৮-৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা সৎ আমলের উত্তম প্রতিদান বর্ণনা করার পরপরই এখানে আল্লাহ তা‘আলার পরেই বান্দাদের মধ্য হতে সবচেয়ে বেশি ভাল ব্যবহার ও খেদমত পাওয়ার হকদার পিতা-মাতার বিষয়টি আলোকপাত করেছেন। তাই কুরআনের যেখানে আল্লাহ তা‘আলা নিজের হকের কথা তথা একমাত্র তাঁর ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন সেখানে পিতা-মাতার হকের কথা সংযুক্ত করে দিয়েছেন। সুতরাং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণের গুরুত্ব অপরিসীম। সূরা বানী ইসরাঈলের ২৩-২৪ নং আয়াতে পিতা-মাতার সাথে সদাচরণের গুরুত্ব আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের গুরুত্ব এত বেশি থাকা সত্ত্বেও তাদের নির্দেশ পালনে একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে আর তা হলোন তারা যদি আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করার নির্দেশ দেয় তাহলে তাদের কথা মানা যাবে না। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর যদি তোমার মাতা-পিতা তোমার ওপর চাপ দেয় যে, তুমি আমার সাথে এমন কিছু শরীক সাব্যস্ত কর, যে সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর।” (সূরা লুকমান ৩১:১৫)
হাদীসে এসেছে, আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হল: হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার নিকট সবচেয়ে উত্তম ব্যবহার পাবার হকদার কে? তিনি বললেন: তোমার মা। লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল তার পর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। পুনরায় লোকটি জিজ্ঞেস করল। অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। চতুর্থবার জিজ্ঞেস করা হলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমার পিতা। (সহীহ বুখারী হা: ৫৯৭১, সহীহ মুসলিম হা: ২৫৪৮)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যারা সৎ আমল করবে ও ঈমান নিয়ে আসবে তিনি তাদেরকে সৎ কর্মপরায়ণ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করবেন। অর্থাৎ তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। আর তারা তাদের এ সকল সৎ আমলের কারণে জান্নাতে অনাবিল আনন্দে বসবাস করবে। যেখানে তারা শুধু সুখই ভোগ করবে, কোন দুঃখ তাদেরকে স্পর্শ করবে না। এটা মূলত তাদের সৎ আমলের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির কারণেই। তাই আমাদের উচিত সর্বদা ভাল আমল করা এবং মন্দ আমল করা থেকে বিরত থাকা।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সর্বদা পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে। তারা খারাপ ব্যবহার করলেও তাদের সাথে অসদ্ব্যবহার করা যাবে না।
২. পিতা-মাতা যদি আল্লাহ তা‘আলার সাথে শির্ক করার নির্দেশ দেয় শুধু সেক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করা যাবে না।
৩. মানুষকে সর্বশেষে আল্লাহ তা‘আলার দিকেই ফিরে যেতে হবে।
৪. সৎ কর্ম করলে সৎ কর্মশীলদের মধ্যে শামিল হওয়া যায়।