আল আনআম আয়াত ৭৩
وَهُوَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ بِالْحَقِّۗ وَيَوْمَ يَقُوْلُ كُنْ فَيَكُوْنُۚ قَوْلُهُ الْحَقُّۗ وَلَهُ الْمُلْكُ يَوْمَ يُنْفَخُ فِى الصُّوْرِۗ عٰلِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ وَهُوَ الْحَكِيْمُ الْخَبِيْرُ ( الأنعام: ٧٣ )
Wa an Huwal lazee khalaqas samaawaati wal arda bilhaqq; wa Yawma yaqoolu kun fa yakoon; Qawluhul haqq; wa lahul mulku Yawma yunfakhu fis Soor; 'Aalimul Ghaibi wash shahaadah; wa Huwal Hakeemul Khabeer (al-ʾAnʿām ৬:৭৩)
English Sahih:
And it is He who created the heavens and earth in truth. And the day [i.e., whenever] He says, "Be," and it is, His word is the truth. And His is the dominion [on] the Day the Horn is blown. [He is] Knower of the unseen and the witnessed; and He is the Wise, the Aware. (Al-An'am [6] : 73)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তিনি আসমান আর যমীনকে সত্যিকারভাবে সৃষ্টি করেছেন (খেলা-তামাশার জন্য নয়)। আর যখনই তিনি বলবেন, (কিয়ামাত) ‘হও’, তখনই তা হয়ে যাবে, তাঁর কথাই প্রকৃত সত্য। যেদিন সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিন কর্তৃত্ব থাকবে তাঁরই হাতে। অদৃশ্য ও দৃশ্য সম্বন্ধে ওয়াকেফহাল, তিনি হিকমাতওয়ালা, সবকিছুর ব্যাপারে তিনি সবিশেষ জ্ঞাত। (আল আনআম [৬] : ৭৩)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
তিনি যথাবিধি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।[১] আর যেদিন[২] তিনি বলবেন, ‘হও’ সেদিন তা হয়ে যাবে। তাঁর কথাই সত্য। যেদিন শিঙ্গায়[৩] ফুৎকার দেওয়া হবে সেদিনকার কর্তৃত্ব তো তাঁরই। অদৃশ্য ও দৃশ্য সব কিছু সম্বন্ধে তিনি পরিজ্ঞাত এবং তিনি প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত।
[১] অর্থাৎ, তিনি যথা উদ্দেশ্যে ও মহান লক্ষ্যে তা সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ, এগুলোকে অনর্থক-লাভহীন (খেল-তামাশার জন্য) সৃষ্টি করেননি। বরং এক বিশেষ উদ্দেশ্যে বিশ্বজাহান সৃষ্টি করেছেন। আর তা হল, সেই আল্লাহকে স্মরণ এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন।
[২] يَوْمَ তে জবর এসেছে وَاذْكُرُوا অথবা واتَّقُوا ঊহ্য ক্রিয়ার কারণে। অর্থাৎ, সেই দিনকে স্মরণ কর অথবা সেই দিনকে ভয় কর, যেদিন তাঁর كُنْ (হও) শব্দ দ্বারা তিনি যা চাইবেন, তা-ই হয়ে যাবে। এর দ্বারা যে কথাটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, তা হল এই যে, হিসাব-কিতাবের এই কঠিন মুহূর্তগুলোও অতি সত্বর পার হয়ে যাবে। তবে কার জন্যে? ঈমানদারদের জন্যে। অন্যদেরকে তো এ দিনটা হাজার বছর অথবা পঞ্চাশ হাজার বছরের মত ভারী মনে হবে।
[৩] صُوْرٌ বলতে সেই শিঙ্গাকে বুঝানো হয়েছে, যার ব্যাপারে হাদীসে এসেছে যে, ইস্রাফীল ফিরিশতা (আঃ) সেটাকে মুখে নিয়ে মস্তক নত করে আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁকে বলা হবে, তুমি তাতে ফুঁ দাও। (ইবনে কাসীর) আবূ দাউদ এবং তিরমিযীতে আছে যে, "সূর একটি বাঁশি, যাতে ফুঁ দেওয়া হবে। (হাদীস নং ৪৭৪২-৩২৪৪) কোন কোন উলামার মতে শিঙ্গা তিনবার ফুঁকা হবে। نَفْخَةُ الصَّعْق (যাতে সমস্ত মানুষ অজ্ঞান হয়ে যাবে)। نَفْخَةُ الفَنَاء (যাতে সমস্ত মানুষ ধ্বংস হয়ে যাবে)। نَفْخَةُ الإِنْشَاء (যাতে সমস্ত মানুষ পুনর্জীবিত হয়ে যাবে)। আবার কোন কোন আলেম শেষোক্ত দু'টি ফুঁকের কথাই বলেছেন। আর আল্লাহই ভালো জানেন।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
তিনিই যথাযথভাবে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন।আর যেদিন তিনি বলবেন, ‘হও’ , তখনই তা হয়ে যাবে। তাঁর কথাই সত্য।যেদিন শিংগায় ফুঁৎকার দেয়া হবে সেদিনের কর্তৃত্ব তো তাঁরই। গায়েব ও উপস্থিত বিষয়ে তিনি পরিজ্ঞাত। আর তিই প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত।
3 Tafsir Bayaan Foundation
আর তিনিই, আসমানসমূহ ও যমীন যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন। আর যেদিন তিনি বলবেন, ‘হও’ তখন হয়ে যাবে। তাঁর কথাই যথার্থ। আর তাঁর জন্যই রয়েছে সেদিনের রাজত্ব, যেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে। তিনি গায়েব ও উপস্থিত বিষয়ে পরিজ্ঞাত এবং তিনি প্রজ্ঞাময়, অধিক অবহিত।
4 Muhiuddin Khan
তিনিই সঠিকভাবে নভোমন্ডল সৃষ্টি করেছেন। যেদিন তিনি বলবেনঃ হয়ে যা, অতঃপর হয়ে যাবে। তাঁর কথা সত্য। যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার করা হবে, সেদিন তাঁরই আধিপত্য হবে। তিনি অদৃশ্য বিষয়ে এবং প্রত্যক্ষ বিষয়ে জ্ঞাত। তিনিই প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
5 Zohurul Hoque
আর তিনিই সেইজন যিনি মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন সত্যের সাথে। আর যখন তিনি বলেন -- ''হও’’, তখন হয়ে যায়। তাঁর কথাই সত্য। আর তাঁরই সার্বভৌম কর্তৃত্ব সেদিনকার যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে। অদৃশ্য ও প্রকাশ্য বিষয়ে সর্বজ্ঞাতা, আর তিনি পরমজ্ঞানী, পূর্ণ-ওয়াকিফহাল।
6 Mufti Taqi Usmani
তিনিই সেই সত্তা, যিনি আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন যথোচিত এবং যে দিন তিনি (কিয়ামতকে) বলবেন, ‘হয়ে যাও’, তা হয়ে যাবে। তার কথা সত্যই। যে দিন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে, সে দিন রাজত্ব হবে তাঁরই। তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্য সব কিছুই জানেন। তিনিই মহা প্রাজ্ঞ ও সর্ব বিষয়ে অবহিত।
7 Mujibur Rahman
সেই সত্তা আকাশমন্ডল ও ভূ-মন্ডলকে যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন। যেদিন তিনি বলবেনঃ ‘হাশর হও‘ সেদিন হাশর হয়ে যাবে। তাঁর কথা খুবই যথার্থ বাস্তবানুগ। যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিন একমাত্র তাঁরই হবে বাদশাহী ও রাজত্ব। গোপন ও প্রকাশ্য সব কিছু তাঁর জ্ঞানায়ত্বে। তিনি হচ্ছেন প্রজ্ঞাময়, সর্ববিদিত।
8 Tafsir Fathul Mazid
৭০-৭৩ নং আয়াতের তাফসীর:
