আল-যুমার আয়াত ৭০
وَوُفِّيَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ وَهُوَ اَعْلَمُ بِمَا يَفْعَلُوْنَ ࣖ ( الزمر: ٧٠ )
Wa wuffiyat kullu nafsim maa 'amilat wa Huwa a'lamubimaa yaf'aloon (az-Zumar ৩৯:৭০)
English Sahih:
And every soul will be fully compensated [for] what it did; and He is most knowing of what they do. (Az-Zumar [39] : 70)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
প্রত্যেকের কাজের পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে। লোকেরা যা করে তা তিনি খুব ভালভাবেই জানেন। (আল-যুমার [৩৯] : ৭০)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
প্রত্যেকের কৃতকর্মের পরিপূর্ণ প্রতিফল দেওয়া হবে। ওরা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত। [১]
[১] অর্থাৎ, তাঁর কোন লেখক, হিসাবরক্ষক এবং সাক্ষীর প্রয়োজন নেই। এই আমলনামা এবং সাক্ষী কেবল হুজ্জত কায়েম এবং ওজর-বাহানা দূর করার জন্য হবে।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর প্রত্যেককে তার আমলের পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে এবং তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ্ সর্বাধিক অবগত।
3 Tafsir Bayaan Foundation
আর প্রত্যেককে তার আমলের পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে এবং তারা যা করে সে সম্পর্কে তিনিই সর্বাধিক পরিজ্ঞাত।
4 Muhiuddin Khan
প্রত্যেকে যা করেছে, তার পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে। তারা যা কিছু করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত।
5 Zohurul Hoque
আর প্রত্যেক সত্ত্বাকে সে যা করেছে তার পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে, আর তিনি ভাল জানেন তারা যা করে সে-সম্পর্কে।
6 Mufti Taqi Usmani
প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেওয়া হবে। আর তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ পরিপূর্ণ জ্ঞাত।
7 Mujibur Rahman
প্রত্যেকের কৃতকর্মের পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে। তারা যা করে সেই সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।
8 Tafsir Fathul Mazid
৬৮-৭০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
( وَنُفِخَ فِي الصُّوْرِ..... يَّنْظُرُوْنَ)
‘এবং শিঙ্গায় ফুঁৎকার দেয়া হবে’ কারো কারো মতে এখানে যে ফুঁৎকারের কথা বলা হয়েছে সেটা হবে দ্বিতীয় ফুঁক। অর্থাৎ এটা হবে বেহুঁশ হবার ফুঁক। যার ফলে সবাই মারা যাবে। আবার কারো মতে এটা হবে প্রথম ফুঁক। এর ফলেই প্রথমত সকলে কঠিন আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়বে এবং পরে সবাই মৃত্যু মুখে পতিত হবে।
আবার কেউ এ ফুঁকগুলোকে এভাবে বর্ণনা করেছেন- প্রথম : نفخة الفناء তথা ধ্বংসের ফুঁক। দ্বিতীয় : نفخة البعث তথা পুনরুত্থানের ফুঁক। তৃতীয় : نفخة الصعق তথা বেহুঁশ হবার ফুঁক। চতুর্থ : نفخة القيام তথা বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার ফুঁক। (আইসারুত তাফাসীর)
