আন-নাজম আয়াত ৪২
وَاَنَّ اِلٰى رَبِّكَ الْمُنْتَهٰىۙ ( النجم: ٤٢ )
Wa anna ilaa rabbikal muntahaa (an-Najm ৫৩:৪২)
English Sahih:
And that to your Lord is the finality (An-Najm [53] : 42)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আর এই যে, শেষ গন্তব্য হল তোমার প্রতিপালক পর্যন্ত, (আন-নাজম [৫৩] : ৪২)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
আর এই যে, সবকিছুর সমাপ্তি তো তোমার প্রতিপালকের নিকট।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর এই যে, সবার শেষ গন্তব্য তো আপনার রবের কাছে [১],
[১] উদ্দেশ্য এই যে, অবশেষে সবাইকে আল্লাহ তা'আলার দিকেই ফিরে যেতে হবে এবং কর্মের হিসার-নিকাশ দিতে হবে। কোন কোন তফসীরবিদ এই বাক্যের অর্থ এরূপ সাব্যস্ত করেছেন যে, মানুষের চিন্তা-ভাবনার গতিধারা আল্লাহ তা’আলার সত্তায় পৌছে নিঃশেষ হয়ে যায়। তাঁর সত্তা ও গুণাবলির স্বরূপ চিন্তাভাবনার মাধ্যমে অর্জন করা যায় না। [ইবন কাসীর; কুরতুবী]
3 Tafsir Bayaan Foundation
আর নিশ্চয় তোমার রবের নিকটই হলো শেষ গন্তব্য।
4 Muhiuddin Khan
তোমার পালনকর্তার কাছে সবকিছুর সমাপ্তি,
5 Zohurul Hoque
আর এই যে, তোমার প্রভুর দিকেই হচ্ছে শেষ-সীমা,
6 Mufti Taqi Usmani
এবং এই যে, (সকলের) শেষ গন্তব্য তোমার প্রতিপালকেরই কাছে।
7 Mujibur Rahman
আর এই যে, সব কিছুর সমাপ্তিতো তোমার রবের নিকট।
8 Tafsir Fathul Mazid
৩৩-৪২ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
যারা আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদেরকে এখানে ভর্ৎসনা করা হচ্ছে। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلّٰي وَلٰكِنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰي)
“সে বিশ্বাস করেনি এবং সালাতও পড়েনি বরং সে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।” মুজাহিদ, মুকাতিলসহ প্রমুখ বলেন : এ আয়াতগুলো (তিনটি আয়াত) ওয়ালিদ বিন মুগীরাহ এর ব্যাপারে নাযিল হয়। সে প্রথমে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসরণ করলে কিছু মুশরিক তাকে তিরস্কার করে বলে : কেন তুমি বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করলে এবং তাদেরকে পথভ্রষ্ট বলছ আর বিশ্বাস করছ তারা জাহান্নামে যাবে? সে বলল : আমি আল্লাহ তা‘আলার শাস্তির ভয় করছি। মুশরিকরা চিন্তা করল তাকে হয়তো কিছু সম্পদ দিলে সে আমাদের দীনে ফিরে আসবে। যে সম্পদ দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল সে তাকে কিছু সম্পদ দিল কিন্তু পরে সে কৃপণতা করে ও দিতে বিরত থাকে (কুরতুবী)।
أَكْدٰي অর্থাৎ- অল্প দিয়ে হাত টেনে নিলো অথবা অল্প কিছু আনুগত্য করে পিছে সরে গেল। أَكْدٰي শব্দের মূল অর্থ হলো : মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে শক্ত কোন পাথর এসে পড়লে আর খুড়া যায় না, পরিশেষে খুড়ার কাজ ছেড়ে দিলে বলা হয় أَكْدٰي এখান থেকেই এ শব্দের এমন ব্যক্তির ব্যাপারে ব্যবহার হয়, যে কাউকে কিছু দেয় কিন্তু পূর্ণরূপে দেয় না। অনুরূপ কোন কাজ আরম্ভ করে কিন্তু সমাপ্ত করে না।
(أَعِنْدَه۫ عِلْمُ الْغَيْبِ)
অর্থাৎ এ ব্যক্তি খরচ হয়ে যাবে, ফুরিয়ে যাবে এ আশঙ্কায় আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় ও ভাল কাজ করা থেকে বিরত থাকে তার নিকট কি গায়েবের জ্ঞান রয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করলে সে রিক্ত হস্ত হয়ে রাস্তার ফকির হয়ে যাবে? না, বরং সে আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে না, ভাল কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত না করে কার্পণ্য করে পরকালের প্রতি বিশ্বাসী নয় বলে।
