লাহাব আয়াত ৫
فِيْ جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّنْ مَّسَدٍ ࣖ ( المسد: ٥ )
Fee jeediha hab lum mim-masad (al-Masad ১১১:৫)
English Sahih:
Around her neck is a rope of [twisted] fiber. (Al-Masad [111] : 5)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আর (দুনিয়াতে তার বহনকৃত কাঠ-খড়ির পরিবর্তে জাহান্নামে) তার গলায় শক্ত পাকানো রশি বাঁধা থাকবে। (লাহাব [১১১] : ৫)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
তার গলদেশে খেজুর অাঁশের পাকানো রশি। [১]
[১] جِيدٌ অর্থ হল গর্দান, ঘাড়। আর مَسَد অর্থ হল মজবুত রশি; চাহে তা কোন ঘাস অথবা খেজুরের অাঁশ বা ছিলকার অথবা লোহার তার পাকানো হোক; যেমন এক এক মুফাসসির এর এক এক রকম অর্থ বর্ণনা করেছেন। কিছু উলামার মতে, সে দুনিয়াতে ঐ রশি নিজ ঘাড়ে বা গলদেশে ঝুলিয়ে রাখত। কিন্তু সবচেয়ে বেশী সঠিক বলে মনে হয় যে, জাহান্নামে তার গলায় যে বেড়ি হবে, তা হবে লোহার তারের পাকানো রশি। مَسَد শব্দ দ্বারা উপমা দিয়ে রশির মজবুতী ও শক্ত অবস্থার কথা স্পষ্ট করা হয়েছে।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
তার গলায় [১] পাকানো রশি [২]।
[১] তার গলার জন্য ‘জীদ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষায় গলাকে জীদ বলা হয়। পরবর্তীতে যে গলায় অলংকার পরানো হয়েছে তার জন্যে ব্যবহৃত হয়েছে। [আত-তাহরীর ওয়াত-তানওয়ীর] সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব্ বলেন, সে একটি অতি মূল্যবান হার গলায় পরতো এবং বলতো, লাত ও উয্যার কসম, এ হার বিক্রি করে আমি এর মূল্য বাবদ পাওয়া সমস্ত অর্থ মুহাম্মাদের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক কাজ করার জন্য ব্যয় করবো। [ইবন কাসীর] এ কারনে জীদ শব্দটি এখানে ব্যবহার করা হয়েছে ব্যাঙ্গার্থে। অর্থাৎ এ অলংকার পরিহিত সুসজ্জিত গলায়, যেখানে পরিহিত হার নিয়ে সে গর্ব করে বেড়ায়, কিয়ামতের দিন সেখানে রশি বাঁধা হবে। [তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
[২] বলা হয়েছে, তার গলায় বাধা রশিটি ‘মাসাদ’ ধরনের। ‘মাসাদ” এর অর্থ নির্ণয়ে কয়েকটি মত রয়েছে। তার একটি হচ্ছে, খুব মজবুত করে পাকানো রশিকে ‘মাসাদ’ বলা হয়। [বাগাওয়ী] দ্বিতীয় বক্তব্য হচ্ছে, খেজুর গাছের (ডালের) ছাল/আঁশ থেকে তৈরি শক্ত পাকানো খসখসে রশি ‘মাসাদ’ নামে পরিচিত। [মুয়াস্সার] এর আরেকটি অর্থ, খেজুরের ডালের গোড়ার দিকের মোটা অংশ থেঁতলে যে সরু আঁশ পাওয়া যায় তা দিয়ে পাকানো রশি অথবা উটের চামড়া বা পশম দিয়ে তৈরি রশি। [কুরতুবী] মুজাহিদ রাহেমাহুল্লাহ বলেন, এর অর্থ লোহার তারের পাকানো রশি বা লোহার বেড়ি। কোন কোন মুফাসসির বলেন, তার গলায় আগুনের রশি পরানো হবে। তা তাকে তুলে আগুনের প্রান্তে উঠাবে আবার তাকে এর গর্তদেশে নিক্ষেপ করবে। এভাবে তার শাস্তি চলতে থাকবে। [ইবন কাসীর]
3 Tafsir Bayaan Foundation
তার গলায় পাকানো দড়ি।
4 Muhiuddin Khan
তার গলদেশে খর্জুরের রশি নিয়ে।
5 Zohurul Hoque
তার গলায় থাকবে কড়াপাকের খেজুরের আঁশের রশি।
6 Mufti Taqi Usmani
গলদেশে মুঞ্জ (তৃণ বিশেষ)-এর রশি লাগানো অবস্থায়।
7 Mujibur Rahman
তার গলদেশে খেজুর বাকলের রজ্জু রয়েছে।
8 Tafsir Fathul Mazid
নামকরণ:
لهب শব্দের অর্থ : অগ্নিশিখা, আগুনের শিষ, স্ফুলিঙ্গ ইত্যাদি। তৃতীয় আয়াতে উল্লিখিত শব্দ থেকেই সূরার নামকরণ করা হয়েছে। এ সূরাকে সূরা মাসাদও বলা হয়।
শানে নুযূল: (রাঃ)/b>
ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: যখন
(وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ)
“আর তুমি তোমর নিকটতম আন্তীয়-স্বজনদের ভীতি প্রদর্শন কর” (সূরা শুআরা ২৬: ২১৪) আয়াতটি অবতীর্ণ হয় অর্থাৎ আত্মীয়-স্বজন ও একনিষ্ঠ দলভুক্ত লোকদেরকে ভয় দেখানো ও তাদের মাঝে তাবলীগ করার নির্দেশ প্রদান করা হলো তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাফা পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেন এবং ইয়া সাবাহা বলে উঁচু আওয়াজ করলেন। (এটা বিপদসংকেতমূলক শব্দ, তৎতালে কেউ বিপদে পড়লে এ শব্দ ব্যবহার করত) সবাই বলল: এটা কে? সবাই তাঁর কাছে একত্রিত হলো। এমনকি কোন লোক আসতে না পারলে অন্য একজন দূত প্রেরণ করেছিল। তখন নাবী (সাঃ) বললেন : তোমরা কি লক্ষ্য করেছো? আমি যদি তোমাদেরকে বলি এক দল অশ্বারোহী সৈন্য এ পাহাড়ের পশ্চাতে তোমাদের ওপর হামলা করার জন্য অপেক্ষা করছে তাহলে তোমরা কি বিশ্বাস করবে? সবাই বলল : কেন বিশ্বাস করব না? আমরা তো তোমাকে কখনও মিথ্যারূপে পাইনি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : তাহলে শোন, আমি তোমাদেরকে আসন্ন এক ভয়াবহ কঠিন শাস্তি সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করছি। আবূ লাহাব বলল : তোমার ধ্বংস হোক! এজন্য তুমি আমাদেরকে একত্রিত করেছো। তখন এ সূরাটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৭১, সহীহ মুসলিম হা. ২০৮)
أبو لَهَبٍ - আবূ লাহাব এর প্রকৃত নাম আব্দুল উয্যা। তার রূপ সৌন্দর্য ও মুখমন্ডলের উজ্জ্বলতার (লাল আভার) কারণে আবূ লাহাব বলা হয়। তা ছাড়া পরিণামের দিক দিয়েও সে জাহান্নামের ইন্ধন। আবূ লাহাব কুরাইশ নেতা আব্দুল মুত্তালিবের দশজন পুত্রের অন্যতম একজন। আবূ লাহাব রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চাচা, তার নিকট রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এত প্রিয় ছিল যে, তাঁর জন্মের খবর শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে সর্বত্র দৌড়ে গিয়ে লোকদের জানিয়ে দিয়েছিল যে, তার মৃত ছোট ভাই আব্দুল্লাহর বংশ রক্ষা হয়েছে। এ সুসংবাদটি প্রথম তাকে শোনানোর জন্য সে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দাসী সুওয়াইবাকে আযাদ করে দেয়। (আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ২/২৭৩; আলবানী, সহীহ সীরাতুন নববিয়্যাহ পৃ : ১৫)
নবুওয়াতের পূর্বে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর দুকন্যা রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুমকে আবূ লাহাবের দুপুত্র উৎবা ও উতাইবার সাথে বিবাহ দিয়েছিলেন। (আর রাহীকুল মাখতূম পৃ : ৮৬)
এত আন্তরিকতা ও সুসম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নবুওয়াত লাভের পর আবূ লাহাব চরম শত্রুতে পরিণত হয় এবং রাসূল (সাঃ)-কে খুব কষ্ট দেয়। তার ছেলেদ্বয়কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দু কন্যাকে তালাক দিতে বাধ্য করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দ্বিতীয় পুত্র আব্দুল্লাহ মারা গেলে আবূ লাহাব খুশীতে বেশামাল হয়ে সবার কাছে গিয়ে বলে, মুহাম্মাদ আবতার অর্থাৎ নির্বংশ হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় হাজ্জের মওসুমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আগত হাজীদের তাঁবুতে গিয়ে তাওহীদের দাওয়াত দিতেন কিন্তু আবূ লাহাব তাঁর পেছন থেকে লোকদের তাড়িয়ে দিত এবং বলত ‘তোমরা এর কথা শুননা, সে ধর্মত্যাগী ও মহা মিথ্যুক। এভাবে সে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ করে ও কষ্ট দিতে থাকে। (মুসনাদে আহমাদ হা. ১৬০৬৬, সহীহ ইবনু হিব্বান হা. ৬৫৬২, ইবুন কাসীর)
উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আপন চাচাদের মধ্যে তিন ধরনের লোক ছিল। ১. যারা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিল ও তাঁর সাথে জিহাদ করেছিল যেমন হামযাহ ও আব্বাস (রাঃ)। ২. যারা তাঁকে সাহায্য সহযোগিতা করেছে কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করেনি যেমন আবূ তালেব। ৩. যারা শুরু থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শত্রুতা করেছিল যেমন আবূ লাহাব।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্মের খুশীতে আবূ লাহাবের দাসী আযাদ করাকে কেন্দ্র করে বিদআতীরা জাল হাদীস বর্ণনা করে বলে থাকে : রাসূলের জন্মের খুশীতে আবূ লাহাব দাসী আযাদ করার কারণে যদি প্রতি সোমবার জাহান্নামের শাস্তি লাঘব করা হয় তাহলে অবশ্যই ঈদে মীলাদুনাবী উদ্যাপন ফযীলতের কাজ। এ বিষয়ে কুফরী অবস্থায় চাচা আব্বাস-এর একটি স্বপ্নের কথা বলা হয়, যার কোন ভিত্তি নেই। সুতরাং এসব বিদআতী কর্মকান্ড অবশ্যই পরিত্যাজ্য, কোনক্রমেই রাসূলুলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্ম বার্ষিকী পালন করা বা ঈদে মীলাদুন্নাবী উদ্যাপন করা ইবাদত হতে পারে না। যদি তা ইবাদত হত তাহলে অবশ্যই সাহাবীগণ তা করতেন, কিন্তু কোন সাহাবী করেছেন বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। বরং এখান থেকে শিক্ষণীয় বিষয় হল : ইসলাম গ্রহণ করার কারণে বেলালের মত একজন হাবশী গোলাম সম্মানের পাত্রে পরিণত হল আর কুরাইশদের সম্মানিত নেতা আবূ লাহাব ইসলাম বর্জন করার কারণে অসম্মানিত ও জাহান্নামী হল। একজন মুসলিম যত বার এ সূরা পাঠ করবে ততবার একটি অক্ষরের বিনিময়ে দশটি নেকী পাবে, অপরপক্ষে আবূ লাহাব ও তার স্ত্রী অভিশাপ ও ধ্বংসের বদদু‘আ পাবে।
تَبَّ শব্দের অর্থ : বরবাদ হওয়া, ধ্বংস হওয়া ইত্যাদি। শব্দটি অতীতকাল হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থ : আবূ লাহাবের দু হাত ধ্বংস হয়ে গেছে। অথচ তখনও সে ধ্বংস হয়নি। অর্থাৎ অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাবে, তাই পূর্বেই এর নিশ্চয়তা দিয়ে দেয়া হয়েছে। সত্যিই তাই হলো, আবূ লাহাব বদরের যুদ্ধের কয়েকদিন পর এক চর্মরোগে আক্রান্ত হয়। সে রোগের কারণে দেহে প্লেগের মত গুটলি প্রকাশ পায়। ফলে ধীরে ধীরে মৃত্যু মুখেমুখে পতিত হয়। তিন দিন পর্যন্ত তার লাশ এভাবেই পড়েছিল। পরিশেষে তা খুবই দুর্গন্ধময় হয়ে ওঠে। অতঃপর ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার আশংকায় এবং মান সম্মানের ভয়ে তার ছেলেরা তাকে দূর থেকে পাথর ফেলে ও মাটি ঢেলে দিয়ে দাফন করে। (আইসারুত তাফাসীর)
দ্বিতীয় تَبَّ ক্রিয়া দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে যে বদ্দুআ দেওয়া হয়েছিল তার জবাবস্বরূপ পুনরায় বদ্দুআ করা হয়েছে।
يَدَآ শব্দটি দ্বিবচন, অর্থ : হাতদ্বয়। এখানে শুধু হাত উদ্দেশ্য নয় বরং সম্পূর্ণ শরীর উদ্দেশ্য।
(مَآ أَغْنٰي عَنْهُ مَالُه۫ وَمَا كَسَبَ)
অর্থাৎ সে যেসব সম্পদ উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে এবং যা উপার্জন করেছে ও তার স্ত্রী সন্তান-সন্ততি কোন কিছুই আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারেনি। ইবনু আব্বাস (রাঃ)-সহ অনেক মুফাসসির বলেন : এর অর্থ তার সন্তানাদি। যেমন আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন :
إِنَّ أَطْيَبَ مَا أَكَلْتُمْ مِنْ كَسْبِكُمْ، وَإِنَّ أَوْلَادَكُمْ مِنْ كَسْبِكُم
মানুষ যা উপার্জন করে সেটাই তার সর্বাধিক পবিত্র খাদ্য। আর তার সন্তান তার উপার্জনের অংশ। (আবূ দাঊদ হা. ৩৫৩০, মিশকাত হা. ২৭৭০, সহীহ)
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন : যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বীয় জাতিকে ঈমানের দাওয়াত ও আখেরাতের আযাবের ভয় দেখান, তখন আবূ লাহাব তাচ্ছিল্যভরে বলেছিল : আমার ভাতিজার কথা যদি সঠিক হয় তাহলে আমি কিয়ামতের দিন আমার ধন-সম্পদ ও সন্তানাদির বিনিময়ে নিজেকে মুক্ত করে নেব। অত্র আয়াতে তার জবাব এসেছে। (ইবনু কাসীর)
وامراته অর্থাৎ আবূ লাহাব জাহান্নামে যাবে, সাথে তার স্ত্রীও জাহান্নামে যাবে। তার স্ত্রীর নাম উম্মে জামীলা আরওয়া বিনতে হারব। সে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে দুশমনীর দিক দিয়ে স্বামীর চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না।
(حَمَّالَةَ الْـحَطَبِ)
অর্থাৎ জাহান্নামে সে স্বামীর আগুনে কাঠ এনে নিক্ষেপ করবে। ফলে আগুন আরো বৃদ্ধি পাবে। এটা হবে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে। অর্থাৎ দুনিয়াতে যেমন স্বামীকে কুফর ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে কষ্ট দানে সহযোগিতা করছিল আখিরাতেও জাহান্নামে সে ভাবে সাহায্য করবে।
(فِيْ جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّنْ مَّسَدٍ) - جيد
শব্দের অর্থ গর্দান, ঘাড়। مَّسَد অর্থ ليف বা আঁশ, ছিলকা ইত্যাদি। অর্থাৎ জাহান্নামে তার গলায় লোহার বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হবে যা খেজুরের আঁশের মত পাকানো হবে। অথবা তার গলায় লোহার বেড়ি পরিহিত অবস্থায় জাহান্নামে স্বামীর জন্য কাঠ বহন করবে। যহহাক ও অন্যান্য মুফাসসিরগণ বলেন: ঐ রশিই কিয়ামতের দিন তার জন্য আগুনের রশি হবে। আর সাঈদ বিন মুসাইয়িব (রহঃ) বলেন: আবূ লাহাবের স্ত্রীর মণিমুক্তাখচিত বহু মূল্যবান একটি কণ্ঠহার ছিল। যেটা দেখিয়ে সে লোকদের বলত: লাত ও ওযযার কসম! এটা আমি অবশ্যই ব্যয় করব মুহাম্মাদের শত্রুতার পেছনে। এ কণ্ঠহারই তার জন্য কিয়ামতের দিন আযাবের কণ্ঠহার হবে। (তাফসীর কুরতুবী)
ইসলামের প্রচার ও প্রসারে যুগোপযোগি মাধ্যম কাজে লাগাতে হবে যেভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তৎকালীন নিয়মানুযায়ী সাফা পাহাড়ে উঠে জাতির কাছে দাওয়াত দিয়েছিলেন। আর দাওয়াত দিলে পক্ষ বিপক্ষ দুশ্রেণির লোকই পাওয়া যাবে। তাই বলে পশ্চাদপদ হওয়া যাবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে শত্রুতা করে তারা সবাই ধ্বংস হয়েছে, ভবিষ্যতেও হবে এবং আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম।
২. ঈমান-আমল না থাকলে ধন-সম্পদ, জ্ঞান-গরিমা ও ক্ষমতা কোন কাজে আসবে না।
