আল ফজর আয়াত ৩০
وَادْخُلِيْ جَنَّتِيْ ࣖࣖ ( الفجر: ٣٠ )
Wadkhulee jannatee (al-Fajr ৮৯:৩০)
English Sahih:
And enter My Paradise." (Al-Fajr [89] : 30)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আর আমার জান্নাতে প্রবেশ কর। (আল ফজর [৮৯] : ৩০)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর আমার জান্নাতে প্ৰবেশ কর।
3 Tafsir Bayaan Foundation
আর প্রবেশ কর আমার জান্নাতে।
4 Muhiuddin Khan
এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।
5 Zohurul Hoque
''আর প্রবেশ করো আমার জান্নাতে।’’
6 Mufti Taqi Usmani
আর দাখিল হয়ে যাও আমার জান্নাতে।
7 Mujibur Rahman
এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।
8 Tafsir Fathul Mazid
২১-৩০ নম্বর আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতগুলোতে কিয়ামতের ভয়াবহতা ও মানুষ সেদিন আফসোস করে যা বলবে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। كَلّاَ অর্থাৎ ইয়াতিমদের প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণ ও তাদের সম্পদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া কখনও উচিত নয়। বরং তোমাদের সামনে এমন দিন আগমন করছে যেদিন জমিন চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে। সেদিন তোমাদেরকে সেসব অন্যায় কর্মের বিচারের জন্য মুুখোমুখি হতে হবে। সুতরাং সেদিনকে তোমাদের ভয় করা উচিত।
ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন : مرة بعد مرة অর্থ একের পর এক কম্পন আসা ও সবকিছু সমান করে ফেলা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمٰوٰتُ وَبَرَزُوْا لِلهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ)
“যেদিন এ পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশসমূহও; এবং মানুষ উপস্থিত হবে আল্লাহর সম্মুখেÑযিনি এক, পরাক্রমশালী।” (সূরা ইবরাহীম ১৪: ৪৮)
(وَّجَا۬ءَ رَبُّكَ....)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা মানুষের ফায়সালা করার জন্য আগমন করবেন এবং প্রত্যেক আকাশের ফেরেশতারা সারিবদ্ধ হয়ে আসবে। আর জাহান্নামকেও ফেরেশতারা শেকলে বেঁধে নিয়ে আসবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে নিয়ে আসা হবে। তখন তার সত্তর হাজার লাগাম থাকবে আর প্রত্যেক লাগামে সত্তম হাজার ফেরেশতা থাকবে। তাহলে সর্বমোট ৭০০০০×৭০০০০=৪৯০০০০০০০০ জন ফেরেশতা জাহান্নাম টেনে নিয়ে আসবে। (সহীহ মুসলিম, তিরমিযী হা. ২৫৭৩)
আল্লাহ তা‘আলা বিচার ফায়সালার জন্য আগমন করবেন, তবে কিভাবে আসবেন, তার ধরণ কী হবে? তিনি আসলে আরশ খালি হয়ে যাবে কি-না ইত্যাদি বিষয় তিনি ছাড়া কেউ জানেন না। কারণ
(لَيْسَ كَمِثْلِه۪ شَيْءٌ ج وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ)
“কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা” (সূরা শুরা ৪২: ১১)
সুতরাং তিনি যেভাবে চান, যখন চান তাঁর মর্যাদার সাথে যেমন উপযোগী সেভাবেই আগমন করেন ও করবেন। যেমন হাদীসে এসেছে, তিনি প্রতি রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকী থাকতে দুনিয়ার আকাশে আসেন (সহীহ বুখারী হা. ১১৪৫)। এ বিষয়ে বলা যাবে না যে, আল্লাহ তা‘আলা আসেন না বরং তাঁর নির্দেশ আসে কিম্বা এসব রূপক অর্থে ব্যবহার হয়েছে।
