হিজর আয়াত ২৫
وَاِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَحْشُرُهُمْۗ اِنَّهٗ حَكِيْمٌ عَلِيْمٌ ࣖ ( الحجر: ٢٥ )
Wa inna Rabbaka Huwa yahshuruhum; innahoo Hakeem 'Aleem (al-Ḥijr ১৫:২৫)
English Sahih:
And indeed, your Lord will gather them; indeed, He is Wise and Knowing. (Al-Hijr [15] : 25)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
অবশ্যই তোমার প্রতিপালক তিনি সববাইকে একত্রিত করবেন, তিনি মহাবিজ্ঞানী, সর্বজ্ঞ। (হিজর [১৫] : ২৫)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকই তাদেরকে সমবেত করবেন; নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর নিশ্চয় আপনার রব তাদেরকে সমবেত করবেন; নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ [১]।
[১] অর্থাৎ তার অপার কর্মকুশলতা ও প্রজ্ঞার বলেই তিনি সবাইকে একত্র করবেন। আবার তাঁর জ্ঞানের পরিধি এত ব্যাপক ও বিস্তৃত যে তার নাগালের বাইরে কেউ নেই। বরং পূর্ববতী ও পরবতী কোন মানুষের মাটি হয়ে যাওয়া দেহের একটি কণাও তার কাছ থেকে হারিয়ে যেতে পারে না। তাই যে ব্যক্তি আখেরাতের জীবনকে দূরবতী ও অবাস্তব মনে করে সে মূলত আল্লাহর প্রজ্ঞা ও কুশলতা সম্পর্কে বেখবর। আর যে ব্যক্তি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, মরার পরে যখন আমাদের মৃত্তিকার বিভিন্ন অণু-কণিকা বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে তখন আমাদের কিভাবে পুনর্বার জীবিত করা হবে, সে আসলে আল্লাহর জ্ঞান সম্পর্কে অজ্ঞ। এজন্যই যারা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে তারা আল্লাহর কুদরতের সাথে শির্ক করে। এটা শির্ক ফির রবুবিয়াহ। [দেখুন, আশশির্ক ফিল কাদীম ওয়াল হাদীস]
3 Tafsir Bayaan Foundation
আর নিশ্চয় তোমার রব তাদেরকে একত্র করবেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাময় ও সর্বজ্ঞানী।
4 Muhiuddin Khan
আপনার পালনকর্তাই তাদেরকে একত্রিত করে আনবেন। নিশ্চয় তিনি প্রজ্ঞাবান, জ্ঞানময়।
5 Zohurul Hoque
আর নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু -- তিনি তাদেরকে একত্রে সমবেত করবেন। তিনি নিশ্চয়ই পরমজ্ঞানী, সর্বজ্ঞাতা।
6 Mufti Taqi Usmani
নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালকই তাদেরকে হাশরে একত্র করবেন। নিশ্চয়ই তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
7 Mujibur Rahman
তোমার রাব্বই তাদেরকে সমবেত করবেন; তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।
8 Tafsir Fathul Mazid
২১-২৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা সংবাদ দিচ্ছেন, সব কিছুর মালিক একমাত্র তিনি। প্রত্যেক বস্তুর ভাণ্ডার তাঁর হাতে। সেখান থেকে যখন যতটা ইচ্ছা তিনি অবতীর্ণ করেন। তাঁর হিকমত ও নিপুণতা তিনিই জানেন। বান্দার কল্যাণ সম্পর্কে তিনিই সম্যক অবগত। কেউ خزائن দ্বারা বৃষ্টি অর্থ নিয়েছেন। কারণ বৃষ্টিই শস্য উৎপাদনের মূল উপাদান। কিন্তু এখানে সঠিক অর্থে পৃথিবীর সকল ভাণ্ডারকে বুঝানো হয়েছে। সে সকল আল্লাহ তা‘আলা নিজ ইচ্ছায় দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তা‘আলার এ ভাণ্ডার থেকে তিনি নির্ধারিত পরিমাণ মানুষকে দিয়ে থাকেন। এর অন্যতম একটি হিকমত হল
