৮-১৬ নং আয়াতের তাফসীর
এর পূর্বে পাপী, দুষ্কৃতিকারী এবং মন্দ লোকদের বর্ণনা এবং তাদের শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ এখানে পুণ্যবান ও সঙ্কৰ্মশীলদের পরিণাম ও পুরস্কারের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলছেন যে, সেইদিন এমন বহু চেহারা দেখা যাবে যাদের চেহারা থেকে তৃপ্তি ও আনন্দ উল্লাসের নিদর্শন প্রকাশ পাবে তারা নিজেদের সৎকাজের বিনিময় দেখে খুশী হবে। জান্নাতের উঁচু উঁচু অট্টালিকায় তারা অবস্থান করবে। সেখানে কোন প্রকারের বাজে কথা ও অশ্লীল আলাপ থাকবে না। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
لَا یَسْمَعُوْنَ فِیْهَا لَغْوًا وَّ لَا تَاْثِیْمًا ـ اِلَّا قِیْلًا سَلٰمًا سَلٰمًا
“সেথায় তারা শুনবে না কোন অসার অথবা পাপ বাক্য” (৫৬:২৫-২৬) সালাম আর সালাম’ বানী ব্যতীত।” আর এক জায়গায় বলেন لَا لَغْوٌ فِیْهَا وَ لَا تَاْثِیْمٌ অর্থাৎ “তথায় নেই কোন অসার কথা পাপবাক্য।” (৫২:২৩)
মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘সেথায় থাকবে বহমান প্রস্রবণ।' এখানে একটি ঝর্ণার কথা বুঝানো হয়নি। বরং ঝর্ণা সমূহের কথা বুঝানো হয়েছে।
মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতের ঝর্ণাসমূহ মিশক এর পাহাড় এবং মিশকের টিলা হতে প্রবাহিত হবে।
তথায় থাকবে উন্নত মর্যাদা সম্পন্ন শয্যা। অর্থাৎ জান্নাতীদের জন্যে জান্নাতে উঁচু উঁচু পালঙ্ক রয়েছে এবং ঐ সব পালঙ্কে উঁচু উঁচু আরামদায়ক বিছানা তোষকসমূহ রয়েছে। সেই বিছানার পাশে হুরগণ বসে আছে। এ সব বিছানাগুলো উঁচু উঁচু গদিবিশিষ্ট হলেও যখনই আল্লাহর বন্ধুরা ওগুলোতে শোবার ইচ্ছা করবে তখন ওগুলো অবনত হয়ে যাবে এবং নুয়ে পড়বে। রকমারী সুরা থাকবে, যে রকম. সুরা যতটুকু পরিমাণ ইচ্ছা করবে পান করতে পারবে। সারি সারি পালঙ্ক ও বিছানা সুসজ্জিত থাকবে, যখন যেখানে খুশী উপবেশন ও শয়ন করতে পারবে।
হযরত উসমান ইবনে যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কেউ আছে কি যে জান্নাতের জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করবে? এমন জান্নাত যার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বেহিসাব। কা'বার প্রতিপালকের শপথ! সেটা এক চমকিত নুর বা জ্যোতি, সেটা এক উপচে পড়া সবুজ সৌন্দর্য, সেখানে উঁচু উঁচু মহল ও বালাখানা রয়েছে। রয়েছে প্রবাহিত ঝর্ণাধারা, রেশমী পোশাক, নরম নরম গালিচা এবং পাকা পাকা উন্নত মানের ফল। সেটা চিরস্থায়ী স্থান, আরাম আয়েশ ও নিয়ামতে পরিপূর্ণ।” তখন সাহাবীগণ বলে উঠলেনঃ “আমরা সবাই এ জান্নাতের আকাংখী এবং আমরা এর জন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করবো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদের একথা শুনে বললেন! ইনশাআল্লাহ (যদি আল্লাহ চান) বল।” তখন তারা ইনশাআল্লাহ বললেন।” (এ হাদীসটি আবু বকর ইবনে আবী দাউদ (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)