হাদীসে এসেছে- হে বেলাল! তুমি ব্যয় করে যাও, আরশের মালিকের কাছে কমে যাওয়ার আশঙ্কা করো না। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৩/পৃঃ ১৩৬, বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(قُلْ إِنَّ رَبِّيْ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَا۬ءُ مِنْ عِبَادِه۪ وَيَقْدِرُ لَه۫ ط وَمَآ أَنْفَقْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُه۫ ج وَهُوَ خَيْرُ الرّٰزِقِيْنَ)
“বল : আমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন অথবা ওটা সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার প্রতিদান দেবেন। তিনি শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা।” (সূরা সাবা ৩৪ : ৩৯)
(أَمْ لَمْ يُنَبَّأْ .......الَّذِیْ وَﰰ)
ক্বাতাদাহ বলেন : وَفّٰي অর্থাৎ ইব্রাহীম (আঃ) (পূর্ণ করেছেন) আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য, তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব। আল্লামা ইবনু জারীর এ মত পছন্দ করেছেন। এ কথাতে সব কিছু শামিল। এ কথার প্রমাণ বহনকারী হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী :
(وَإِذِ ابْتَلٰٓي إِبْرَاهِيْمَ رَبُّه۫ بِكَلِمٰتٍ فَأَتَمَّهُنَّ)
“আর স্মরণ কর! যখন তিনি বললেন, তোমার প্রতিপালক ইবরাহীমকে কতিপয় বাক্য দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে তিনি তা পূর্ণ করেছিলেন; ” (সূরা বাকারাহ্ ২ : ১২৪)
(أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ)
অর্থাৎ একজন অপরের পাপের বোঝা কোনদিনই বহন করবে না যদিও নিকটাত্মীয় হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ أُخْرٰي ط وَإِنْ تَدْعُ مُثْقَلَةٌ إِلٰي حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَّلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰي)
“কোন বোঝা বহনকারী অপরের (পাপের) বোঝা বহন করবে না। যদি কোন বোঝা ভারাক্রান্ত ব্যক্তি কাউকে তার বোঝা বহন করতে ডাকে, তবে তা থেকে কিছুই বহন করা হবে না, যদিও সে তার নিকটাত্মীয় হয়।” (সূরা ফাতির ৩৫ : ১৪)
(وَأَنْ لَّيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعٰي)
অর্থাৎ একজনের পাপের বোঝা যেমন অন্যজন বহন করবে না বরং সে নিজে যা অর্জন করেছে তাই পাবে। তেমনি নিজে যা করেছে তাছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির সওয়াবও সে পাবে না।
এ আয়াতকে কেন্দ্র করে ইমাম শাফেয়ীসহ ‘আলিমগণ বলেছেন : কুরআনখানীর সওয়াব মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছবে না।
কারণ এ আমলের সাথে মৃত ব্যক্তির কোন সম্পৃক্ততা বা পরিশ্রম নেই। আর যে ব্যক্তি কোন কাজ করে না বা কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকে না তার প্রতিদান কখনো সে ব্যক্তি পেতে পারে না।
তাছাড়া মৃত ব্যক্তিদের জন্য কুরআনখানী করার ব্যাপারে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মাতকে কোন প্রকার উৎসাহ প্রদান করেননি। এ ব্যাপারে সরাসরি এমনকি ইঙ্গিতেও কোন কথা বলেননি।
অনুরূপ সাহাবীদের থেকেও এ ব্যাপারে কোন প্রমাণ নেই যে, তারা এরূপ কাজ করেছেন। যদি এ কাজ ভালই হত তাহলে অবশ্যই তারা এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন।
তবে মৃত ব্যক্তির নামে দু‘আ ও দান খয়রাত করলে তার সওয়াব কবরে থেকেই পাবে। যেমন হাদীসে এসেছে :
إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ : إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায় তবে তিনটি ব্যতীত- (১) তার মৃত্যুর পর বহাল থাকে এমন সদাকাহ্। (২) এমন ইল্ম বা জ্ঞান রেখে যায় যা উপকারী। (৩) সৎ সন্তান তার জন্য দু‘আ করে। (সহীহ মুসলিম হা. ৪৩১০, আবূ দাঊদ হা. ২৮৮০)
