আল ওয়াক্বিয়া আয়াত ৪০
وَثُلَّةٌ مِّنَ الْاٰخِرِيْنَۗ ( الواقعة: ٤٠ )
Wa sullatum minal aakhireen (al-Wāqiʿah ৫৬:৪০)
English Sahih:
And a company of the later peoples. (Al-Waqi'ah [56] : 40)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আর পরবর্তীদের মধ্য থেকে বহুসংখ্যক (আল ওয়াক্বিয়া [৫৬] : ৪০)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
এবং অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে। [১]
[১] নবী করীম (সাঃ)-এর উম্মতের মধ্য হতে অথবা তাঁর উম্মতের পরবর্তীদের মধ্য থেকে।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
এবং অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে [১]।
[১] আয়াতের এক অর্থ পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, أوَّلِيْنَ বলে এই উম্মতেরই প্রাথমিক লোকদের বোঝানো হয়েছে। আর آخِرِيْنَ বলে এ উম্মতেরই পরবর্তী লোকদের বোঝানো হয়েছে। এমতাবস্থায় আয়াতের অর্থ স্পষ্ট। অর্থাৎ এ উম্মতের আসহাবুল ইয়ামীন উম্মতের প্রাথমিক লোকদের থেকে একটি বড় দল হবে। আর শেষের লোকদের থেকেও একটি বড় দল হবে। আর যদি আয়াতে أوَّلِيْنَ বলে আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সময়ের লোকদের বোঝানো হয় এবং آخِرِيْنَ বলে এ উম্মতে মুহাম্মদীকেই বোঝানো হয়ে থাকে তবে আয়াতের সারমর্ম এই হবে যে, "আসহাবুল-ইয়ামীন’ তথা মুমিন-মুত্তাকীগণ পূর্ববতী সমগ্র উম্মতের মধ্য থেকে একটি বড় দল হবে এবং একা উম্মতে মুহাম্মদীর মধ্য থেকে একটি বড় দল হবে। [দেখুন, কুরতুবী]
3 Tafsir Bayaan Foundation
আর অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য থেকে।
4 Muhiuddin Khan
এবং একদল পরবর্তীদের মধ্য থেকে।
5 Zohurul Hoque
আর পরবর্তীকালীনদের মধ্যে থেকেও অধিক সংখ্যায়।
6 Mufti Taqi Usmani
এবং অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে।
7 Mujibur Rahman
এবং অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে।
8 Tafsir Fathul Mazid
২৭-৪০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
যারা কিয়ামত দিবসে ডান হাতে আমলনামা পাবে তারা জান্নাতে যেসব নেয়ামতে থাকবে আল্লাহ তা‘আলা সে কথা এখানে তুলে ধরেছেন।
(سِدْرٍ مَّخْضُوْدٍ)
‘কাঁটাবিহীন বরই গাছ’ একদা একজন গ্রাম্য ব্যক্তি আগমন করল এবং বলল; হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কষ্টদায়ক গাছের কথা উল্লেখ করেছেন, আমি মনে করি জান্নাতে কোন কষ্টদায়ক গাছ নেই? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : তা কী? সে ব্যক্তি বলল : বরই গাছ, তার কষ্টদায়ক কাঁটা আছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : আল্লাহ তা‘আলা কি এ কথা বলেননি ‘কাঁটাবিহীন বরই গাছ’ ? আল্লাহ তা‘আলা তার কাঁটা নষ্ট করে দিয়েছেন, প্রত্যেক কাঁটার স্থানে ফল রয়েছে। কেননা তা এমন ফল দেবে যা থেকে ৭২টি রং বের হবে; এক রঙের অপর রঙের সাথে কোন মিল থাকবে না। ( সহীহ, তারগীব ও তারহীব হা. ৩৭৪২)
(وَّفُرُشٍ مَّرْفُوْعَةٍ)
‘আর সমুচ্চ শয্যাসমূহ’ এখানে فُرُشٍ থেকে অনেকে জান্নাতী স্ত্রীদেরকে বুঝিয়েছেন। আরবরা স্ত্রীদেরকে বিছানা বলে আখ্যায়িত করে থাকেন।
(إِنَّآ أَنْشَأْنٰهُنَّ إِنْشَا۬ءً)
‘তাদেরকে (জান্নাতী হুরদেরকে) আমি সৃষ্টি করেছি (দুনিয়ার নারীদের থেকে) ভিন্নরূপে’ জান্নাতী রমণীদেরকে আল্লাহ তা‘আলা বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ দুনিয়ার নারীরা যেমন বয়স্কা, বৃদ্ধা হয়ে যায়, রূপ-লাবণ্য নষ্ট হয়ে যায়, প্রতি মাসে সমস্যা হয় জান্নাতী নারীরা এসব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তারা হবে চিরকুমারী, সমবয়স্কা ও বর্ণনাতীত রূপ-লাবণ্যে ভরপুর।
عُرُبًا শব্দটি عرب এর বহুবচন। এমন নারী যে তার রূপ-লাবণ্য ও অন্যান্য গুণের কারণে স্বীয় স্বামীর কাছে অত্যন্ত প্রিয়া। أَتْرَابًا হল ترب এর বহুবচন। অর্থ সমবয়স্কা, অর্থাৎ যেসব নারীদেরকে জান্নাতবাসীরা স্ত্রীরূপে পাবে, তারা সবাই সমবয়স্কা হবে। হাদীসে এসেছে : সকল জান্নাতী তেত্রিশ বছর বয়সের হবে। (তিরমিযী হা. ২৫৪৫, সহীহ) অথবা এর অর্থ হবে, নিজ নিজ স্বামীর সমবয়স্কা হবে। উভয় অবস্থাতেই অর্থ একই। (ثُلَّةٌ مِّنَ الْأَوَّلِيْنَ) আয়াতদ্বয়ের তাফসীর পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. যারা ডান হাতে আমলনামা পাবে তারা যে নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে থাকবে তার বিবরণ পেলাম।
২. জান্নাতী নারীদের রূপ-সৌন্দর্যের বিবরণ জানলাম।
9 Fozlur Rahman
ও একদল পরবর্তীদের মধ্য থেকে।
10 Mokhtasar Bangla
৪০. আর অপর দল হলো উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্য থেকে; যারা শেষ উম্মত।
11 Tafsir Ibn Kathir
২৭-৪০ নং আয়াতের তাফসীর:
অগ্রবর্তীদের অবস্থা বর্ণনা করার পর আল্লাহ তা'আলা পুণ্যবানদের অবস্থা বর্ণনা করছেন যাদের মর্যাদা অগ্রবর্তীদের তুলনায় কম। এদের অবস্থা যে কত সুখময় তার বর্ণনা করতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেনঃ এরা ঐ জান্নাতে অবস্থান করবে যেখানে কুলবৃক্ষ রয়েছে, কিন্তু এই কুলবৃক্ষগুলো কন্টকহীন হবে এবং ফল হবে অধিক ও উন্নতমানের। দুনিয়ার কুলবৃক্ষগুলো হয় কাটাযুক্ত এবং কম ফলবিশিষ্ট। পক্ষান্তরে, জান্নাতের কুলবৃক্ষগুলো হবে অধিক ফলবিশিষ্ট এবং সম্পূর্ণরূপে কন্টকহীন। ফলের ভারে শাখাগুলো নুয়ে পড়বে। হাফিয আবু বকর আহমদ ইবনে সালমান নাজ্জার (রঃ) একটি রিওয়াইয়াত আনয়ন করেছেন যে, আল্লাহর নবী (সঃ)-এর সাহাবীগণ (রাঃ) বলতেন, বেদুঈনদের নবী (সঃ)-এর কাছে আগমন করা এবং তাঁকে মাসআলা জিজ্ঞেস করা আমাদের জন্যে খুবই উপকারী হতো। একদা এক বেদুঈন এসে বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কুরআনে এমন একটি গাছের কথাও রয়েছে যা কষ্টদায়ক!” রাসূলুল্লাহ (সঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ “ওটা কোন গাছ?” সে জবাবে বললোঃ “কুলগাছ।” তখন তিনি বললেনঃ “তুমি ওর সাথেই مَخْضُوْدٍ শব্দটি পড়নি?” আল্লাহ তা'আলা ঐ গাছের কাঁটা দূর করে দিয়েছেন এবং এর পরিবর্তে দিয়েছেন অধিক ফল। প্রত্যেক কুলের বাহাত্তর প্রকারের স্বাদ থাকবে, যেগুলোর রঙ ও স্বাদ হবে পৃথক পৃথক।” এই রিওয়াইয়াতটি অন্যান্য কিতাবেও বিদ্যমান আছে। সেখানে طَلْحٌ শব্দ রয়েছে এবং সত্তর প্রকার স্বাদের বর্ণনা আছে।
طَلْحٌ হলো একটা বিরাট গাছ, যা হিজাযের ভূ-খণ্ডে জন্মে থাকে। এটা কন্টকময় বৃক্ষ। এতে কাটা খুব বেশী থাকে।
مَنْضُوْدٍ-এর অর্থ হলো কাঁদি কাঁদি ফলযুক্ত গাছ। এ দুটি গাছের কথা উল্লেখ করার কারণ এই যে, আরবরা এই গাছগুলোর গভীরতা ও মিষ্টি ছায়াকে খুবই পছন্দ করতো। এই গাছ বাহ্যতঃ দুনিয়ার গাছের মতই হবে, কিন্তু কাটার স্থলে মিষ্ট ফল হবে।
জাওহারী (রঃ) বলেন, এই গাছকে طَلْح-ও বলে এবং طَلْعও বলে। হযরত আলী (রাঃ) হতেও এটা বর্ণিত আছে। তাহলে সম্ভবতঃ এটা কুলেরই গুণবিশিষ্ট হবে। অর্থাৎ ঐ গাছগুলো কন্টকহীন এবং অধিক ফলদানকারী। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
অন্যান্য গুরুজন طَلْح দ্বারা কলার গাছকে বুঝিয়েছেন। ইয়ামনবাসী কলাকে طَلْح বলে এবং হিজাবাসী مَوْزٌ বলে। লম্বা ও সম্প্রসারিত ছায়া তথায় থাকবে।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতী গাছের ছায়ায় দ্রুতগামী অশ্বারোহী একশ বছর পর্যন্ত চলতে থাকবে, তথাপি ছায়া শেষ হবে না। তোমরা ইচ্ছা করলে وَظِلٍّ مَّمْدُوْدٍ-এ আয়াতটি পাঠ কর।” ইমাম বুখারী (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সহীহ মুসলিমেও এ রিওয়াইয়াতটি বিদ্যমান আছে। আরো আছে মুসনাদে আহমাদে ও মুসনাদে আবি ইয়ালাতে। মুসনাদের অন্য রিওয়াইয়াতে সন্দেহের সাথে রয়েছে। অর্থাৎ সত্তর বছর অথবা একশ বছর এবং এও আছে যে, এটা হলো شَجَرَةُ الْخُلْدِ বা চিরবিদ্যমান গাছ। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এবং ইমাম তিরমিযীও (রঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সুতরাং এ হাদীসটি মুতাওয়াতির বা ধারাবাহিক এবং এটা অকাট্য রূপে বিশুদ্ধ। এর ইসনাদ অনেক আছে এবং এর বর্ণনাকারী বিশ্বাসযোগ্য। মুসনাদে ইবনে আবি হাতিম প্রভৃতিতেও এ হাদীসটি রয়েছে। হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) যখন এ হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং তা হযরত কা'ব (রাঃ)-এর কান পর্যন্ত পৌঁছে তখন তিনি বলেনঃ “যে আল্লাহ হযরত মূসা (আঃ)-এর উপর তাওরাত এবং হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর কুরআন অবতীর্ণ করেছেন তাঁর শপথ! কেউ যদি নবযুবতী উষ্ট্রীর উপর আরোহণ করে উষ্ট্রীটি বৃদ্ধা হয়ে যাওয়া পর্যন্ত চলতেই থাকে তবুও ঐ ছায়ার শেষ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা ওটাকে স্বহস্তে রোপণ করেছেন এবং ওতে নিজের পক্ষ হতে রূহ ফুকে দিয়েছেন। ওর শাখাগুলো জান্নাতের দেয়ালগুলো হতে বাইরে বের হয়ে গেছে। জান্নাতের সমস্ত নহর এই গাছেরই মূল হতে বের হয়।
আবূ হুসাইন (রঃ) বলেনঃ “এক জায়গায় একটি দরযার উপর আমরা অবস্থান করছিলাম। আমাদের সাথে আবু সালেহ (রঃ) এবং শাকীক জুহনীও, (রঃ) ছিলেন। আবু সালেহ (রঃ) হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং বলেন, তুমি কি আবু হুরাইরা (রাঃ)-কে মিথ্যাবাদী বলছো?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “না, তাকে তো নয়, বরং তোমাকে।” তখন এটা কারীদের কাছে খুব কঠিন ঠেকলো। (এ হাদীসটি ইমাম আবু জাফর ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন) আমি বলি যে, এই প্রমাণিত বিশুদ্ধ এবং মারফু’ হাদীসকে যে মিথ্যা বলে সে ভুলের উপর রয়েছে।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতের প্রতিটি গাছের গুড়ি সোনার।” (এ হাদীসটি ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি এটাকে হাসান গারীব বলেছেন)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, জান্নাতে একটি গাছ রয়েছে যা প্রত্যেক দিকে শত শত বছরের রাস্তা পর্যন্ত ছায়া ছড়িয়ে রয়েছে। জান্নাতী লোকেরা ওর নীচে এসে বসে এবং পরস্পর আলাপ আলোচনা করে। কারো কারো দুনিয়ার খেল-তামাশা ও চিত্তাকর্ষক জিনিসের কথা স্মরণ হয়। তৎক্ষণাৎ এক জান্নাতী বাতাস প্রবাহিত হয় এবং ঐ গাছের মধ্য হতে গান-বাজনা ও খেল-তামাশার শব্দ আসতে শুরু করে। (এ আসারটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এটা দুর্বল আসার এবং এর সনদ সবল)