(وَلَوْ بَسَطَ اللّٰهُ الرِّزْقَ لِعِبَادِه۪ لَبَغَوْا فِي الْأَرْضِ وَلٰكِنْ يُّنَزِّلُ بِقَدَرٍ مَّا يَشَا۬ءُ ط إِنَّه۫ بِعِبَادِه۪ خَبِيْرٌۭ بَصِيْرٌ)
“আল্লাহ তাঁর (সকল) বান্দাদের রুযী বাড়িয়ে দিলে তারা পৃথিবীতে অবশ্যই সীমালঙ্ঘন করত; কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছামত পরিমাণেই দিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক জানেন ও দেখেন।” (সূরা শুরা ৪২:২৭)
لَوَاقِحَ বৃষ্টিসঞ্চারি বায়ু বা ভাপরী বায়ু, যেহেতু বায়ু বৃষ্টিভর্তি মেঘমালাকে বহন করে তাই তাকে لَوَاقِحَ বলা হয়। যেমন لقحة এমন উটনীকে বলা হয় যে পেটে বাচ্চা বহন করে নিয়ে চলে। এ বৃষ্টি যা আল্লাহ তা‘আলা বর্ষণ করেন তা তিনি নিজের কাছে জমা করে রাখতে সক্ষম, তাঁর দয়া যে তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করে বিভিন্ন ঝর্ণা, কূপ ও নদী-নালার মাধ্যমে সংরক্ষণ করে রাখেন। তিনি ইচ্ছা করলে পানি ভূগর্ভে নিয়ে যেতে পারতেন ফলে মানুষ নিচ থেকেও পানি সংগ্রহ করতে পারত না। তিনি ইচ্ছা করলে পানি লবণাক্ত করে দিতে পারতেন কিন্তু এসব তাঁর দয়া।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَفَرَءَیْتُمُ الْمَا۬ئَ الَّذِیْ تَشْرَبُوْنَﮓﺚ ءَاَنْتُمْ اَنْزَلْتُمُوْھُ مِنَ الْمُزْنِ اَمْ نَحْنُ الْمُنْزِلُوْنَﮔ لَوْ نَشَا۬ئُ جَعَلْنٰھُ اُجَاجًا فَلَوْلَا تَشْکُرُوْنَﮕ )
“তোমরা যে পানি পান কর সে বিষয়ে তোমরা চিন্তা করছ কি? তোমরাই কি তা মেঘ হতে বর্ষণ কর, না আমি বর্ষণ করি। আমি ইচ্ছা করলে তাকে লবণাক্ত বানাতে পারি। তবুও তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না কেন?” (সূরা ওয়াকিয়াহ ৫৬:৬৮-৭০)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(هُوَ الَّذِيْٓ أَنْزَلَ مِنَ السَّمَا۬ءِ مَا۬ءً لَّكُمْ مِّنْهُ شَرَابٌ وَّمِنْهُ شَجَرٌ فِيْهِ تُسِيْمُوْنَ)
“তিনিই আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন। তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মায় উদ্ভিদ যাতে তোমরা পশু চারণ করে থাকো।” (সূরা নাহল ১৬:১০)
(وَمَآ اَنْتُمْ لَھ۫ بِخٰزِنِیْنَ)
-এ সমস্ত ভাণ্ডার মানুষের কাছে নেই, তা কেবলমাত্র আল্লাহ তা‘আলার নিকট। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلِلّٰهِ خَزَآئِنُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْض)
“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ধন-ভাণ্ডার তো আল্লাহরই।” (সূরা মুনাফিকূন ৬৩:৭)
(وَاِنَّا لَنَحْنُ نُحْی۪ وَنُمِیْتُ)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেছেন যে, তিনিই মানুষকে জীবন দান করেন এবং তিনিই মানুষকে মৃত্যু দান করেন। তিনি ছাড়া কেউ জীবন-মৃত্যুর মালিক নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّا نَحْنُ نُحْيِيْ وَنُمِيْتُ وَإِلَيْنَا الْمَصِيْرُ)
“আমিই জীবিত করি, আর মৃত্যুও ঘটাই এবং সকলেই ফিরে আসবে আমারই দিকে।” (সূরা ক্বাফ ৫০:৪৩)
জীবন ও মৃত্যুর মালিক কেবল আল্লাহ, অন্য কেউ নয়। আর তিনিই চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(إِنَّا نَحْنُ نَرِثُ الْأَرْضَ وَمَنْ عَلَيْهَا وَإِلَيْنَا يُرْجَعُوْنَ)
“নিশ্চয়ই পৃথিবীর ও তার ওপরে যারা আছে তাদের চূড়ান্ত মালিকানা আমারই রইবে এবং তারা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে” (সূরা মারইয়াম ১৯:৪০)