যারা দীনকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা এখানে নির্দেশ দিয়েছেন এবং কুরআন দ্বারা উপদেশ দিতে বলেছেন।
অতএব যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে দীন নিয়ে এসেছেন তার কোন কিছু নিয়ে ঠাট্টা করবে, অথবা আল্লাহ তা‘আলা আনুগত্যশীলদের জন্য যে প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন তা নিয়ে ঠাট্টা করবে, অথবা অবাধ্য ও কাফিরদের জন্য যে শাস্তি তৈরি করে রেখেছেন তা নিয়ে ঠাট্টা করবে, সে ব্যক্তি কাফির বলে গণ্য হবে।
যারা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য মা‘বূদদেরকে আহ্বান করে তারা কোন প্রকার উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতা রাখে না। সকল ভাল-মন্দের ক্ষমতার উৎস একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, যা তাঁর রুবুবিয়্যাহ বা প্রভুত্যের প্রমাণ বহন করে।
যারা ঈমান আনার পর আবার মুশরিক বা কাফির হয়ে যায় তাদের উদাহরণ হল- এক ব্যক্তি তার সেই সাথীদের সঙ্গ ছাড়া হয়ে যায় যারা সোজা ও সঠিক পথে যাচ্ছিল। আর সঙ্গচ্যুত হয়ে এই ব্যক্তি বনে জঙ্গলে চঞ্চল ও অস্থির অবস্থায় ঘুরে বেড়ায়। এদিকে তার সাথীরা তাকে ডাকে, কিন্তু চাঞ্চল্যের কারণে সে কিছুই শুনতে পায় না। অথবা শয়তান জিনদের বেড়াজালে পড়ার কারণে পথের দিকে ফিরে আসা তার পক্ষে সম্ভব হয় না।
(إِنَّ هُدَي اللّٰهِ هُوَ الْهُدٰي)
‘আল্লাহর হিদায়াতই হচ্ছে সত্যিকার হিদায়াত’অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জবানে আল্লাহ তা‘আলা যে শরীয়ত প্রদান করেছেন তা ব্যতীত হিদায়াতের অন্য কোন সঠিক পথ নেই।
(وَأُمِرْنَا لِنُسْلِمَ لِرَبِّ الْعٰلَمِيْنَ)
‘আমরা আদিষ্ট হয়েছি জগতসমূহের প্রতিপালকের নিকট আত্মসমর্পণ করতে।’অর্থাৎ আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, যেন আমরা আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ ও আদেশ-নিষেধের সামনে আত্মসমর্পণ করি। (তাফসীর সা‘দী পৃঃ ২৫৫)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা পুনরায় নিজের রুবুবিয়্যাতের কথা বলেন যে, তিনিই আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন আবার তিনি সব ধ্বংস করে কিয়ামতের দিন বলবেন ‘হয়ে যাও’সাথে সাথে হয়ে যাবে। যে দিনের কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার হাতে থাকবে। তিনি বলেন:
(اَلْمُلْكُ يَوْمَئِذِ نِالْحَقُّ لِلرَّحْمٰنِ ط وَكَانَ يَوْمًا عَلَي الْكٰفِرِيْنَ عَسِيْرًا)
“সে দিন প্রকৃত কর্তৃত্ব হবে দয়াময়ের এবং কাফিরদের জন্য সে দিন হবে কঠিন।”(সূরা ফুরকান ২৫:২৬)
(يَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّوْرِ)
‘যেদিন শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে’ ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন: এ আয়াতের ব্যাপারে মুফাসসিরগণের মতানৈক্য বিদ্যমান। তবে সঠিক কথা হল صور দ্বারা উদ্দেশ্য قرن বা শিং যাতে ইসরাফিল (আঃ) কিয়ামত সংঘঠিত হবার জন্য ফুঁ দেবেন। (ইবনে কাসীর, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩১৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
إن إسرافيل قد التقم الصور وحني جبهته ينتظر متي يؤمر فينفخ
ইসরাফিল (আঃ) শিঙ্গা মুখে লাগিয়ে রয়েছেন। তিনি মাথা নীচু করে অপেক্ষমান রয়েছেন যে, কখন শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার হুকুম হয় তখন তিনি ফুঁ দেবেন। (তিরমিযী হা: ২৪৩১, আহমাদ ৩/৭২, ৭৩, হাসান)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যারা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যদের আহ্বান করে তাদের অবস্থা জানা গেল।
২. যারা মুশরিক ও কাফির তাদের পরিচয় জানতে পারলাম।
৩. কিয়ামতের পূর্বে শিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার জন্য ইসরাফিল (আঃ) প্রস্তুত হয়ে আছেন।
9 Fozlur Rahman
তিনিই যথার্থভাবে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। যেদিন তিনি বলবেন, “(কেয়ামত) হও” তখনই তা হয়ে যাবে। তাঁর কথাই ঠিক। যেদিন শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে সেদিন রাজত্ব হবে তাঁরই। তিনি অদৃশ্য ও দৃশ্যমান বিষয় অবগত আছেন। তিনিই প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
10 Mokhtasar Bangla
৭৩. তিনিই আকাশ ও জমিনের সত্যিকার সৃষ্টিকর্তা। যেদিন আল্লাহ তা‘আলা কোন বস্তুকে হতে বললে তা হয়ে যাবে। তিনি যখন কিয়ামতের দিন বলবেন, তোমরা দাঁড়িয়ে যাও তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবে। তাঁর কথা এমন সত্য যা আবশ্যিকভাবে বাস্তবায়িত হবে। কিয়ামতের দিন একমাত্র তাঁর জন্যই সকল ক্ষমতা। যখন ইসরাফীল (আলাইহিস-সালাম) শিঙ্গায় দ্বিতীয়বার ফুঁ দিবেন। তিনি প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছুই জানেন। তিনি তাঁর সৃষ্টি ও পরিচালনায় অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়। তিনি সব কিছুর খবর রাখেন। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন নয়। সকল কিছুর ভিতর ও বাহির তাঁর নিকট একই সমান।
11 Tafsir Ibn Kathir
৭১-৭৩ নং আয়াতের তাফসীর:
মুশরিকরা মুসলমানদেরকে বলেছিল-তোমরা মুহাম্মাদের দ্বীনকে পরিত্যাগ কর। তখন আল্লাহ তাআলা এই আয়াত অবতীর্ণ করেন। তিনি বলেনঃ হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তুমি মুশরিকদেরকে বলে দাও-আমরা কি আল্লাহকে ছেড়ে ঐ সব মূর্তির পূজা করবো যারা আমাদের কোন উপকারও করতে পারবে না এবং কোন ক্ষতি করারও শক্তি তাদের নেই? কুফরী অবলম্বন করে কি আমরা উল্টো পথে ফিরে যাবো? অথচ আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে আলো দান করেছেন? তাহলে তো শয়তান যাকে পথভ্রষ্ট করেছে আমাদের দৃষ্টান্ত তার মতই হবে। অর্থাৎ ঈমান আনয়নের পর কুফরী অবলম্বন করা এরূপই যেমন একটি লোক সফররত অবস্থায় পথ ভুলে গেল এবং শয়তানরা তাকে পথভ্রষ্ট করলো। আর তার সঙ্গী সরল পথে রইলো এবং তাকে ডেকে বললোঃ আমাদের কাছে এসো। আমরা সরল সোজা পথে রয়েছি। সে কিন্তু যেতে অস্বীকার করলো। এটা ঐ ব্যক্তি যে নবী (সঃ)-কে ভালভাবে জানা সত্ত্বেও পথভ্রষ্টদের অনুসরণ করে কাফের হয়ে যাচ্ছে এবং নবী (সঃ) তাকে সোজা পথে আসার জন্যে ডাক দিচ্ছেন। এই পথ হচ্ছে ইসলামের পথ।