আবার কারো মতে ফুঁক দু’টো হবে- نفخة الموت তথা মৃত্যুবরণ করার ফুঁক এবং نفخة البعث তথা পুনরুত্থানের ফুঁক। আবার কারো মতে, ফুঁক দেয়া হবে তিনটি।
এ ফুঁৎকারের ফলে, আকাশ ও জমিনে যা কিছু থাকবে সকলে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। তবে আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা করবেন সে ব্যতীত। এরপর যখন ফুঁৎকার দেয়া হবে তখন সকলে আল্লাহ তা‘আলার দিকে ছুটে আসবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(فَاِنَّمَا ھِیَ زَجْرَةٌ وَّاحِدَةٌﭜﺫ فَاِذَا ھُمْ بِالسَّاھِرَةِﭝ)
“এটা তো একটি ভয়ঙ্কর ধমক মাত্র। ফলে হঠাৎ প্রশস্ত ময়দানে তাদের আবির্ভাব হবে।” (সূরা না-যি‘আ-ত ৭৯ : ১৩-১৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
(يَوْمَ يَدْعُوْكُمْ فَتَسْتَجِيْبُوْنَ بِحَمْدِه۪ وَتَظُنُّوْنَ إِنْ لَّبِثْتُمْ إِلَّا قَلِيْلًا)
‘যেদিন তিনি তোমাদেরকে আহ্বান করবেন এবং তোমরা তাঁর প্রশংসার সাথে তাঁর আহ্বানে সাড়া দেবে এবং তোমরা মনে করবে, তোমরা অল্প সময়ই (দুনিয়াতে) অবস্থান করেছিলে।’ (সূরা বানী ইসরা-ঈল ১৭ : ৫২)
হাদীসে বলা হয়েছে, আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : শেষ ফুঁক দেয়ার পর আমিই হব প্রথম ব্যক্তি, যে তার মাথা উঠাবে। আমি তখন দেখব যে, মূসা (আঃ) আরশের খুঁটি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানি না সে-কি পূর্বে থেকেই (অর্থাৎ তাঁকে কি বেহুঁশ করা হয়নি) নাকি ফুঁক দেয়ার পর (তিনি উঠেছেন)। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮১৩, সহীহ মুসলিম হা. ২৩৭৩-৩২৭৬)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন- সেদিন অর্থাৎ কিয়ামতের দিন পৃথিবী তাঁর জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হবে, আমলনামা পেশ করা হবে, নাবীদেরকে ও সাক্ষীদেরকে উপস্থিত করা হবে এবং সেদিন সকলের মধ্যে ন্যায় বিচার করা হবে। কারো প্রতি কোন প্রকার জুলুম, অত্যাচার করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيٰمَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا ط وَإِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ أَتَيْنَا بِهَا ط وَكَفٰي بِنَا حٰسِبِيْنَ)
“এবং কিয়ামত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায়বিচারের মানদণ্ড। সুতরাং কারও প্রতি কোন অবিচার করা হবে না এবং কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণ ওজনেরও হয় তবুও সেটা আমি উপস্থিত করব; হিসেব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট।” (সূরা আল আম্বিয়া- ২১ : ৪৭)
জুলুম তো করা হবেই না বরং যদি কারো কোন নেকী থাকে তাহলে তিনি ওটাকে আরো দ্বিগুণ করে দেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(إِنَّ اللّٰهَ لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ ج وَإِنْ تَكُ حَسَنَةً يُّضٰعِفْهَا وَيُؤْتِ مِنْ لَّدُنْهُ أَجْرًا عَظِيْمًا)
“আল্লাহ অণু পরিমাণও জুলুম করেন না। আর কোন পুণ্য কর্ম হলে আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ করেন এবং আল্লাহ তাঁর নিকট হতে মহাপুরস্কার প্রদান করেন।” (সূরা আন্ নিসা ৪ : ৪০)