এখানে উত্তরাধিকারী কথার অর্থ হচ্ছে যখন সমস্ত মাখলুক শেষ হয়ে যাবে তখন একমাত্র তিনিই এই আকাশে ও জমিনে অবশিষ্ট থাকবেন এবং তিনিই সকলকে তাদের মৃত্যুর পর একত্রিত করবেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পৃথিবীতে যত কিছু অবতীর্ণ করা হয় সব কিছুর ধনভাণ্ডার আল্লাহ তা‘আলার নিকট। মানুষ কোন কিছুরই প্রকৃত মালিক নয়।
২. আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করা মানুষের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার একটি অনুগ্রহ।
৩. জীবন ও মরণ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার হাতে।
৪. মৃত্যুর পর সকল মানুষকে বিচারের জন্য একত্রিত করা হবে।
9 Fozlur Rahman
তোমার প্রভুই তাদেরকে একত্রিত করবেন। নিশ্চয়ই তিনি প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী।
10 Mokhtasar Bangla
২৫. হে রাসূল! আপনার প্রতিপালক কিয়ামতের দিন সবাইকে একত্রিত করবেন। যাতে নেককারকে নেকের এবং বদকারকে বদের প্রতিদান দিতে পারেন। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর পরিকল্পনায় প্রজ্ঞাময়, সবজান্তা। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন নয়।
11 Tafsir Ibn Kathir
২১-২৫ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআলা খবর দিচ্ছেন যে, সমস্ত জিনিসের তিনি একাই মালিক। প্রত্যেক কাজই তাঁর কাছে সহজ। সমস্ত কিছুর ভাণ্ডার তাঁর কাছে বিদ্যমান রয়েছে। যেখানে যখন যতটা ইচ্ছা তিনি অবতীর্ণ করে থাকেন। তাঁর হিকমত ও নিপুণতা তিনিই জানেন। বান্দার কল্যাণ সম্পর্কে তিনিই সম্যক অবগত। এটা একমাত্র তাঁর মেহেরবানী, নচেৎ এমন কে আছে যে তাকে বাধ্য করতে বা তার উপর জোর খাটাতে পারে? হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, প্রতি বছর বৃষ্টি বরাবর বর্ষিত হতেই আছে। হাঁ, তবে বন্টন আল্লাহ তাআলার হাতে রয়েছে। অতঃপর তিনি এই আয়াতটিই পাঠ করেন। হাকীম ইবনু উয়াইনা (রঃ) হতেও এই উক্তিই বর্ণিত আছে। তিনি বলেনঃ “বৃষ্টির সাথে এতো ফেরেস্তা অবতীর্ণ হন যাদের সংখ্যা সমস্ত মানবও দানব অপেক্ষা বেশী। তাঁরা বৃষ্টির এক একটি ফোঁটার খেয়াল রাখেন যে, ওটা কোথায় বর্ষিত হচ্ছে এবং তা থেকে কি উৎপন্ন হচ্ছে।”
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলার ভাণ্ডার হচ্ছে কালাম বা কথা মাত্র। সুতরাং যখন তিনি কোন কিছুর ইচ্ছা করেন তখন বলেনঃ ‘হও, তখন হয়ে যায়।” (এ হাদীসটি বাযয়ার (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এর একজন বর্ণনাকারী হচ্ছেন আগনাব। তিনি খুব বিশ্বাসযোগ্য বর্ণনাকারী নন)
মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি মেঘমালাকে বৃষ্টি দ্বারা ভারী করে দিই। তখন তার থেকে বৃষ্টি বর্ষণ হতে শুরু করে। এই বাতাসই প্রবাহিত হয়ে গাছপালাকে সিক্ত করে দেয়। ফলে ওগুলিতে পাতা ও কুঁড়ি ফুটে ওঠে।” এটাও লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, এখানে رِيٰحَ لَوَاقِحَ বলা হয়েছে অর্থাৎ এর বিশেষণকে বহু বচন ব্যবহার করা হয়েছে। আর বৃষ্টি শূন্য বায়ুকে বলা হয়েছে। অর্থাৎ رِيْح عَقِيْم এর বিশেষণকে একবচন রূপে ব্যবহার করা হয়েছে। বৃষ্টি পূর্ণ বায়ুর বিশেষণকে বহু বচনরূপে ব্যবহারের উদ্দেশ্য হচ্ছে বেশী ফলদায়ক হওয়া। বৃষ্টি বহন কম পক্ষে দুটি জিনিস ছাড়া সম্ভব নয়। বাতাস প্রবাহিত হয় এবং তা আকাশ থেকে পানি উঠিয়ে নেয়, আর মেঘমালাকে পরিপূর্ণ করে দেয়। এক বায়ু এমন হয় যা যমীনের উৎপাদন শক্তি সৃষ্টি করে। আর এক বায়ু। মেঘমালাকে এদিকে ওদিকে চালিয়ে নিয়ে যায়। আর এক বায়ু ওগুলিকে একত্রিত করে স্তরে স্তরে সাজিয়ে নেয়। আর এক বায়ু ওগুলিকে পানি দ্বারা ভারী করে দেয়। আর এক বায়ু এমন হয় যে, তা গাছপালা ও বৃক্ষরাজিকে ফলদানকারী হওয়ার যোগ্য করে তোলে।