২৬-২৭ নং আয়াতের তাফসীর:
আকাশ ও জমিনে যত মাখলুকাত আছে; মানুষ, জিন, পশু-পাখি, গাছ-পালা, পাহাড়-পর্বতসহ সকল কিছুর ওপর আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমতাবান ও সবকিছুই তাঁর কর্তৃত্বাধীন। তিনি যখন যেভাবে ইচ্ছা এবং যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করতে পারেন। আর সকলেই ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَفَغَيْرَ دِيْنِ اللّٰهِ يَبْغُوْنَ وَلَه۫ٓ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَّكَرْهًا وَّإِلَيْهِ يُرْجَعُوْنَ)
“আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থা বাদ দিয়ে তারা কি অন্য কিছুর সন্ধান করছে অথচ ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় আকাশ এবং পৃথিবীতে যা আছে সবই তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে ও তাঁরই দিকে তাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে।” (সূরা আলি ইমরান ৩:৮৩)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তিনি সৃষ্টির সূচনা করেছেন বা প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন আবার তিনিই সৃষ্টির মৃত্যুর পর পুনরায় সৃষ্টি করবেন। আর এ পুনরায় সৃষ্টি করা আল্লাহ তা‘আলার নিকট অধিকতর সহজ। হাদীসে এসেছে:
আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন: বানী আদম আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। অথচ এটা করা তাদের উচিত নয়। তারা আমাকে গালি দেয়, অথচ এটা করা তাদের জন্য সমীচীন নয়। তারা (মিথ্যা প্রতিপন্ন করে) বলে, আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে প্রথমবার আমাকে সৃষ্টি করেছেন সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম নন। অথচ প্রথমবারের সৃষ্টি অপেক্ষা দ্বিতীয়বারের সৃষ্টি অধিকতর সহজ। তারা গালি দেয়, তারা বলেন আল্লাহ তা‘আলা সন্তান গ্রহণ করেন। অথচ আল্লাহ তা‘আলা এক ও অভাবমুক্ত। তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারো সন্তান নন আর তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই। (সহীহ বুখারী হা: ৪৯৭৪)
অন্য একটি হাদীসে রয়েছে, ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মিম্বারে খুতবা দেয়ার সময় বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: তোমরা আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাত করবে এমন অবস্থায় যে, তখন তোমরা থাকবে খালি পায়ে, উলঙ্গ ও খাৎনাবিহীন অবস্থায়। (সহীহ বুখারী হা: ৬১৬০)
অতএব আল্লাহ তা‘আলা প্রথমবারের মতই পুনরায় মানুষকে সৃষ্টি করতে সক্ষম। বরং তা আরো অধিকতর সহজ এবং আকাশমণ্ডলী ও জমিনে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী একমাত্র তিনিই।
(وَلَهُ الْمَثَلُ الْأَعْلٰي)
অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা যে সকল গুণে গুণান্বিত তাতে তিনি পরিপূর্ণ। তাঁর গুণের সাথে কোন তুলনা নেই, তাঁর সদৃশ কেউ নেই। তিনি নিজের জন্য যে সকল গুণ সাব্যস্ত করেছেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে যে সকল গুণ উল্লেখ করেছেন তা আল্লাহ তা‘আলার শানে যেমন উপযোগী তেমনি। তাঁর কোন উপমা নেই, তিনি সকল উপমার ঊর্ধ্বে। ইবনু আব্বাস < বলেন: এ আয়াতটি আল্লাহ তা‘আলার ঐ কথার মত:
(لَيْسَ كَمِثْلِه۪ شَيْءٌ ج وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْر)
“কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা” (সূরা শুরা ৪২:১১) কাতাদাহ বলেন, আল্লাহ তা‘আলার উপমা হলো তিনি ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই এবং তিনি ছাড়া কোন প্রতিপালক নেই। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সকলের উচিত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য স্বীকার করা।
২. মানুষকে পুনরায় সৃষ্টি করা হবে। আর এ সৃষ্টি প্রথমবারের তুলনায় সহজ।
৩. সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, অন্য কেউ নয়।
৪. আল্লাহ তা‘আলা সকল উপমার ঊর্ধ্বে।