আল মুদ্দাসসির আয়াত ১০
عَلَى الْكٰفِرِيْنَ غَيْرُ يَسِيْرٍ ( المدثر: ١٠ )
'Alal kaafireena ghayru yaseer (al-Muddathir ৭৪:১০)
English Sahih:
For the disbelievers – not easy. (Al-Muddaththir [74] : 10)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
(যা) কাফিরদের জন্য মোটেই সহজ নয়। (আল মুদ্দাসসির [৭৪] : ১০)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
যা অবিশ্বাসীদের জন্য সহজ নয়। [১]
[১] অর্থাৎ, কিয়ামতের দিন কাফেরদের উপর ভারী হবে। কেননা, কিয়ামতে সেই কুফরীর ফল তাদেরকে ভোগ করতে হবে, যা তারা দুনিয়াতে করে বেড়াত।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
যা কাফিরদের জন্য সহজ নয় [১]।
[১] এ বাক্যটি থেকে স্বতঃই প্রতিভাত হয় যে, সেদিনটি ঈমানদারদের জন্য হবে খুবই সহজ এবং এর সবটুকু কঠোরতা সত্যকে অমান্যকারীদের জন্য নির্দিষ্ট হবে। [সা‘দী]
3 Tafsir Bayaan Foundation
কাফিরদের জন্য সহজ নয়।
4 Muhiuddin Khan
কাফেরদের জন্যে এটা সহজ নয়।
5 Zohurul Hoque
অবিশ্বাসীদের উপরে; আরামদায়ক নয়।
6 Mufti Taqi Usmani
কাফেরদের জন্য তা সহজ হবে না।
7 Mujibur Rahman
যা কাফিরদের জন্য সহজ নয়।
8 Tafsir Fathul Mazid
নামকরণ : الْمُدَّثِّرُ অর্থ :
বস্ত্রাবৃত, বস্ত্রাচ্ছাদিত। এর দ্বারা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করা হয়েছে। অত্র সূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত الْمُدَّثِّرُ শব্দ থেকেই এ সূরার নামকরণ করা হয়েছ।
শানে নুযূল :
ইয়াহইয়া বিন আবী কাসীর (রহঃ) হতে বর্ণিত যে, তিনি আবূ সালামাহ বিন আব্দুর রহমানকে কুরআনের কোন্ আয়াতটি সর্বপ্রথম অবতীর্ণ হয় এ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি জবাবে বলেন :
(يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ)
এ আয়াতটি। ইয়াহইয়া বলছেন : মানুষ বলে-
(اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ)
এ আয়াত সর্বপ্রথম অবতীর্ণ হয়েছে। আবূ সালামাহ বললেন : এ সর্ম্পকে আমি জাবের (রাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করেছি এবং তাকে সেরূপ বলতে শুনেছি তুমি যেরূপ আমাকে বলেছ। জাবের (রাঃ) বলছেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা আমাকে বলেছেন তোমাকে তাই বলব। তিনি বলেছেন : আমি হেরা পর্বতের গুহায় আমার প্রভুর ইবাদতে মগ্ন ছিলাম। সেখান থেকে অবতরণ করে আমি শুনতে পেলাম, কে যেন আমাকে ডাকছে। আমি আমার সামনে-পেছনে, ডানে এবং বামে তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। আমি তখন মাথা উপরের দিকে তুললে কিছু দেখতে পেলাম। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সে ফেরেশতাকে দেখতে পেলাম যে হেরা গুহায় আগমন করেছিল। সে একটি চেয়ারে বসে আছে। (সহীহ বুখারী : ৪৯২৫) আমি খাদিজা (রাঃ)-এর কাছে চলে আসি। (পূর্বের বর্ণনায় রয়েছে আমি ভয়ে মাটির দিকে ঝুঁকে পড়ি) খাদিজা (রাঃ)-কে বলি : আমাকে চাদরাবৃত কর এবং ঠাণ্ডা পানি ঢালতে থাকো। খাদিজা (রাঃ) তা-ই করলেন। তখন
