নিশ্চয় আমরা কুরআন নাযিল করেছি [১] ‘লাইলাতুল কদরে’ [২] ;
সূরা সম্পর্কিত তথ্যঃ
কদরের এক অর্থ মাহাত্ম্য ও সম্মান। কেউ কেউ এ-স্থলে এ অর্থই নিয়েছেন। এর মাহাত্ম্য ও সম্মানের কারণে একে ‘লাইলাতুল-কদর’ তথা মহিমান্বিত রাত বলা হয়। কদরের আরেক অর্থ তাকদীর এবং আদেশও হয়ে থাকে। এ রাত্রিতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত ও বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাগণের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিফিক, বৃষ্টি ইত্যাদির পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাগণকে লিখে দেয়া হয়। [সা‘দী] পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, فِيْهَا يُفْرَقُ كُلُّ امْرٍحَىِىيْمٍ [সূরা আদ-দোখান; ৪] এ আয়াতে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, পবিত্র রাত্ৰে তাকদীর সংক্রান্ত সব ফয়সালা লিপিবদ্ধ করা হয়। এই রাত্ৰিতে তাকদীর সংক্রান্ত বিষয়াদি নিম্পন্ন হওয়ার অর্থ এ বছর যেসব বিষয় প্রয়োগ করা হবে, সেগুলো লওহে মাহফুয থেকে নকল করে ফেরেশতাগণের কাছে সোপর্দ করা। নতুবা আসল বিধি-লিপি আদিকালেই লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। [ইমাম নববী; শারহু সহীহ মুসলিম, ৮/৫৭]
-------------------------
[১] এখানে বলা হয়েছে, আমি কদরের রাতে কুরআন নাযিল করেছি। আবার অন্যত্র বলা হয়েছে, “রমযান মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে।” [সূরা আল-বাকারাহ; ১৮৫] এ থেকে জানা যায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হেরা গুহায় যে রাতে আল্লাহ্র ফেরেশ্তা অহী নিয়ে এসেছিলেন সেটি ছিল রামাদান মাসের একটি রাত। এই রাতকে এখানে কদরের রাত বলা হয়েছে। সূরা দেখানে এটাকে মুবারক রাত বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, “অবশ্যি আমরা একে একটি বরকতপূর্ণ রাতে নাযিল করেছি।” [সূরা আদ-দোখান; ৩] এ আয়াত থেকে পরিষ্কার জানা যায় যে, কুরআন পাক লাইলাতুল-কদরে অবতীর্ণ হয়েছে। এর এক অর্থ এই যে, সমগ্র কুরআন লওহে মাহফুয থেকে লাইলাতুল-কদরে অবতীর্ণ করা হয়েছে, অতঃপর জিবরাঈল একে ধীরে ধীরে তেইশ বছর ধরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে পৌঁছাতে থাকেন। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, এ রাতে কয়েকটি আয়াত অবতরণের মাধ্যমে কুরআন অবতরণের ধারাবাহিকতা সূচনা হয়ে যায়। এরপর অবশিষ্ট কুরআন পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে পূর্ণ তেইশ বছরে নাযিল করা হয়। [আদ্ওয়াউল বায়ান]
[২] কুরআন পাকের সুস্পষ্ট বর্ণনা দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় যে, লাইলাতুল-কদর রামাদান মাসে। কিন্তু সঠিক তারিখ সম্পর্কে আলেমগণের বিভিন্ন উক্তি রয়েছে যা সংখ্যায় চল্লিশ পর্যন্ত পৌঁছে। এ-সব উক্তির নির্ভুল তথ্য এই যে, লাইলাতুল-কদর রামাদান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে আসে; কিন্তু এরও কোন তারিখ নির্দিষ্ট নেই; বরং যে কোন রাত্রিতে হতে পারে। আবার প্রত্যেক রামাদানে তা পরিবর্তিতও হতে পারে। সহীহ হাদীসদৃষ্টে এই দশ দিনের বেজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল-কদর হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “রামাদানের শেষ দশকে লাইলাতুল-কদর অন্বেষণ কর।” [বুখারী; ২০২১]
অন্য বর্ণনায় আছে-“তোমরা তা শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে তালাশ কর।” [বুখারী; ২০২০, মুসলিম; ১১৬৯, তিরমিয়ী; ৭৯২] সুতরাং যদি লাইলাতুল-কদরকে রামাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে ঘূর্ণায়মান এবং প্রতি রামাদানে পরিবর্তনশীল মেনে নেয়া যায়, তবে লাইলাতুল-কদরের দিন-তারিখ সম্পর্কিত হাদীসসমূহের মধ্যে কোন বিরোধ অবশিষ্ট থাকে না। এটিই প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত। [ইবন হাজার; ফাতহুল বারী, ৪/২৬২-২৬৬]