তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে জিহার করে (অর্থাৎ স্ত্রীকে বলে যে, তুমি আমার জন্য আমার মায়ের পিঠের মত) তাদের স্ত্রীরা তাদের মা নয়। তাদের মা তো কেবল তারাই যারা তাদের জন্ম দিয়েছে। তারা অবশ্যই ঘৃণ্য ও মিথ্যে কথা বলে, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপ মোচনকারী, বড়ই ক্ষমাশীল।
English Sahih:
Those who pronounce thihar among you [to separate] from their wives – they are not [consequently] their mothers. Their mothers are none but those who gave birth to them. And indeed, they are saying an objectionable statement and a falsehood. But indeed, Allah is Pardoning and Forgiving.
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে ‘যিহার’ করে (তারা জেনে রাখুক যে,) তাদের স্ত্রীরা তাদের মাতা নয়; যারা তাদেরকে জন্মদান করে, শুধু তারাই তাদের মাতা,[১] তারা তো অসঙ্গত ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাপমোচনকারী, পরম ক্ষমাশীল। [২]
[১] এখানে যিহারের বিধান এই বর্ণনা হল যে, মুখে 'মা' বলে দিলেই স্ত্রী মা হয়ে যায় না। পক্ষান্তরে যদি কেউ তার স্ত্রীকে মায়ের পরিবর্তে নিজের মেয়ে অথবা নিজের বোনের পিঠের মত বলে দেয়, তাহলে তা যিহার গণ্য হবে কি না? ইমাম মালিক এবং ইমামা আবূ হানীফা (রঃ) এটাকেও যিহার গণ্য করেছেন। পক্ষান্তরে অন্যান্য উলামাগণ এটাকে যিহার গণ্য করেন না। (প্রথম উক্তিটাই বেশী সঠিক মনে হচ্ছে।) অনুরূপভাবে এ ব্যাপারেও মতভেদ রয়েছে যে, যদি কেউ বলে যে, 'তুমি আমার মায়ের মত' এবং পিঠের কথা উল্লেখই না করে। তাহলে এ ব্যাপারে আলেমগণ বলেন, যদি যিহারের নিয়তে উক্ত শব্দ ব্যবহার করে, তাহলে তা যিহার হবে, অন্যথা হবে না। ইমাম আবূ হানীফা (রঃ) বলেন, যদি এমন কোন অঙ্গের সাথে তুলনা করে, যা দেখা জায়েয, তবে তা যিহার হবে না। ইমাম শাফেয়ী (রঃ)র কথা হল, কেবল পিঠের সাথে তুলনা করলে যিহার হবে (নচেৎ না)। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[২] এই জন্যই তিনি ঐ গর্হিত ও মিথ্যা কথার পাপ থেকে ক্ষমা লাভের উপায়স্বরূপ কাফফারার (প্রায়শ্চিত্ত ও জরিমানার) বিধান দিয়েছেন।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
তোমাদের মধ্যে যারা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে যিহার করে, তারা জেনে রাখুক-তাদের স্ত্রীরা তাদের মা নয়, যারা তাদেরকে জন্ম দান করে শুধু তারাই তাদের মা; তারা তো অসংগত ও অসত্য কথাই বলে [১]। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অধিক পাপ মোচনকারী ও বড় ক্ষমাশীল।
[১] يُظَاهِرُوْنَ শব্দটি ظهار থেকে উদ্ভূত। আরবে অনেক সময় এমন ঘটনা, ঘটতো যে, স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হলে স্বামী ক্রোধান্বিত হয়ে বলত এক
أَنْتِ عَلَيَّ كَظَهْرِ أُمِّيْ
এর আভিধানিক অর্থ হলো, “তুমি আমার জন্য ঠিক আমার মায়ের পিঠের মত।” জাহেলী যুগে আরবদের কাছে “যিহার" তালাক বা তার চেয়ে অত্যন্ত কঠোর প্রকৃতির সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা বলে মনে করা হত। কারণ, তাদের দৃষ্টিতে এর অর্থ ছিল এই যে, স্বামী তার স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য সম্পর্কই ছিন্ন করছে না বরং তাকে নিজের মায়ের মত হারাম করে নিচ্ছে। এ কারণে আরবদের মতে তালাক দেয়ার পর তা প্রত্যাহার করা যেত। কিন্তু "যিহার” প্রত্যাহার করার কোন সম্ভাবনাই অবশিষ্ট থাকত না | আলোচ্য আয়াতের মাধ্যমে ইসলামী শরীআত এই প্রথার দ্বিবিধ সংস্কার সাধন করেছে। প্রথমতঃ স্বয়ং প্রথাকেই অবৈধ ও গোনাহ সাব্যস্ত করেছে। কেননা স্ত্রীকে মাতা বলে দেয়া একটা অসার ও মিথ্যা বাক্য। তাদের এই অসার উক্তির কারণে স্ত্রী মা হয়ে যায় না। মা তো সে-ই যার পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছে, তাদের এই উক্তি মিথ্যা এবং পাপও। কারণ, বাস্তব ঘটনার বিপরীতে স্ত্রীকে মাতা বলছে। দ্বিতীয় সংস্কার এই করেছেন যে, যদি কোন মূর্খ অর্বাচীন ব্যক্তি এরূপ করেই বসে, তবে এই বাক্যের কারণে ইসলামী শরীআতে স্ত্রী চিরতরে হারাম হবে না। কিন্তু এই বাক্য বলার পর স্ত্রীকে পূর্ববৎ ভোগ করার অধিকারও তাকে দেয়া হবে না। বরং তাকে জরিমানাস্বরূপ কাফফারা আদায় করতে হবে। [দেখুন- ইবন কাসীর]
3 Tafsir Bayaan Foundation
তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে যিহার* করে, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা তো কেবল তারাই যারা তাদেরকে জন্ম দিয়েছে। আর তারা অবশ্যই অসঙ্গত ও অসত্য কথা বলে। আর নিশ্চয় আল্লাহ অধিক পাপ মোচনকারী, বড়ই ক্ষমাশীল।
* স্ত্রীকে মায়ের সাথে অথবা মায়ের কোন অংগের সাথে তুলনা করাকে ‘যিহার’ বলে। প্রাচীন আরব সমাজে স্ত্রীকে মায়ের সাথে তুলনা করার মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হত। ইসলামে এর মাধ্যমে সরাসরি বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয় না। তবে অসঙ্গত কথা বলার কারণে কাফ্ফারা দিতে হয়।
4 Muhiuddin Khan
তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীগণকে মাতা বলে ফেলে, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা কেবল তারাই, যারা তাদেরকে জন্মদান করেছে। তারা তো অসমীচীন ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।
5 Zohurul Hoque
তোমাদের মধ্যের যারা তাদের স্ত্রীদের থেকে 'যিহার’ করে, -- তারা তাদের মা নয়। তাদের মায়েরা তো শুধু যারা তাদের জন্মদান করেছে তারা বৈ তো নয়। আর তারা তো নিঃসন্দেহ কথা বলছে এক গর্হিত কথা ও একটি ডাহা মিথ্যা। আর নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ নিশ্চিত মার্জনাকারী, পরিত্রাণকারী।