মূসার উপর তার জাতির মধ্য হতে গুটিকয়েক লোক ব্যতীত কেউ ঈমান আনেনি ফির‘আওন ও তার প্রধানদের নির্যাতনের ভয়ে। বাস্তবিকই ফির‘আওন দুনিয়াতে খুবই উদ্ধত ছিল, আর সে ছিল অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত।
English Sahih:
But no one believed Moses, except [some] offspring [i.e., youths] among his people, for fear of Pharaoh and his establishment that they would persecute them. And indeed, Pharaoh was haughty within the land, and indeed, he was of the transgressors.
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
অতঃপর ফিরআউন ও তার পারিষদবর্গ নির্যাতন করবে, এই আশঙ্কায় মূসার প্রতি তার গোত্রের[১] লোকদের মধ্যে শুধু অল্প সংখ্যক লোক ব্যতীত আর কেউ বিশ্বাস স্থাপন করল না।[২] বাস্তবিকপক্ষে ফিরআউন ছিল সেই দেশে উদ্ধত, আর অবশ্যই সে ছিল সীমালংঘনকারীদের একজন। [৩]
[১] قَوْمِهِ -এর 'ه' (তার) সর্বনাম দ্বারা কাকে বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে উলামাগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ 'তার' বলতে মূসা (আঃ)-কে ধরেছেন। কারণ উক্ত আয়াতে সর্বনামের পূর্বে তাঁরই নাম উল্লেখ হয়েছে। অর্থাৎ, মূসা (আঃ)-এর গোত্র থেকে কিছু মানুষ ঈমান এনেছিল। কিন্তু ইমাম ইবনে কাসীর ও অন্যান্যরা 'তার' বলতে ফিরআউনকে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ ফিরআউনের সম্প্রদায় থেকে কিছু মানুষ ঈমান এনেছিল। এর প্রমাণ হল, বনী ইস্রাঈলরা তো একজন রসূল ও পরিত্রাতার অপেক্ষায় ছিল এবং মূসা (আঃ) রূপে তারা তা পেয়ে গিয়েছিল। আর সেই হিসেবে (কারূন) ছাড়া সকল বনী ইস্রাঈল তাঁর প্রতি ঈমান রাখত। ফলে এটাই সঠিক যে ذُرِّيَّةٌ مِنْ قَوْمِهِ (তার গোত্রের কিছু লোক) থেকে উদ্দেশ্য হল ফিরআউনী সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ, যারা মূসা (আঃ)-এর প্রতি ঈমান এনেছিল; তার মধ্যে তার স্ত্রী আসিয়াও ছিলেন।
[২] কুরআন কারীমের এই পরিষ্কার বর্ণনা থেকে এই কথাও বুঝা যাচ্ছে যে, এই অল্প সংখ্যক লোক যারা ঈমান এনেছিল, তারা ফিরআউনী সম্প্রদায়ের লোক ছিল। কারণ ফিরআউন, তার দরবারী ও শাসকবর্গের তরফ থেকে শাস্তির ভয় তাদেরই ছিল। যদিও বনী ইস্রাঈলরা ফিরআউনের দাসতত্ত্ব ও অধীনত্বের লাঞ্ছনা বেশ কিছু দিন থেকে সহ্য করে আসছিল। কিন্তু মূসা (আঃ)-এর প্রতি ঈমান আনার সাথে না তার কোন সম্পর্ক ছিল, আর না এই কারণে অতিরিক্ত শাস্তির সম্ভাবনা ছিল।
[৩] আর মু'মিনগণ তার সীমালংঘনকারী ও অত্যাচারী স্বভাব থেকে ভীত-সন্ত্রস্ত ছিলেন।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
কিন্তু ফির’আউন এবং তার পরিষদবর্গ নির্যাতন করবে এ আশংকায় মূসার সম্প্রদায়ের এক ছোট্ট নওজোয়ান দল [১] ছাড়া আর কেউ তার প্রতি ঈমান আনেনি। আর নিশ্চয় ফির’আউন ছিল যমীনে পরাক্রমশীল এবং সে নিশ্চয় ছিল সীমালংঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত [২]।
[১] কুরআনের মূল বাক্যে (ذُرِّيَّةٌ) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর মানে সন্তান-সন্ততি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এখানে যে মুষ্টিমেয় যুবকদেরকে ঈমান এনেছিল বলে জানানো হলো এরা কারা? তারা কি ফিরআউনের বংশের? নাকি মূসা আলাইহিসসালামের বংশের লোক? আল্লামা ইবনে কাসীর রাহেমাহুল্লাহ প্রথম মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং এ মতের সমর্থনে বিভিন্ন প্রমাণাদি পেশ করেছেন। পক্ষান্তরে আল্লামা ইবনে জরীর আত-তাবার রাহেমাহুল্লাহ ও আব্দুর রহমান ইবন নাসের আস-সাদী দ্বিতীয় মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। দুটি মতের স্বপক্ষেই যুক্তি রয়েছে। তবে আয়াত থেকে একটি বিষয় বুঝা যাচ্ছে যে, যারাই তখন ঈমান এনেছিল তারা ছিল অল্প বয়স্ক যুবক। [ইবন কাসীর; সা’দী]
কুরআনের একথা বিশেষভাবে সুস্পষ্ট করে পেশ করার কারণ সম্ভবত এই যে, মক্কার জনবসতিতেও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সহযোগিতা করার জন্য যারা এগিয়ে এসেছিলেন তারাও জাতির বয়স্ক ও বয়োবৃদ্ধ লোক ছিলেন না বরং তাদের বেশিরভাগই ছিলেন বয়সে নবীন।
[২] আয়াতে (مُسۡرِفِیۡنَ) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, সীমা অতিক্রমকারী। সে সত্যিকার অর্থেই সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিল। কারণ সে কুফরির সীমা অতিক্রম করেছিল। সে ছিল দাস, অথচ দাবী করল প্রভুত্বের। [কুরতুবী]
3 Tafsir Bayaan Foundation
বস্তুতঃ মূসার প্রতি তার স্বগোত্রীয় লোকদের মধ্যে (প্রথমে) শুধু অল্প সংখ্যক লোকই ঈমান আনল, তাও ফির‘আউন ও তার প্রধানবর্গের এই ভয়ে যে, তারা তাদেরকে নির্যাতন করে; আর বাস্তবিক পক্ষে ফির‘আউন সেই দেশে (রাজ্য) ক্ষমতা রাখত, আর এটাও ছিল যে, সে (ন্যায়ের) সীমাতিক্রম করে ফেলতো।
4 Muhiuddin Khan
আর কেউ ঈমান আনল না মূসার প্রতি তাঁর কওমের কতিপয় বালক ছাড়া-ফেরাউন ও তার সর্দারদের ভয়ে যে, এরা না আবার কোন বিপদে ফেলে দেয়। ফেরাউন দেশময় কর্তꦣ2499;ত্বের শিখরে আরোহণ করেছিল। আর সে তার হাত ছেড়ে রেখেছিল।
5 Zohurul Hoque
কিন্তু তাঁর সম্প্রদায়ের সন্তানসন্ততি ব্যতীত আর কেউ মূসার প্রতি বিশ্বাস করে নি ফিরআউন ও তাদের পরিষদবর্গের ভয়ে পাছে তারা তাদের নির্যাতন করে। আর ফিরআউন দেশের মধ্যে অবশ্যই ছিল মহাপ্রতাপশালী, আর সে নিশ্চয়ই ছিল ন্যায়লঙ্ঘন-কারীদের অন্তর্ভুক্ত।