হযরত আমর ইবনে মাইমুন (রঃ) বলেন, এই ছায়া সত্তর হাজার সালের বিস্তৃতির মধ্যে হবে। হযরত আমর (রঃ) হতেই পাঁচশ’ বছরও বর্ণিত আছে। হযরত হাসান (রঃ) এক হাজার বছর বলেছেন।
হযরত হাসান (রঃ)-এর কাছে খবর পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এই ছায়া কর্তিতই হয় না। তথায় না আছে সূর্য এবং না আছে গরম। ফজর হওয়ার পূর্বের সময়টা সব সময় ওর নীচে বিরাজ করে (অর্থাৎ সদা ঐরূপ সময়ই থাকে)।” হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, জান্নাতে সদা-সর্বদা ঐ সময় থাকবে যা সুবহে সাদিকের পর হতে নিয়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত সময়ের মাঝামাঝিতে থাকে। ছায়া বিষয়ক রিওয়াইয়াতগুলোও ইতিপূর্বে গত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলার উক্তিঃ
وَنُدْخِلُهُمْ ظِلَّا ظَلِيْلًا
অর্থাৎ “আমি তাদেরকে সম্প্রসারিত ছায়ায় প্রবিষ্ট করবে।” (৪:৫৭)।
اُكُلُهَا دَآئِمٌ وَّظِلُّهَا
অর্থাৎ “ওর খাদ্য ও ছায়া সার্বক্ষণিক।” (১৩:৩৫) فِىْ ظِلٰلٍ وَّعُيُوْنٍ অর্থাৎ “(মুত্তাকীরা থাকবে) ছায়ায় ও প্রস্রবণ বহুল স্থানে।”
আর আছে প্রবহমান পানি। কিন্তু ওটা গর্ত এবং খননকৃত যমীন হবে না। এর পূর্ণ তাফসীর
فِيْهَا اَنْهَارٌ مِّنْ مَّاءٍ غَيْرِ اٰسِنٍ-এই আয়াতের তাফসীরে গত হয়েছে।
আর তাদের কাছে থাকবে প্রচুর ফলমূল। ওগুলো হবে খুবই সুস্বাদু। এগুলো কোন চক্ষু দেখেছে, না কোন কর্ণ শ্রবণ করেছে, না মানুষের অন্তরে খেয়াল জেগেছে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
كُلَّمَا رُزِقُوْا مِنْهَا مِنْ ثَمَرَةٍ رِّزْقًا قَالُوْا هٰذَا الَّذِیْ رُزِقْنَا مِنْ قَبْلُ وَ اُتُوْا بِهٖ مُتَشَابِهًا
অথাৎ “যখনই তাদেরকে ফলমূল খেতে দেয়া হবে তখনই তারা বলবেআমাদেরকে পূর্বে জীবিকারূপে যা দেয়া হতো এটা তো তাই। তাদেরকে অনুরূপ ফলই দেয়া হবে।” (২:২৫) জান্নাতের ফলগুলো দেখতে দুনিয়ার ফলের মতই লাগবে, কিন্তু যখন খাবে তখন স্বাদ অন্য রকম পাবে। সহীহ্ বুখারী ও সহীহ্ মুসলিমে সিদরাতুল মুনতাহার বর্ণনায় রয়েছে যে, ওর পাতাগুলো হবে হাতীর কানের মত এবং ফলগুলো বড় বড় মটকার মত হবে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণিত যে হাদীসে তিনি সূর্যে গ্রহণ লাগা এবং রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর সূর্য গ্রহণের নামায আদায় করার ঘটনা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন, তাতে এও রয়েছে যে, নামায শেষে তাঁর পেছনে নামায আদায়কারীরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমরা এই জায়গায় আপনাকে সামনে অগ্রসর হতে এবং পিছনে সরে আসতে দেখলাম, ব্যাপার কি?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “আমি জান্নাত দেখেছি। জান্নাতের ফলের গুচ্ছ আমি নেয়ার ইচ্ছা করেছিলাম। যদি আমি তা নিতাম তবে দুনিয়া থাকা পর্যন্ত তা থাকতো এবং তোমরা তা খেতে থাকতে।”
আবূ ইয়া’লা (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, যুহরের নামায পড়ার পর রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আগে বেড়ে যান এবং তাঁর দেখাদেখি সাহাবীগণও সামনের দিকে এগিয়ে যান। তিনি যেন কিছু নিতে চাচ্ছিলেন। তারপর তিনি পিছনে সরে আসেন। নামায শেষে হযরত উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আজ তো আপনি এমন এক কাজ করেন যা ইতিপূর্বে কখনো করেননি। তিনি উত্তরে বলেনঃ “আমার সামনে জান্নাত আনয়ন করা হয়েছিল এবং তাতে যে সজীবতা ও শ্যামলতা ছিল সবই আমার সামনে আনা হয়েছিল। আমি ওগুলোর মধ্য হতে আঙ্গুরের একটি গুচ্ছ নেয়ার ইচ্ছা করেছিলাম। ইচ্ছা ছিল যে, তা এনে তোমাদেরকে দেবো। কিন্তু আমারও ঐ গুলোর মাঝে পর্দা ফেলে দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। যদি আমি তোমাদের মধ্যে ওটা নিয়ে আসতাম তবে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যকার সমস্ত মাখলুক ওটা খেতে থাকতো, তবুও তা হতে কিছুই হ্রাস পেতো না।
