এর সময় তিনি ছাড়া আর কারো কাছে প্রকাশমান নয়।”(৭:১৮৭) ভাবার্থ এটাই যে, কিয়ামত সংঘটনের সময় আল্লাহ ছাড়া আর কেউই জানে না।

এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেনঃ প্রত্যেক জিনিসকে তার জ্ঞান পরিবেষ্টন করে রয়েছে। এমনকি যে ফল ওর আবরণ হতে বের হয়, যে নারী গর্ভধারণ করে এবং সন্তান প্রসব করে, এ সবই তাঁর গোচরে থাকে। যমীন ও আসমানের একটি অণুপরিমাণ জিনিসও তার ব্যাপক জ্ঞানের বাইরে নয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ وَ مَا تَسْقُطُ مِنْ وَّرَقَةٍ اِلَّا یَعْلَمُهَا অর্থাৎ “যে পাতা ঝরে পড়ে সেটাও তিনি জানেন।”(৬:৫৯) মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ
اَللّٰهُ یَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ اُنْثٰى وَ مَا تَغِیْضُ الْاَرْحَامُ وَ مَا تَزْدَادُ وَ كُلُّ شَیْءٍ عِنْدَهٗ بِمِقْدَارٍ
অর্থাৎ “প্রত্যেক নারী যা গর্ভে ধারণ করে এবং জরায়ুতে যা কিছু কমে ও বাড়ে আল্লাহ তা জানেন এবং তাঁর বিধানে প্রত্যেক বস্তুরই এক নির্দিষ্ট পরিমাণ। আছে।” (১৩:৮) মহান আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ
وَ مَا یُعَمَّرُ مِنْ مُّعَمَّرٍ وَّ لَا یُنْقَصُ مِنْ عُمُرِهٖۤ اِلَّا فِیْ كِتٰبٍ اِنَّ ذٰلِكَ عَلَى اللّٰهِ یَسِیْرٌ
অর্থাৎ “বয়স যে বাড়ে ও কমে এটাও কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে, এটা আল্লাহর নিকট সহজ।”(৩৫:১১)

কিয়ামতের দিন সমস্ত মাখলুকের সামনে আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদের বলবেনঃ যাদেরকে তোমরা আমার সাথে ইবাদতে শরীক করতে তারা আজ কোথায়? তারা উত্তরে বলবেঃ আমরা তো আপনার নিকট নিবেদন করেছি যে, এই ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। সেই দিন তাদের বাতিল মা’বৃদরা সবাই হারিয়ে যাবে। এমন কাউকেও তারা দেখতে পাবে না যে তার কোন উপকার করতে পারে। তারা নিজেরাও জানতে পারবে যে, তাদের নিষ্কৃতির কোন উপায় নেই।

এখানে ظَنٌّ শব্দটি يَقِيْن বা দৃঢ় বিশ্বাস’ এর অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ
وَ رَاَ الْمُجْرِمُوْنَ النَّارَ فَظَنُّوْۤا اَنَّهُمْ مُّوَاقِعُوْهَا وَ لَمْ یَجِدُوْا عَنْهَا مَصْرِفًا
অর্থাৎ “এবং অপরাধীরা জাহান্নাম দেখে নিবে এবং দৃঢ় বিশ্বাস করবে যে, তাদেরকে জাহান্নামে পতিত হতেই হবে এবং তারা তা হতে বাঁচবার কোন পথ পাবে না।”(১৮:৫৩)।