(يَوْمَئِذٍ يَّتَذَكَّرُ الْإِنْسَانُ)
অর্থাৎ সেদিন মানুষ দুনিয়াতে তার কৃত ভাল মন্দ আমলের কথা স্মরণ করতে পারবে কিন্তু সে স্মরণ কোন কাজে আসবে না। আফসোস করে বলবে: হায়! যদি জীবনে ভাল আমল করতাম। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰي يَدَيْهِ يَقُوْلُ يٰلَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُوْلِ سَبِيْلًا)
“জালিম ব্যক্তি সেদিন নিজ দু’হাত দংশন করতে করতে বলবে, ‘হায়, আমি যদি রাসূলের সাথে সৎপথ অবলম্বন করতাম!” (সূরা ফুরকান ২৫: ২৭)
এ জন্য নাবী (সাঃ) বলেন : পাঁচটি জিনিসের পূর্বে পাঁচটি জিনিসকে গনিমত মনে কর। তার প্রথম হলো মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে। অর্থাৎ মারা যাওয়ার পূর্বে জীবনে আখিরাতের জন্য সৎ আমল করে পাথেয় গ্রহণ করে নাও। (ফাতহুল বারী ১৮ : ২২৪)
(فَیَوْمَئِذٍ لَّا یُعَذِّبُ عَذَابَھ۫ٓ اَحَدٌ)
অর্থাৎ কিয়ামতের দিন অবাধ্যতার শাস্তি আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে দেবেন তার চেয়ে কঠিনভাবে শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা আর কারো নেই। দুনিয়ার কোন শাস্তি আখেরাতের শাস্তির তুলনায় কিছুই নয়।
(وَّلَا یُوْثِقُ وَثَاقَھ۫ٓ اَحَدٌ)
অর্থাৎ পাপীদেরকে জাহান্নামের শেকল দ্বারা মজবুত করে বাঁধা হবে এবং মুখের ওপর দিয়ে হেঁচড়িয়ে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে। পক্ষান্তরে যারা মু’মিন তাদেরকে বলা হবে: হে প্রশান্ত আত্মার অধিকারী মু’মিনগণ! তোমরা প্রতিপালকের প্রতিদান ও সুখ সামগ্রীর নিকট ফিরে আস।
(رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ও আল্লাহ তা‘আলা আমলের প্রতিদানস্বরূপ যে সম্মাননার ব্যবস্থা করে রেখেছেন তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে ফিরে এস এবং আল্লাহ তা‘আলাও তার প্রতি সন্তুষ্ট। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(رَضِيَ اللّٰهُ عَنْهُمْ وَرَضُوْا عَنْهُ ط ذٰلِكَ لِمَنْ خَشِيَ رَبَّه۫)
“আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। এটা তার জন্য, যে তার প্রতিপালককে ভয় করে।” (সূরা বায়্যিনাহ ৯৮: ৮)
(فَادْخُلِيْ فِيْ عِبَادِيْ)
অর্থাৎ আমার সৎ বান্দাদের সাথে শামিল হয়ে জান্নাতে প্রবেশ কর। এ কথা বিচার শেষে বলা হবে। فِيْ عِبَادِيْ ‘আমার বান্দাদের মধ্যে’ অর্থ
في الصالحين من عبادي
আমার নেককার বান্দাদের মধ্যে। (কুরতুবী) যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَنُدْخِلَنَّهُمْ فِي الصّٰلِحِيْنَ)
“যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আমি অবশ্যই তাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করব।” (সূরা আনকাবূত ২৯: ৯) এজন্য বিগত নাবীরা দু‘আ করে বলতেন :
(رَبِّ هَبْ لِيْ حُكْمًا وَّأَلْحِقْنِيْ بِالصّٰلِحِيْن)
‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জ্ঞান দান কর এবং সৎকর্মপরায়ণদের মধ্যে শামিল কর।’ (সূরা শুআরা ২৬ : ৮৩) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি তার সাথেই থাকবে যাকে সে দুনিয়াতে ভালবাসতো। (সহীহ বুখারী হা. ৬১৬৯, সহীহ মুসলিম হা. ২৬৪০)