তাই আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন যে, সেদিন প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
(فَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَّرَه۫ ط وَمَنْ يَّعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَّرَه۫ )
“অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ সৎ কর্ম করলে তা দেখতে পাবে, এবং কেউ অণু পরিমাণ অসৎ কর্ম করলে তা-ও দেখতে পাবে।” (সূরা আয্ যিলযা-ল ৯৯ : ৭-৮)
সাক্ষী দ্বারা কাদেরকে বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে মতামত রয়েছে; কেউ বলেছেন, সাক্ষীরা হলেন- যে-সকল ফেরেশতাগণ বান্দাদের আমল লিখতেন তারা। যেমন সূরা ক্বাফের ২১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে। কেউ বলেছেন- সাক্ষী হলেন উম্মাতে মুহাম্মাদী, তারা পূর্ববর্তী উম্মতের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবে। যেমন সূরা বাকারার ১৪৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে। আবার বলা হয়- যারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় শহীদ হয়েছেন তারা। তবে সঠিক কথা এই যে, এখানে সাক্ষী দ্বারা উদ্দেশ্য রাসূলগণ, যাদেরকে তাঁদের উম্মতের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা সূরা ইউনুসের ৪৭ নম্বর আয়াতে উল্লেখ করেছেন।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. আল্লাহ তা‘আলার নূর বা জ্যোতি রয়েছে। যা দ্বারা পৃথিবী একদিন উদ্ভাসিত হবে।
২. কিয়ামতের মাঠে মানুষের প্রতি ন্যায় বিচার করা হবে, কারো প্রতি কোন জুলুম করা হবে না।
9 Fozlur Rahman
প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের প্রতিফল পুরোপুরি দেওয়া হবে। তারা যা কিছু করে তিনি তা ভাল করে জানেন।
10 Mokhtasar Bangla
৭০. আল্লাহ প্রত্যেকের ভালো-মন্দ আমলের প্রতিদান পূর্ণ মাত্রায় প্রদান করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তাদের কৃতকর্মের সমধিক খবর রাখেন। তাঁর নিকট তাদের ভালো-মন্দ কোন কিছুই গোপন থাকে না। ফলে সে দিন তিনি যথাযথভাবেই তাদের আমলের প্রতিদান দিবেন।
11 Tafsir Ibn Kathir
৬৮-৭০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা কিয়ামতের ভয়াবহতার বর্ণনা দিচ্ছেন যে, শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং এটা হবে দ্বিতীয় ফুঙ্কার, যার ফলে প্রত্যেক জীবিত মরে যাবে, সে আসমানেই থাকুক বা যমীনেই থাকুক। কিন্তু আল্লাহ যাদেরকে ইচ্ছা করেন জীবিত ও সজ্ঞান রাখার তাদের কথা স্বতন্ত্র। মশহুর হাদীসে আছে যে, এরপর অবশিষ্টদের রূহগুলো কবয করা হবে, এমন কি সর্বশেষে স্বয়ং হযরত মালাকুল মাউতের রূহ কবয করে নেয়া হবে। শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলাই বাকী থাকবেন, যিনি জীবিত ও চিরঞ্জীব। যিনি পূর্ব হতেই ছিলেন এবং পরেও চিরস্থায়ীভাবে থাকবেন। অতঃপর তিনি বলবেনঃ لِمَنِ الْمُلْكُ الْیَوْمَ অর্থাৎ “আজ রাজত্ব কার?” (৪০:১৬) এ কথা তিনি তিনবার বলবেন। তারপর তিনি