মুসনাদে আহমাদে আছে যে, একজন বেদুঈন এসে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে হাওযে কাওসার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে এবং জান্নাতের কথাও উল্লেখ করে। সে প্রশ্ন করেঃ “সেখানে কি ফলও আছে?" উত্তরে তিনি বলেনঃ “হ্যাঁ সেখানে তুবা নামক একটি গাছও আছে। বর্ণনাকারী বলেনঃ এর পরে আরো বর্ণনা করেন যা আমার স্মরণ নেই। তারপর লোকটি জিজ্ঞেস করেঃ “ঐ গাছটি আমাদের ভূ-খণ্ডের কোন গাছের সাথে সাদৃশ্যযুক্ত?" রাসূলুল্লাহ (সঃ) জবাবে বললেনঃ “তোমাদের অঞ্চলে ওর সাথে সাদৃশ্যযুক্ত গাছ নেই। তুমি কোন দিন সিরিয়ায় গেছো কি?” উত্তরে সে বললোঃ “না।” তখন নবী (সঃ) বললেনঃ “সিরিয়ায় এক প্রকারের গাছ জন্মে যাকে জাওযাহ বলা হয়। এর একটি মাত্র গুড়ি হয় এবং ওর উপরের অংশ হয় ছড়ানো। এ গাছটি ঐ বা গাছের সাথে সাদৃশ্যযুক্ত।” লোকটি প্রশ্ন করলোঃ “ওর গুচ্ছ কত বড় হয়? তিনি উত্তর দিলেনঃ ‘কালো কাক এক মাস পর্যন্ত উড়ে যত দূর যাবে ততো বড়ো।” লোকটি জিজ্ঞেস করলোঃ “ঐ গাছের গুঁড়ি কত মোটা?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “তুমি যদি তোমার উষ্ট্রীর বাচ্চাকে ছেড়ে দাও এবং সে চলতে চলতে বৃদ্ধ হয়ে পড়ে যায় তবুও সে ঐ গাছের গুঁড়ি ঘুরে শেষ করতে পারবে না। লোকটি প্রশ্ন করলোঃ “সেখানে কি আঙ্গুর ধরবে?” তিনি জবাব দেনঃ “হ্যাঁ।” সে জিজ্ঞেস করলোঃ “কত বড়?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “তুমি কি তোমার পিতাকে তার যুথ হতে কোন মোটা-তাজা ছাগ নিয়ে যবেহ করে ওর চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে তোমার মাকে দিয়ে ‘এর দ্বারা বালতি বানিয়ে নাও' একথা বলতে শুনেছো?” সে জবাবে বলে? “হ্যাঁ।" তখন তিনি বললেনঃ “বেশ, এরূপই বড় বড় আঙ্গুরের দানা হবে। সে বললোঃ “তাহলে তো একটি আঙ্গুর দানাই আমার এবং আমার পরিবারের লোকদের জন্যে যথেষ্ট হবে?" তিনি উত্তর দিলেনঃ “শুধু তোমার ও তোমার পরিবারের জন্যেই নয়, বরং তোমাদের সমস্ত আত্মীয়-স্বজনের জন্যেও যথেষ্ট হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ যা শেষ হবে না ও যা নিষিদ্ধও হবে না। এ নয় যে, শীতকালে থাকবে এবং গ্রীষ্মকালে থাকবে না অথবা গ্রীষ্মকালে থাকবে এবং শীতকালে থাকবে না। বরং এটা হবে চিরস্থায়ী ফল। চাইলেই পাওয়া যাবে। আল্লাহর ক্ষমতা বলে সদা-সর্বদা ওটা মওজুদ থাকবে। এমন কি কোন কাঁটা শাখারও কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না এবং দূরেও হবে না। ফল পাড়তে কোন কষ্টই হবে না। এদিকে একটি ফল ভাঙ্গবে আর ওদিকে আর একটি ফল এসে ঐ স্থান পূরণ করে দিবে। যেমন এ ধরনের হাদীস ইতিপূর্বে গত হয়েছে।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “আর তাদের জন্যে রয়েছে সমুচ্চ শয্যাসমূহ। এই বিছানা হবে খুবই নরম ও আরামদায়ক। হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “এর উচ্চতা হবে আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান অর্থাৎ পাঁচশ বছরের পথ। (এ হাদীসটি ইমাম নাসাঈ (রঃ) এবং আবু ঈসা তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান গারীব বলেছেন। এটাও লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, এ রিওয়াইয়াত শুধু রুশদ ইবনে সা'দ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে এবং তিনি দুর্বল। এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) ও ইমাম ইবনে হাতিমও (রঃ) বর্ণনা করেছেন) কোন কোন আহলুল ইলম বলেন যে, এই হাদীসের ভাবার্থ হলোঃ বিছানার উচ্চতার স্তর আসমান ও যমীনের স্তরের সমান অর্থাৎ এক স্তর অন্য স্তর হতে এই পরিমাণ উচ্চ যে, দুই স্তরের মধ্যে পাঁচশ বছরের পথের ব্যবধান রয়েছে।
হযরত হাসান (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ওর উচ্চতা আশি বছরের পথ।
এরপর ضَمِيْر বা সর্বনাম এনেছেন যার مَرْجَع বা প্রত্যাবর্তন স্থল পূর্বে উল্লেখ করা হয়নি, কেননা সম্বন্ধ বিদ্যমান রয়েছে। বিছানার বর্ণনা এসেছে যার উপর জান্নাতীদের স্ত্রীরা (হরীরা) থাকবে। সুতরাং ঐ দিকেই ضَمِيْر বা সর্বনামকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। যেমন হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর تَوَارَت শব্দ এসেছে। এবং شَمْس শব্দ এর পূর্বে নেই। সুতরাং সম্বন্ধই যথেষ্ট। কিন্তু হযরত আবু উবাইদাহ (রাঃ) বলেন যে, مَرْجع পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে। অর্থাৎ حُوْرٌ عِيْنٌ ই হলো এর مَرْجَع বা প্রত্যাবর্তন স্থল।
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি এই স্ত্রীদেরকে করেছি কুমারী। ইতিপূর্বে তারা ছিল একেবারে থুড়থুড়ে বুড়ী। আমি এদেরকে করেছি তরুণী ও কুমারী। তারা তাদের বুদ্ধিমত্তা, কমনীয়তা, সৌন্দর্য, সচ্চরিত্রতা এবং মিষ্টিত্বের কারণে তাদের স্বামীদের নিকট খুবই প্রিয়পাত্রী হবে। কেউ কেউ বলেন যে, عُرُبًا বলা হয় প্রেমের ছলনাকারিণী এবং মনোহর ভঙ্গি প্রদর্শনকারিণীকে। হাদীসে আছে যে, এরা ঐ সব মহিলা যারা দুনিয়ায় বৃদ্ধা ছিল, এখন জান্নাতে গিয়ে নব যুবতীর রূপ ধারণ করেছে। অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, দুনিয়ায় তারা কুমারী অবস্থায় থাকুক অথবা বৃদ্ধা অবস্থায়ই থাকুক, জান্নাতে কিন্তু সবাই কুমারীর রূপ ধারণ করবে।