আল্লাহ আমাদেরকে সৎ সঙ্গ বেছে নিয়ে সৎ মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠার তাওফীক দান করুন। আমীন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা আগমন করবেন “আল্লাহ তা‘আলা আগমন করেন” এ গুণটির প্রমাণ পেলাম।
২. জাহান্নাম কত বিশাল তার অনুমান করা যায় টেনে আনার ফেরেশতাদের সংখ্যা দ্বারা।
৩. সেদিন কাফিররা আফসোস করবে কিন্তু আফসোস কোন কাজে আসবে না।
৪. মু’মিনদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা যে সম্মান ও মর্যাদার ব্যবস্থা করে রেখেছেন তা জানতে পারলাম।
9 Fozlur Rahman
এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।
10 Mokhtasar Bangla
৩০. আর তাদের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতকৃত আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।
11 Tafsir Ibn Kathir
২১-৩০ নং আয়াতের তাফসীর
এখানে কিয়ামতের ভয়াবহ অবস্থার বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা বলছেনঃ নিশ্চয়ই সেদিন জমীনকে নিচু করে দেয়া হবে, উচু নিচু জমীন সব সমান করে দেয়া হবে। সমগ্র জমীন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হবে। পাহাড় পবর্তকে মাটির সাথে সমতল করে দেয়া হবে। সকল সৃষ্ট জীব কবর থেকে বেরিয়ে আসবে। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি জগতের বিচারের জন্যে এগিয়ে আসবেন। সকল আদম সন্তানের নেতা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে সুপারিশের জন্যে অনুরোধ করা হবে। অবশ্য এর পূর্বে সমস্ত মাখলুক বড় বড় নবীদের প্রত্যেকের কাছে গিয়ে সুপারিশের আবেদন জানাবে। কিন্তু তারা নিজেদের অক্ষমতার কথা প্রকাশ করবেন। তারপর তারা মহানবী (সঃ)-এর কাছে এসে সুপারিশের আবেদন জানাবেন। তিনি বলবেনঃ হ্যা, আমি এ জন্যে প্রস্তুত।” নবী করীম (সঃ) তখন আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবেন। তিনি বলবেনঃ “হে আল্লাহ! আপনি লোকদের মধ্যে ফায়সালা করার জন্যে আসুন।” এটাই প্রথম সুপারিশ। এ আবেদন মাকামে মাহমুদ হতে জানানো হবে। অতঃপর আল্লাহ রাব্বল ইযযত ফায়সালার জন্যে এগিয়ে আসবেন। তিনি কিভাবে আসবেন সেটা তিনিই ভাল জানেন। ফেরেশতারাও তাঁর সামনে কাতারবন্দী হয়ে হাযির হবেন। জাহান্নামকেও নিয়ে আসা হবে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সেদিন জাহান্নামের সত্তর হাজার লাগাম থাকবে এবং প্রত্যেক লাগামে সত্তর হাজার ফেরেশতা থাকবে। তারা জাহান্নামকে টেনে নিয়ে আসবে।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে এটা ইমাম তিরমিযীও (রঃ) আবদুল্লাহ ইবনে আবদির রহমান দারিমী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন) সেদিন মানুষ তার নতুন পুরাতন সকল আমল বা কার্যাবলী স্মরণ করতে থাকবে। মন্দ আমলের জন্যে অনুশোচনা করবে, ভালো কাজ না করা বা কম করার কারণে দুঃখ আফসোস করবে। পাপ কর্মের জন্যে লজ্জিত হবে।
হযরত মুহাম্মদ ইবনে উমরাহ (রাঃ) নামক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর একজন সাহাবী হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ কোন বান্দা যদি জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত সিজদায় পড়ে থাকে এবং অল্লাহ তা'আলার পূর্ণ আনুগত্যে সারা জীবন কাটিয়ে দেয় তবুও সে কিয়ামতের দিন তার সকল পুণ্যকে তুচ্ছ ও সামান্য মনে করবে। তার একান্ত ইচ্ছা হবে যে, যদি সে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে গিয়ে আরো অনেক পুণ্য সঞ্চয় করতে পারতো।'
