১০-১১ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, অস্বীকারকারীরা জাহান্নামের জ্বালানী কাষ্ঠ হবে। সেদিন ঐ অত্যাচারীদের ওযর কৈফিয়ত কোন কাজে আসবে না। তাদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত এবং তাদের জন্যে জঘন্য বাসস্থান রয়েছে। সেদিন তাদের ধন-মাল ও সন্তান-সন্ততি তাদের কোনই উপকার করতে পারবে না, তাদেরকে আল্লাহ তাআলার শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারবে না। যেমন অন্য জায়গায় বলেছেনঃ ‘তাদের ধন-মাল ও সন্তান-সন্ততির উপর বিস্ময়বোধ করো না, আল্লাহ ওর কারণে তাদেরকে দুনিয়ায় শাস্তি দিতে চান, কফরীর অবস্থাতেই তাদের প্রাণ বহির্গত হবে।
অন্য স্থানে রয়েছেঃ “তাদের শহরে ঘুরাফেরা যেন তোমাদের প্রতারিত না করে, এ পুঁজি অল্পদিনের, অতঃপর তাদের বাসস্থান জাহান্নাম এবং ওটা জঘন্যতম স্থান। অনুরূপ এখানেও বলা হচ্ছে যে, যারা আল্লাহ তাআলার কথা অস্বীকারকারী, তাঁর রাসূল (সঃ)-কে অমান্যকারী, তাঁর কিতাবের বিরোধী, অহীর অবাধ্য তারা যেন তাদের মাল-ধন ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা কোন মঙ্গলের আশা না করে। তারা জাহান্নামের জ্বালানী কাষ্ঠ, তাদের দ্বারা জাহান্নাম প্রজ্জ্বলিত করা হবে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ “তোমরা ও তোমাদের উপাস্যেরা জাহান্নামের জ্বালানী কাষ্ঠ।' মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমের মধ্যে রয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর মা হযরত উম্মে ফযল (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ মক্কা শরীফে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক রাত্রে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বলেনঃ “হে জনমণ্ডলী! আমি কি আল্লাহর কথা তোমাদের নিকট পৌছিয়ে দিয়েছি? হে জনগণ! আমি কি প্রচারকার্য চালিয়েছি? হে লোক সকল! আমি কি একত্ব ও রিসালাত তোমাদের নিকট পৌছিয়ে দিয়েছি’? হযরত উমার (রাঃ) তখন বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর দ্বীন আমাদের নিকট পৌছিয়ে দিয়েছেন।'
অতঃপর সকাল হলে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “জেনে রেখো! আল্লাহর শপথ! ইসলাম জয়যুক্ত হবে এবং বহুদূর ছড়িয়ে পড়বে। শেষ পর্যন্ত কাফিরেরা তাদের জায়গায় আত্মগোপন করবে। মুসলমানেরা ইসলামকে নিয়ে সমুদ্র পাড়ি দেবে ও তার কার্য চালিয়ে যাবে। জেনে রেখো যে, এমন যুগও আসবে যখন মানুষ কুরআন মাজীদ শিক্ষা করবে ও পাঠ করবে। অতঃপর (অহংকার ও আমিত্ব প্রকাশ করতঃ) বলবেঃ আমরা কুরআন কারীমের পাঠক, আমরা বিদ্বান। কে আমাদের চেয়ে বেড়ে যাবে?' তাদের জন্য কোন মঙ্গল রয়েছে কি”? জনগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহ রাসূল (সঃ)! ঐগুলো কে?' তিনি বলেনঃ “তোমাদের মুসলমানদের মধ্য হতেই হবে কিন্তু মনে রাখবে যে, তারা জাহান্নামের জ্বালানী কাষ্ঠ।
ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ)-এর গ্রন্থেও এ হাদীসটি রয়েছে। ওতে এও রয়েছে যে, হযরত উমার (রাঃ) উত্তরে বলেনঃ হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ! আপনি অত্যন্ত আশা ও উদ্দীপনা নিয়ে প্রচার কার্য চালিয়েছেন এবং আপনি যথেষ্ট চেষ্টা ও পরিশ্রম করেছেন। আপনি বিশেষভাবে আমাদের মঙ্গল কামনা করেছেন।
অতঃপর আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ “যেমন অবস্থা ফিরআউন সম্প্রদায়ের ছিল, যেমন তাদের কৃতকর্ম ছিল। دَأْبٌ শব্দটির هَمْزَة অক্ষরটি জযমের সঙ্গেও এসেছে এবং যবরের সঙ্গেও এসেছে। যেমন নাহরুন ও নাহার শব্দটি। دَأْبٌ শব্দটি জাকজমক, অভ্যাস, অবস্থা এবং পন্থা ইত্যাদি অর্থে এসে থাকে। ইমরুল কায়েসের কবিতায়ও এ শব্দটি এরূপ অর্থে এসেছে। পবিত্র আয়াতটির ভাবার্থ এই যে, আল্লাহর নিকট কাফিরদের মাল-ধন ও সন্তান-সন্ততি তাদের কোন কাজে আসবে না, যেমন ফিরআউন সম্প্রদায় ও তাদের পূর্ববর্তী কাফিরদের ধন-মাল ও সন্তানাদি তাদের কোন কাজে আসেনি। আল্লাহ তা'আলার পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন এবং তার শাস্তি বড়ই বেদনাদায়ক। কেউ কোন ক্ষমতার বলে ঐ শাস্তি হতে রক্ষা পেতে পারে না এবং তা সরিয়ে দিতেও পারে না। আল্লাহ পাক যা চান তাই করে থাকেন। প্রত্যেক জিনিসই তার বশীভূত। তিনি ব্যতীত কেউ মাবুদ নেই।