قُلْ اَنَدْ عُوْا এতে মূর্তি ও মূর্তিপূজকদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করা হয়েছে এবং ঐ লোকদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করা হয়েছে যারা তাদেরকে আল্লাহর হিদায়াতের দিকে ডাকতে রয়েছে। যেমন কেউ পথ ভুলে গেছে। অতঃপর কোন আহ্বানকারী তাকে ডাক দিয়ে বলছে- হে অমুক! তুমি পথের দিকে এসো। আর তার অন্য সাথী বলছে- তুমি বিভ্রান্ত হয়ো না, আমাদের সোজা পথের দিকে এসো। এখন সে যদি পূর্ববর্তী আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিয়ে দেয় তবে সে তাকে নিয়ে গিয়ে ধ্বংসের গর্তে ফেলে দেবে। কিন্তু যদি অন্য সঙ্গীর কথা মেনে নেয় তবে সে তাকে সোজা ও হিদায়াতের পথে নিয়ে আসবে। প্রথম আহ্বানকারী হচ্ছে জঙ্গলের শয়তানের অন্তর্ভুক্ত। এটা হচ্ছে ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত, যে আল্লাহর নিকট থেকে সরে গিয়ে মূর্তিপূজা করতে শুরু করে দেয় এবং ওর মধ্যেই মঙ্গল নিহিত আছে বলে মনে করে। আর যখন তার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসবে তখন লজ্জিত হতে হবে। এটা হচ্ছে পথভ্রষ্টকারী শয়তান যে তাকে তার বাপ-দাদার নাম নিয়ে এবং তার নাম নিয়ে ডাক দেয়। তখন সে তার অনুসরণ করতে শুরু করে দেয় এবং ওটাকেই কল্যাণকর বলে মনে করে। তখন শয়তান তাকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করে। তাকে সে ক্ষুধা পিপাসায় কাতর করে জংগলে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ায়, যাতে সে ধ্বংস হয়ে যায়।
حيران শব্দ দ্বারা হতবুদ্ধি লোককে বুঝানো হয়েছে। যেমন কোন লোক পথ ভুলে হতবুদ্ধি হয়ে ঘুরে বেড়ায়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর দ্বারা ঐ ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে যে ব্যক্তি আল্লাহর হিদায়াত কবুল না করে শয়তানের অনুসরণ ও পাপের কাজ করে থাকে। অথচ তার সাথী তাকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান করতে থাকে। মহান আল্লাহ বলেন যে, সে শয়তান কর্তৃক পথভ্রষ্ট ব্যক্তি যার ওলী হচ্ছে মানুষ। আল্লাহর হিদায়াতই হচ্ছে প্রকৃত হিদায়াত এবং পথভ্রষ্টতা হচ্ছে ওটাই যার দিকে শয়তান ডেকে থাকে। এটা ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ সে এরই উপযোগী। যে, তার সাথী তাকে পথভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করছে। আর সে ধারণা করছে। যে ওটাই হচ্ছে সঠিক পথ । হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এটা প্রকাশ্য আয়াতের উল্টো। কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ তার সফরের সঙ্গী তাকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান করছে। সুতরাং এটা জায়েয নয় যে, ওটাকে পথভ্রষ্টতা বলা হবে, অথচ আল্লাহ তো ওটাকে হিদায়াত বলে খবর দিয়েছেন। আর ইবনে জারীর (রঃ) যা বলেছেন রচনাভঙ্গী ওরই দাবীদার। তা এই যে, كَالَّذِی اسْتَهْوَتْهُ الشَّیٰطِیْنُ فِی الْاَرْضِ حَیْرَانَ۪ এটা حال হওয়ার কারণে نَصَب -এর স্থানে রয়েছে। অর্থাৎ কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা, পথভ্রষ্টতা এবং অজ্ঞতা ও মূর্খতার অবস্থায়, আর তার সঙ্গী সাথীরা ঐ পথেই চলছে এবং ঐ পথেই তাদেরকে আসতে বলছে, যেটাকে আল্লাহ পাক দৃষ্টান্তস্বরূপ বর্ণনা করেছেন। তখন এই বাক্যের অর্থ হবে-সে তাকে আহ্বানকৃত পথে যেতে অস্বীকার করছে এবং ওর দিকে মনোনিবেশ করছে না। যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তবে তাকে হিদায়াত করতেন এবং সোজা-সঠিক পথে পরিচালিত করতেন। এই জন্যেই তিনি বলেছেন-আল্লাহর হিদায়াতই হচ্ছে সঠিক হিদায়াত। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেছেনঃ “যাকে আল্লাহ হিদায়াত করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না।” তিনি আর এক জায়গায় বলেছেনঃ اِنْ تَحْرِصْ عَلٰى هُدٰىهُمْ فَاِنَّ اللّٰهَ لَا یَهْدِیْ مَنْ یُّضِلُّ وَ مَا لَهُمْ مِّنْ نّٰصِرِیْنَ অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তুমি তাদেরকে হিদায়াতের উপর আনবার লোভ করলেও আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কে হিদায়াতের উপর আনতে পারে? এবং তাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী নেই।” (১৬:৩৭) ইরশাদ হচ্ছে وَ اُمِرْنَا لِنُسْلِمَ لِرَبِّ الْعٰلَمِیْنَ অর্থাৎ আমাদেরকে সারা জাহানের প্রতিপালকের সামনে মাথা নত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর ভাবার্থ হচ্ছে-আমাদের প্রতি এই নির্দেশ রয়েছে যে, আমরা যেন আন্তরিকতার সাথে তাঁর ইবাদত করি, নামায সুপ্রতিষ্ঠিত করি, আল্লাহকে ভয় করি এবং সর্বাবস্থায় তাকওয়া অবলম্বন করি। কিয়ামতের দিন তাঁরই কাছে সকলকে সমবেত করা হবে। তিনিই আকাশ ও যমীনকে ভারসাম্য রক্ষা করে সৃষ্টি করেছেন। তিনিই এ দু’টির মালিক। কিয়ামতের দিন তিনি শুধু كُنْ বা হও' বলবেন আর তখনি চোখের পলকে সমস্ত কিছুর অস্তিত্ব পুনরায় এসে যাবে। এখানে يَوْمَ يَقُوْلُ كُنْ فَيَكُوْنُ এই বাক্যে يَوْمَ শব্দকে হয়তো বা وَاتَّقُوْهُ-এর উপর عَطْف বা সংযোগের কারণে نَصَب দেয়া হয়েছে। সেই সময় বাক্যের রূপ হবে وَاتَّقُوْا يَوْمَ يَقُوْلُ كُنْ فَيَكُوْنُ এইরূপ। অথবা يَوْم শব্দকে এর উপর ভিত্তি করে نَصَب দেয়া হয়েছে যে, ওর সংযোগ হয়েছে خَلَقَ السَّمٰوٰتِ -এর উপর। যেহেতু সৃষ্টির সূচনা ও সৃষ্টির পুনরাবৃত্তির উল্লেখ করা হয়েছে। আর এটাই বেশী যুক্তিসঙ্গতও বটে। কিংবা এখানে فِعْل উহ্য রাখা হয়েছে এর উপর ভিত্তি করেই يَوْمَ শব্দকে نَصَب দেয়া হয়েছে। তখন বাক্যের রূপ হবে وَاذْكُرْ يَوْمَ يَقُوْلُ كُنْ فَيَكُوْنُ এইরূপ।