একটি বৃদ্ধা স্ত্রী লোক নবী (সঃ)-এর নিকট এসে আরয করলোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার জন্যে দুআ করুন যেন আল্লাহ তাআলা আমাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “হে অমুকের মা! কোন বৃদ্ধা জান্নাতে যাবে না।” বৃদ্ধা মহিলাটি তখন কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ (হে আমার সাহাবীবর্গ!) তোমরা তাকে খবর দাও যে, বৃদ্ধাবস্থায় কেউ জান্নাতে যাবে না। আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ “তাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি বিশেষরূপে, তাদেরকে করেছি কুমারী।” (এ হাদীসটি শামায়েলে তিরমিযীতে বর্ণিত আছে)
হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে حُوْرٌ عِيْنٌ সম্পর্কে খবর দিন!” তিনি বলেনঃ حُوْرٌ عِيْنٌ হলো গৌরবর্ণের বড় বড় চক্ষু বিশিষ্টা, অত্যন্ত কালো ও বড় বড় চুল বিশিষ্টা, চুলগুলো যেন গৃধিনীর পালক (জান্নাতের এই ধরনের মহিলা)।" হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) বললেনঃ لُؤْلُؤٌ مَّكْنُوْنٌ সম্বন্ধে আমাকে সংবাদ দিন!" রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “এই জান্নাতী নারীদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং ঔজ্জ্বল্য ঐ মুক্তার মত যা ঝিনুক হতে সবেমাত্র বের হয়েছে, যাতে কারো হাত পড়েনি।” তিনি বললেনঃ خَيْرَاتٌ حِسَانٌ-এর তাফসীর কি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “চরিত্রবতী ও সুন্দরী সুশ্রী মহিলা।” তিনি প্রশ্ন করলেনঃ بَيْضٌ مَّكْنُوْنٌ দ্বারা উদ্দেশ্য কি?” জবাবে নবী (সঃ) বললেনঃ “তাদের সৌন্দর্য ও নমনীয়তা ডিমের ঐ ঝিল্লীর মত যা ডিমের ভিতরে থাকে।” হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) عُرُبًا اَتْرَابًا-এর অর্থ জিজ্ঞেস করলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “এর দ্বারা দুনিয়ার ঐ মুসলিম জান্নাতী নারীদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা থুড়থুড়ে বুড়ী ছিল। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নতুনভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং করেছেন সম্পূর্ণরূপে কুমারী ও নব যুবতী, যাদের প্রতি তাদের স্বামীরা পূর্ণমাত্রায় আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে।” হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! দুনিয়ার নারীদের মর্যাদা বেশী, না হূরদের মর্যাদা বেশী?” জবাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ
“হূরদের উপর দুনিয়ার নারীদের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা রয়েছে। যেমন (ফরাশের) আস্তর অপেক্ষা বাহিরের অংশ উত্তম হয়ে থাকে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “এই ফযীলতের কারণ কি?" নবী (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “নামায, রোযা এবং আল্লাহ তা'আলার অন্যান্য ইবাদত। আল্লাহ তা'আলা তাদের চেহারাকে নূর বা জ্যোতি দ্বারা এবং তাদের দেহকে রেশম দ্বারা সজ্জিত করেছেন। তাদের পরিধানে থাকবে সাদা, সবুজ, হলদে ও সোনালী বর্ণের পোশাক এবং মণি-মুক্তার অলংকার। তারা বলতে থাকবেঃ
نَحْنُ الْخَالِدَاتُ فَلَا نَمُوْتُ اَبَدًا ـ وَنَحْنُ النَّاعِمَاتُ فَلَا نَبْاَسُ اَبَدًا
وَنَحْنُ الْمُقِيْمَاتُ فَلَا نَظْعَنُ اَبَدًا ـ وَنَحْنُ الرَّاضِيَاتُ فَلَا نَسْخَطُ اَبَدًا
طُوْبٰى لِمَنْ كُنَّا لَهٗ وَكَانَ لَنَا
অর্থাৎ “আমরা সদা বিদ্যমান থাকবো, কখনো মৃত্যুবরণ করবে না। আমরা নায ও নিয়ামত এবং সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের অধিকারিণী, কখনো আমরা দরিদ্র ও নিয়ামত শূন্য হবে না। আমরা নিজেদের বাসস্থানে সদা অবস্থানকারিণী, কখনো আমরা সফরে গমন করবে না। আমরা সর্বদা আমাদের স্বামীদের উপর সন্তুষ্ট থাকবো, কখনো অসন্তুষ্ট হবে না, ভাগ্যবান তারাই যাদের জন্যে আমরা হবো এবং আমাদের জন্যে তারা হবে।" হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) প্রশ্ন করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কোন কোন স্ত্রীলোকের দুটি, তিনটি এবং চারটিও স্বামী হয়ে যায়, এরপর তার মৃত্যু এসে যায়। মৃত্যুর পর যদি এই স্ত্রী লোকটি জান্নাতে যায় এবং তার সব স্বামীও জান্নাতী হয় তবে কার সাথে মিলিত হবে?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “তাকে অধিকার দেয়া হবে, সে যার সাথে ইচ্ছা মিলিত হতে পারে। সুতরাং সে তার ঐ স্বামীগুলোর মধ্যে তার সাথে মিলিত হওয়া পছন্দ করবে যে দুনিয়ায় তার সাথে ভাল ব্যবহার করতো। সে বলবেঃ “হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয়ই এই (আমার এই স্বামী) আমার সাথে উত্তমরূপে জীবন যাপন করতো। সুতরাং এরই সাথে (আজ) আমার বিয়ে দিন!” হে উম্মে সালমা (রাঃ)! উত্তম চরিত্র দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিয়ে রয়েছে।” (এ হাদীসটি আবুল কাসেম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
