৬৬-৬৭ নং আয়াতের তাফসীর:
... الْأَنْعَامِ তথা চতুষ্পদ জন্তু যেমন উট, গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির মাঝে রয়েছে মানুষের জন্য শিক্ষা। এসব জন্তু যা কিছু খায় তা পেটে চলে যায়, আর তা থেকে দূধ, রক্ত, গোবর ও প্রস্রাব তৈরি হয়। রক্ত শিরা-উপশিরায়, দুধ স্তনে, অনুরূপ গোবর ও প্রস্রাব নিজ নিজ জায়াগায় চলে যায়। দুধের সাথে রক্ত মিশ্রিত হয় না, গোবর ও প্রস্রাবও মিশ্রণ হয় না, বরং প্রত্যেকটাকে আলাদা আলাদা পথে বের করে দুধকে নির্মল সাদা ও পরিস্কার করে বের করে আনেন। এত সূক্ষ্ম ও নিপুণতার সাথে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ কি সৃষ্টি করতে পারে? না, আল্লাহ ছাড়া কেউ সৃষ্টি করতে পারে না। সুতরাং যে আল্লাহ তা‘আলা এত সুক্ষ্ম করে সৃষ্টি করতে পারেন তিনি ছাড়া কি অন্য কেউ ইবাদত পাওয়ার হকদার? না, অন্য কেউই পেতে পারে না। তাই সকল ইবাদত আল্লাহ তা‘আলার জন্যই করতে হবে।
এরূপ অনেক আয়াতে রয়েছে যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِنَّ لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً ط نُسْقِيْكُمْ مِّمَّا فِيْ بُطُوْنِهَا وَلَكُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ كَثِيْرَةٌ وَّمِنْهَا تَأْكُلُوْنَ)
“এবং তোমাদের জন্য অবশ্যই শিক্ষণীয় বিষয় আছে চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে, তোমাদেরকে আমি পান করাই তাদের উদরে যা আছে তা হতে এবং তাতে তোমাদের জন্য রয়েছে প্রচুর উপকারিতা; তোমরা তা হতে আহার কর।” (সূরা মু’মিনুন ২৩:২১)
অনুরূপভাবে মানুষের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম অনুগ্রহ হল তাদেরকে খেজুর, আঙ্গুর ইত্যাদি ফল-ফলাদি দিয়েছেন, তারা এসব থেকে মদ ও উত্তম খাদ্য যেমন শুকনো খেজুর, কিসমিস গ্রহণ করে। এ সকল জিনিস আল্লাহ তা‘আলাই সৃষ্টি করেছেন, অন্য কেউ নয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَجَعَلْنَا فِیْھَا جَنّٰتٍ مِّنْ نَّخِیْلٍ وَّاَعْنَابٍ وَّفَجَّرْنَا فِیْھَا مِنَ الْعُیُوْنِﭱﺫلِیَاْکُلُوْا مِنْ ثَمَرِھ۪ﺫ وَمَا عَمِلَتْھُ اَیْدِیْھِمْﺚ اَفَلَا یَشْکُرُوْنَﭲسُبْحٰنَ الَّذِیْ خَلَقَ الْاَزْوَاجَ کُلَّھَا مِمَّا تُنْۭبِتُ الْاَرْضُ وَمِنْ اَنْفُسِھِمْ وَمِمَّا لَا یَعْلَمُوْنَﭳ)
“আমি তাতে সৃষ্টি করি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান এবং প্রবাহিত করি তাতে ঝরণাধারা। যেন তারা এর ফলমূল থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। তাদের হাত এটা সৃষ্টি করেনি। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞ হবে না?” (সূরা ইয়াসীন ৩৬:৩৪-৩৫)
سَكَرًا অর্থ মদ, এটাই অধিকাংশ আলেমের মত। মদ হারাম হওয়ার পূর্বে তা এ উম্মাতের জন্য একটি নেয়ামত ছিল। তাই হালাল (পবিত্র) জিনিসের সাথে উল্লেখ করা হয়েছে। এ আয়াতটি মাক্কী, এরপরে তিনটি মাদানী আয়াত অবতীর্ণ হয়ে মদকে সম্পূর্ণ হারাম করে দেয়া হয়। যেমন সূরা বাকারার ২১৯, সূরা নিসার ৪৩ এবং সূরা মায়িদার ৯০-৯১ নং আয়াত।
অতএব মানুষের উচিত আল্লাহ তা‘আলার দেয়া এই সমস্ত নেয়ামত ভোগ করার পর কেবল তাঁরই ইবাদত করা। আর তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার না করা।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দুধ একটি স্বচ্ছ ও নির্মল সুস্বাদু খাদ্য যা আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে দিয়েছেন।
২. যিনি সকল কিছুর স্রষ্টা, তিনিই সকল ইবাদত পাওয়ার হকদার।