(يَا أَيُّهَا الْمُدَّثِّرُ قُمْ فَأَنْذِرْ)
আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী : ৪৯২৪)
শানে নুযূল থেকে বুঝা গেল এ আয়াতগুলো প্রথম অবতীর্ণ নয়। কারণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেন : সেই ফেরেশতাকে দেখতে পেলাম যে হেরা গুহায় এসেছিল। অর্থাৎ ইতোপূর্বে জিবরীল (আঃ) ওয়াহী নিয়ে হেরা গুহায় এসেছিলেন। মূলত এ সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছে সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কিছু দিন (ওয়াহী আসা বন্ধ থাকার) পর। তাই প্রথম অবতীর্ণ সূরা বলা হয়েছে। (মাবাহিস ফী উলূমুল কুরআন)
সূরাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দাওয়াতী মিশনে অনুপ্রেরণা ও আল্লাহ তা‘আলার সস্তুষ্টির জন্য দাওয়াতী কাজে ধৈর্য ধারণ করা এবং নিজের আমল সংশোধন করে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
১-১০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
সূরার প্রথম সাতটি আয়াত আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে মানব জাতিকে সতর্ক, পার্থিব জীবনের যাবতীয় দুর্দশা, দুষ্কর্ম ও শিরকের পংকিলতা থেকে রক্ষা করে আখিরাতের আযাব থেকে নাজাতের দিকে আহ্বান করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সতর্ক করার কাজটি রিসালাতের প্রধান কাজ, যুগে যুগে প্রত্যেক রাসূল এ অমিয়বাণী নিয়েই স্বজাতির কাছে আগমন করেছিলেন। এখন যেহেতু নাবী আসবে না তাই এ মহৎ দায়িত্বটি উম্মাতে মুহাম্মাদীর ওপর আরোপিত হয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রত্যেক অনুসারীদের ওপর তা আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(قُلْ ھٰذِھ۪ سَبِیْلِیْٓ اَدْعُوْٓا اِلَی اللہِ عَلٰی بَصِیْرَةٍ اَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِیْ وَسُبْحٰنَ اللہِ وَمَآ اَنَا مِنَ الْمُشْرِکِیْنَ))
“বল : ‘এটাই আমার পথ, আল্লাহর প্রতি মানুষকে আমি আহ্বান করি সজ্ঞানে ও দলীল-প্রমাণের সাথে আমি এবং আমার অনুসারীগণও। আল্লাহ মহিমান্বিত এবং যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই।” (সূরা ইউসুফ ১২ : ১০৮)
তবে মানুষ গোমরাহ হলে আল্লাহ তা‘আলার কোন ক্ষতি বা মানুষ সুপথ পেলে আল্লাহ তা‘আলার কোন উপকার হবে এমন নয় বরং মানুষের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার দয়া যে, তিনি চান না কোন বান্দাকে জাহান্নামে দিতে। তিনি চান প্রত্যেক বান্দাই জান্নাতে যাক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(مَا يَفْعَلُ اللّٰهُ بِعَذَابِكُمْ إِنْ شَكَرْتُمْ وَاٰمَنْتُمْ ط وَكَانَ اللّٰهُ شَاكِرًا عَلِيْمًا)
“তোমরা যদি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ও ঈমান আন তবে তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহ কী করেন? আল্লাহ পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ।” (সূরা নিসা ৪ : ১৪৭) কিন্তু মানুষ তাদের কর্মের মাধ্যমে নিজেদেরকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়।
(قُمْ فَأَنْذِرْ) অর্থাৎ তুমি ওঠো, শুয়ে থেকো না। মানুষকে আখিরাতের শাস্তির ভয় দেখাও। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন :
(وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ)
“আর তুমি তোমার নিকটতম আন্তীয়-স্বজনদের ভীতি প্রদর্শন কর” (সূরা শুআরা ২৬ : ২১৪)। প্রথম ওয়াহী দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নাবীরূপে মনোনীত করা হয়েছে, আর এ ওয়াহী দ্বারা তাঁকে রাসূল বানানো হয়েছে। (ইবনু কাসীর)
(وَرَبَّكَ فَكَبِّرْ)
অর্থাৎ একমাত্র তোমার প্রতিপালকের বড়ত্ব বর্ণনা কর। বস্তুত এ বিশ্ব জগতে যত প্রাণী, বস্তু ও সৃষ্টি আছে তার সবই ছোট ও নগণ্য। একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই বড়, শ্রেষ্ঠ ও মহান। সর্বশ্রেষ্ঠ, সর্বোৎকৃষ্ট, সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম আল্লাহ তা‘আলার সামনে সকল সত্তা, শক্তি ও বস্তু ইত্যাদি অদৃশ্য ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এ ঈমানী আকীদাহ-বিশ্বাস, প্রত্যয় ও চেতনা নিয়ে মানবজাতিকে সতর্ক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
(وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ)
এ আয়াতের দুটি তাফসীর হতে পারে :
(১) এর দ্বারা উদ্দেশ্য আমলকে সকল প্রকার রিয়া, খারাবী, নিফাকী ও অহংকার ইত্যাদি থেকে সংশোধন ও পবিত্র করা। এতে কাপড়ের পবিত্রতাও শামিল। কেননা কাপড়কে পবিত্র রাখা আমলকে পবিত্র রাখার পরিপূর্ণতা, বিশেষ করে সালাতে। এটাই অধিকাংশ আলেমের অভিমত।
(২) কাপড় পবিত্র রাখা। অর্থাৎ সকল প্রকার নাজাসাত থেকে পবিত্র হওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হচ্ছে। (তাফসীর সা’দী)
(وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ)
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : الرُّجْزَ হল মূর্তি, প্রতিমা। আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদত করা হয়। যহহাক (রহঃ) বলেন : আয়াতের অর্থ হল : অবাধ্য কাজ ছেড়ে দাও। (ইবনু কাসীর)
আল্লামা সা‘দী (রহঃ) বলেন : الرُّجْزَ দ্বারা উদ্দেশ্য হল সকল খারাপ কাজ ও কথা। তাই বলা যায়, নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ছোট-বড়, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল প্রকার পাপ কাজ বর্জন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশে শির্কও শামিল। মূলত এটা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাধ্যমে উম্মাতের সকলকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
(وَلَا تَمْنُنْ تَسْتَكْثِرُ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন : উপহার বা বেশি পাওয়ার আশায় কোন প্রকার দান কর না (ইবনু কাসীর)। বরং তোমার সকল কাজ ও দানের প্রতিদান একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার কাছেই আশা কর।
(وَلِرَبِّكَ فَاصْبِرْ)
