২৮-৩০ নং আয়াতের তাফসীর:
পূর্বের আয়াতসমূহে তাওহীদ এবং আল্লাহ তা‘আলার মহত্ত্ব ও বড়ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অত্র আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সর্বজনীন করে সারা পৃথিবীবাসীর রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেছেন সে কথাই ব্যক্ত করা হচ্ছে। তিনি সমস্ত মানব ও দানব জাতির জন্য প্রেরিত হয়েছেন। পূর্বে পৃথিবীতে যত নাবী-রাসূল প্রেরণ করা হয়েছে সকলকে নির্দিষ্ট একটি সময় ও নির্দিষ্ট একটি গোত্রের নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সমগ্র মানব জাতির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(تَبٰرَكَ الَّذِيْ نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلٰي عَبْدِه۪ لِيَكُوْنَ لِلْعٰلَمِيْنَ نَذِيْرَا)
“কত মহান তিনি যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফুরকান অবতীর্ণ করেছেন যাতে সে বিশ্বজগতের জন্য সতর্ককারী হতে পারে!” (সূরা ফুরকান ২৫:১)
জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমাকে পাঁচটি জিনিস দেয়া হয়েছে যা অন্য কোন নাবীকে দেয়া হয়নি। তন্মধ্যে একটি হলো, প্রত্যেক নাবীকে শুধু তার কওমের নিকট পাঠানো হয়েছিল, আর আমাকে সমস্ত মানুষের নিকট নাবী করে পাঠানো হয়েছে। (সহীহ বুখারী হা: ৩৩৫, ৪৩৮, সহীহ মুসলি হা: ৫২১) এ সম্পর্কে সূরা আল আ‘রাফ-এর ১৫৮ নং আয়াতে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ বিষয়ের সঠিক জ্ঞান অধিকাংশ মানুষই রাখে না।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
(وَمَآ أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِيْنَ)
“তুমি যতই আকাক্সক্ষা কর না কেন, অধিকাংশ লোকই বিশ্বাসী নয়।” (সূরা ইউসুফ ১২:১০৩) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
(وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوْكَ عَنْ سَبِيْلِ اللّٰهِ ط إِنْ يَّتَّبِعُوْنَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُوْنَ)
“যদি তুমি দুনিয়ার অধিকাংশ লোকের কথামত চল তবে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করবে। তারা তো শুধু অনুমানের অনুসরণ করে; আর তারা শুধু অনুমানভিত্তিক কথা বলে।” (সূরা আন‘আম ৬:১১৬)
কাফির-মুশরিকরা কিয়ামত সংঘঠিত হওয়াকে অসম্ভব মনে করত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তা সংঘটিত হওয়ার সময়কাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সে প্রশ্নের জবাব শিখিয়ে দিয়ে বলছেন: বলে দাও; কিয়ামতের জন্য নির্ধারিত সময় রয়েছে, যা এ নির্ধারিত সময়ের আগেও হবে না এবং পরেও হবে না। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(إِنَّ أَجَلَ اللّٰهِ إِذَا جَا۬ءَ لَا يُؤَخَّرُ م لَوْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সময় উপস্থিত হলে তা বিলম্বিত হয় না, যদি তোমরা এটা জানতে!” (সূরা নূহ ৭১:৪)
সুতরাং নির্ধারিত সময় ব্যতীত কিয়ামত সংঘটিত হবে না। আর এ নির্ধারিত সময় সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন, অন্য কেউ নয়। এ সম্পর্কে সূরা আল আন‘আম-এর ৫৯ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে। আরো আলোচনা সূরা লুক্বমান-এ করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মর্যাদা সম্পর্কে জানা গেল যে, তিনি সারা বিশ্বের জন্য রহমাতস্বরূপ প্রেরিত রাসূল।
২. সত্য ও সঠিকতার ওপর একজন লোক প্রতিষ্ঠিত থাকলে তিনিও অনুসরণীয় ব্যক্তি যদিও অধিকাংশ লোক তার বিপক্ষে অবস্থান করে।
৩. প্রত্যেক জিনিসের মতো কিয়ামতের একটি নির্ধারিত সময় রয়েছে। ঐ সময় ব্যতীত তা সংঘটিত হবে না।