নিজেকেই নিজে উত্তর দিবেনঃ لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ অর্থাৎ “(আজকে রাজত্ব হচ্ছে) এক আল্লাহর জন্যে তিনি মহাপরাক্রমশালী।” (৪০:১৬) তিনিই আজ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, যিনি প্রত্যেক জিনিসকে নিজের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। আজ তিনি সবকিছুকেই ধ্বংসের হুকুম দান করেছেন। তারপর আল্লাহ তা'আলা স্বীয় মাখলুককে দ্বিতীয়বার জীবিত করবেন। সর্বপ্রথম তিনি জীবিত করবেন হযরত ইসরাফীল (আঃ)-কে। তাঁকে আবার তিনি শিংগায় ফুস্কার দেয়ার নির্দেশ দিবেন। এটা হবে তৃতীয় ফুকার যার ফলে সমস্ত সৃষ্টজীব, যারা মৃত ছিল, জীবিত হয়ে যাবে, যার বর্ণনা এই আয়াতে দেয়া হয়েছে যে, আবার শিংগায় ফুকার দেয়া হবে, তৎক্ষণাৎ তারা দণ্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকবে। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
فَاِنَّمَا هِیَ زَجْرَةٌ وَّاحِدَةٌ ـ فَاِذَا هُمْ بِالسَّاهِرَةِ
অর্থাৎ “এটাতো শুধু এক বিকট শব্দ, তখনই ময়দানে তাদের আবির্ভাব হবে।” (৭৯:১৩-১৪) মহামহিমান্বিত আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ
یَوْمَ یَدْعُوْكُمْ فَتَسْتَجِیْبُوْنَ بِحَمْدِهٖ وَ تَظُنُّوْنَ اِنْ لَّبِثْتُمْ اِلَّا قَلِیْلًا
অর্থাৎ “যেদিন আল্লাহ তোমাদেরকে আহ্বান করবেন সেই দিন তোমরা তাঁর প্রশংসা করতে করতে তার আহ্বানে সাড়া দিবে এবং তোমরা ধারণা করবে যে, দুনিয়ায় তোমরা অল্প দিনই অবস্থান করেছিলে।” (১৭:৫২) মহান আল্লাহ অন্য এক জায়গায় বলেনঃ
وَ مِنْ اٰیٰتِهٖۤ اَنْ تَقُوْمَ السَّمَآءُ وَ الْاَرْضُ بِاَمْرِهٖ ثُمَّ اِذَا دَعَاكُمْ دَعْوَةً مِّنَ الْاَرْضِ اِذَاۤ اَنْتُمْ تَخْرُجُوْنَ
অর্থাৎ “এবং তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে তারই আদেশে আকাশ ও পৃথিবীর স্থিতি, অতঃপর আল্লাহ যখন তোমাদেরকে মৃত্তিকা হতে উঠাবার জন্যে একবার আহ্বান করবেন তখন তোমরা উঠে আসবে।” (৩০:২৫)
মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-কে বলেঃ “আপনি বলে থাকেন যে, এরূপ এরূপ সময়ে কিয়ামত সংঘটিত হবে (তা কখন হবে?)।” হযরত ইবনে উমার (রাঃ) তার এ কথায় অসন্তুষ্ট হয়ে বলেনঃ “আমার মন তো চাচ্ছে যে, তোমাদের কাছে কিছুই বর্ণনা করবো না। আমি তো বলেছিলাম যে, অল্প দিনের মধ্যেই তোমরা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার অবলোকন করবে। অতঃপর তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “আমার উম্মতের মধ্যে দাজ্জাল আসবে এবং চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করবে। চল্লিশ দিন না চল্লিশ মাস, না চল্লিশ বছর, না চল্লিশ রাত তা আমি জানি না। তারপর আল্লাহ তা'আলা হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)-কে প্রেরণ করবেন। তিনি আকৃতিতে হযরত উরওয়া ইবন মাসউদ (রাঃ)-এর সাথে খুবই সাদৃশ্যযুক্ত। আল্লাহ তাআলা তাঁকে বিজয়ী করবেন এবং দাজ্জাল তার হাতে মারা পড়বে। এর পর সাত বছর পর্যন্ত লোক এমনভাবে মিলে-জুলে থাকবে যে, দুই ব্যক্তির মধ্যে কোন শত্রুতা থাকবে না। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা সিরিয়ার দিক হতে এক হালকা ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত করবেন, যার দ্বারা সমস্ত মুমিন ব্যক্তির জীবন কবয করে নেয়া হবে। এমনকি যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান রয়েছে সেও মরে যাবে, সে যেখানেই থাকুক না কেন। যদি সে পাহাড়ের গহ্বরেও অবস্থান করে তবুও ঐ বায়ু সেখানে পৌঁছে যাবে।” আমি এটা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে শুনেছি। অতঃপর শুধুমাত্র মন্দ ও পাপী লোকেরাই বেঁচে থাকবে যারা হবে পাখী ও পশুর মত বিবেক-বুদ্ধিহীন। না তারা ভাল চিনবে না বুঝবে, না মন্দকে মন্দ বলে জানবে। তাদের উপর শয়তান প্রকাশিত হবে এবং সে তাদেরকে বলবেঃ “তোমাদের লজ্জা করে না যে, তোমরা মূর্তিপূজা পরিত্যাগ করেছো?” অতঃপর সে তাদেরকে মূর্তিপূজার নির্দেশ দিবে এবং তারা তখন ওগুলোর পূজা শুরু করে দিবে। ঐ অবস্থাতেও আল্লাহ তা'আলা তাদের রুযী-রোযগারে প্রশস্ততা দান করতে থাকবেন। তারপর শিংগায় ফুঙ্কার দেয়া হবে। যার কানে এ শব্দ পৌঁছবে সে এদিকে পড়ে যাবে এবং ওদিকে দাঁড়িয়ে যাবে, আবার পড়বে। সর্বপ্রথম এই শব্দ যার কানে পৌঁছবে সে হবে ঐ ব্যক্তি যে তার হাউয বা চৌবাচ্চা ঠিকঠাক করতে থাকবে। তৎক্ষণাৎ সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবে। তারপর সবাই বেহুশ ও আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়বে। এরপর আল্লাহ তাআলা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন যা শিশিরের মত হবে, যার দ্বারা মানুষের দেহ উদগত হবে। তারপর দ্বিতীয়বার শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে তখন সবাই দণ্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকবে। অতঃপর তাদেরকে বলা হবেঃ “হে লোক সকল! তোমাদের প্রতিপালকের দিকে চল।” (আল্লাহ তা'আলা বলবেনঃ) “তাদেরকে দাঁড় করাও, তারা জিজ্ঞাসিত হবে। তারপর বলা হবেঃ “জাহান্নামের অংশ বের করে নাও।” জিজ্ঞেস করা হবেঃ “কত?” উত্তরে বলা হবেঃ “প্রতি হাজারে নয়শ’ নিরানব্বই জন।" এটা হবে ঐদিন যেই দিন (ভয়ে) বালক বৃন্ধ হয়ে যাবে এবং পদনালী খুলে যাবে। [يَكْشِفُ عَنْ سَاقٍ -এর শাব্দিক অর্থ হলো ‘পদনালী বা পায়ের গোছা উন্মোচিত হবে'। এটি একটি আরবী বাগধারা। এর ভাবার্থ হলো شِدَّةُ الْاَمْرِ বা চরম সংকট]
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “দুই ফুঙ্কারের মাঝে চল্লিশের ব্যবধান থাকবে। জনগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আবু হুরাইরা (রাঃ)! চল্লিশ দিন কি?" জবাবে তিনি বলেনঃ “আমি (উত্তর দিতে) অস্বীকার করলাম। তারা বললোঃ “চল্লিশ বছর কি?” তিনি উত্তর দিলেনঃ “আমি (এর উত্তর দিতেও) অস্বীকৃতি জানাচ্ছি।” তারা জিজ্ঞেস করলোঃ “চল্লিশ মাস কি?” তিনি জবাবে বললেনঃ “আমি (এর উত্তর দানেও) অস্বীকার করছি। কথা হলো এই যে, মানুষের দেহের) সব কিছুই সড়ে পচে নষ্ট ও বিলীন হয়ে যাবে। শুধুমাত্র মেরুদণ্ডের একটি অস্থি ঠিক থাকবে। ওটা দ্বারা সৃষ্টির পুনর্বিন্যাস করা হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেন, আমি হযরত জিবরাঈল (আঃ)-কে