ইরশাদ হচ্ছে- قَوْلُهُ الْحَقُّؕ-وَ لَهُ الْمُلْكُ এখানে রয়েছে দুটি বাক্য। এই উভয় বাক্যের مَحَل হচ্ছে جَرْ এটা এর উপর ভিত্তি করে হয়েছে যে, এ দু'টোই رَبُّ الْعٰلَمِيْنَ-এর صِفَت বা বিশেষণ হয়েছে। আর আল্লাহ তা'আলার উক্তিঃ یَوْمَ یُنْفَخُ فِی الصُّوْرِ এটা يَوْمَ يَقُوْلُ كُنْ فَيَكُوْنُ-এর بَدَل) হতে পারে। আবার এরও সম্ভাবনা রয়েছে যে, وَ لَهُ الْمُلْكُ یَوْمَ یُنْفَخُ فِی الصُّوْرِ -এর ওটা ظَرَف হবে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ لِمَنِ الْمُلْكُ الْیَوْمَؕ-لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ অর্থাৎ আজ রাজত্ব কার? আজ প্রবল পরাক্রমশালী একক আল্লাহরই রাজত্ব সত্য।” (৪০:১৬) যেমন মহান আল্লাহ এক জায়গায় বলেনঃ اَلْمُلْكُ یَوْمَىٕذِ ﹰالْحَقُّ لِلرَّحْمٰنِؕ-وَ كَانَ یَوْمًا عَلَى الْكٰفِرِیْنَ عَسِیْرًا অর্থাৎ “সেই দিন পরম দাতা ও দয়ালুর রাজত্ব সত্য এবং ঐ দিন কাফিরদের উপর অত্যন্ত কঠিন হবে।” (২৫:২৬)
মুফাসসিরগণ يَوْمَ يُنْفَخُ فِى الصُّوْرِ এই ব্যাপারে মতভেদ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন যে, صُوَرٌ শব্দটি হচ্ছে صُوْرَةٌ শব্দের বহুবচন। ইবনে জারীর (রঃ) বলেন, যেমন سُوَرٌ বলা হয় প্রাচীর বেষ্টিত শহরকে এবং এটা হচ্ছে سُوْرَةٌ-এর বহুবচন, দ্রুপ এটাও। সঠিক কথা হচ্ছে এটাই যে, صُوَرٌ-এর অর্থ হচ্ছে সেই শিঙ্গা যার মধ্যে হযরত ইসরাফীল (আঃ) ফু দেবেন। ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, সঠিক ওটাই যার উপর হাদীসে রাসূল (সঃ) দ্বারা আলোকপাত করা হয়েছে। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত ইসরাফীল (আঃ) শিঙ্গা মুখে লাগিয়ে রয়েছেন। তিনি মাথা নীচু করে অপেক্ষমান রয়েছেন যে, কখন শিঙ্গায় ফুঙ্কার দেয়ার হুকুম হয়!” একজন গ্রাম্য লোকও রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে সিজ্ঞেস করেছিলঃ صُوَرٌ কি জিনিস? তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেনঃ “এটা হচ্ছে শিঙ্গা, যাতে ফুৎকার দিয়ে বাজানো হয়।”
একদা নবী (সঃ) সাহাবীদের সাথে বসেছিলেন। সেই সময় তিনি বলেনঃ আল্লাহ তা'আলা আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করার পর صُوَرٌ বা শিঙ্গাকে সৃষ্টি করেন। এবং তা তিনি হযরত ইসরাফীল (আঃ)-কে প্রদান করেন। ওটাতে তিনি মুখ লাগিয়ে রয়েছেন। তিনি আরশের দিকে তাকিয়ে আছেন। কখন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার হুকুম হয় তার তিনি অপেক্ষায় রয়েছেন। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! صُوَرٌ কি জিনিস? তিনি উত্তরে বললেনঃ “ওটা হচ্ছে শিঙ্গা।" তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ “ওটা কিরূপ?” তিনি জবাব দিলেন, ওটা খুবই বড়। যে আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ! ওর প্রস্থ হচ্ছে আকাশ ও পৃথিবীর প্রস্থের সমান। ওতে তিনবার ফুস্কার দেয়া হবে। প্রথম ফুকার হবে ভয় ও সন্ত্রাস সৃষ্টির ফুকার। দ্বিতীয় ফুঙ্কার সবাইকে বেহুঁশ করে ফেলবে এবং তৃতীয় ফুঙ্কারের সময় সবাই আল্লাহর সামনে এসে হাযির হয়ে যাবে। আল্লাহ তা'আলা যখন প্রথম ফুকারের নির্দেশ দিবেন তখন সারা দুনিয়ার লোক হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে, তবে তিনি যাকে স্বাভাবিক অবস্থায় রাখবেন তার অবস্থা ঠিকই থাকবে। দ্বিতীয় ফুকারের হুকুম হওয়া পর্যন্ত প্রথম ফুকার চলতেই থাকবে, থামবে না। যেমন আল্লাহ তাআলা এক জায়গায় বলেনঃ وَ مَا یَنْظُرُ هٰۤؤُلَآءِ اِلَّا صَیْحَةً وَّاحِدَةً مَّا لَهَا مِنْ فَوَاقٍ অর্থাৎ “আর এরা শুধু একটি ভীষণ ধ্বনির প্রতিক্ষায় রয়েছে, যাতে শ্বাস গ্রহণেরও অবকাশ হবে না।” (৩৮:১৫) ওটা একটা ভীষণ ও উচ্চ শব্দ হবে, যার ফলে পাহাড় মেঘের মত উড়তে থাকবে এবং যমীন হেলতে দুলতে থাকবে। যেমন নড়বড়ে নৌকাকে সমুদ্রের তরঙ্গ চারদিকে হেলাতে দুলাতে থাকে এবং যেমন ছাদে লটকান লণ্ঠনকে বাতাস দোল দিতে থাকে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ یَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ (৭৯:৬) অর্থাৎ “যেই দিন কম্পনকারী বস্তু প্রকম্পিত করবে। যার পর আর এক পশ্চাদগামী বস্তু এসে পড়বে। সেই দিন সবাই ভীষণ আতংকিত হবে। লোকেরা পড়ে যাবে। মায়েরা দুগ্ধপোষ্য শিশুদেরকে ভুলে যাবে। গর্ভবতী স্ত্রীলোকদের গর্ভপাত হয়ে যাবে। ভয়ে ছেলেদের উপর বার্ধক্য এসে পড়বে। শয়তানরা প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে যমীনের প্রান্তে প্রান্তে পালিয়ে যাবে। কিন্তু ফেরেশতাগণ তাদেরকে মেরে মেরে ফিরিয়ে আনবেন। একে অপরকে ডাকতে থাকবে, কিন্তু আল্লাহ ছাড়া কেউ কাউকেও আশ্রয় দিতে পারবে না। মানুষ এরূপ ভয় ও সন্ত্রাসের মধ্যে থাকবে এমন সময় যমীন প্রত্যেক কোণ থেকে ফাটতে শুরু করবে। সেই সময় এমন ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হবে যা পূর্বে কখনও দেখা যায়নি। এমন ব্যাকুলতা ও সন্ত্রাস দেখা দেবে যা একমাত্র আল্লাহই জানেন। তারপর মানুষ আকাশের দিকে তাকাতে থাকবে। তখন তারা দেখতে পাবে যে, ওর টুকরাগুলো উড়তে রয়েছে। তারকাগুলো নিক্ষিপ্ত হবে। চন্দ্র ও সূর্য কৃষ্ণ বর্ণ ধারণ করবে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন যে, মৃত লোকেরা এর কোন সংবাদই রাখবেন না। হযরত আবু হুরাইরী (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আল্লাহ তাআলা তো বলেছেন- فَفَزِعَ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَنْ فِی الْاَرْضِ اِلَّا مَنْ شَآءَ اللّٰهُ অর্থাৎ “আল্লাহ যাদেরকে চাইবেন তারা ছাড়া আকাশ ও পৃথিবীতে যারা রয়েছে তারা সবাই হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে।” (২৭:৮৭) তাহলে তিনি সেই দিন কাদেরকে হতবুদ্ধি হওয়া থেকে মুক্ত রাখবেন? রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ তারা হচ্ছে শহীদ। হতবুদ্ধি এবং ভীত সন্ত্রস্ত তো হয় জীবিত লোকেরা। আর শীদেরা জীবিত বটে, কিন্তু তারা অবস্থান করছে আল্লাহ তা'আলার নিকট, আল্লাহ তাদেরকে জীবিকা দান করছেন। তিনি সেই দিনের সন্ত্রাস থেকে তাদেরকে রক্ষা করবেন। কেননা, ওটা তো হচ্ছে আল্লাহর আযাব। আর তাঁর আযাব তো বর্ষিত হবে অসৎ লোকদের উপর। এটাকেই আল্লাহ تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ (২২:২) -এই আয়াতে বর্ণনা করেছেন যে, সেই দিন প্রত্যেক দুগ্ধবতী স্ত্রী লোক তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। আল্লাহ যতদিন চাইবেন ততদিন তারা এই আযাবে ডুবে থাকবে। দীর্ঘদিন পর্যন্ত এই অবস্থা থাকবে। তারপর আল্লাহ পাক হযরত ইসরাফীল (আঃ)-কে জ্ঞান লোপকারী ফুকার দেয়ার নির্দেশ দিবেন। ফলে সমস্ত আকাশবাসী ও যমীনবাসী অজ্ঞান হয়ে পড়বে। তবে আল্লাহ যাকে চাইবেন তার জ্ঞান ঠিকই থাকবে। মৃত্যুর ফেরেশতা আল্লাহ তা'আলার নিকট এসে বলবেনঃ “হে আল্লাহ! সবাই মরে গেছে।” আল্লাহ তো জানেনই।
