৪৬-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা'আলা বলেন, হে নবী! তাদের ওযর যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তার বাহ্যিক প্রমাণ এটাও যে, তাদের যুদ্ধে গমনের ইচ্ছা থাকলে কমপক্ষে তারা যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জাম তো প্রস্তুত করতো। কিন্তু তারাতো যুদ্ধে গমনের ঘোষণা ও নির্দেশের পরেও এবং দিন অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরেও হাতের উপর হাত রেখে বসে রয়েছে। তারা একটা খড়কুটাকেও এদিক থেকে ওদিকে নিয়ে যায়নি। অবশ্য তাদের তোমাদের সাথে বের হওয়াকে আল্লাহ তা'আলা পছন্দও করেননি। এ কারণেও তিনি তাদেরকে পিছনে সারিয়ে রেখেছেন। আর স্বাভাবিকভাবে তাদেরকে বলে দিয়েছিলেন, যুদ্ধ থেকে দূরে অবস্থানকারীদের সাথে তোমরাও অবস্থান কর। হে মুসলিমরা! তোমাদের সাথে তাদের বের হওয়া আল্লাহ তাআলার নিকট অপছন্দনীয় হওয়ার কারণ এই যে, তারা তো ভীরু ও বড় রকমের কাপুরুষ। যুদ্ধ করার সাহস তাদের মোটেই নেই। তোমাদের সাথে গেলেও তারা দূরে দূরেই থাকতো। তা ছাড়া তারা তোমাদের পরস্পরের মধ্যে বিবাদ বাধিয়ে দিতো। তারা এদিকের কথা ওদিকে এবং ওদিকের কথা এদিকে লাগিয়ে দিয়ে পরস্পরের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি করতে এবং কোন একটা নতুন ফিত্না খাড়া করে তোমাদের অবস্থাকে জটিল করে তুলতো। তোমাদের মধ্যে এমন লোকও বিদ্যমান রয়েছে যারা ঐসব লোককে মান্য করে চলে, তাদের মতামত সমর্থন করে এবং তাদের কার্যক্রমকে সুনজরে দেখে থাকে। তারা ভুলের মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে বলে ঐসব লোকের দুঙ্কার্যের ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে বে-খবর থাকে। মুমিনদের পক্ষে এর ফল খুবই খারাপ হয়। তাদের পরস্পরের মধ্যে অনাচার ও ঝগড়া-বিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। মুজাহিদ (রঃ) প্রমুখ গুরুজনের উক্তি এই যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- হে মুমিনগণ! ঐ সব লোকের গুপ্তচরও তোমাদের মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে, যারা তোমাদের খুঁটিনাটি সংবাদও তাদের কাছে পৌঁছিয়ে থাকে। কিন্তু এ অর্থ করাতে ঐ সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যা আয়াতের শুরুতে ছিল। অর্থাৎ ঐ লোকদের তোমাদের সাথে বের হওয়া এ জন্যেও অপছন্দনীয় যে, তোমাদের মধ্যে এমন কতকগুলো লোকও রয়েছে যারা তাদের কথা মেনে থাকে। এটা তো খুবই সঠিক কথা। কিন্তু তাদের বের না হওয়ার কারণের জন্যে গোয়েন্দাগিরির কোন বিশেষত্ব থাকতে পারে না। এ জন্যেই কাতাদা (রঃ) প্রমুখ মুফাসসিরদের উক্তি এটাই।
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক (রঃ) বলেন যে, অনুমতি প্রার্থনাকারীদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল এবং জাদ ইবনে কায়েসও ছিল। এরাই ছিল বড় বড় নেতা ও প্রভাবশালী মুনাফিক। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে দূরে নিক্ষেপ করে দেন। যদি তারা মুসলিমদের সাথে বের হতো তবে তাদের অনুগত লোকেরা সময় সুযোগে তাদের সাথে যোগ দিয়ে মুসলিমদের ক্ষতি সাধন করতো। মুহাম্মাদী সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে যেতো। কেননা, এই মুনাফিকরা বাহ্যিক সৌন্দর্যের অধিকারী ছিল। কিছু কিছু মুসলিম তাদের প্রকৃত অবস্থা অবহিত ছিল না। তাই তারা তাদের বাহ্যিক ইসলাম ও মুখরোচক কথায় পাগল ছিল এবং তখন পর্যন্ত তাদের অন্তরে তাদের প্রতি ভালবাসা বিদ্যমান ছিল। এটা সত্য কথা যে, তাদের এ অবস্থা মুনাফিকদের আসল অবস্থা অবগত না হওয়ার কারণেই ছিল। পূর্ণ জ্ঞান তো আল্লাহ তা'আলারই রয়েছে। তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সমস্ত খবরই রাখেন। তিনি অদৃশ্যের সংবাদ রাখেন বলেই মুসলিমদেরকে বলছেন- হে মুসলিমরা! এই মুনাফিকদের যুদ্ধে গমন না করাকে তোমরা গনীমত মনে কর। যদি তারা তোমাদের সাথে থাকতো তবে ফিত্না-ফাসাদ সৃষ্টি করতো। তারা নিজেরাও ভাল কাজ করতো না এবং তোমাদেরকেও করতে দিতো না।
এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ “যদি তাদেরকে (কাফিরদেরকে) দ্বিতীয়বার দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয় তবে তারা আবার নতুনভাবে ঐ কাজই করবে যা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে এবং নিশ্চয়ই তারা মিথ্যাবাদী।” অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “যদি তাদের অন্তরে কোন কল্যাণ নিহিত থাকতো তবে অবশ্যই তিনি তাদেরকে শুনিয়ে দিতেন, আর যদি তিনি তাদেরকে শুনাতেনও তবে তারা তাচ্ছিল্যভরে ফিরে যেতো।” আর এক স্থানে আল্লাহ পাক বলেনঃ “যদি আমি তাদের উপর ফরয করে দিতাম (দিয়ে বলতাম)- তোমরা আত্মহত্যা কর কিংবা নিজেদের দেশ থেকে বেরিয়ে যাও, তবে অল্প কয়েকজন ব্যতীত এই আদেশ কেউই পালন করতো না, আর যদি তারা তাদেরকে যেরূপ উপদেশ দেয়া হয় তদনুযায়ী কাজ করতো, তবে তাদের জন্যে উত্তম হতো এবং ঈমানকে অধিকতর দৃঢ়কারী হতো। আর এ অবস্থায় আমি তাদেরকে বিশেষ করে আমার পক্ষ থেকে মহা পুরস্কার প্রদান করতাম। আর আমি অবশ্যই তাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করতাম।” এ ধরনের আয়াত আরো অনেক রয়েছে।