এরপর মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ সেইদিন আল্লাহর দেয়া আযাবের মত আযাব আর কেউ দিতে পারবে না। তিনি তার অবাধ্য ও অকৃতজ্ঞ বান্দাদেরকে যে ভয়াবহ শাস্তি প্রদান করবেন ঐরূপ শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই এবং তার বন্ধনের মত বন্ধনও কেউ করতে পারে না। ফেরেশতারা আল্লাহর অবাধ্য ও অকৃতজ্ঞ বান্দাদেরকে নিকৃষ্ট ধরনের শিকল এবং বেড়ী পরিধান করাবেন।
পাপী ও অন্যায়কারীদের পরিণাম বর্ণনা করার পর আল্লাহ তা'আলা এখন পুণ্যবানদের অবস্থা ও পরিণাম বর্ণনা করছেন। যে সব রূহ তৃপ্ত, শান্ত, পাক পবিত্র এবং সত্যের সহচর, মৃত্যুর সময়ে এবং কবর হতে উঠার সময় তাদেরকে বলা হবেঃ তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে, তার পুণ্য ও পারিশ্রমিকের কাছে, জান্নাত এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির কাছে ফিরে চলো। এই রূহ আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট এবং আল্লাহও এর প্রতি সন্তুষ্ট। এই রূহকে এতো দেয়া হবে যে, সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবে। তাকে বলা হবেঃ তুমি আমার বিশিষ্ট বান্দাদের মধ্যে শামিল হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এ আয়াত হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ)-এর শানে নাযিল হয়। হযরত বুরাইদাহ্ ইবনে হাসীব (রঃ) বলেন যে, এ আয়াত হযরত হামযাহ্ ইবনে আবদিল মুত্তালিব (রাঃ)-এর শানে অবতীর্ণ হয়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কিয়ামতের দিন প্রশান্ত চিত্ত আত্মাদেরকে বলা হবেঃ তোমরা তোমাদের সাথী অর্থাৎ দেহের নিকট ফিরে যাও যে দেহ পৃথিবীতে তোমরা ধারণ করেছিলে। তোমরা একে অন্যের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাও। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে এটাও বর্ণিত فَادْخُلِىْ فِى عِبَادِىْ ـ وَدْخُلِىْ جَنَّتِىْ আছে যে, তিনি এই ভাবে পাঠ করতেন। অর্থাৎ “হে প্রশান্ত চিত্ত রুহ্! তুমি আমার বান্দার মধ্যে অর্থাৎ তার দেহে চলে যাও।” ইকরামা (রাঃ) এবং সাকাবী (রঃ)-ও এ কথাই বলেছেন। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-ও এটাই পছন্দ করেছেন। কিন্তু এ উক্তিটি গারীব বা দুর্বল। প্রথম উক্তিটিই প্রকাশমান। যেহেতু আল্লাহ্ তাআলা বলেছেনঃ
ثُمَّ رُدُّوْۤا اِلَى اللّٰهِ مَوْلٰىهُمُ الْحَقِّ
অর্থাৎ “অতঃপর সকলকেই তাদের প্রকৃত প্রতিপালকের নিকট ফিরিয়ে নেয়া হবে।” (৬:৬২) আর এক জায়গায় আছেঃ
وَ اَنَّ مَرَدَّنَاۤ اِلَى اللّٰهِ
অথাৎ “আমাদের প্রত্যাবর্তন আল্লাহর নিকট।” (৪০:৪৩) অর্থাৎ তাঁর আদেশের প্রতি এবং তাঁরই সামনে।
মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন يٰٓاَيَّتُهَا النَّفْسُ ـ ـ ـ এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি তখন বলে ওঠেনঃ “হে আল্লাহ্র রাসূল (সঃ)! কি সুন্দর বাণী এটা।” তখন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “(হে আবু বকর (রাঃ)!) তোমাকেও এ কথাই বলা হবে।” অন্য এক রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর সামনে হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রাঃ) এ আয়াত পাঠ করেছিলেন। তখন হযরত আবুবকর (রাঃ) বলেছিলেন! “কী চমক্কার বাণী!” তখন নবী করীম (সঃ) তাঁকে বলেছিলেন, “হে আবূবকর (রাঃ)!) তোমাকে তোমার মৃত্যুর সময় ফেরেশতা এ কথাই বলবেন।”
হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) তায়েফে মৃত্যুবরণ করেন। ঐ সময় এমন এক পাখি এলো যা ইতিপূর্বে কখনো দেখা যায় নাই। পাখিটি এসে তাঁর মৃতদেহের মধ্যে প্রবেশ করলো। এর পরে পাখিটিকে আর বের হতে দেখা যায় নাই। তাঁকে দাফন করা হলে তাঁর কবরের এক কোণ হতে يٰٓاَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ـ ـ ـ এ আয়াতগুলির তিলাওয়াত শোনা গেল। কিন্তু কে তিলাওয়াত করেছেন তা জানা যায় নি। (এটা ইমাম ইবনু আবী হাতিম (রঃ) ও ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আবুহাশিম (রঃ) বলেনঃ রোম যুদ্ধে আমরা রোম রাজ্যে বন্দি হই। রোমক সম্রাট আমাদেরকে তার সামনে হাযির করে বলেঃ “তোমরা তোমাদের ধর্মমত পরিত্যাগ কর অথবা মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত হয়ে যাও।” তারপর একে একে প্রত্যেককে বলা হলোঃ “তোমরা নিজ ধর্ম ত্যাগ করে আমাদের ধর্ম গ্রহণ কর, অন্যথায় আমি জল্লাদকে আদেশ দিচ্ছি, সে এক্ষুণি তোমাদের দেহ দ্বিখন্ডিত করে দিবে।” তিন জন মুসলমান ধর্ম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়, কিন্তু চতুর্থ ব্যক্তি স্বধর্ম ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁর দেহ হতে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। তারপর ঐ মস্তক এক পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। মস্তক পানিতে ডুবে গেল। কিন্তু পরক্ষণেই ভেসে উঠে ধর্মত্যাগকারী তিন ব্যক্তির প্রতি তাকিয়ে তাদের নাম ধরে ধরে ডেকে বললোঃ শোনো, আল্লাহ্ তাআলা বলেছেনঃ
یٰۤاَیَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ـ ارْجِعِیْۤ اِلٰى رَبِّكِ رَاضِیَةً مَّرْضِیَّةً ـ فَادْخُلِیْ فِیْ عِبٰدِیْ ـ وَ ادْخُلِیْ جَنَّتِیْ
এতোটুকু বলার পরেই ঐ ছিন্ন মস্তক পুনরায় পানিতে ডুবে গেল। স্বয়ং বাদশাহ্ এবং তার সভাষদবর্গ এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করলো। খ্রিষ্টানদের উপর এ ঘটনাটি এতো প্রভাব বিস্তার করলো যে, তারা তখনই মুসলমান হয়ে যেতে চাচ্ছিল। এ অবস্থা দেখে বাদশাহ্ দরবারের সমাপ্তি ঘোষণা করলো। ধর্মত্যাগকারী ঐ তিন ব্যক্তি পুনরায় স্বধর্মে ফিরে আসলো। আমরা সবাই তখন থেকে বন্দী জীবন যাপন করছিলাম। অবশেষে খলিফা আবুজা'ফর মনসূরের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে মুক্তিপণ প্রেরণ করা হয়। ফলে আমরা মুক্তি লাভ করি।
হযরত আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি লোককে নিম্নের দুআটি পাঠ করতে বলেনঃ
اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَسْئَلُكَ نَفْسًا بِكَ مُطْمَئِنَّةً تُؤْمِنُ بِلِقَائِكَ وَتَرْضٰى بِقَضَائِكَ وَتَقْنَعْ بِعَطَائِكَ
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এমন নর্স চাচ্ছি যা আপনার সত্তার প্রতি পরিতৃপ্ত থাকে, আপনার সাথে সাক্ষাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে, আপনার ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকে এবং আপনার দানে তুষ্ট থাকে।” (এ হাদীসটি হাফিয ইবনু আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন)