আন-নযিআ'ত আয়াত ১৪
فَاِذَا هُمْ بِالسَّاهِرَةِۗ ( النازعات: ١٤ )
Faizaa hum biss saahirah (an-Nāziʿāt ৭৯:১৪)
English Sahih:
And suddenly they will be [alert] upon the earth's surface. (An-Nazi'at [79] : 14)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
সহসাই তারা খোলা ময়দানে আবির্ভূত হবে। (আন-নযিআ'ত [৭৯] : ১৪)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
ফলে তখনই ময়দানে তাদের আবির্ভাব হবে।[১]
[১] ساهرة -এর (শাব্দিক অর্থ হলঃ জাগরণভূমি) এখানে এর উদ্দেশ্য হল যমীনের উপরিভাগ; অর্থাৎ, ময়দান। যমীনের উপরিভাগকে ساهرة এই জন্য বলা হয়েছে যে, সমস্ত প্রাণীর শয়ন ও জাগরণ এই যমীনের উপরই হয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ বলেন, যেহেতু বৃক্ষহীন ময়দান এবং মরুভূমিতে নানা ভয়ের কারণে মানুষের নিদ্রা উড়ে যায় এবং তারা জেগে থাকে, সেহেতু অনুরূপ ময়দানকে ساهرة বলা হয়। (ফতহুল ক্বাদীর) মোট কথা, এ হল কিয়ামতের দৃশ্য-বিবরণ যে, একটি ফুৎকারের ফলেই সমস্ত মানুষ একটি ময়দানে জমায়েত হয়ে যাবে।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
তখনই ময়দানে [১] তাদের আবির্ভাব হবে।
[১] আয়াতে বর্ণিত ساهرة শব্দের অর্থ সমতল ময়দান। কেয়ামতে পূনরায় যে ভূপৃষ্ঠ সৃষ্টি করা হবে, তা সমতল হবে। একেই আয়াতে ساهرة বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। এর অর্থ জমিনের উপরিভাগও হতে পারে। [ইবন কাসীর]
3 Tafsir Bayaan Foundation
তৎক্ষনাৎ তারা ভূ-পৃষ্ঠে উপস্থিত হবে।
4 Muhiuddin Khan
তখনই তারা ময়দানে আবির্ভূত হবে।
5 Zohurul Hoque
তখন দেখো! তারা হবে জাগ্রত।
6 Mufti Taqi Usmani
অমনি তারা খোলা মাঠে আবির্ভূত হবে।
7 Mujibur Rahman
ফলে তখনই মাইদানে তাদের আবির্ভাব হবে।
8 Tafsir Fathul Mazid
নামকরণ:
النازعٰت শব্দটি نزع থেকে উদ্গত। অর্থ হলো : ছিনিয়ে নিয়ে আসা, মূলোৎপাটন করা। غَرْقً অর্থ : ডুব দেয়া। নাযিআত আত্মহরণকারী বা জান কবযকারী ফেরেশতার একটি বৈশিষ্ট্য। ফেরেশতা কাফিরদের শরীরে ঢুকে তাদের আত্মা কঠিনভাবে ছিনিয়ে আনে, তাই তাদেরকে এ নামে ভূষিত করা হয়েছে। এ শব্দ থেকেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে। পূর্ববর্তী সূরাটির মত এ সূরাতেও কিয়ামত ও তার ভয়াবহতা, জান্নাত ও জাহান্নামীদের পরিচয় এবং কাফিরদের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে।
১-১৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
কিয়ামত অবশ্যম্ভাবী এবং তা যথাসময়ে সংঘটিত হবে। এর গুরুত্ব বুঝানোর জন্য আল্লাহ তা‘আলা পরপর গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ শ্রেণির ফেরেশতাদের শপথ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা প্রথম আয়াতে ঐ সকল ফেরেশতার শপথ করেছেন যারা কাফিরদের শরীরে প্রবেশ করে তাদের আত্মা কঠিনভাবে ছিনিয়ে নিয়ে আসে। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন : মালাকুল মাউত যখন কাফিরদের আত্মা টেনে বের করে, তখন তা যেন লোহার করাতের ন্যায় তার প্রতিটি চুলের ও নখের গোড়া দিয়ে বেরিয়ে আসে। (কুরতুবী)
نَّاشِطٰتِ শব্দটি نَشْط হতে এসেছে, যার অর্থ হলো গিরা খুলে দেয়া। অর্থাৎ ফেরেশতা মু’মিনদের আত্মা খুব সহজ ও মৃদুভাবে বের করে থাকে যেমন কোন জিনিসের গিরা সহজে খুলে দেয়া হয়।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : কলসী কাত করলে পানি যেভাবে সহজে বেরিয়ে যায়, সৎকর্মশীল মু’মিনদের রূহ মৃত্যুর সময় সেভাবে সহজে বের হয়ে যায়। (আহমাদ হা. ১৮৫৫৭, মিশকাত হা. ১৬৩০, সনদ সহীহ)
سَّابِحٰتِ শব্দটি سَبْحً হতে এসেছে। যার অর্থ হলো : সাঁতার কাটা। ফেরেশতা আত্মা বের করার সময় মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এমনভাবে সাঁতার কাটে যেমন ডুবুরীরা কোন কিছু খোঁজার উদ্দেশ্যে পানির গভীরে সাঁতার কাটে। (ফাতহুল কাদীর) অথবা যে সকল ফেরেশতারা মানুষের আত্মা আনা-নেয়া করার কাজে আকাশে সাঁতার কাটে। (তাফসীর মুয়াসসার)
سَّابِقٰتِ অর্থ : অগ্রগামী। যে সকল ফেরেশতা আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত ওয়াহী ও নির্দেশাবলী নিয়ে নাবীদের নিকট দ্রুত পৌঁছে যায়, যাতে যেসকল শয়তানরা ওয়াহীর বার্তা চুরি করার জন্য আকাশে থাকে তারা কোন বার্তা চুরি করতে না পারে।
مُدَبِّرٰتِ শব্দটি تدبير থেকে এসেছে, অর্থ : পরিচালনা করা, বাস্তবায়ন করা। এখানে সে সকল ফেরেশতাদের শপথ করা হয়েছে যারা আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত কার্যাবলী যথাযথভাবে পালন করে। যেমন বৃষ্টি বর্ষণ করার দায়িত্ব অর্পন করেছেন মিকাইল (আঃ) ফেরেশতাকে, মানুষের আত্মা কবয করার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন মালাকুল মাওতকে, জিবরীল (আঃ)-কে দায়িত্ব দিয়েছেন ওয়াহী আদান প্রদান করতে ইত্যাদি। এমনিভাবে অসংখ্য ফেরেশতা আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে মানুষের ও জীবজগতের সেবায় ও সার্বিক ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَمَا يَعْلَمُ جُنُوْدَ رَبِّكَ إِلَّا هُوَ)
“তোমার প্রতিপালকের বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন।” (সূরা মুদ্দাসসির ৭৪ : ৩১)
আল্লাহ তা‘আলা এ সকল ফেরেশতাদের শপথ করেছেন কিয়ামতের বিষয়টাকে গুরুত্ব দেয়ার জন্য। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ তা‘আলা যে কোন সৃষ্ট বস্তু বা ব্যক্তি ইত্যাদির নামে শপথ করতে পারেন কিন্তু মানুষ আল্লাহ তা‘আলার নাম ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করতে পারবে না।
(تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ)
শব্দের অর্থ: কম্পিত হওয়া। অর্থাৎ শিংগায় ফুঁ দেয়ার ফলে আকাশ-জমিন কম্পিত হয়ে যাবে। সব মানুষ মারা যাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَوْمَ تَرْجُفُ الْأَرْضُ وَالْجِبَالُ وَكَانَتِ الْجِبَالُ كَثِيْبًا مَّهِيْلاً)
“(এসব হবে) সেদিন যেদিন পৃথিবী ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতসমূহ বহমান বালুকারাশির ন্যায় হবে।” (সূরা মুযযাম্মিল ৭৩: ১৪)
এটা হলো প্রথম ফুঁ। আর দ্বিতীয় ফুঁতে সকল মানুষ জীবিত হয়ে উঠবে, আর এটা হবে প্রথম ফুঁৎকারের চল্লিশ পর, চল্লিশ বছর, না মাস, নাকি দিনে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কিছু বলেননি। এ মত পোষণ করেছেন ইবনু আব্বাস, হাসান বাসরী, কাতাদাহ প্রমুখ। (সহীহ বুখারী হা. ৩৯৩৫, মুসলিম হা. ২৯৫৫) আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَنُفِخَ فِي الصُّوْرِ فَصَعِقَ مَنْ فِي السَّمٰوٰتِ وَمَنْ فِي الْأَرْضِ إِلَّا مَنْ شَا۬ءَ اللّٰهُ ط ثُمَّ نُفِخَ فِيْهِ أُخْرٰي فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَّنْظُرُوْنَ )
“এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে, ফলে যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন তারা ব্যতীত আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়বে। অতঃপর আবার শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে তৎক্ষণাৎ তারা দন্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকবে।” (সূরা যুমার ৩৯: ৬৮)
الرَّادِفَةُ শব্দটি ردف থেকে গঠিত। অর্থ হলো : পেছনে আসা, পরে আসা। যিনি সওয়ারীর ওপর প্রথম ব্যক্তির পেছনে বসেন তাকে رديف বলা হয়। যেহেতু দ্বিতীয় বার শিংগায় ফুঁ দেয়া প্রথম বারের পরপরই হবে তাই তাকে الرَّادِفَةُ বলা হয়েছে।
وَّاجِفَةٌ অর্থ : خائفة বা ভীত সন্ত্রস্ত। সেদিন কিয়ামতের ভয়াবহতা দেখে সকল অন্তর ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যাবে। خَاشِعَةٌ অর্থ : অবনত, নিম্নগামী। কিয়ামতের দিন মানুষের দৃষ্টি অপরাধীদের মত নিম্নগামী থাকবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ط وَقَدْ كَانُوْا يُدْعَوْنَ إِلَي السُّجُوْدِ وَهُمْ سٰلِمُوْنَ )
“তাদের দৃষ্টি হবে অবনত, অপমানবোধ তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে, অথচ যখন তারা নিরাপদ ছিল তখন তাদেরকে সিজদা করতে আহ্বান করা হয়েছিল। (কিন্তু তারা অমান্য করেছে)” (সূরা কালাম ৬৮ : ৪৩)
الْـحَافِرَةِ কবরকে বলা হয়। অর্থাৎ যারা দুনিয়াতে পুনরুত্থানকে ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে অস্বীকার করত তারা বলবে আমরা কি কবরস্থ হওয়ার পর পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে যাব? এজন্য তারা বলে: আমরা তো মৃত্যুর পর জীর্ণ অস্থিতে পরিণত হয়ে যাব। আল্লাহ তা‘আলা তাদের আশ্চর্যের কথা তুলে ধরে বলেন:
(وَقَالُوْآ أَإِذَا كُنَّا عِظَامًا وَّرُفَاتًا أَإِنَّا لَمَبْعُوْثُوْنَ خَلْقًا جَدِيْدًا )
“তারা বলে: ‘আমরা হাড়ে পরিণত ও চূর্ণ-বিচূর্ণ হলেও কি নূতন সৃষ্টিরূপে উত্থিত হব?’ (সূরা ইসরা ১৭: ৪৯)
(كَرَّةٌ خَاسِرَةٌ)
অর্থাৎ তারা বলে: যদি দ্বিতীয় বার জীবিত হতেই হয় তাহলে এটা আমাদের জন্য ক্ষতিকর পুনরুত্থান। কারণ আখিরাতকে অস্বীকার করার কারণে তাদের জন্য জাহান্নাম ছাড়া কিছুই নেই।
আল্লাহ তা‘আলার নিকট এ কাজ যে একেবারে সহজ সে কথা ব্যক্ত করে তিনি বলেন :
(فَإِنَّمَا هِيَ زَجْرَةٌ وَّاحِدَةٌ)
অর্থাৎ দ্বিতীয়বার জীবিত করার জন্য একটি ফুঁৎকারের প্রয়োজন মাত্র। আল্লাহ তা‘আলা ইসরাফিল (আঃ)-কে নির্দেশ দেবেন ফলে তিনি একটা ফুঁৎকার দেবেন, আর আদম (আঃ) থেকে সর্বশেষ আগমনকারী ব্যক্তিসহ সবাই আল্লাহ তা‘আলার সামনে হাজির হবে। আল্লাহ তা‘আলার আদেশ চোখের পলকের মত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلِلہِ غَیْبُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِﺚ وَمَآ اَمْرُ السَّاعَةِ اِلَّا کَلَمْحِ الْبَصَرِ اَوْ ھُوَ اَقْرَبُﺚ اِنَّ اللہَ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌ)
“আকাশসমূহ ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই এবং কিয়ামতের ব্যাপার তো চোখের পলকের ন্যায়, বরং তার চেয়েও দ্রুততর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।” (সূরা নাহল ১৬: ৭৭)
سَّاهِرَة এর শাব্দিক অর্থ : জাগরণ ভূমি। এখানে উদ্দেশ্য হলো : জমিনের উপরিভাগ, অর্থাৎ ময়দান। জমিনের উপরিভাগকে سَّاهِرَة বলা হয় এ জন্য যে, সকল প্রাণির শয়ন, জাগরণ এ জমিনের উপরে হয়ে থাকে। (ফাতহুল কাদীর)
অর্থাৎ সকল মানুষ ভূগর্ভ থেকে ভূপৃষ্টে উঠে আল্লাহ তা‘আলার সামনে হাজির হবে। অতএব কিয়ামত সংঘটিত হবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ করার অবকাশ নেই। এ বিষয়ে সন্দেহ করলে ঈমান থাকবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা যে জিনিসের শপথ করেন সে জিনিস বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
২. কিয়ামতের পূর্ব মূহূর্তে মানুষের কী করুণ দশা হবে তা জানতে পারলাম।
9 Fozlur Rahman
আর তখনি তারা (কবর থেকে) ভূপৃষ্ঠে উঠে আসবে।
10 Mokhtasar Bangla
১৪. ফলে তাৎক্ষণিক সবাই মাটির নীচে মৃত অবস্থা থেকে ভুপৃষ্ঠে জীবিত অবস্থায় ফিরে আসবে।
11 Tafsir Ibn Kathir
১-১৪ নং আয়াতের তাফসীর
এখানে ফেরেশতাদের কথা বলা হয়েছে যারা কোন কোন মানুষের রূহ কঠিনভাবে টেনে বের করেন এবং কারো কারো রূহ এমন সহজভাবে ক্য করেন যে, যেন একটা বাঁধন খুলে দেয়া হয়েছে। কাফিরদের রূহ টেনে হিচড়ে বের করে নেয়া হয়, তারপর জাহান্নামে ডুবিয়ে দেয়া হয়। এটা মৃত্যুর সময়ের আলোচনা। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, وَ النّٰزِعٰتِ غَرْقًا দ্বারা মৃত্যু উদ্দেশ্য। হযরত হাসান (রঃ) ও হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, وَ النّٰزِعٰتِ غَرْقًا ـ وَّ النّٰشِطٰتِ نَشْطًا দ্বারা নক্ষত্ররাজিকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আতা ইবনে আবি রাবাহ (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা কঠিনভাবে সংগ্রামকারীকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু প্রথমটিই সঠিক উক্তি। অর্থাৎ এর দ্বারা রূহ বেরকারী ফেরেশতাগণ উদ্দেশ্য। অনুরূপভাবে তৃতীয় আয়াত সম্পর্কেও এই তিনটি তাফসীর বর্ণিত আছে। অর্থাৎ ফেরেশতা, মৃত্যু ও নক্ষত্র। হযরত আতা (রঃ) বলেন যে, এখানে নৌকা উদ্দেশ্য।
سَابِقَات শব্দের তাফসীরেও এই তিনটি উক্তি রয়েছে। অর্থ হচ্ছে ঈমান ও তাসদীকের দিকে অগ্রগামী। আতা (রঃ) বলেন যে, মুজাহিদদের ঘোড়াকে বুঝানো হয়েছে।
فَالْمُدَبِّرٰتِ اَمْرًا (অতঃপর যারা সকল কর্ম নির্বাহ করে)। এর দ্বারা ও ফেরেশতামলী উদ্দেশ্য। এটা হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত আতা (রঃ), হযরত আবু সালেহ (রঃ), হযরত হাসান (রঃ), হযরত কাতাদাহ (রঃ), হযরত রাবী ইবনে আনাস (রঃ) এবং হযরত সুদীর (রঃ) উক্তি। হযরত হাসান (রঃ) বলেন যে, যে ফেরেশতাগণ আল্লাহর নির্দেশক্রমে আকাশ হতে পৃথিবী পর্যন্ত সর্বত্র কর্ম নির্বাহকারী। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এই উক্তিগুলোর মধ্যে কোন ফায়সালা করেননি।
“সেই দিন প্রথম শিংঙ্গাধ্বনি প্রকম্পিত করবে ও ওকে অনুসরণ করবে পরবর্তী শিঙ্গাধ্বনি' এটা দ্বারা দুটো শিঙ্গাধ্বনি উদ্দেশ্য। প্রথম শিঙ্গার বর্ণনা يَوْمَ تَرْجُفُ الْاَرْضُ وَالْجِبَالُ (যেই দিন যমীন ও পাহাড় প্রকম্পিত হবে) এই আয়াতে রয়েছে আর দ্বিতীয় শিংগার বর্ণনা রয়েছে নিম্নের আয়াতেঃ
وَّ حُمِلَتِ الْاَرْضُ وَ الْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وَّاحِدَةً
অর্থাৎ “পবর্তমালাসহ পৃথিবী উৎক্ষিপ্ত হবে এবং একই ধাক্কায় ওগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে।” (৬৯:১৪)
হযরত কা'ব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রথম প্রকম্পিতকারী আসবে এবং ওকে অনুসরণ করবে পরবর্তী প্রকম্পিতকারী। অর্থাৎ মৃত্যু স্বসঙ্গীয় সমস্ত বিপদ আপদ নিয়ে আসবে।” একটি লোক জিজ্ঞেস করলোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি যদি আমার অযীফা পাঠের সারাক্ষণ আপনার উপর দুরূদ পাঠ করতে থাকি (তবে কি হবে)?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “তাহলে ততা আল্লাহ তোমাকে দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত চিন্তা-ভাবনা ও দুঃখ-দুর্দশা হতে রক্ষা করবেন।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)
জামে তিরমিযী ও মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে রয়েছে যে, যখন রাত্রির দুই তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হতে তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) উঠে পড়তেন ও বলতেনঃ “হে জনমণ্ডলী! তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর। প্রথম প্রকম্পিতকারী এসে পড়েছে। এবং পরবর্তী প্রকম্পিতকারী ওর অনুসরণ করছে এবং মৃত্যু তার সঙ্গীয় বিপদ-আপদ নিয়ে চলে আসছে।”
কত হৃদয় সেদিন সন্ত্রস্ত হবে, তাদের দৃষ্টি ভীতি-বিহ্বলতায় নত হবে। কেননা তারা নিজেদের পাপ এবং আল্লাহর আযাব আজ প্রত্যক্ষ করেছে।
যে সব মুশরিক পরস্পর বলাবলি করতোঃ কবরে যাওয়ার পরেও কি পুনরায় আমাদেরকে জীবিত করা হবে? আজ তারা নিজেদের জীবনের গ্লানি ও অবমাননা স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করবে।
حافرة কবরকে বলা হয়। অর্থাৎ কবরে যাওয়ার পর দেহ সড়ে-পড়ে যাবে এবং অস্থি পচে-গলে মাটির সাথে মিশে যাবে। এরপরেও কি পুনরুজ্জীবিত করা হবে? তাহলে তো দ্বিতীয়বারের এ জীবন অপমানজনক ও ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হবে। কুরায়েশ কাফিররা এ সব কথা বলাবলি করতো। حَافِرَة শব্দের অর্থ মৃত্যুর পরবর্তী জীবন বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এটা জাহান্নামের নাম বলে উল্লেখ আছে। এই জাহান্নামের বহু নাম রয়েছে। যেমন জাহীম, সাকার, হাবিয়াহ, অধিনাহ, লাযা, হুতামাহ্ ইত্যাদি।
এখন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ তারা যে বিষয়টিকে বিরাট ও অসম্ভব বলে মনে করছে সেটা আমার ব্যাপক ক্ষমতার আওতাধীনে খুবই সহজ ও সাধারণ ব্যাপার। এটা তো শুধুমাত্র এক বিকট শব্দ। এর ফলে তখনই ময়দানে তাদের আবির্ভাব হবে। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা হযরত ইসরাফীল (আঃ)-কে নির্দেশ দিলে তিনি শিঙ্গায় ফুঙ্কার দিবেন। তাঁর ফুৎকারের সাথে সাথেই আগের ও পরের সবাই জীবিত হয়ে যাবে এবং আল্লাহর সামনে এক ময়দানে সমবেত হবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ
یَوْمَ یَدْعُوْكُمْ فَتَسْتَجِیْبُوْنَ بِحَمْدِهٖ وَ تَظُنُّوْنَ اِنْ لَّبِثْتُمْ اِلَّا قَلِیْلًا
অর্থাৎ “যে দিন তিনি তোমাদেরকে আহ্বান করবেন তখন তোমরা তার প্রশংসা করতে করতে জবাব দিবে এবং জানতে পারবে যে, খুব অল্প সময়ই তোমরা অবস্থান করেছো।" (১৭:৫২) আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَ مَاۤ اَمْرُنَاۤ اِلَّا وَاحِدَةٌ كَلَمْحٍۭ بِالْبَصَرِ
অর্থাৎ “আমার আদেশ এতো কম সময়ের মধ্যে পালিত হবে যে, ঠিক যেন চোখের পলক ফেলার সময়।” (৫৪:৫০) অন্য এক জায়গায় রয়েছেঃ
وَ مَاۤ اَمْرُ السَّاعَةِ اِلَّا كَلَمْحِ الْبَصَرِ اَوْ هُوَ اَقْرَبُ
অর্থাৎ “কিয়ামতের আদেশ চোখের পলক ফেলার মত সময়ে কার্যকরী হবে, বরং এর চেয়েও কম সময়ে।” (১৬:৭৭) এখানেও বলা হয়েছেঃ “এটা তো এক বিকট শব্দের বিলম্ব মাত্র, তখনই ময়দানে তাদের আবির্ভাব হবে।' ঐদিন প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ ভীষণ ক্রুদ্ধ হবেন। এই শব্দও ক্রোধের সাথেই হবে। এটা হলো, শেষ ফুকার, যেই ফুঙ্কারের পরেই সমস্ত মানুষ জমীনের উপরে এসে পড়বে। অথচ এর পূর্বে তারা ছিল মাটির নীচে।
سَاهِرَة শব্দের অর্থ হলো ভূ-পৃষ্ঠ ও সমতল ময়দান। সাওরী (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা সিরিয়ার যমীনকে বুঝানো হয়েছে। উসমান ইবনে আবিল আনিকার (রঃ) উক্তি এই যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বায়তুল মুকাদ্দাসের যমীন। অহাব ইবনে মুনাব্বাহ (রঃ) বলেন যে, سَاهِرَة হলো বায়তুল মুকাদ্দাসের এক দিকের একটি পাহাড়। কিন্তু এটা হলো সবচেয়ে গারীব বা দুর্বল উক্তি। প্রথমটিই সঠিকতম উক্তি অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠ। সমস্ত মানুষ ভূ-পৃষ্ঠে সমবেত হবে। ঐ সময় ভূ-পৃষ্ঠ হবে সাদা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং শূন্য। যেমন ময়দার রুটি হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেনঃ
یَوْمَ تُبَدَّلُ الْاَرْضُ غَیْرَ الْاَرْضِ وَ السَّمٰوٰتُ وَ بَرَزُوْا لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ
অর্থাৎ “যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমণ্ডলীও, আর মানুষ উপস্থিত হবে আল্লাহর সামনে, যিনি এক, পরাক্রমশালী।" (১৪:৪৮) আল্লাহ পাক আরো বলেনঃ
وَ یَسْئَلُوْنَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ یَنْسِفُهَا رَبِّیْ نَسْفًا ـ فَیَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا ـ لَّا تَرٰى فِیْهَا عِوَجًا وَّ لَاۤ اَمْتًا
অর্থাৎ তারা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। বলঃ আমার প্রতিপালক ওগুলোকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন। অতঃপর তিনি ওকে পরিণত করবেন মসৃণ সমতল ময়দানে। যাতে তুমি বক্রতা ও উচ্চতা দেখবে না।” (২০:১০৫-১০৭) আর এক জায়গায় বলেনঃ
وَ یَوْمَ نُسَیِّرُ الْجِبَالَ وَ تَرَى الْاَرْضَ بَارِزَةً
অর্থাৎ ‘আর যেদিন আমি পাহাড়কে চালিত করবো এবং ভূ-পৃষ্ঠ পরিষ্কার রূপে প্রকাশ হয়ে পড়বে।" (১৮:৪৭) মোটকথা, সম্পূর্ণ নতুন একটি যমীন হবে, যেই যমীনে কখনো কোন অন্যায়, খুনাখুনি এবং পাপাচার সংঘটিত হয়নি।