৬৬-৬৭ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা খবর দিচ্ছেন যে, আকাশ ও জমিনে জীব ও জড় যা কিছু রয়েছে সমস্ত কিছুর মালিক ও স্রষ্টা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, কোনক্রমেই এগুলোর সৃষ্টি ও রাজত্বে আল্লাহ তা‘আলার সাথে কেউ অংশীদার নেই। সৃষ্টির পরিচালনা ও মালিকত্ব্ েআল্লাহ তা‘আলা একক ও অদ্বিতীয়। সুতরাং ইবাদত পাওয়ার প্রকৃত মালিক ও হকদার একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। কিন্তু যারা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের ইবাদত করে, অন্যকে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশী মনে করে তারা কোন প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। তারা শুধু ধারণা ও আন্দাজের ওপর ভিত্তি করে তাদের ইবাদত করে। যেমন অত্র সূরার ৩১ নং আয়াতে বলা হয়েছে। মানুষ যদি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিবেকে বিচার করে তাহলে অনুধাবণ করতে পারবে, আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে তারা যাদের ইবাদত করছে তারা কি আসলে ইবাদত পাওয়ার হকদার? তারা কোন কিছু সৃষ্টি করেনি, কাউকে কিছু দেয়ার ক্ষমতা রাখে না, কারো উপকার করার ক্ষমতা রাখে না, তাহলে কী জন্য তাদের ইবাদত করব? সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যদের ইবাদত করে, তাদের ধারণা এরা আল্লাহ তা‘আলার ওলী, এরা অনেক ক্ষমতা রাখে, তাদের কাছে চাইলে হয়তো অনেক উপকার করে দিতে পারবে। আমরা পাপ করতে করতে বড় গুনাহগার বান্দা হয়ে গেছি, তাই সরাসরি আল্লাহ তা‘আলার কাছে চাইলে তিনি হয়তো দেবেন না, আর এরা আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্যশীল বান্দা, তাই তাদের মাধ্যমে চাই। এসব হল ধারণা, যা সত্যের কোন উপকারে আসে না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা সত্য জানিয়ে দিয়েছেন, বান্দা আমার কাছে চাইলে আমি তা কবূল করি। বান্দা ক্ষমা চাইলে আমি ক্ষমা করি, বান্দা অসুস্থ হলে সুস্থতা দান করি, ইত্যাদি সব আল্লাহ তা‘আলা করে থাকেন। সুতরাং অনুমান ও ধারণা করে নয়, বরং ইবাদত করতে হবে দলীল প্রমাণের সাথে।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আকাশ ও জমিনের মত দিন-রাতের স্রষ্টা। তিনি রাতকে সৃষ্টি করেছেন মানুষের বিশ্রামের জন্য। এ জন্য রাতকে অন্ধকার করে দিয়েছেন, যাতে ঘুমাতে পারে, আরাম নিতে পারে। আলোকজ্জল থাকলে তা পরোপূরি হাসিল হতো না। বর্তমান বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে দিনের বেলা ঘুমানো মানুষের জন্য ক্ষতিকর। আবার দিনকে করে দিয়েছেন আলোকময়। যাতে মানুষ কাজ-কর্ম, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত ও অন্যান্য সকল কিছু করতে পারে। এছাড়াও দিনের আলোর মধ্যে রয়েছে অনেক হিকমত, যেমন দিনের আলো না হলে কোন উদ্ভিদ জন্মাতো না, দিনের আলো না হলে মানুষ ফসল ফলাতে পারত না ইত্যাদি। সুতরাং এসব সৃষ্টির মধ্যে যারা চিন্তাশীল ও দেখে শুনে চলে তাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, রয়েছে শিক্ষা। এগুলো এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি, এগুলোর একজন স্রষ্টা রয়েছেন, সে স্রষ্টা হলেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. এই আয়াতগুলো আল্লাহ তা‘আলার রব হবার প্রমাণ বহণ করে।
২. আল্লাহ তা‘আলার কোন কিছুতে কারো কোন অংশীদার নেই।
৩. দিনের আলো ও রাতের অন্ধকারে বিশাল হিকমত নিহিত রয়েছে।