২৪-২৬ নং আয়াতের তাফসীরঃ
ঈমানদারদেরকে আহ্বান করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তোমরা আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের ডাকে আনুগত্যের মাধ্যমে সাড়া দাও। এতে তোমাদের ইহলৌকিক ও পরলৌকিক কল্যাণ রয়েছে।
ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন: اسْتَجِيبُوا এর অর্থ হল: সাড়া দাও। আর
لِمَا يُحْيِيكُمْ
যাতে তোমাদের কল্যাণ রয়েছে। (সূরা আনফাল তাফসীর, সহীহ বুখারী)
আবূ সাঈদ ইবনু মু‘আল্লা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি সালাতরত ছিলাম, এমন সময় রসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার পাশ দিয়ে গেলেন এবং আমাকে ডাকলেন। সালাত শেষ না করা পর্যন্ত আমি তাঁর কাছে যাইনি, তারপর গেলাম। তিনি বললেন, তোমাকে আসতে বাধা দিল কিসে? আল্লাহ তা‘আলা কি বলেননি “হে মু’মিনগণ! রাসূল যখন তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে আহ্বান করে যা তোমাদের মাঝে জীবন সঞ্চার করে, তখন আল্লাহ ও রাসূলের আহ্বানে সাড়া দাও” হাদীসের শেষ পর্যন্ত। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৪৭, ৪৪৭৪)
(أَنَّ اللّٰهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِه)
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মানুষ ও তার অন্তরের মধ্যবর্তী প্রতিবন্ধক হয়ে থাকেন’ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর মধ্যে পরিবর্তনকারী এমনকি একজন মানুষের ও তার অন্তর যা চায় তার মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে সক্ষম। (তাফসীর মুয়াসসার, ১৭৯)
ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করেন মু’মিন ও কুফরীর মাঝে এবং কাফির ও ঈমানের মাঝে। (মুসতাদরাক হাকিম ২য় খ. পৃঃ ৩২৮)
তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দু‘আ করতেন:
يا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلٰي دِينِكَ
হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী আমার অন্তরকে তোমার দীনের ওপর অটল রাখিও।
আয়িশাহ বলেন: হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আপনি বেশি বেশি এ দু‘আ কেন করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জবাবে বললেন: আদম সন্তানের অন্তরসমূহ আল্লাহ তা‘আলার দু’ আঙ্গুলের মাঝে বিদ্যমান; ইচ্ছা করলে সেগুলোকে তিনি বক্র করে দেন আর ইচ্ছা করলে সঠিকের ওপর বহাল রাখেন। (মুসনাদ আহমাদ ৬ষ্ঠ খ. পৃঃ ৯১, তিরমিযী হা: ৩৫২২, হাসান)
এ অংশ দ্বারা অনেকে বুঝানোর চেষ্টা করেন যে, আল্লাহ তা‘আলার অবস্থান মু’মিন বান্দার অন্তরে। এ মর্মে তারা একটি বানোয়াট হাদীসও বর্ণনা করে বলেন: মু’মিনের অন্তর আল্লাহ তা‘আলার আরশ। তাদের এরূপ ধারণা অমূলক, বরং আল্লাহ তা‘আলা স্বসত্তায় আরশের ওপর আছেন, আর আল্লাহ তা‘আলার আরশ সাত আকাশের উপরে। এ সম্পর্কে বহুবার আলোচনা করা হয়েছে।
وَاتَّقُوا فِتْنَةً
‘তোমরা এমন ফেতনাকে ভয় কর’ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা ঐ ফেতনাকে ভয় করার নির্দেশ দিচ্ছেন যা সৎ ও অসৎ, জালেম ও ন্যায় ব্যক্তিসহ সকলকে পাকড়াও করবে। এ ফেতনা হল আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আনুগত্য ছেড়ে দেয়া এবং সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ থেকে বিরত থাকা। এসব কাজ না করলে সকলকে ফেতনা গ্রাস করবে। (আয়সারুত তাফাসীর, ২য় খ. পৃঃ ১৩১)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিদের খারাপ আমলের কারণে সকলকে শাস্তি দেবেন না। যতক্ষণ না মানুষ তোমাদের মাঝে খারাপ কাজ দেখে। এ খারাপ কাজে বাধা দিতে সক্ষম থাকা সত্ত্বেও বাধা না দিলে সকলকে আল্লাহ তা‘আলা শাস্তি দেবেন। (মুসনাদ আহমাদ: ১/১৯২, সহীহ) যয়নাব (রাঃ) বলেন: নাবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম: হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আমাদের মাঝে সৎ লোক থাকা সত্ত্বেও কি আমাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হবে? তিনি বললেন: হ্যাঁ, যখন খারাপ কাজ বৃদ্ধি পাবে। (সহীহ বুখারী হা: ৩৩৪৬)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন সে সময়ের কথা যখন তোমরা সংখ্যায় স্বল্প ছিলে তোমাদেরকে জমিনে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল। ইচ্ছা করলে মানুষ তোমাদেরকে ছুঁ মেরে নিতে পারত। তখন আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তাঁর সাহায্য দ্বারা শক্তিশালী করেছেন। তোমাদেরকে পবিত্র বস্তু রিযিকস্বরূপ দিয়েছেন যাতে তোমরা তাঁর শুকরিয়া কর।
অতএব প্রতিটি মু’মিনের ঈমানী দায়িত্ব হল: যথাসম্ভব সৎ কাজের আদেশ প্রদান করা ও অসৎ কাজে বাধা দেয়া এবং আল্লাহ ও রাসূলের একচ্ছত্র আনুগত্য করা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মানুষ যে প্রান্তেই থাকুক না কেন আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ডাকে সাড়া দেয়া আবশ্যক। সাড়া দেয়ার অর্থ হল তাদের আনুগত্য করা।
২. আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।
৩. يا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلٰي دِينِكَ
এ দু‘আটি বেশি বেশি পড়া উচিত।
৪. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের বাধা না দিলে ফেতনা আমাদেরকে গ্রাস করবে, তখন দু‘আ করেও কোন কাজে আসবে না।
৫. নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা উচিত।