সূরের (শিঙ্গার) বিখ্যাত সুদীর্ঘ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সমস্ত মুসলমানকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করবেন। তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “আমি তোমার সুপারিশ কবুল করলাম এবং তাদেরকে জানাতে পৌঁছিয়ে দেয়ার অনুমতি দিলাম।” রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি তখন তাদেরকে জান্নাতে নিয়ে যাবো। আল্লাহর শপথ! যেমন তোমরা তোমাদের ঘরবাড়ী ও স্ত্রী-পরিজনকে চিনো, আহলে জান্নাত তাদের বাসস্থান ও স্ত্রীদেরকে এর চেয়েও বেশী চিনবে। একজন জান্নাতীর বাহাত্তরটি করে স্ত্রী হবে, যারা হবে আল্লাহর সৃষ্ট। আর দুটি করে স্ত্রী হবে আদম সন্তানের মধ্য হতে। এদেরকে এদের ইবাদতের কারণে সমস্ত স্ত্রীর উপর ফযীলত দান করা হবে। জান্নাতী ব্যক্তি তাদের এক একজনের কাছে যাবে। প্রত্যেকে এমন প্রাসাদে অবস্থান করবে যা হবে পদ্মরাগ নির্মিত। আর ঐ পালঙ্গের উপর থাকবে যা সোনার তার দিয়ে বানানো থাকবে এবং তাতে মণি-মুক্তা বসানো থাকবে। প্রত্যেকে মিহিন রেশম ও পুরু রেশমের সত্তর জোড়া কাপড় পরিধান করে থাকবে। এই স্ত্রী এমন নমনীয়া ও উজ্জ্বল হবে যে, স্বামী তার কোমরে হাত রেখে বক্ষের দিকে তাকালে সবই দেখতে পাবে। কাপড়, গোশত, অস্থি ইত্যাদি কোন জিনিসই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না। তার পদনালীর মজ্জা পর্যন্ত সে দেখতে পাবে। অনুরূপভাবে জান্নাতীর দেহও হবে জ্যোতির্ময়। মোটকথা, এ তার দর্পণ হবে এবং সে এর দর্পণ হবে। জান্নাতী স্বামী তার স্ত্রীর সাথে শান্তিময় মিলনে মশগুল হয়ে পড়বে। স্বামী-স্ত্রী কেউই ক্লান্ত হবে না। কেউই কারো প্রতি বিরক্ত হবে না। স্বামী যখনই স্ত্রীকে কাছে করবে তখনই তাকে কুমারী পাবে। তার অঙ্গ অবসন্ন হবে না এবং তার কাছে কিছুই কঠিনও ঠেকবে না। সেখানে বিশেষ পানি (শুক্র) থাকবে না যাতে ঘৃণা আসে। তারা দু'জন এভাবে লিপ্ত থাকবে এমতাবস্থায় জান্নাতী ব্যক্তির কানে শব্দ আসবেঃ “এটা তো আমাদের খুব ভালই জানা আছে। যে, আপনাদের কারো মনের আকাক্ষা মিটবে না, কিন্তু আপনার অন্যান্য স্ত্রীরাও তো আছে?” তখন ঐ জান্নাতী ব্যক্তি বের হয়ে আসবে এবং এক একজনের কাছে যাবে। যার কাছে যাবে সেই তাকে দেখে বলে উঠবেঃ “আল্লাহর কসম! জান্নাতে আমার জন্যে আপনার চেয়ে ভাল জিনিস আর কিছুই নেই। আপনার চেয়ে অধিক ভালবাসা আমার কারো প্রতি নেই।”
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! জান্নাতে জান্নাতী লোকে স্ত্রী সঙ্গমও করবে কি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হ্যাঁ, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে সেই আল্লাহর শপথ! সত্যি জান্নাতবাসী জান্নাতে স্ত্রী সঙ্গম করবে এবং খুব ভালভাবে উত্তম পন্থাতেই করবে। যখন তারা পৃথক হবে তখনই স্ত্রী এমনই পাক সাফ কুমারী হয়ে যাবে যে, তাকে যেন
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “জান্নাতে মুমিনকে এতো এতো স্ত্রীদের কাছে যাওয়ার শক্তি দান করা হবে।” হযরত আনাস (রাঃ) তখন জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এতো ক্ষমতা সে রাখবে?” জবাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “একশজন লোকের সমান শক্তি তাকে দান করা হবে।”
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা কি জান্নাতে আমাদের স্ত্রীদের সাথে মিলিত হবো?" উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “প্রতিদিন একজন লোক একশজন কুমারীর সাথে মিলিত হবে।” (এ হাদীসটি আবুল কাসেম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। হাফিয আবদুল্লাহ মুকাদ্দাসী (রঃ) বলেনঃ “আমার মতে এ হাদীসটি শর্তে সহীহ এর উপর রয়েছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) عُرَبًا-এর তাফসীরে বলেন যে, জান্নাতে স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি আসক্ত হবে এবং স্বামীও তার স্ত্রীর প্রতি আসক্ত হবে।
ইকরামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এর অর্থ হলোঃ মনোহর ও চিত্তাকর্ষক ভঙ্গিকারিণী। এক সনদে বর্ণিত আছে যে, এর অর্থ হলোঃ কমনীয় ভাব প্রদর্শনকারিণী। তামীম ইবনে হাযম (রঃ) বলেন যে, عُرَبًا ঐ স্ত্রীলোককে বলা হয় যে তার স্বামীর মন তার মুঠোর মধ্যে রাখে। যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) প্রমুখ গুরুজন বলেন যে, এর অর্থ হলো উত্তম ও মধুর বচন। স্ত্রী তার স্বামীর অন্তর মোহিত করে দেয়। যখন কিছু বলে তখন মনে হয় যেন ফুল ঝরে পড়ছে এবং নূর বা জ্যোতি বর্ষিত হচ্ছে।
মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে রয়েছে তাদেরকে عَرب বলার কারণ এই যে, তাদের কথাবার্তা আরবী ভাষায় হবে।