‘এবং তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ধৈর্যধারণ কর।’ মুজাহিদ বলেন : তুমি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য তাদের দেওয়া কষ্টে ধৈর্য ধারণ করবে।
(فَإِذَا نُقِرَ فِي النَّاقُوْر)
ইবনু আব্বাস, মুজাহিদ, হাসান বাসরীসহ প্রমুখ বলেন : النَّاقُوْر হল শিংগা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : আমি কি করে শান্তিতে থাকতে পারি? অথচ শিংগা ধারণকারী ফেরেশতা নিজের মুখে শিংগা ধরে রেখেছে এবং ললাট ঝুঁকিয়ে আল্লাহ তা‘আলার হুকুমের অপেক্ষায় বসে আছে কখন হুকুম হয়ে যাবে এবং তিনি শিংগায় ফুঁৎকার দেবেন। সাহাবীগণ বললেন : হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে আপনি কী করতে বলছেন ? জবাবে তিনি বলেন : তোমরা নিম্নের কালেমাটি বলতে থাকবে :
حَسْبُنَا اللّٰهُ وَنِعْمَ الوَكِيلُ عَلَي اللّٰهِ تَوَكَّلْنا
আল্লাহ তা‘আলাই আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনি কতইনা উত্তম কর্মবিধায়ক, আমরা আল্লাহ তা‘আলার ওপরেই ভরসা করি। (তিরমিযী হা. ২৪৩১, সহীহ)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : عَسِيْرٌ অর্থ شديد বা কঠিন। (সহীহ বুখারী) অর্থাৎ যেদিন শিংগায় ফুঁ দেওয়া হবে সেদিনটি খুবই কঠিন, বিশেষ করে কাফিরদের জন্য। সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে যেমন সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে মুক্ত থাকবে, কোন প্রকার নাজাসাত ও শিরকে লিপ্ত হবে না তেমনি সে পবিত্রতার দিকেও মানুষদেরকে আহ্বান করবে। তাহলে উম্মাতে মুহাম্মাদীর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা সম্ভব হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রত্যেক অনুসারীর ওপর আবশ্যক মানুষকে সঠিক পথের দিকে আহ্বান করা।
২. একজন মু’মিন তার সকল প্রকার কাজ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য সম্পাদন করবে।
৩. শির্ক এক প্রকার অপবিত্রতা, তা থেকে মুক্ত থাকা আবশ্যক।
9 Fozlur Rahman
কাফেরদের জন্য, সহজ (দিন) নয়।
10 Mokhtasar Bangla
১০. যা আল্লাহ ও তদীয় রাসূলদেরকে অস্বীকারকারীদের উপর অসাধারণ হবে।
11 Tafsir Ibn Kathir
১-১০ নং আয়াতের তাফসীর
সহীহ বুখারীতে হ্যরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কুরআন কারীমের یٰۤاَیُّهَا الْمُدَّثِّرُ-এ আয়াতটি সর্বপ্রথম অবতীর্ণ হয়। কিন্তু জমহুরের উক্তি এই যে, সর্বপ্রথম ওহী হলো اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِیْ خَلَقَ (৯৬:১) এ আয়াতটি। যেমন এই সূরার তাফসীরে আসবে ইনশা আল্লাহ।
সহীহ বুখারীতে হযরত ইয়াহইয়া ইবনে আবী কাসীর (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি হযরত আবূ সালমা ইবনে আবদির রহমান (রাঃ)-কে কুরআন কারীমের কোন আয়াতটি সর্বপ্রথম অবতীর্ণ হয় এ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বলেনঃ یٰۤاَیُّهَا الْمُدَّثِّرُ-এই আয়াতটি।" ইয়াহইয়া (রঃ) তাঁকে পুনরায় বলেনঃ “লোকেরা তো বলছে যে, …… اِقْرَاْ بِاسْمِ-এ আয়াতটি সর্বপ্রথম অবতীর্ণ হয়েছে?” উত্তরে হযরত আবূ সালমা (রাঃ) বলেনঃ হযরত জাবির (রাঃ)-কে আমি এ সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম এবং তিনি আমাকে ঐ জবাবই দিয়েছিলেন যা আমি তোমাকে দিলাম। তারপর আমি আবার তাঁকে ঐ প্রশ্নই করেছিলাম যা তুমি আমাকে করলে। আমার এ প্রশ্নের উত্তরে হযরত জাবির (রাঃ) বলেছিলেনঃ আমি তোমাকে ঐ কথাই বললাম যে কথা আমাকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ “আমি হেরা পর্বতের গুহায় আমার প্রতিপালকের ধ্যান করছিলাম। সেখান হতে অবতরণ করে আমি শুনতে পেলাম যে, কে যেন আমাকে ডাকছে। আমি আমার সামনে পিছনে ডানে এবং বামে তাকালাম, কিন্তু কাউকেও দেখতে পেলাম না। আমি তখন মাথা উঠিয়ে উপরের দিকে তাকালাম তখন কিছু একটা দেখতে পেলাম। আমি তখন হযরত খাদীজা (রাঃ)-এর কাছে আসলাম এবং তাকে বললামঃ আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর এবং আমার উপর ঠাণ্ডা পানি ঢালতে থাকো। হযরত খাদীজা (রাঃ) তাই করলো এবং ঐ সময়। یٰۤاَیُّهَا الْمُدَّثِّرُ ـ قُمْ فَاَنْذِرْ ـ وَ رَبَّكَ فَكَبِّرْ আয়াতগুলো অবতীর্ণ হলো।
সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ওহী বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ “একদা আমি চলতে রয়েছি, হঠাৎ আকাশের দিক হতে আমার কানে একটা শব্দ পৌঁছলো! চক্ষু উঠিয়ে দেখলাম যে, হেরা পর্বতের গুহায় যে ফেরেশতা আমার নিকট এসেছিলেন তিনি আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে একটি কুরসীর উপর বসে রয়েছেন। আমি ভয়ে মাটির দিকে ঝুঁকে পড়ি এবং বাড়ী এসেই বলিঃ আমাকে বস্ত্রদ্বারা আবৃত করে দাও। আমার কথামত বাড়ীর লোকেরা আমাকে বস্ত্র দ্বারা আচ্ছাদিত করে। তখন یٰۤاَیُّهَا الْمُدَّثِّرُ ـ قُمْ فَاَنْذِرْ হতে فَاهْجُرْ পর্যন্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়।”
হযরত আবূ সালমা (রাঃ) বলেন যে, رُجْز-এর অর্থ হলো মূর্তি। তারপর ক্রমান্বয়ে ওহী অবতীর্ণ হতে থাকে। এটা সহীহ বুখারীর শব্দ এবং এই হিসাবই রক্ষিত আছে। এর দ্বারা স্পষ্ট জানা যাচ্ছে যে, এর পূর্বেও কোন ওহী এসেছিল। কেননা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এই উক্তিটি বিদ্যমান রয়েছেঃ “ইনি ঐ ফেরেশতা যিনি হেরা পর্বতের গুহায় আমার নিকট এসেছিলেন।” অর্থাৎ হযরত জিবরাঈল (আঃ), যিনি তাঁকে সূরা আলাকের নিম্নের আয়াতগুলো গুহার মধ্যে পড়িয়েছিলেনঃ
اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِیْ خَلَقَ ـ خَلَقَ الْاِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ ـ اِقْرَاْ وَ رَبُّكَ الْاَكْرَمُ ـ الَّذِیْ عَلَّمَ بِالْقَلَمِ ـ عَلَّمَ الْاِنْسَانَ مَا لَمْ یَعْلَمْ