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “দক্ষিণা বায়ু জান্নাত হতে প্রবাহিত হয়ে থাকে এবং তাতে জনগণের উপকার লাভ হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম বনুজারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এর ইসনাদ দুর্বল)
হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “বাতাস সৃষ্টির সাত বছর পরে আল্লাহ তাআলা জান্নাতে এক বায়ু সৃষ্টি করেছেন যা একটি দরজা দ্বারা বন্ধ করা আছে। ঐ দরজা দ্বারাই তোমাদের কাছে বায়ু পৌছে থাকে। যদি ঐ দরজাটি খুলে দেয়া হয় তবে যমীন ও আসমানের সমস্ত জিনিস ওলট পালট হয়ে যাবে। আল্লাহর কাছে ওর নাম হচ্ছে আযইয়াব। তোমরা ওকে দক্ষিণা বায়ু বলে থাকো।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু বকর আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর আল হুমাইদী (রঃ) তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)
এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি তোমাদেরকে তা পান করতে দিই।' অর্থাৎ আমি তোমাদের উপর মিষ্টি পানি বর্ষণ করি, যাতে তোমরা তা পান করতে পার এবং অন্য কাজে লাগাতে পার। আমি ইচ্ছা করলে ওকে তিক্ত ও লবণাক্ত করে দিতে পারি। যেমন সূরায়ে ওয়াকিয়ার আয়াতে রয়েছেঃ “তোমরা যে পানি পান কর তা সম্পর্কে কি তোমরা চিন্তা করেছো? তোমরাই কি তা মেঘ হতে নামিয়ে আন, না আমি তা বর্ষণ করি? আমি ইচ্ছা করলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি, তবুও কেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না?” আর এক জায়গায় রয়েছেঃ “তিনিই আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন; তাতে তোমাদের জন্যে রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মে উদ্ভিদ যাতে তোমরা পশু চারণ করে থাকো ।”
وَمَاۤ اَنْتُمْ لَهٗ بِخٰزِنِیْنَ (ওর ভাণ্ডার তোমাদের কাছে নেই)। সুফইয়ান সাওয়ারী (রঃ) এর ভাবার্থ করেছেনঃ “তোমরা ওকে আবদ্ধকারী নও।” আর এর ভাবার্থ এও হতে পারে। “তোমরা ওর রক্ষক নও। বরং আমিই তা বর্ষণ করি ও রক্ষা করে থাকি। আমি ইচ্ছা করলে ওটা যমীনে ঢুকিয়ে দিতে পারি। এটা শুধু মাত্র আমার করুণা যে, আমি ওকে বর্ষণ করি, রক্ষা করি, মিষ্ট করি এবং স্বচ্ছ ও নির্মল করি, যেমন তোমরা নিজেরা পান কর এবং তোমাদের জন্তু গুলিকে পান করাও। আর তা জমিতে সেচন কর, বাগান তৈরী কর এবং অন্যান্য প্রয়োজনে ব্যবহার কর।”
মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমিই জীবন দান করি ও মৃত্যু ঘটাই এবং আমিই চূড়ান্ত মালিকানার অধিকারী। অর্থাৎ সৃষ্টির সূচনা আমিই করেছি এবং পুনরায় সৃষ্টি করতে আমিই সক্ষম। আমিই সব কিছু অস্তিত্বহীনতা থেকে অস্তিত্বে আনয়ন করেছি। আবার সবকে আমি অস্তিত্বহীন করে দেবো। এরপর কিয়ামতের দিন সবকে উঠাবো। যমীন ও যমীনবাসীদের ওয়ারিস আমিই। সবকে-ই আমার কাছে ফিরে আসতে হবে। আমার জ্ঞানের কোন শেষ নেই। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবারই খবর আমি রাখি।