জিজ্ঞেস করলামঃ وَ نُفِخَ فِی الصُّوْرِ فَصَعِقَ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَنْ فِی الْاَرْضِ اِلَّا مَنْ شَآءَ اللّٰهُ এই আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলার ইচ্ছায় যারা মূৰ্ছিত হবে না তারা কারা? উত্তরে হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেনঃ “তারা হলো শহীদ, যারা তরবারী লটকানো অবস্থায় আল্লাহর আরশের চতুর্দিকে অবস্থান করবে। ফেরেশতাবর্গ অভ্যর্থনা করে তাদেরকে হাশরের মাঠে নিয়ে যাবেন। তারা মণি-মানিক্যের উষ্ট্রের উপর সওয়ার হবে, যেগুলোর গদি রেশমের চেয়েও নরম হবে। মানুষের দৃষ্টি যতদূর যায় ততদূর পর্যন্ত হবে উষ্ট্রগুলোর এক কদম। তারা জান্নাতের মধ্যে পরম সুখে ও আরাম আয়েশের মধ্যে থাকবে। তারা বলবেঃ চল, আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর সৃষ্টজীবের মধ্যে বিচার-ফায়সালা করবেন তা আমরা দেখবো। সুতরাং তাদের দিকে দেখে আল্লাহ তা'আলা হেসে উঠবেন। যেখানে আল্লাহ পাক কোন বান্দাকে দেখে হাসেন সেখানে তার উপর কোন হিসাব নেই।” (এ হাদীসটি আবু ইয়া’লা (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এর সমস্ত বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। কিন্তু ইসমাঈল ইবনে আইয়াশ (রঃ)-এর উস্তাদ অপরিচিত। এসব ব্যাপারে আল্লাহ্ পাকই সবচেয়ে ভাল জানেন)
মহান আল্লাহ বলেনঃ বিশ্ব ওর প্রতিপালকের জ্যোতিতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে, আমলনামা পেশ করা হবে এবং নবীদেরকে আনয়ন করা হবে। যাঁরা সাক্ষ্য দিবেন যে, তাঁরা নিজেদের উম্মতদের নিকট তাবলীগ বা প্রচারকার্য চালিয়েছিলেন। আর বান্দাদের ভাল ও মন্দ কাজের রক্ষক ফেরেশতাদেরকে আনয়ন করা হবে এবং আদল ও ইনসাফের সাথে মাখলুকের বিচার মীমাংসা করা হবে। কারো উপর কোন প্রকারের অত্যাচার করা হবে না। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَ نَضَعُ الْمَوَازِیْنَ الْقِسْطَ لِیَوْمِ الْقِیٰمَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَیْئًا وَ اِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ اَتَیْنَا بِهَا وَ كَفٰى بِنَا حٰسِبِیْنَ
অর্থাৎ “কিয়ামতের দিন আমি ন্যায়ের দাঁড়িপাল্লা প্রতিষ্ঠিত করবো এবং কারো প্রতি বিন্দুমাত্র যুলুম করা হবে না। কোন আমল যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় তবুও আমি তা হাযির করবো এবং আমিই হিসাব নেয়ার জন্যে যথেষ্ট।” (২১:৪৭) মহামহিমান্বিত আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ
اِنَّ اللّٰهَ لَا یَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ وَ اِنْ تَكُ حَسَنَةً یُّضٰعِفْهَا وَ یُؤْتِ مِنْ لَّدُنْهُ اَجْرًا عَظِیْمًا
অর্থাৎ “আল্লাহ তাআলা অণু পরিমাণও অত্যাচার করেন না। যদি একটি পুণ্য হয় তবে তিনি তা বৃদ্ধি করে দেন এবং নিজের নিকট হতে তিনি বড় প্রতিদান প্রদান করেন।” (৪:৪০) এজন্যেই মহামহিমান্বিত আল্লাহ এখানে বলেনঃ প্রত্যেককে তার ভাল-মন্দ কার্যের পূর্ণ প্রতিফল দেয়া হবে এবং তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সৃবিশেষ অবহিত।