তবু তিনি জিজ্ঞেস করবেনঃ “অবশিষ্ট কে আছে?” তিনি বলবেনঃ “অবশিষ্ট একমাত্র আপনি আছেন। আপনার তো কখনও মৃত্যু হবে না। তা ছাড়া আরশ। বহনকারী ফেরেশতাগণও বাকী রয়েছেন। আর বাকী রয়েছেন জিবরাঈল এবং মিকাঈলও। বাকী আমিও রয়েছি।” তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “জিবরাঈল ও মীকাঈলের তো মৃত্যু হওয়া উচিত।” তখন আরশ বলে উঠবেঃ “হে আমার প্রভু! জিবরাঈল এবং মীকাঈলও মরে যাবেন?” আল্লাহ তা'আলা উত্তরে বলবেনঃ “কথা বলো না। আরশের নীচে যত কিছু আছে সবাইকেই মরতে হবে।” মৃত্যুর ফেরেস্তা পুনরায় আরয করবেন- “হে প্রভু! জিবরাঈল এবং মীকাঈলও মরে গেছেন।” আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেনঃ “এখন আর কে বাকী আছে?” তিনি উত্তরে বলবেনঃ “বাকী আছেন আপনি, আপনার তো মৃত্যু নেই। এখন আমি বাকী আছি এবং বাকী আছেন আরশ বহনকারী ফেরেশতাগণ।” তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “আরশ বহনকারীদেরকেও তো মরতে হবে।” তারাও মরে যাবে। আল্লাহ পাক জিজ্ঞেস করবেনঃ “এখন বাকী আছে কে?” আরাঈল (মৃত্যুর ফেরেশতা) তখন বলবেনঃ “মৃত্যুবরণ না কারী আপনি বাকী আছেন, আর বাকী আছি আমি।” আল্লাহ তা'আলা তখন ইসরাফীলের নিকট থেকে শিঙ্গা নিয়ে নেয়ার জন্যে আরশকে হুকুম করবেন এবং ইসরাফীল (আঃ)-কে তিনি বলবেনঃ “তুমিও আমার মাখলূক, সুতরাং তুমিও মরে যাও।” তিনি তৎক্ষণাৎ মরে যাবেন এবং একমাত্র আল্লাহই অবশিষ্ট থাকবেন যিনি এক, অমুখাপেক্ষী, তার কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারও সন্তান নন। তারপর আসমান ও যমীনকে জড়িয়ে নেয়া হবে যেমনভাবে মার’কে জড়িয়ে নেয়া হয়। ও দু’টোকে তিনবার খুলে দেয়া হবে এবং তিনবার জড়িয়ে নেয়া হবে। তারপর মহান আল্লাহ বলবেনঃ “আমি জাব্বার (সর্ব শক্তিমান ও বিজয়ী), আমি জাব্বার, আমি জাব্বার।” এরপর তিনবার তিনি উচ্চস্বরে বলবেনঃ “আজকের দিন রাজত্ব কার?” উত্তর দেবে কে? সুতরাং স্বয়ং তিনিই বলবেনঃ “আজকের দিন আল্লাহরই রাজত্ব যিনি একক ও প্রবল পরাক্রান্ত।”
অতঃপর তিনি দ্বিতীয় যমীন ও আসমান সৃষ্টি করবেন, ও দু’টো ছড়িয়ে দিবেন এবং দীর্ঘ করবেন। ও দু’টোর মধ্যে কোন বক্রতা ও ত্রুটি থাকবে না। তারপর আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে মাখলুকের প্রতি এক ভীষণ শব্দ হবে। তখন নতুনভাবে সৃষ্ট যমীনে সবাই পূর্বের মত হয়ে যাবে। যারা যমীনের মধ্যে ছিল তারা যমীনের মধ্যেই হবে এবং যারা বাইরে ছিল তারা বাইরেই হবে। অতঃপর আরশের নীচ থেকে আল্লাহ পানি বর্ষণ করবেন। আকাশকে তিনি পানি বর্ষণের নির্দেশ দিবেন। চল্লিশ দিন পর্যন্ত বৃষ্টি বর্ষিত হতে থাকবে। তারপর তিনি দেহগুলোকে নির্দেশ দিবেন যে, ওগুলো যেন যমীন থেকে এমনভাবে প্রকাশিত হয় যেমনভাবে ঘাসপাতা ও শাক-শজী অঙ্কুরিত হয়। যখন দেহগুলো পূর্বের ন্যায় পরিপূর্ণ হয়ে যাবে তখন সর্বপ্রথম আরশের ফেরেশতাদেরকে জীবিত করা হবে। আল্লাহ ইসরাফীল (আঃ)-কে শিঙ্গা গ্রহণ করতে বলবেন। তিনি তা গ্রহণ করবেন। তারপর মহান আল্লাহ জিবরাঈল (আঃ) ও মীকাঈল (আ)-কে জীবিত করবেন। এরপর আত্মাগুলোকে ডাক দেয়া হবে। মুসলমানদের আত্মা আলোর মত চমকিতে থাকবে। আর কাফিরদের আত্মা অন্ধকারের ন্যায় থাকবে। এই সবকে নিয়ে শিঙ্গার মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে। আল্লাহ তা'আলা হযরত ইসরাফীল (আঃ)-কে হুকুম করবেন যে, পুনর্জীবনের জন্যে যেন শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হয়। সুতরাং শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে, ফলে রূহগুলো মৌমাছির মত তীব্র বেগে বেরিয়ে আসবে। তাদের দ্বারা যমীন ও আসমান ভরে যাবে। এরপর আল্লাহ তাআলা রূহগুলোকে দেহের ভিতর প্রবেশ করার নির্দেশ দিবেন। তখন দুনিয়ার সমস্ত রূহ নিজ নিজ দেহের মধ্যে প্রবেশ করতে শুরু করবে এবং দেহগুলোর মধ্যে নাকের ছিদ্রের পথ হয়ে যাবে, যেমন কোন সর্পদষ্ট ব্যক্তির দেহের মধ্যে বিষ অনুপ্রবেশ করে থাকে। তারপর যমীন ফাটতে শুরু করবে এবং মানুষেরা উঠে উঠে নিজেদের প্রতিপালকের দিকে মুখ করবে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, সর্বপ্রথম আমার কবর খুলে যাবে। মহান আল্লাহর দিকে চলে যাব। কাফিররা বলবেঃ ‘এদিন তো বড় কঠিন বলে মনে হচ্ছে।' লোকেরা সব উলঙ্গ হয়ে থাকবে। তারা সবাই একই জায়গায় দণ্ডায়মান হবে। সত্তর বছর পর্যন্ত এই অবস্থাই থাকবে। আল্লাহ তা'আলা তাদের দিকে দেখবেনও না এবং কোন ফায়সালাও করবেন না। লোকেরা ক্রন্দন এবং বিলাপ করতে থাকবে। তাদের অশ্রু শেষ হয়ে যাবে। তখন তাদের চক্ষু দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। নিজেদের শরীরের ঘামে তারা ভিজে যাবে। ঘাম এতো বেশী ঝরবে যে, সেই ঘামের পানিতে তাদের গুতনী পর্যন্ত ডুবে যাবে । ললাকেরা পরস্পর বলাবলি করবে যে, আল্লাহর নিকট সুপারিশের জন্যে কাউকে পাঠানো হাক, যেন তিনি কোন মীমাংসা করে দেন। তারা তখন পরস্পর মন্তব্য করবে যে, পিতা আদম (আঃ) ছাড়া কে এমন আছেন যিনি আল্লাহর সামনে কথা বলার সাহস রাখেন? আল্লাহ তা'আলা তাঁকে নিজের হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর মধ্যে রূহ ফুকেছেন। আর সর্বপ্রথম তিনি তাঁর সাথে কথা বলেছেন। অতঃপর তারা হযরত আদম (আঃ)-এর কাছে যাবে এবং নিজেদের উদ্দেশ্য পেশ করবে। তিনি সুপারিশ করতে অস্বীকৃতি জানাবেন এবং বলবেনঃ “আমি এর যোগ্য নই।” অতঃপর তারা পৃথক পৃথকভাবে এক একজন নবীর কাছে যাবে। যার কাছেই যাবে তিনিই অস্বীকার করবেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, এরপর তারা আমার কাছে আসবে। আমি তখন যাবো এবং ফাহস' -এর উপর সিজদায় পড়ে যাবো। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ফাহস’ কি জিনিস?” তিনি উত্তরে বলেন, ওটা হচ্ছে আরশের সামনের অংশ। তখন আল্লাহ তাআলা একজন ফেরেশতা পাঠাবেন। তিনি আমাকে আমার বাহু ধরে উঠাবেন। মহামহিমান্বিত আল্লাহ আমাকে সম্বোধন করে বলবেনঃ “তুমি কি বলতে চাও?” আমি আরয করবো- হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে সুপারিশ করার অধিকার দানের ওয়াদা করেছেন। অতএব এই অধিকার আমাকে দান করুন এবং লোকদের মধ্যে ফায়সালা করুন। আল্লাহ পাক তখন বলবেনঃ “আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি সুপারিশ করতে পার এবং আমি লোকদের মধ্যে ফায়সালা করবো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ আমি তখন ফিরে এসে লোকদের সাথে দাড়িয়ে যাবো। আমরা সব দাঁড়িয়েই থাকবো এমন সময় হঠাৎ আকাশ থেকে এক ভীষণ শব্দ আসবে। আমরা চিন্তান্বিত হয়ে পড়বো। পৃথিবীবাসী দানব ও মানবের দ্বিগুণ সংখ্যক ফেরেশতা আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। তারা যমীনের নিকটবর্তী হবেন। যমীন তাঁদের আলোতে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। তারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যাবেন। আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করবোআপনাদের মধ্যে কি মহান আল্লাহ রয়েছেন? তারা উত্তরে বলবেনঃ “না, তবে তিনি অবশ্যই আসবেন।” দ্বিতীয়বার আকাশ থেকে ফেরেশতাগণ অবতরণ করবেন। তাদের সংখ্যা পূর্বের অবতারিত ফেরেশতাদের সংখ্যার দ্বিগুণ এবং দানব ও মানবের সংখ্যার দ্বিগুণ হবে। যমীন তাঁদের আলোকে চমকিত হয়ে উঠবে। তারা দাঁড়িয়ে যাবেন। আমরা জিজ্ঞেস করবো- আল্লাহ কি আপনাদের মধ্যে রয়েছেন? তাঁরা জবাবে বলবেনঃ ‘না, তবে তিনি অবশ্যই এসে পড়বেন!” তারপর তৃতীয়বার ওর চেয়েও দ্বিগুণ সংখ্যক ফেরেশতা অবতরণ করবেন। তখন মহাপ্রতাপান্বিত ও মহামহিমান্বিত আল্লাহ মেঘের ছত্র লাগিয়ে আটজন ফেরেশতা দ্বারা স্বীয় তখৃত বহন করিয়ে নিয়ে তাশরিফ আনবেন, অথচ এখন তো তাঁর তখৃত চারজন ফেরেশতা বহন করতে রয়েছেন। তাঁদের পা যমীনের সর্বশেষ স্তরের তলায় রয়েছে। আসমান ও যমীন হচ্ছে তাদের দেহের অর্ধাংশের সমান। আল্লাহ তা'আলার আরশ তাঁদের স্কন্ধের উপর রয়েছে। তাদের মুখে তাসবীহ ও তাহমীদ উচ্চারিত হতে থাকবে। তারা বলতে থাকবেনঃ سُبْحَانَ ذِى الْعَرْشِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ ذِى الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوْتِ سُبْحَانَ الْحَىِّ الَّذِىْ لَا يَمُوْتُ سُبْحَانَ الَّذِىْ يُمِيْتُ الْخَلَائِقَ وَلَا يَمُوْتُ سُبُّوْحٌ قُقُدُّوْسٌ قُدُّوْسٌ قُدُّوْسٌ سُبْحَانَ رَبِّنَا الْاَعْلٰى رَبِّ الْمَلٰئِكَةِ وَالرُّوْحِ سُبْحَانَ رَبِّنَا الْاَعْلَى الَّذِىْ يُمِيْتُ الْخَلَائِقِ وَلَا يَمُوْتُ অর্থাৎ “আমরা তাঁরই পবিত্রতা বর্ণনা করছি যিনি আশ ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আমরা পবিত্রতা বর্ণনা করছি তারই যিনি রাজ্য, রাজত্ব ও আধ্যাত্মিক জগতের মালিক। আমরা তাঁরই পবিত্রতা বর্ণনা করছি যিনি মৃত্যুবরণ করেন না। আমরা তাঁরই পবিত্রতা ঘোষণা করছি যিনি সমস্ত মাখলুকের মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন কিন্তু নিজে মৃত্যুবরণ করেন না। আমরা তারই তসবীহ পাঠ করছি। তিনি পবিত্র, তিনি পবিত্র, তিনি পবিত্র। আমরা আমাদের মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি যিনি ফেরেশতামণ্ডলী ও রূহের (জিবরাঈল আঃ-এর) প্রভু। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি যিনি সারা মাখলুকের মৃত্যু ঘটিয়ে থাকেন কিন্তু নিজে মৃত্যুবরণ করবেন না। তারপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় কুরসীর উপর উপবেশন করবেন। একটা শব্দ হবে- “হে দানব ও মানবের দল! তোমাদেরকে সৃষ্টি করার পর থেকে আজ পর্যন্ত আমি নীরব ছিলাম। তোমাদের কথা শুনে এসেছি এবং তোমাদের কাজকর্ম দেখে এসেছি। এখন তোমরা নীরব থাক। তোমাদের আমলের সহীফা তোমাদেরকে পাঠ করে শুনানো হবে। যদি ওটা ভাল সাব্যস্ত হয় তবে আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। আর যদি মন্দ হয় তবে নিজেদেরকেই তিরস্কার করবে।” অতঃপর আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামকে নির্দেশ দিবেন, তখন ওর মধ্যে ভীষণ কৃষ্ণকায় এক আকৃতি দেখা দেবে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “হে আদম সন্তান! আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, তোমরা শয়তানের উপাসনা করবে না। কারণ, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? এটা সেই জাহান্নাম যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল এবং যাকে তোমরা অবিশ্বাস করতে। সুতরাং হে পাপীর দল! সৎ লোকদের থেকে এখন তোমরা পৃথক হয়ে যাও।” একথা বলে আল্লাহ তা'আলা উম্মতদেরকে পৃথক করে দিবেন। এরশাদ হচ্ছে- “হে নবী (সঃ)! তুমি প্রত্যেক উম্মতকে জানুর ভরে পতিত দেখতে পাবে। প্রত্যেক উম্মতের পাশে তার আমলনামা থাকবে এবং স্বীয় কৃতকর্মের প্রতিফল পাবে। এরপর আল্লাহ স্বীয় মাখলুকের মধ্যে ফায়সালার কাজ শুরু করবেন। কিন্তু জ্বীন ও মানুষের বিচার তখনও শুরু হবে না।
প্রথমে আল্লাহ হিংস্র ও চতুষ্পদ জন্তুর বিচার শুরু করবেন। এমন কি এক অত্যাচারী শিং বিশিষ্ট ছাগলের অত্যাচারের প্রতিশোধও অন্য ছাগলের দ্বারা গ্রহণ করাবেন। শেষ পর্যন্ত যখন তিনি জন্তুগুলোকে সম্বোধন করে বললেনঃ “তোমরা মাটি হয়ে যাও।" এ দেখে কাফিররা বলবেঃ “হায়! আমরাও যদি মাটি হয়ে যেতাম তবে এই শাস্তি থেকে বাঁচতে পারতাম। অতঃপর বান্দাদের বিচারকার্য শুরু হবে। সর্বপ্রথম হত্যা ও খুনের মাকদ্দমা পেশ করা হবে। তখন এমন। প্রত্যেক নিহত ব্যক্তি আসবে যাকে আল্লাহর পথে হত্যাকারী হত্যা করেছিল; আল্লাহ তাআলা হত্যাকারীকে হুকুম করবেন তখন সে ঐ নিহত ব্যক্তির মাথা উঠিয়ে নেবে। ঐ মাথা তখন বলবেঃ “হে আল্লাহ! একে জিজ্ঞেস করুন, কেন সে আমাকে হত্যা করেছিল?" আল্লাহ তখন তাকে জিজ্ঞেস করবেন (অথচ আল্লাহ নিজেই জানেন)ঃ “কেন তাকে হত্যা করেছিলে?" সেই গাযী তখন বলবেঃ “হে আল্লাহ! আপনার মর্যাদা ও আপনারই নামের জন্যে।” তখন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ “তুমি সত্য বলেছো।” সেই