৩৬-৪০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
(أَلَيْسَ اللّٰهُ بِكَافٍ عَبْدَه)
‘আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন?’ অর্থাৎ উক্ত عَبْدَه বান্দা বলতে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বুঝানো হয়েছে। কারো কারো নিকট সাধারণভাবে এতে সমস্ত নাবী ও প্রত্যেক মু’মিন শামিল। মূর্তি ও প্রতিমা বর্জন করার কারণে মক্কার মুশরিকরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ভয় দেখালো যে, আমাদের মা‘বূদ তোমার ক্ষতি করবে। কিন্তু স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহায্যকারী ও মা‘বূদ, তিনিই সকল অকল্যাণ থেকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রক্ষা করবেন, তারা কিছুই করতে পারবে না। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষ হতে তাদের মোকাবেলায় তিনিই (আল্লাহ তা‘আলাই) যথেষ্ট। মূলত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়রুল্লাহর কোন ভয় করতেন না বিশেষ করে তাদের মূর্তিকে ভয় করতেন না। যেমন ইবরাহীম (আঃ)-কে ভয় দেখানো হলে তিনি বললেন :
(وَكَيْفَ أَخَافُ مَآ أَشْرَكْتُمْ وَلَا تَخَافُوْنَ أَنَّكُمْ أَشْرَكْتُمْ بِاللّٰهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِه۪ عَلَيْكُمْ سُلْطٰنًا ط فَأَيُّ الْفَرِيْقَيْنِ أَحَقُّ بِالْأَمْنِ ج إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ)
‘তোমরা যাকে আল্লাহর সাথে শরীক কর আমি তাকে কিভাবে ভয় করব? অথচ তোমরা আল্লাহর সাথে শরীক করতে ভয় কর না, যে বিষয়ে তিনি তোমাদেরকে কোন সনদ দেননি। সুতরাং যদি তোমরা জান তবে বল : দু দলের মধ্যে কোন্ দল নিরাপত্তা লাভের বেশি হকদার।’ (সূরা আন‘আম ৬ : ৮১)
অতঃপর মক্কার মুশরিকরা আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ তথা সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, হায়াত-মউতের মালিক, আসমান-জমিনসহ যাবতীয় কিছুর মালিক যে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ইত্যাদি স্বীকার করত-সে কথা ব্যক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু যখন কোন কিছু চাইতো তখন তারা মূর্তি ও বিভিন্ন দেব-দেবীর কাছে চাইতো। যার কারণে তারা মুশরিকই থেকে গেল, তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ স্বীকার করাতে কোন উপকার হয়নি। ফলে তারা ঈমানদার হতে পারেনি, তাই তারা জাহান্নামী। আমাদের দেশেও একশ্রেণির নামধারী মুসলিম আছে যারা স্বীকার করে- আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর মালিক যেমন মক্কার মুশরিকরা স্বীকার করতো, কিন্তু যখন সন্তানের প্রয়োজন হয় কিম্বা কোন বিপদে পড়ে বা কোন মানত করে তখন তারা মাযার, পীর-ফকীর ও দরবেশের কাছে দৌড়ায়। এদের মাঝে আর তৎকালীন মক্কার মুশরিকদের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এ সম্পর্কে সূরা লুকমানের ২৫ নম্বর আয়াতসহ অন্যান্য স্থানেও আলোচনা করা হয়েছে।
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা আছেন, তিনি সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা তথা কেবল তাওহীদে রুবুবিয়্যাহর ওপর বিশ্বাস করলেই ঈমানদার হওয়া যাবেনা যতক্ষণ না সকল প্রকার ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য সম্পাদন করবে।
(أَفَرَأَيْتُمْ مَّا تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ)
অর্থাৎ তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে সৃষ্টিকর্তা ও সকল কিছুর মালিক বলে বিশ্বাস করছ কিন্তু তাঁকে বাদ দিয়ে মূর্তি ও প্রতিমার কাছে ভাল চাওয়া ও মন্দ প্রতিহত করার জন্য প্রার্থনা করছ কেন? তোমরা কি চিন্তা করে দেখেছ, আল্লাহ তা‘আলা যদি আমার বা অন্য কারো অনিষ্ট করতে চান তাহলে তা কি কেউ প্রতিহত করতে পারবে, অথবা যদি কারো কল্যাণ চান তাহলে কি তাতে কেউ বাধা দিতে পারবে? না, কেউ পারবেনা। এসব মূর্তি, প্রতিমা ও কবরে শায়িত ব্যক্তি মানুষের ভাল মন্দের কোন ক্ষমতা রাখেনা। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলাকে সৃষ্টিকর্তা স্বীকার করার সাথে সাথে তাঁর ইবাদত করতে হবে, সকল আরাধনা তাঁর কাছেই করতে হবে।
এরপরেও তোমরা না মানলে তোমরা তোমাদের আমল করতে থাক, আমি আমার আমল করতে থাকি, তবে অচিরেই জানতে পারবে কে সঠিক পথের অনুসারী?
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. মু’মিন ব্যক্তির জন্য সর্বক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলাই যথেষ্ট।
২. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত হিদায়াত দান করার মালিক কেউ নয়।
৩. আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়্যাহকে স্বীকার করলেই মু’মিন হওয়া যাবে না, যদি সকল প্রকার ইবাদত একামাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য না করা হয়।
৪. সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসা করতে হবে।