পূর্ববর্তীদের দ্বারা এই যামানার পূর্ববর্তী সকল লোককেই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ হযরত আদম (আঃ) পর্যন্ত সবাই। আর পরবর্তীদের দ্বারা এই যুগ এবং এই যুগের পরবর্তী সমস্ত যুগের লোককে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত যত লোক আসবে সবাই। ইকরামা (রাঃ) , মুজাহিদ (রঃ), যাহহাক (রঃ), কাতাদা (রঃ) মুহাম্মদ ইবনু কা'ব (রঃ), শাবী (রঃ) প্রভৃতি গুরুজন হতে এইরূপ বর্ণিত আছে। এটাই ইমাম ইবনু জারীরের (রঃ) পছন্দনীয় মত মারওয়ান ইবনুল হাকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, কতকগুলি লোক (নামাযে) স্ত্রী লোকদের কারণে পিছনের কাতারে থাকতো। তখন আল্লাহ তাআ’লা وَلَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَقْدِمِیْنَ مِنْكُمْ وَ لَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَاْخِرِیْنَ এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। (এটা ইবনু জারীর (রঃ) স্বীয় তাফসীরের বর্ণনা করেছেন)
এ সম্পর্কে একটি অত্যন্ত গারীব বা দুর্বল হাদীসও বর্ণিত হয়েছে। তা এই যে, হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “একটি অত্যন্ত সুন্দরী মহিলা নবীর (সঃ) পিছনে নামায পড়তে আসতো।” হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর শপথ! আমি ওর মত (সুন্দরী মহিলা কখনো দেখি নাই। কতকগুলি মুসলমান নামায পড়ার সময় এই উদ্দেশ্যে সামনে বেড়ে যেতেন যে, যেন তাকে (মহিলাটিকে দেখতে না পান। আর কতকগুলি লোক পিছনে সরে আসতো। অতঃপর যখন তারা সিজদা করতো তখন তাদের হাতের নীচে দিয়ে তার দিকে তাকাতো।” ঐ সময় আল্লাহ তাআলা وَ لَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَقْدِمِیْنَ مِنْكُمْ وَ لَقَدْ عَلِمْنَا الْمُسْتَاْخِرِیْنَ এই আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। (এটা ইবনু জারীর (রঃ) স্বীয় তাফসীরে, ইমাম আহমদ (রঃ) তাঁর মুসনাদে, ইবনু আবি হাতিম (রঃ) স্বীয় তাফসীরে, এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) ও ইমাম নাসায়ী (রঃ) তাঁদের সুনান গ্রন্থের কিতাবুত তাফসীরে বর্ণনা করেছেন। তবে এতে কঠিন নাকারাত বা অস্বীকৃতি রয়েছে)
এই আয়াতের ব্যাপারে আবুল জাওযার (রঃ) -এর উক্তি বর্ণিত আছে যে, এরা হচ্ছে ওরাই যারা নামাযের কাতারসমূহে আগে বেড়ে যায় এবং পিছনে সরে আসে। (এটা আবদুর রায্যাক (রঃ) বর্ণনা করেছেন) এটা শুধু মাত্র আবুল জাওযার (রঃ)-এর উক্তি। এতে হযরত ইবনু আব্বাসের (রাঃ) কোন উল্লেখ নেই। ইমাম তিরমিযী (রঃ) বলেন, এটাই বেশী সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী।
মুহাম্মদ ইবনু কা'বের (রঃ) সামনে আউন ইবনু আবদিল্লাহ (রঃ) এই ভাবার্থ বর্ণনা করলে তিনি বলেনঃ “ভাবার্থ এটা নয়। বরং অগ্রবর্তীদের দ্বারা বুঝানো হয়েছে এ লোকদেরকে যারা মৃত্যুবরণ করেছে। আর পরবর্তীদের দ্বারা বুঝানো হয়েছে তাদেরকে যারা এখন সৃষ্ট হয়েছে এবং পরে সৃষ্ট হবে। আর তোমার প্রতিপালকই তাদেরকে সমবেত করবেন; তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।” এ কথা শুনে হযরত আউন (রাঃ) মুহাম্মদ ইবনু কা'বকে (রঃ) লক্ষ্য করে বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা আপনাকে তাওফীক ও জাযায়ে খায়ের দান করুন।”