সময় তার মুখমণ্ডল সূর্যের আলোকের মত চমকাতে থাকবে। ফেরেশতাগণ তাকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবেন। অনুরূপভাবে অন্যান্য নিহতগণ নিজ নিজ নাড়ি ভূড়ি মাথায় নিয়ে আসবে। আল্লাহ পাক ওদের হত্যাকারীদের জিজ্ঞেস করবেন- “কেন হত্যা করেছিলে?” তারা উত্তরে বলতে বাধ্য হবে যে, নিজের নাম ও খ্যাতির উদ্দেশ্যে। তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “ধ্বংস হয়ে যাও।” মোটকথা, প্রত্যেক নিহত ব্যক্তির মাকদ্দমা পেশ করা হবে এবং বিচার হবে। প্রত্যেক অত্যাচারের প্রতিশোধ অত্যাচারী থেকে নেয়া হবে। যে অত্যাচারীকে আল্লাহ ইচ্ছা করবেন শাস্তি দেবেন এবং যার উপর ইচ্ছা রহমত বর্ষণ করবেন। তারপর সারা মাখলুকের বিচার করা হবে এবং এমন কোন অত্যাচারী অবশিষ্ট থাকবে না যে, সে অত্যাচারী থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেনি। এমন কি যে ব্যক্তি দুধে পানি মিশিয়ে বিক্রি করতো এবং বলতো যে, দুধ খাটি, তাকেও শাস্তি দেয়া হবে। আর ক্রেতাকে তার পুণ্য দেয়া হবে। এই কার্য সমাপ্তির পর এক আহ্বানকারী আহ্বান করবে যা সারা মাখলুক শুনতে পাবে। সেই আহ্বান হবে নিম্নরূপঃ
“প্রত্যেক দল যেন নিজ নিজ মা’রূদের কাছে চলে যায় এবং তার অঞ্চল চেপে ধরে।” তখন এমন কোন মূর্তিপূজক থাকবে না যার সামনে তার মূর্তি লাঞ্ছিত অবস্থায় পড়ে না থাকবে। ঐদিন একজন ফেরেশতা হযরত উযায়ের (আঃ)-এর রূপ ধরে আসবেন এবং আর একজন ফেরেশতা হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)-এর রূপ ধরে আগমন করবেন। তখন ইয়াহূদীরা হযরত উযায়ের (আঃ)-এর পিছনে চলে আসবে এবং খ্রীষ্টানেরা আসবে হযরত ঈসা (আঃ)-এর পিছনে। অতঃপর তাদের এই কল্পিত মা’বৃদ তাদেরকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে। তখন তারা বলবে যে, যদি ওরা তাদের প্রকৃত মা’রূদ হতো তবে তাদেরকে কখনও জাহান্নামে নিয়ে যেতো না। তারা জাহান্নামে চিরকাল অবস্থান করবে। এখন শুধু মুমিনরাই বাকী থাকবে এবং তাদের মধ্যে মুনাফিকরাও থাকবে। আল্লাহ তা'আলা নিজের ইচ্ছামত পরিবর্তিত আকৃতিতে তাদের কাছে আসবেন এবং বলবেনঃ “হে লোক সকল! সবাই নিজ নিজ মাবুদের সাথে মিলিত হয়েছে। সুতরাং তোমরাও যাদের ইবাদত করতে তাদের সাথে মিলিত হও।” তখন মুনাফিক মিশ্রিত মুমিনরা বলবেঃ “আল্লাহর শপথ! আমাদের মাবুদ তো আপনিই ছিলেন। আপনাকে ছাড়া আমরা আর কাউকেও মানতাম না।” এরপর আল্লাহ তাআলা তাদের নিকট থেকে সরে যাবেন। অতঃপর তিনি নিজেই প্রকৃত দীপ্তি ও আঁকজমকের সাথে আসবেন এবং যতক্ষণ চাইবেন ততক্ষণ তাদের থেকে সরে থাকবেন। তারপর তিনি তাদের সামনে আসবেন এবং পুনরায় বলবেনঃ “হে লোকেরা! সবাই নিজ নিজ মাবুদের সাথে মিলিত হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মা’ৰূদের সাথে মিলিত হও।” তারা বলবেঃ “আল্লাহর শপথ! আপনি ছাড়া আমাদের অন্য কোন মা'বুদ নেই। আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করতাম। তখন আল্লাহ পাক তাদের পায়ের গোছা খুলে দেবেন। এবং মর্যাদা গুণে তাদের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, তার মা'বুদ তিনিই। তারপর সবাই মাথার ভরে সিজদায় পড়ে যাবে। কিন্তু মুনাফিকরা পিঠের ভরে পড়বে। সিজদার জন্যে তারা ঝুঁকে পড়তে পারবে না। তাদের পিঠ গাভীর পিঠের মত সোজা হয়ে থাকবে। যখন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুকুম করবেন। তখন তাদের সামনে পুলসিরাত এসে পড়বে। ওটা তরবারীর ধারের চেয়ে তীক্ষ্ণ হবে। ওর স্থানে স্থানে আঁকড়া ও কাঁটা থাকবে এবং অত্যন্ত পিচ্ছিল ও বিপজ্জনক হবে। ওর নীচে আরও একটি পিচ্ছিল সেতু থাকবে। ভাল লোকেরা চক্ষের পলকে দ্রুত গতিতে ওটা পার হয়ে যাবে। যেমন বিদ্যুৎ চমকিত হয় বা প্রবল বেগে বায়ু প্রবাহিত হয় অথবা দ্রুতগামী ঘোড়া কিংবা দ্রুত দৌড়ালু মানুষ চলে থাকে। কতগুলো লোক তো সম্পূর্ণরূপে অক্ষত থাকবে ও পরিত্রাণ পেয়ে যাবে। কতগুলো লোক আহত হবে এবং বহু লোক কেটে জাহান্নামে পড়ে যাবে। অতঃপর জান্নাতীদেরকে যখন জান্নাতে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে তখন তারা বলবেঃ “আমাদের জন্যে আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে কে?” তারা হযরত আদম (আঃ)-এর নিকট গিয়ে সুপারিশের আবেদন জানাবে। তখন তিনি নিজের পাপের কথা উল্লেখ করে বলবেনঃ “আমার এর যোগ্যতা নেই। তোমরা হযরত নূহ (আঃ)-এর নিকট যাও। তাঁকে আল্লাহর প্রথম রাসূল বলা হয়। লোকেরা তখন হযরত নূহ (আঃ)-এর কাছে যাবে। তিনিও নিজের অপরাধের কথা উল্লেখ করে বলবেনঃ “আমার তো এই কাজের যোগ্যতা নেই। তোমরা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর কাছে যাও। আল্লাহ তা'আলা তাকে নিজের বন্ধু বলেছেন। তারা তাঁর কাছে যাবে। তিনিও নিজের দোষের কথা উল্লেখ করে বলবেনঃ “তোমরা হযরত মূসা (আঃ)-এর কাছে যাও। আল্লাহ তাআলা তার সাথে কথা বলেছেন এবং তাঁর উপর তাওরাত অবতীর্ণ করেছেন। তারা তখন হযরত মূসা (আঃ)-এর কাছে যাবে এবং সুপারিশের জন্যে আবেদন করবে। তিনি নিজের হত্যার পাপের কথা উল্লেখ করে বলবেনঃ “আমি এই কাজের যোগ্য নই। তোমরা বরং হযরত ঈসা রূহুল্লার (আঃ) কাছে যাও। তিনি আল্লাহর রূহ ও তাঁর কালেমা।” হযরত ঈসাও (আঃ) বলবেনঃ “না, আমি এ কাজের যোগ্য নই। তোমরা হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর কাছে যাও।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন- তখন লোকেরা আমার কাছে আসবে। আল্লাহ তা'আলা আমাকে শাফাআতের অধিকার দিয়েছেন এবং ওয়াদা করেছেন। আমি জান্নাতের দিকে যাবো এবং জান্নাতের দরজায় করাঘাত করবো। জান্নাতের দরজা খুলে যাবে এবং আমাকে অভ্যর্থনা জানানো হবে। জান্নাতে প্রবেশ করে আমি আল্লাহ পাকের দিকে দৃষ্টিপাত করবো এবং সিজদায় পড়ে যাবো। আল্লাহ তা'আলা আমাকে এমন তাহমীদ ও তামজীদের অধিকার দান করবেন যা তিনি অন্য কাউকেও শিখিয়ে দেননি। অতঃপর তিনি বলবেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! মাথা উঠাও। সুপারিশ করতে হয় কর। তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে এবং তোমার আবেদন মঞ্জুর করা হবে।" আমি তখন আমার মাথা উঠাবো। আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেনঃ “কি বলতে চাও?” আমি বলবো, হে আমার প্রভু! আপনি আমাকে সুপারিশ করার অধিকার দিয়েছেন। জান্নাতীদের ব্যাপারে আমার শাফাআত কক্ল করুন! তারা যেন জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। তখন তিনি বলবেনঃ “ঠিক আছে, আমি অনুমতি দিলাম। এই লোকগুলো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে।" নবী (সঃ) বলেনঃ আল্লাহর শপথ! দুনিয়ায় তোমরা তোমাদের বাসস্থান ও স্ত্রীদেরকে যেমন চিনতে পার তার চেয়ে তাড়াতাড়ি তোমরা তোমাদের জান্নাতের বাসস্থান ও স্ত্রীদেরকে চিনতে পারবে। প্রত্যেক লোককে বাহাত্তরটি স্ত্রী দেয়া হবে। তারা আদম সন্তানদের মধ্য থেকে হবে দু’জন এবং হ্রদের থেকে হবে সত্তরজন। ঐ সত্তরজনের উপর এই দু’জনের মর্যাদা, দান করা হবে। কেননা, এই সতী সাধ্বী মহিলারা দুনিয়ায় খুব বেশী বেশী করে আল্লাহর ইবাদত করতো। জান্নাতবাসী যখন একজনের কাছে যাবে তখন দেখতে পাবে যে, সে ইয়াকূতের ঘরে মণিমুক্তা দ্বারা সজ্জিতা হয়ে সোনার সিংহাসনে বসে আছে। সে মিহীন সবুজ রেশমের সত্তরটি জান্নাতী হুল্লা পরিধান করে রয়েছে। সে যখন তার কাঁধের উপর হাত দেবে তখন তার বক্ষের উপর কাপড়, দেহ, মাংস ইত্যাদি থাকা সত্ত্বেও ওগুলো ভেদ করে বক্ষের অপর দিকে তার হাতের প্রতিবিম্ব দেখা যাবে। তার দেহ এত স্বচ্ছ হবে যে, তার পায়ের গোছার মজ্জা পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যাবে। মনে হবে যে, তোমরা যেন ইয়াকৃতের ছুরি দেখতে রয়েছে। তার অন্তর এর জন্যে এবং এর অন্তর তার জন্যে আয়না বানানো হবে। না এ ওর থেকে ক্লান্ত হবে এবং না ও এর থেকে ক্লান্ত হবে। সে যখন কখনো কোন মহিলার কাছে আসবে তখন সে তাকে কুমারী রূপেই পাবে। না স্বামী স্ত্রীর ক্লান্তির অভিযোগ করবে এবং না স্ত্রী স্বামীর ক্লান্তির অভিযোগ করবে। এমনই অবস্থায় শব্দ শোনা যাবেঃ “তোমাদের কারো প্রাণ ভরবে না এটা তো আমার জানা আছে। কিন্তু অন্যান্য স্ত্রীরাও তো রয়েছে।” সুতরাং সে পালাক্রমে তাদের কাছে যাবে। যার কাছেই সে যাবে সে-ই বলবেঃ “আল্লাহর কসম! জান্নাতে তোমার চেয়ে সুন্দর আর কেউ নেই এবং আমার কাছে তোমার চেয়ে প্রিয়তম কেউই নেই। কিন্তু জাহান্নামীদেরকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে তখন আগুন কারও পা পর্যন্ত পৌঁছবে কারও পায়ের গোছার অর্ধেক পর্যন্ত পৌঁছবে, কারও পৌছবে জানু পর্যন্ত, কারও কোমর পর্যন্ত এবং কারও শুধু মুখমণ্ডল বাদ দিয়ে সমস্ত দেহ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। কেননা, মুখমণ্ডলের উপর আগুনকে হারাম করে দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ আমি আল্লাহ তাআলাকে বলবো- হে আমার প্রভু! আমার উম্মতের জাহান্নামবাসীদের ব্যাপারে আমার শাফা'আত কবুল করুন। তখন আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “তুমি তোমার উম্মতের যাদেরকে চিননা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নাও।” সুতরাং কোন উম্মতই অবশিষ্ট থাকবে না। তারপর সাধারণ শাফাআতের অনুমতি দেয়া হবে। তখন প্রত্যেক নবী ও প্রত্যেক শহীদ নিজ নিজ শাফা'আত পেশ করবে। আল্লাহ পাক তখন বলবেনঃ “যার অন্তরে এক দীনারের ওজন পরিমাণও ঈমান রয়েছে তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে নাও।” তারপর বলবেনঃ “এক দীনারের এক তৃতীয়াংশ ঈমান থাকলেও তাকে বের কর।” এরপর বলবেনঃ “এক দীনারের দুই তৃতীয়াংশ ঈমান থাকলেও তাকে বের কর। এক চতুর্থাংশ হলেও বের কর। এক কীরাত বরাবর হলেও বের করে নাও। এমন কি কারও অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকলে তাকেও বের করে নাও। তারপর যারা আল্লাহর জন্যে কোন একটি ভাল কাজও করেছে তাকেও বের কর।” তখন আর এমন কেউই বাকী থাকবে না যে শাফাআতের যোগ্য। এমন কি আল্লাহ তা'আলার এই সাধারণ রহমত দেখে শয়তানের লোভ হবে যে, যদি কেউ তার জন্যেও সুপারিশ করতেন। আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ “আমি তো হচ্ছি সবচেয়ে বড় দয়ালু।” অতঃপর তিনি জাহান্নামে স্বীয় হাতটি রাখবেন এবং এতো অসংখ্য জাহান্নামীকে বের করবেন যারা পুড়ে কয়লার মত হয়ে যাবে। তাদেরকে জান্নাতের নাহরে হায়ওয়ান’ নামক একটি নদীতে নিক্ষেপ করা হবে। তারা এমনভাবে নব জীবন লাভ করবে যেমনভাবে কোন জলাশয়ের ধারে উদ্ভিদ অংকুরিত হয় এবং রোদের আলোতে সবুজ আকার ধারণ করে। আবার ছায়ায় থাকলে ফ্যাকাশে হয়ে থাকে। ঐ জাহান্নামীরা জান্নাতের ঐ নদীতে গোসল করার পর শ্যামল সবুজ উদ্ভিদের মত সুন্দর আকার ধারণ করবে। তাদের কপালে লিখা থাকবে ‘আল্লাহর আযাদকৃত জাহান্নামী। তাদের এই চিহ্ন দেখে জান্নাতবাসীরা তাদেরকে চিনতে পারবে যে, তারা কিছু ভাল কাজ করেছিল। কিছুকাল তারা এইভাবেই জান্নাতে অবস্থান করবে। তারপর তারা মহান আল্লাহর নিকট আবেদন করবে যে, তাদের ঐ কপালের লিখাটা যেন মিটিয়ে দেয়া হয়। তখন তা মিটিয়ে দেয়া হবে।”
এটি একটি মাশহুর ও দীর্ঘ হাদীস। হাদীসটি অত্যন্ত গারীব এবং বিভিন্ন হাদীসের বিভিন্ন অংশ বিশেষ। এর কতগুলো কথা তো একেবারে অস্বীকারযোগ্য। মদীনার কাযী ইসমাঈল ইবনে রাফে একাই এর বর্ণনাকারী। এর বিশুদ্ধতার ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ এটাকে বিশ্বাসযোগ্য বলেছেন এবং কেউ কেউ একে দুর্বল বলেছেন। আবার কেউ কেউ সম্পূর্ণরূপেই অস্বীকার করেছেন। যেমন আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ), আবু হাতিম রাযী (রঃ) এবং উমার ইবনে ফালাস (রঃ)। কেউ কেউ বলেছেন যে, এই হাদীসটি সম্পূর্ণরূপে বর্জনীয়। ইবনে আদী (রঃ) বলেন যে, এই হাদীসটির ব্যাপারে চিন্তা ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এর বর্ণনাকারীরা সবাই দুর্বল। আমি বলি যে, কয়েকটি কারণে এর ইসনাদে মতভেদ রয়েছে। আমি এটাকে পৃথক একটি খণ্ডে বর্ণনা করেছি। এর বর্ণনাভঙ্গীও বিস্ময়কর। বহু হাদীস মিলিয়ে একটি হাদীস বানিয়ে নেয়া হয়েছে। এজন্যেই এটা অস্বীকারযোগ্য হয়ে গেছে। আমি আমার শিক্ষক হাফিয আবুল হাজ্জাজ আল মুযী (রঃ)-এর কাছে শুনেছি যে, এটা ওয়ালীদ ইবনে মুসলিমের একটি রচনা, যা তিনি জমা করেছেন। এটা যেন। কতগুলো পৃথক পৃথক হাদীসের সাক্ষ্য বহনকারী। আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।