এরপর কিছু দিনের জন্যে তাঁর আগমন বন্ধ হয়ে যায়। তারপর যখন তার যাতায়াত আবার শুরু হয় তখন প্রথম ওহী ছিল সূরা মুদ্দাসসিরের প্রাথমিক আয়াতগুলো। এইভাবে এদু’টি হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্য হয়ে যাচ্ছে যে, আসলে সর্বপ্রথম ওহী হচ্ছে সূরা আলাকের প্রাথমিক আয়াতগুলো। তারপর ওহী বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে সর্বপ্রথম ওহী হলো এই সূরা মুদ্দাসিরের প্রাথমিক আয়াতগুলো। এর স্বপক্ষে রয়েছে মুসনাদে আহমাদ প্রভৃতিতে বর্ণিত হাদীসগুলো, যেগুলোতে রয়েছে যে, ওহী বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সর্বপ্রথম ওহী হলো সূরা মুদ্দাসিরের প্রাথমিক আয়াতগুলো।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা কুরায়েশদেরকে যিয়াফত দেয়। খাওয়া-দাওয়ার পর তারা পরস্পর বলাবলি করেঃ “আচ্ছা, তোমরা এই লোকটিকে [হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে] কি বলতে পার?” কেউ কেউ বললো যে, তিনি যাদুকর। অন্য কেউ বললো যে, না, তিনি যাদুকর নন। কেউ কেউ তাঁকে গণক বললো। আবার অন্য কেউ বললো যে, না তিনি গণকও নন। কেউ কেউ তাকে কবি বলে মন্তব্য করলো, কিন্তু অন্য কেউ বললো যে, তিনি কবিও নন, তাদের কেউ কেউ এই মন্তব্য করলো যে, তিনি এমন যাদুকর যে যাদু তিনি লোক পরম্পরায় প্রাপ্ত হয়েছেন। পরিশেষে তারা এতেই একমত হলো যে, তাঁকে এরূপ যাদুকরই বলা হবে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ খবর পেয়ে খুবই দুঃখিত হলেন এবং তিনি কাপড় দ্বারা মাথা ঢেকে নেন এবং গোটা দেহকেও বস্ত্রাবৃত্ত করেন। ঐ সময় আল্লাহ তা'আলা নিম্নের আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেনঃ
یٰۤاَیُّهَا الْمُدَّثِّرُ ـ قُمْ فَاَنْذِرْ ـ وَ رَبَّكَ فَكَبِّرْ ـ وَ ثِیَابَكَ فَطَهِّرْ ـ وَ الرُّجْزَ فَاهْجُرْ ـ وَ لَا تَمْنُنْ تَسْتَكْثِرُ
এর শানে নুযূল এটাই বর্ণনা করা হয়েছে।” (এটা ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
মহান আল্লাহ স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ উঠো, সতর্ক বাণী প্রচার কর। অর্থাৎ দৃঢ় সংকল্পের সাথে প্রস্তুত হয়ে যাও এবং জনগণকে আমার সত্তা হতে, জাহান্নাম হতে এবং তাদের দুষ্কর্মের শাস্তি হতে ভয় প্রদর্শন কর।
প্রথম ওহী দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে নবী রূপে মনোনীত করা হয়েছে। আর এই ওহী দ্বারা তাঁকে রাসূল বানিয়ে দেয়া হয়েছে।
এরপর বলেনঃ তোমার প্রতিপালকের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এবং তোমার পরিচ্ছদ পবিত্র রাখো। অর্থাৎ অবাধ্যতা, বিশ্বাসঘাতকতা ও আত্মসাত করা হতে দূরে থাকো। যেমন কবি গাইলান ইবনে সালমা সাকাফী বলেনঃ
فَاِنِّىْ بِحَمْدِ اللهِ لَا ثَوْبَ فَاجِرٍ ـ لَبِسْتُ وَلَا مِنْ غَدْرَةِ اتَّقَنُّعِ
অর্থাৎ আল্লাহর প্রশংসা যে, আমি পাপাচারের পোষাক ও বিশ্বাসঘাতকতার চাদর হতে নিজেকে মুক্ত ও পবিত্র রেখেছি।” স্বীয় কাপড় পবিত্র রাখো অর্থাৎ পাপকার্য ছেড়ে দাও এবং আমলকে সংশোধন করে নাও, এরূপ ব্যবহার আরবী পরিভাষায়ও বহু দেখা যায়। ভাবার্থ এও হতে পারেঃ হে নবী (সঃ)! তুমি গণকও নও এবং যাদুকরও নও, সুতরাং মানুষ তোমাকে যাই বলুক না কেন তুমি কোন পরোয়া করবে না।
যে ব্যক্তি ওয়াদা অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে না তাকে আরবরা ময়লা ও অপরিষ্কার কাপড় ওয়ালা বলে থাকে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে চলে, বিশ্বাসঘাতকতা করে না তাকে পবিত্র কাপড় ওয়ালা বলে থাকে। কবি বলেনঃ
اِذَا الْمَرْءُ لَمْ يَدْنَسْ مِنَ اللَّؤْمِ عِرْضَهٗ ـ فَكُلُّ رِدَاءٍ يَرْتَدِيْهِ جَمِيْلٗ
অর্থাৎ “মানুষ যখন দুষ্কার্য ও মলিনতা দ্বারা নিজের মর্যাদাকে কলুষিত ও অপবিত্র করবে না, তখন সে যে কাপড়ই পরিধান করবে তাতেই তাকে সুন্দর দেখাবে।” ভাবার্থ এও হবেঃ অপ্রয়োজনীয় পোশাক পরিধান করো না, নিজের কাপড়কে পাপ মলিন করো না, কাপড়কে পাক-সাফ রাখো, ময়লা ধুয়ে ফেলো, মুশরিকদের মত নিজের পোষাককে অপবিত্র রেখো না। প্রকৃতপক্ষে এই ভাবার্থগুলো সবই ঠিক। এটাও হবে, ওটাও হবে। সাথে সাথে অন্তরও পবিত্র এবং কলুষমুক্ত হতে হবে। অন্তরের উপর কাপড়ের প্রয়োগ আরবদের কথায় পরিলক্ষিত হয়। যেমন কবি ইমরুল কায়েস বলেনঃ
اَفَاطِمُ مَهْلًا بَعْضَ هٰذا التَّدَلُّلِ ـ وَاِنْ كُنْتِ قَدْ اَزْمَعْتِ هِجْرِىْ فَاجْمَلِىْ
وَاِنْ تَكُ قَدْ سَـاءَتْكِ مِنِّىْ خَلِيْفَةً ـ فَسُلِّىْ ثِيَابِىْ مِنْ ثِيَابِكِ تَنْسَلِىْ
অর্থাৎ “হে ফাতিমা (কবির প্রেমিকা)! তুমি তোমার এসব চলনভঙ্গী ছেড়ে দাও, আর যদি তুমি আমা হতে পৃথক হয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প করে থাকো তবে উত্তমরূপে পৃথক হয়ে যাও। আমার কোন ব্যবহার ও চরিত্র যদি তোমার কাছে খারাপ লেগে থাকে তবে আমার কাপড়কে তোমার কাপড় হতে পৃথক করে দাও, তাহলে তা পৃথক হয়ে যাবে।”
হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ) হতে এই আয়াতের তাফসীরে বর্ণিত আছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে নিজের অন্তরকে ও নিয়তকে পরিষ্কার রাখো। মুহাম্মাদ ইবনে কা'ব কারাযী (রঃ) ও হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ তোমার চরিত্রকে ভাল ও সুন্দর কর।
আল্লাহ তা'আলার উক্তি وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ অর্থাৎ অপবিত্রতা হতে দূরে থাকো। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছেঃ প্রতিমা বা মূর্তি হতে দূরে থাকো। হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত ইকরামা (রঃ), হযরত কাতাদা (রঃ), হযরত যুহরী (রঃ) এবং হযরত ইবনে যায়েদও (রঃ) বলেন যে, رُجْز-এর অর্থ হলো প্রতিমা বা মূর্তি। হযরত ইবরাহীম (রঃ) ও হযরত যহহাক (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ নাফরমানী পরিত্যাগ কর। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ اتَّقِ اللّٰهَ وَ لَا تُطِعِ الْكٰفِرِیْنَ وَ الْمُنٰفِقِیْنَ
অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তুমি কাফির ও মুনাফিকদের আনুগত্য করো না।”(৩৩:১) মহান আল্লাহ আরো বলেনঃ
وَ قَالَ مُوْسٰى لِاَخِیْهِ هٰرُوْنَ اخْلُفْنِیْ فِیْ قَوْمِیْ وَ اَصْلِحْ وَ لَا تَتَّبِعْ سَبِیْلَ الْمُفْسِدِیْنَ
অর্থাৎ “এবং মূসা (আঃ) তার ভাই হারূনকে বলেছিলঃ আমার পরে তুমি আমার কওমের মধ্যে আমার প্রতিনিধিত্ব করবে, সংশোধন করবে এবং বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পথ অনুসরণ করবে না।” (৭:১৪২)
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ অধিক পাওয়ার প্রত্যাশায় দান করো। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর কিরআতে وَلَا تَمْنُنْ اِنْ تَسْتَكْثِرْ রয়েছ। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ অধিক চাওয়ার সাথে আল্লাহর উপর নিজের ভাল আমলের ইহসান প্রকাশ করো না। রবী ইবনে আনাসেরও (রঃ) এটাই উক্তি। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এটা পছন্দ করেছেন। হযরত খাসীফ (রঃ) হযরত মুজাহিদ (রঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছেঃ কল্যাণ প্রার্থনার আধিক্য দ্বারা দুর্বলতা প্রকাশ করো না। হযরত ইবনে যায়েদ (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলোঃ নবুওয়াতের ইহসানের বোঝা মানুষের উপর রেখে ওর বিনিময়ে দুনিয়া তলব করো না। সুতরাং চারটি উক্তি হলো। কিন্তু প্রথম উক্তিটিই সর্বোত্তম। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল। জানেন।
মহান আল্লাহ এরপর বলেনঃ তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ধৈর্যধারণ কর। অর্থাৎ আল্লাহর পথে কাজ করতে গিয়ে জনগণের পক্ষ হতে তোমাকে যে কষ্ট দেয়া হয় তাতে তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের লক্ষ্যে ধৈর্য অবলম্বন কর। আল্লাহ তোমাকে করেছেন তাতে সদা লেগে থাকো।
نَاقُوْر শব্দ দ্বারা সূর বা শিংগাকে বুঝানো হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) فَاِذَا نُقِرَ فِى النَّاقُوْرِ-এ আয়াত সম্পর্কে বলেনঃ “আমি কি করে শান্তিতে থাকতে পারি? অথচ শিংগাধারণকারী ফেরেশতা নিজের মুখে শিংগা ধরে রেখেছেন এবং ললাট ঝুঁকিয়ে আল্লাহর হুকুমের অপেক্ষায় রয়েছেন যে, কখন হুকুম হয়ে যাবে এবং তিনি শিংগায় ফুৎকার দিবেন।” সাহাবীগণ (রাঃ) বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তাহলে আমাদেরকে আপনি কি করতে বলছেন?” জবাবে তিনি বলেনঃ “তোমরা নিম্নের কালেমাটি বলতে থাকবে
حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْلُ عَلَى اللهِ تَوَكَّلْنَا
অর্থাৎ “আমাদের জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক, আমরা আল্লাহর উপরই ভরসা করি।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে সেই দিন হবে এক সংকটের দিন অর্থাৎ কঠিন দিন, যা কাফিরদের জন্যে সহজ নয়। যেমন আল্লাহ পাক অন্য জায়গায় বলেনঃ
یَقُوْلُ الْكٰفِرُوْنَ هٰذَا یَوْمٌ عَسِرٌ
অর্থাৎ “কাফিররা বলবেঃ এটা কঠিন দিন।”(৫৪:৮)
বর্ণিত আছে যে, হযরত যারারাহ ইবনে আওফা (রঃ) বসরার কাযী ছিলেন। একদা তিনি তাঁর মুক্তাদীদেরকে ফজরের নামায পড়াচ্ছিলেন এবং নামাযে তিনি এই সূরাটিই তিলাওয়াত করছিলেন। পড়তে পড়তে যখন তিনি فَاِذَا نُقِرَ فِی النَّاقُوْرِ ـ فَذٰلِكَ یَوْمَئِذٍ یَّوْمٌ عَسِیْرٌ ـ عَلَى الْكٰفِرِیْنَ غَیْرُ یَسِیْرٍ এই আয়াতগুলো পর্যন্ত পৌঁছেন তখন হঠাৎ তিনি ভীষণ জোরে চীকার করে ওঠেন এবং সাথে সাথে মাটিতে পড়ে যান। দেখা যায় যে, তাঁর প্রাণ পাখী তাঁর দেহ পিঞ্জিরা থেকে বেরিয়ে গেছে! আল্লাহ তাঁর প্রতি রহমত নাযিল করুন!