অর্থাৎ এ তিনটিই মৃত ব্যক্তির স্বয়ং চেষ্টা ও পরিশ্রমের ফলাফল। যেমন হাদীসে এসেছে : মানুষ যা খায় তার মধ্যে উত্তম খাদ্য হলো সে নিজে যা উপার্জন করেছে। আর মানুষের সন্তানও তার উপার্জিত সম্পদ। (নাসায়ী হা. ৪৪৬৪, ইবনু মাযাহ হা. ২১৩৭, সহীহ)
আর যে ইলম মানুষের মাঝে রেখে গেছে, তার থেকে মানুষ উপকৃত হচ্ছে তা সে ব্যক্তির পরিশ্রমের ফসল।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :
مَنْ دَعَا إِلَي هُدًي، كَانَ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ، لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا، وَمَنْ دَعَا إِلَي ضَلَالَةٍ، كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ، لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا
যে ব্যক্তি মানুষকে হিদায়াতের দিকে ডাকবে, সে ব্যক্তি তেমন পূণ্য পাবে যেমন হিদায়াতের অনুসারী ব্যক্তি পাবে, এতে কারো প্রতিদান কমতি হবে না। অনুরূপ কেউ পথভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করলে সে তেমন গুনাহর ভাগী হবে যেমন গুনায় লিপ্ত ব্যক্তি পাবে, কারো পাপ কমতি করে দেয়া হবে না। (সহীহ মুসলিম হা. ২৬৭৪)
অনুরূপভাবে ঈসালে সওয়াব উপলক্ষে খতমে কুরআনের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়িয।
আল্লামা শামী “দুররে মুখতারের শরাহ” এবং “শিফাউল আলীল” নামক গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে এবং অকাট্য দলীলাদিসহ এ কথা প্রমাণ করেছেন যে, কুরআন শিক্ষাদান বা অনুরূপ অন্যান্য কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণের যে অনুমতি পরবর্তীকালের ফকীহগণ দিয়েছেন তার কারণ এমন এক ধর্মীয় প্রয়োজন যে, তাতে বিচ্যুতি দেখা দিলে গোটা শরীয়তের বিধান ব্যবস্থার মূলে আঘাত আসবে।
সুতরাং এ সব বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ রাখা একান্ত আবশ্যক। এ জন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মৃতদের ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করানো বা অন্য কোন দু‘আ কালাম ও অযিফা পড়ানো হারাম। (মারেফুল কুরআন পৃ : ৩৫)
(وَأَنَّ سَعْيَه۫ سَوْفَ يُرٰي)
অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তার কর্মের ফলাফল দেখতে পাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَقُلِ اعْمَلُوْا فَسَيَرَي اللّٰهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُوْلُه۫ وَالْمُؤْمِنُوْنَ ط وَسَتُرَدُّوْنَ إِلٰي عٰلِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ)
“আর বল : ‘তোমরা কর্ম করতে থাকো; আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করবেন এবং তাঁর রাসূল ও মু’মিনগণও করবে এবং অচিরেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতার নিকট, অতঃপর তিনি তোমরা যা করতে তা তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন।’ (সূরা তাওবাহ ৯ : ১০৫)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. দান করার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করা নিন্দনীয়।
২. মূসা ও ইব্রা-হীম (আঃ)-এর ফযীলত জানতে পারলাম।
৩. কেউ অন্যের পাপের বোঝা বহন করবে না, যদিও সে নিকটাত্মীয় হয়।
৪. মানুষ যা করবে তারই ফল পাবে।
৫. ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআনখানী করা হারাম।
৬. কুরআনখানীর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির কোন উপকার হয় না।
9 Fozlur Rahman
তোমার প্রভুর কাছেই (সবকিছুর) সমাপ্তি;
10 Mokhtasar Bangla
৪২. হে রাসূল! আপনার রবের নিকটই বান্দাদের প্রত্যাবর্তন এবং তাদের মৃত্যুর পর তাদের ঠিকানা।
11 Tafsir Ibn Kathir
Please check ayah 53:55 for complete tafsir.