আল্লাহ তাঁর রসূলকে তাদের কাছ থেকে যে ফায় (বিনা যুদ্ধে পাওয়া সম্পদ) দিয়েছেন তার জন্য তোমরা ঘোড়াও দৌড়াওনি, আর উটেও চড়নি, বরং আল্লাহ তাঁর রসূলগণকে যার উপর ইচ্ছে আধিপত্য দান করেন; আল্লাহ সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।
English Sahih:
And what Allah restored [of property] to His Messenger from them – you did not spur for it [in an expedition] any horses or camels, but Allah gives His messengers power over whom He wills, and Allah is over all things competent.
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
আল্লাহ তাদের (ইয়াহুদীদের) নিকট হতে (বিনা যুদ্ধে) যে সম্পদ তাঁর রসূলকে দিয়েছেন, তার জন্য তোমরা ঘোড়া ছুটাওনি এবং উটও নয়। কিন্তু আল্লাহ যার উপর ইচ্ছা তাঁর রসূলদেরকে কর্তৃত্ব দান করেন।[১] আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
[১] বানু-নায্বীরের এই এলাকা যা মুসলিমদের দখলে এসেছিল, তা মদীনা হতে তিন-চার মাইল দূরত্বে অবস্থিত ছিল। অর্থাৎ, মুসলিমদেরকে তার জন্য সুদীর্ঘ সফর করার প্রয়োজন হয়নি এবং এর জন্য মুসলিমদেরকে উট ও ঘোড়া দৌড়াতে হয়নি। অনুরূপ যুদ্ধ করারও প্রয়োজন পড়েনি। বরং সন্ধির মাধ্যমে এই এলাকা জয় হয়ে যায়। অর্থাৎ, মহান আল্লাহ তাঁর রসূল (সাঃ)-কে বিনা যুদ্ধেই তাদের উপর জয়যুক্ত করে দিয়েছিলেন। আর এই জন্য এখান থেকে প্রাপ্ত মালকে 'মালে ফাই' গণ্য করা হয়। এই মালের বিধান গনীমতের মালের বিধান থেকে আলাদা। অর্থাৎ, فَيْءٌ সেই মালকে বলা হয়, যা বিনা যুদ্ধে শত্রুপক্ষ ত্যাগ করে পালিয়ে যায় অথবা যা সন্ধির মাধ্যমে লাভ হয়। পক্ষান্তরে যে মাল দস্তরমত যুদ্ধ করে জয়যুক্ত হয়ে অর্জিত হয় তাকে 'মালে গনীমত' বলা হয়।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর আল্লাহ ইয়াহুদীদের কাছ থেকে তাঁর রাসূলকে যে “ফায়” দিয়েছেন, তার জন্য তোমরা ঘোড়ায় কিংবা উটে আরোহণ করে যুদ্ধ করনি [১]; বরং আল্লাহ যার উপর ইচ্ছে তাঁর রাসূলগণকে কর্তৃত্ব দান করেন; আর আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
[১] আয়াতে বর্ণিত أفاء শব্দটি فيء থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ, প্রত্যাবর্তন করানো। যুদ্ধ ও জিহাদ ব্যতীত কাফেরদের কাছ থেকে অর্জিত সকল প্রকার ধন-সম্পদকেই ‘ফায়” বলা হত। [ইবন কাসীর] সে হিসেবে আলোচ্য আয়াতের সারমর্ম এই যে, যে ধন-সম্পদ যুদ্ধ ও জিহাদ ব্যতিরেকে অর্জিত হয়েছে, তা মুজাহিদ ও যোদ্ধাদের মধ্যে যুদ্ধলব্ধ সম্পদের আইনানুযায়ী বন্টন করা হবে না বরং তা পুরোপুরিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এখতিয়ারে থাকবে। তিনি যাকে যতটুকু ইচ্ছা করবেন দেবেন, অথবা নিজের জন্যে রাখবেন। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “বনু নাদ্বীর এর সম্পদ ছিল এমন সম্পদ যা আল্লাহ্ তাঁর রাসূলের করায়ত্ব করে দিয়েছিলেন। যাতে মুসলিমদের কোন ঘোড়া বা উটের ব্যবহার লাগেনি। অর্থাৎ যুদ্ধ করতে হয়নি। সুতরাং তা ছিল বিশেষভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্পদ। তিনি এটা থেকে তার পরিবারের বাৎসরিক খোরাকির ব্যবস্থা করতেন। বাকী যা থাকত তা যোদ্ধাস্ত্র ও আল্লাহর রাস্তায় ওয়াকফ হিসেবে থাকত। [বুখারী; ৪৮৮৫, মুসলিম; ১৭৫৭]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ্ তা'আলা 'ফায়' তাঁর রাসূলের হাতে দিয়ে দিয়েছেন। তারপর উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু
এ আয়াত পাঠ করে বললেন, এতে ‘ফায়” বিশেষভাবে রাসূলকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তবে তোমাদেরকে বাদ দিয়ে তিনি নিজে সেটা নিয়ে নেননি। তোমাদের উপর নিজেকে প্রাধান্য দেননি। [বুখারী; ৩০৯৩]
3 Tafsir Bayaan Foundation
আল্লাহ ইয়াহুদীদের নিকট থেকে তাঁর রাসূলকে ফায়* হিসেবে যা দিয়েছেন তোমরা তার জন্য কোন ঘোড়া বা উটে আরোহণ করে অভিযান পরিচালনা করনি। বরং আল্লাহ তাঁর রাসূলগণকে যাদের ওপর ইচ্ছা কতৃত্ব প্রদান করেন। আল্লাহ সকল কিছুর ওপর সর্বশক্তিমান।
*যুদ্ধ ছাড়াই যে ধন-সম্পদ অর্জিত হয় তাকে في বলে। এটি সাধারণত বায়তুল মালে জমা রাখা হয় এবং রাসূল স্বীয় তত্ত্বাবধানে রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে তা ব্যবহার করতেন। আর যুদ্ধের মাধ্যমে যা অর্জিত হয় তাকে গনিমত غنيمت বলা হয়।
4 Muhiuddin Khan
আল্লাহ বনু-বনুযায়রের কাছ থেকে তাঁর রসূলকে যে ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তজ্জন্যে তোমরা ঘোড়ায় কিংবা উটে চড়ে যুদ্ধ করনি, কিন্তু আল্লাহ যার উপর ইচ্ছা, তাঁর রসূলগণকে প্রাধান্য দান করেন। আল্লাহ সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান।
5 Zohurul Hoque
আর যা-কিছু তাদের থেকে আল্লাহ্ তাঁর রসূলকে ফাও দিয়েছেন, যার জন্য তোমরা ধাওয়া করাও নি কোনো ঘোড়া, আর না কোনো উট, কিন্ত আল্লাহ্ তাঁর রসূলগণকে দখল দিয়ে থাকেন যার উপরে তিনি ইচ্ছা করে থাকেন। আর আল্লাহ্ সব-কিছুর উপরে সর্বশক্তিমান।