১৩০ থেকে ১৩৪ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতগুলোতে মুশরিকদের দাবি খণ্ডন করা হয়েছে। তারা নিজেদেরকে ইবরাহীম (আঃ)-এর ধর্মের অনুসারী বলে দাবি করত। অথচ তারা পূর্ণ মুশরিক ছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ইবরাহীম (আঃ) তো তাওহীদ মান্যকারীদের ইমাম ছিলেন। তিনি তাওহীদকে শির্ক হতে পৃথককারী ছিলেন। বরং তিনি প্রত্যেক অংশীবাদীকে ও শির্ককে এবং কৃত্রিম মা‘বূদকে আন্তরিকভাবে ঘৃণা করতেন এবং তাদের প্রতি অসস্তুষ্ট ছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(قُلْ اِنَّنِیْ ھَدٰنِیْ رَبِّیْٓ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍﹰ دِیْنًا قِیَمًا مِّلَّةَ اِبْرٰھِیْمَ حَنِیْفًاﺆ وَمَا کَانَ مِنَ الْمُشْرِکِیْنَ)
“বল, ‘আমার প্রতিপালক তো আমাকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন। তা সুপ্রতিষ্ঠিত দীন, ইবরাহীমের ধর্মাদর্শ, সে ছিল একনিষ্ঠ এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।”(সূরা আন‘আম ৬:১৬১)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করে দিলেন, মিল্লাতে ইবরাহীম হল দীন ইসলাম যা দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(ثُمَّ أَوْحَيْنَآ إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ)
“এখন আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করলাম, ‘তুমি একনিষ্ঠ ইব্রাহীমের ধর্মাদর্শ অনুসরণ কর। (সূরা নাহল ১৬:১২৩)
সুতরাং যারা ইবরাহীম (আঃ)-এর এ তাওহীদী মিল্লাত থেকে বিমুখ হবে তারা নির্বোধ ছাড়া কিছুই নয়।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইবরাহীম (আঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ব বর্ণনা করেছেন যে, তাকে দুনিয়াতে নির্বাচিত বান্দাদের আর আখিরাতে সৎ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে যখনই আনুগত্যের নির্দেশ দিয়েছেন তখনই তিনি তা যথাযথভাবে পালন করেছেন।
ইবরাহীম (আঃ) ও ইয়াকুব (আঃ) তাদের পরবর্তী বংশধরদের যে দীনের ওসীয়ত করে গেছেন তা কোন ইয়াহূদী ধর্ম নয়, কোন নাসরানী ধর্মও নয়। তা হল একমাত্র ইসলাম। এ ব্যাপারে কুরআনে অনেক আয়াত বিদ্যমান। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ الدِّیْنَ عِنْدَ اللہِ الْاِسْلَامُﺤ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِیْنَ اُوْتُوا الْکِتٰبَ اِلَّا مِنْۭ بَعْدِ مَا جَا۬ءَھُمُ الْعِلْمُ بَغْیًۭا بَیْنَھُمْﺚ وَمَنْ یَّکْفُرْ بِاٰیٰتِ اللہِ فَاِنَّ اللہَ سَرِیْعُ الْحِسَابِ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে মনোনীত জীবন-বিধান হচ্ছে ইসলাম। আর আহলে কিতাবরা তাদের কাছে জ্ঞান আসার পর কেবল পরস্পরে বিদ্বেষবশতঃ মতভেদ করেছে। আর যে আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করবে, (তার জেনে রাখা উচিত) আল্লাহ দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী।”(সূরা আল ইমরান ৩:১৯)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَنْ یَّبْتَغِ غَیْرَ الْاِسْلَامِ دِیْنًا فَلَنْ یُّقْبَلَ مِنْھُﺆ وَھُوَ فِی الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ)
“আর যে কেউ ইসলাম বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবন ব্যবস্থা তালাশ করবে তার কাছ থেকে কিছুই কবূল করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”(সূরা আল ইমরান ৩:৮৫)
আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদেরকে তিরস্কার ও ভর্ৎসনা করে বলেন- তোমরা দাবি কর যে, ইবরাহীম ও ইয়াকুব (আঃ) পরবর্তী বংশধরকে ইয়াহূদী ধর্মে প্রতিষ্ঠিত থাকার অসিয়ত করেছেন। তোমরা কি অসিয়তের সময় উপস্থিত ছিলে? যদি তা না হয় তাহলে তোমাদের দাবি মিথ্যা ও অহেতুক। বরং সকলেই একটাই দীনের অসিয়ত করেছেন তা হল ইসলাম। যদিও বিধি-বিধানে কিছু পার্থক্য ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
وَالْأَنْبِيَاءُ إِخْوَةٌ لِعَلَّاتٍ أُمَّهَاتُهُمْ شَتَّي وَدِينُهُمْ وَاحِدٌ
নাবীরা সকলে বৈমাত্রেয় ভাই, মাতা ভিন্ন কিন্তু সকলের দীন একটাই। (সহীহ বুখারী হা: ৩৪৪৩)
আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদের লক্ষ করে আরো বলেন, তোমরা যারা বাপ-দাদার দোহাই দিয়ে নিজেদের সঠিক ধর্মের অনুসারী দাবি করছ, তোমাদের ঐ দোহাই দিয়ে লাভ নেই। তারা যা কিছু করেছে তা নিয়ে চলে গেছে। সুতরাং তাদের দোহাই দিয়ে কোন লাভ নেই, প্রকৃত জামিন হল সঠিক ঈমান ও সৎ আমল। যারা এ দু’টি নিয়ে আসবে তারাই সফলকাম হবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইসলাম বর্জন করে অন্য ধর্ম অন্বেষণ করা বোকামির পরিচয়।
২. মৃত্যুর পূর্বে ওসিয়ত করা শরীয়তসম্মত। তবে তা যেন কোন জুলুম না হয়।
৩. ইয়াহূদীদের ভ্রান্ত দাবি সম্পর্কে অবগত হলাম।
৪. সকল নাবীর ধর্ম ছিল ইসলাম এবং এর দিকেই তারা স্বীয় জাতিকে আহ্বান করেছেন।