اَتْرَاب -এর অর্থ হলো সমবয়স্কা অর্থাৎ সবাই তেত্রিশ বছর বয়স্কা। এও অর্থ হয় যে, স্বামী এবং তার স্ত্রীদের স্বভাব চরিত্র সম্পূর্ণ একই রকম হবে। স্বামী যা পছন্দ করে স্ত্রীও তাই পছন্দ করে এবং স্বামী যা অপছন্দ করে স্ত্রীও তাই অপছন্দ করে।
এ অর্থও বর্ণনা করা হয়েছে যে, তাদের পরস্পরের মধ্যে কোন হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা থাকবে না। তারা পরস্পর সমবয়স্কা হবে, যাতে অকৃত্রিমভাবে একে অপরের সাথে মিলেমিশে থাকতে পারে এবং খেলা-ধুলা ও লাফালাফি করতে পারে।
হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হুরেরা একটা চমৎকার বাগানে একত্রিত হয়ে এমন মধুর সুরে গান গায় যে, এরূপ মিষ্টি সুরের গান সৃষ্টজীব কখনো শুনেনি। তাদের গান ওটাই হবে যা উপরে বর্ণিত হলো।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এটাকে গারীব বলেছেন)
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “বড় বড় চক্ষু বিশিষ্ট হৃরেরা জান্নাতে গান গাইবে। তারা বলবেঃ
نَحْنُ خَيْراتٌ حِسَانٌ ـ خُبِئْنَا لِاَزْوَاجِ كِرَامٍ
অর্থাৎ “আমরা পাক-পবিত্র, চরিত্রবতী ও সুশ্রী মহিলা, আমাদেরকে সম্মানিত স্বামীদের জন্যে লুক্কায়িত রাখা হয়েছে। অন্য রিওয়াইয়াতে خيرات-এর স্থলে خَوَار শব্দ এসেছে।
এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ এদেরকে ডান দিকের লোকদের জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাদেরই জন্যে রক্ষিত রাখা হয়েছে। কিন্তু বেশী প্রকাশমান এটাই যে, এটা اِنَّآ اَنْشَاْنَاهُنَّ ـ ـ ـ -এর সাথে সম্পর্কিত। অর্থাৎ আমি তাদেরকে তাদের জন্যে সৃষ্টি করেছি।
হযরত আবু সুলাইমান দারানী (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একদা রাত্রে তাহাজ্জুদ নামাযের পর দু'আ করতে শুরু করি। ঠাণ্ডা খুব কঠিন ছিল এবং খুব কুয়াশা পড়েছিল বলে আমি দু'হাত উঠাতে পারছিলাম না। সুতরাং আমি এক হাতেই দু'আ করতে থাকি। দু’আর অবস্থাতেই আমাকে ন্দ্রিীয় চেপে ধরে। স্বপ্নে আমি একটি হ্রকে দেখতে পাই, যার মত সুন্দরী ও নূরানী চেহারার মহিলা ইতিপূর্বে কখনো আমার চোখে পড়েনি। সে আমাকে বলেঃ “হে আবূ সুলাইমান! আপনি এক হাতে দু'আ করছেন? অথচ আপনার এটা ধারণা নেই যে, পাঁচশ বছর হতে আল্লাহ তা'আলা আমাকে আপনার জন্যে তার খাস নিয়ামতের দ্বারা লালন পালন করছেন”।
এও হতে পারে যে, এই لَام সম্পর্কযুক্ত اَتْرَابًا-এর সাথে। অর্থাৎ তাদেরই সমবয়স্কা হবে। যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রথম যে দলটি জান্নাতে যাবে তাদের চেহারা চৌদ্দ তারিখের চন্দ্রের ন্যায় উজ্জ্বল হবে। তাদের পরবর্তী দলের চেহারা অত্যন্ত উজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায় উজ্জ্বল হবে। তারা পায়খানা, প্রস্রাব, থুথু এবং নাকের শ্লেষ্ম হতে পবিত্র হবে। তাদের কংকন হবে স্বর্ণনির্মিত। তাদের দেহের ঘর্ম মৃগনাভীর মত সুগন্ধময় হবে। তাদের আংটিগুলো হবে মুক্তা নির্মিত। বড় বড় চক্ষু বিশিষ্টা হুরেরা হবে তাদের স্ত্রী। তাদের সবারই চরিত্র হবে একই ব্যক্তির মত। তারা সবাই তাদের পিতা হযরত আদম (আঃ)-এর আকৃতিতে ষাট হাত দীর্ঘ দেহ বিশিষ্ট হবে।”
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতবাসী চুল বিহীন, শ্মশ্রুবিহীন, গৌরবর্ণের উত্তম চরিত্র বিশিষ্ট, সুন্দর, কাজল কালো চক্ষু বিশিষ্ট, তেত্রিশ বছর বয়স্ক, ষাট হাত দীর্ঘ ও সাত হাত চওড়া, মযবূত দেহ বিশিষ্ট হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এর কিছু অংশ জামে তিরমিযীতেও বর্ণিত হয়েছে)
অন্য এক হাদীসে আছে যে, যে কোন বয়সে মারা যাক না কেন, জান্নাতে প্রবেশের সময় সে তেত্রিশ বছর বয়স্ক হবে এবং ঐ বয়সেই সদা-সর্বদা থাকবে। জাহান্নামীদের অবস্থাও অনুরূপ হবে।” (এটা ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, তাদের দেহ ফেরেশতাদের হাতে ষাট হাত হবে। হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আহলুল জান্নাত জান্নাতে যাবে এমন অবস্থায় যে, তাদের দেহ হবে হযরত আদম (আঃ)-এর মত, সৌন্দর্য হবে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর মত, বয়স হবে হযরত ঈসা (আঃ)-এর মত অর্থাৎ তেত্রিশ বছর এবং ভাষা হবে হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর মত অর্থাৎ আরবী। তারা হবে চুলবিহীন এবং কাজল কালো চক্ষুবিশিষ্ট।” (এ হাদীসটি আবু বকর ইবনে আবিদ দুনিয়া (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, জান্নাতে প্রবেশের পরেই তাদেরকে জান্নাতের একটি গাছের নিকট নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখানে তাদেরকে কাপড় পরানো হবে। তাদের কাপড় না পচবে, না পুরানো হবে এবং না ময়লাযুক্ত হবে। তাদের যৌবনে কখনো ভাটা পড়বে না।
আসহাবুল ইয়ামীন বা ডান দিকের লোক অনেকে হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে এবং অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা বলেনঃ “আজ আমার সামনে নবীদেরকে তাদের উম্মতসহ পেশ করা হয়। কোন কোন নবী (আঃ)-এর একটি দল ছিল, কারো সাথে মাত্র তিনজন লোক ছিল এবং কারো সাথে একজনও ছিল না।” হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত কাতাদা (রঃ) এটুকু বর্ণনা করার পর নিম্নের আয়াতটি পাঠ করেনঃ
اَلَیْسَ مِنْكُمْ رَجُلٌ رَّشِیْدٌ
অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে কি একজনও বিবেকবান ব্যক্তি নেই?” (১১:৭৮) রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, শেষ পর্যন্ত হযরত মূসা ইবনে ইমরান (আঃ) আগমন করেন। তার সাথে বানী ইসরাঈলের একটি বিরাট দল ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আমার প্রতিপালক! এটা কে? উত্তর হলোঃ “এটা তোমার ভাই হযরত মূসা ইবনে ইমরান (আঃ) এবং তার সাথে রয়েছে তার অনুসারী উম্মত। আমি প্রশ্ন করলামঃ হে আমার প্রতিপালক! তাহলে আমার উম্মত কোথায়? আল্লাহ তা'আলা উত্তরে বললেনঃ “তোমার ডানে নীচের দিকে তাকাও।” আমি তাকালে এক বিরাট জামাআত আমার দৃষ্টিগোচর হলো। বহু লোকের চেহারা দেখা গেল। আল্লাহ তা'আলা আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তুমি সন্তুষ্ট হয়েছো কি?” আমি উত্তরে বললামঃ হে আমার প্রতিপালক! হ্যাঁ, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। তারপর তিনি আমাকে বললেনঃ “এখন তুমি তোমার বাম প্রান্তের দিকে তাকাও।আমি তখন তাকিয়ে দেখলাম যে, অসংখ্য লোক রয়েছে। আবার। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “এখন তুমি সন্তুষ্ট হয়েছে তো?” আমি উত্তর দিলামঃ হে আমার প্রতিপালক! হ্যাঁ, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। অতঃপর তিনি বললেনঃ “জেনে রেখো যে, এদের সাথে আরো সত্তর হাজার লোক রয়েছে যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে চলে যাবে।” একথা শুনে হযরত উক্কাশা (রাঃ) দাড়িয়ে যান। তিনি বানু আসাদ গোত্রীয় মুহসিনের পুত্র ছিলেন। তিনি বদরের যুদ্ধে শরীক ছিলেন। তিনি আরয করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহ তাআলার নিকট দু'আ করুন যেন তিনি আমাকে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করেন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাঁর জন্যে দুআ করেন। এ দেখে আর একটি লোক দাঁড়িয়ে যান এবং বলেনঃ “হে আল্লাহর নবী (সঃ)! আমার জন্যে দুআ করুন।” তিনি বলেনঃ “উক্কাশা (রাঃ) তোমার অগ্রগামী হয়েছে।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ
“হে লোক সকল! তোমাদের উপর আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক, তোমাদের দ্বারা সম্ভব হলে তোমরা ঐ সত্তর হাজার লোকের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে চলে যাবে। আর এটা সম্ভব না হলে কমপক্ষে আসহাবুল ইয়ামীন বা ডান দিকের লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও। আমি অধিকাংশ লোককেই দেখি যে, তারা নিজেদের অবস্থার সাথেই ঝুলে পড়ে। তারপর তিনি বলেনঃ “আমি আশা রাখি যে, সমস্ত জান্নাতবাসীর এক চতুর্থাংশ তোমরাই হবে।” (বর্ণনাকারী বলেনঃ) তার একথা শুনে আমরা তাকবীর পাঠ করলাম। এরপর তিনি বললেনঃ “আমি আশা করি যে, তোমরা সমস্ত জান্নাতবাসীর এক তৃতীয়াংশ হবে। আমরা তাঁর একথা শুনে পুনরায় তাকবীর পাঠ করলাম। আবার তিনি বললেনঃ “তোমরাই হবে সমস্ত জান্নাতবাসীর অর্ধেক। এ কথা শুনে আমরা আবারও তাকবীর পাঠ করলাম। এরপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) পাঠ করলেনঃ
ثُلَّةٌ مِّنَ الْاَوَّلِیْنَ ـ وَ ثُلَّةٌ مِّنَ الْاٰخِرِیْنَ
অর্থাৎ তাদের অনেকে হবে পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে এবং অনেকে হবে পরবর্তীদের মধ্য হতে।” এখন আমরা পরস্পর আলোচনা করলাম যে, এই সত্তর হাজার লোক কারা হবে? তারপর আমরা মন্তব্য করলাম যে, এরা হবে ঐ সব লোক যারা ইসলামেই জন্মগ্রহণ করেছে এবং কখনোই শিরক করেনি। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “বরং এরা হবে ঐসব লোক যারা দাগ দিয়ে নেয় না, ঝাড় ফুঁক করায় না এবং পূর্ব লক্ষণ দেখে ভাগ্যের শুভাশুভ নির্ধারণ করে না, বরং সদা প্রতিপালকের উপর নির্ভরশীল থাকে।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এটা বহু সনদে সাহাবীদের (রাঃ) রিওয়াইয়াতে বহু কিতাবে বিশুদ্ধতার সাথে বর্ণিত আছে)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ثُلَّةٌ مِّنَ الْاَوَّلِیْنَ ـ وَ ثُلَّةٌ مِّنَ الْاٰخِرِیْنَ
-এ আয়াতের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, এই আয়াতের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী দ্বারা আমার উম্মতেরই পূর্ববর্তী ও পরবর্তী লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে।" (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)