৩. সফলকাম তারাই যারা নিজেদের জীবনকে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আদর্শে গড়ে তুলেছে, অতঃপর তাতে অবিচল থেকেছে।
৪. ইসলাম প্রচারে যুগোপযোগি মাধ্যম গ্রহণ করা যেতে পারে।
৫. ঈদে মীলাদুন্নাবী উদ্যাপন বিদ‘আত। কোন সাহাবী, তাবেয়ী এমনকি চার ইমামের কেউ তা করেননি।
9 Fozlur Rahman
(জাহান্নামে) তার গলায় খেজুর-গাছের আঁশের একটি পাকানো রশি (অর্থাৎ একটি শক্ত বন্ধনী থাকবে)।
10 Mokhtasar Bangla
৫. তার গলদেশে থাকবে শক্তভাবে পাকানো খেজুর গাছের আঁশের রশি। যা লাগিয়ে তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।
11 Tafsir Ibn Kathir
১-৫ নং আয়াতের তাফসীর
সহীহ বুখারীতে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সঃ) বাতহা’ নামক স্থানে গিয়ে একটি পাহাড়ের উপর আরোহণ করলেন এবং উচ্চস্বরে “ইয়া সাবা’হাহ্, ইয়া সাবা’হা'হ্” (অর্থাৎ হে ভোরের বিপদ, হে ভোরের বিপদ) বলে ডাক দিতে শুরু করলেন। অল্পক্ষণের মধ্যেই সমস্ত কুরায়েশ নেতা সমবেত হলো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বললেনঃ “যদি আমি তোমাদেরকে বলি যে, সকালে অথবা সন্ধ্যাবেলায় শত্রুরা তোমাদের উপর আক্রমণ চালাবে তবে কি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে?” সবাই সমস্বরে বলে উঠলোঃ “হ্যা হ্যা অবশ্যই বিশ্বাস করবো।” তখন তিনি তাদেরকে বললেনঃ “শোননা, আমি তোমাদেরকে আল্লাহর ভয়াবহ শাস্তির আগমন সংবাদ দিচ্ছি।" আবু লাহাব তার একথা শুনে বললোঃ “তোমার সর্বনাশ হোক, একথা বলার জন্যেই কি তুমি আমাদেরকে সমবেত করেছো?” তখন আল্লাহ তা'আলা এ সূরা অবতীর্ণ করেন। অন্য এক রিওয়াইয়াতে আছে যে, আবু লাহাব হাত ঝেড়ে নিম্ন লিখিত বাক্য বলতে বলতে চলে গেলঃ
تَبَّالَكَ سَائِرَ الْيَوْمِ অর্থাৎ “তোমার প্রতি সারাদিন অভিশাপ বর্ষিত হোক।” আবূ লাহাব ছিল রাসূলুল্লাহর (সঃ) চাচা। তার নাম ছিল আবদুল উযযা ইবনে আবদিল মুত্তালিব। তার কুনইয়াত বা ছদ্ম পিতৃপদবীযুক্ত নাম আবূ উত্মাহ ছিল। তার সুদর্শন ও কান্তিময় চেহারার জন্যে তাকে আবু লাহাব অর্থাৎ শিখা বিশিষ্ট বলা হতো। সে ছিল রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকৃষ্টতম শক্র। সব সময় সে তাকে কষ্ট দেয়ার জন্যে এবং তার ক্ষতি সাধনের জন্যে সচেষ্ট থাকতো।
হযরত রাবীআহ ইবনে ইবাদ দাইলী (রাঃ) তার ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর ইসলাম পূর্ব যুগের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ “আমি নবী করীম (সঃ) কে যুল মাজায এর বাজারে দেখেছি, সে সময় তিনি বলছিলেনঃ “হে লোক সকল! তোমরা বলঃ আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তাহলে তোমরা মুক্তি ও কল্যাণ লাভ করবে।” বহু লোক তাঁকে ঘিরে রেখেছিল। আমি লক্ষ্য করলাম যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পিছনেই গৌরকান্তি ও সুডোল দেহ-সৌষ্ঠবের অধিকারী একটি লোক, যার মাথার চুল দুপাশে সিঁথি করা, সে এগিয়ে গিয়ে সমবেত লোকদের উদ্দেশ্যে বললোঃ “হে লোক সকল! এ লোক বে-দ্বীন ও মিথ্যাবাদী।” মোটকথা রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইসলামের দাওয়াত দিয়ে যাচ্ছিলেন, আর সুদর্শন এই লোকটি তার বিরুদ্ধে বলতে বলতে যাচ্ছিল। আমি লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলামঃ এ লোকটি কে? উত্তরে তারা বললোঃ “এ লোকটি হলো রাসূলুল্লাহর (সঃ) চাচা আবু লাহাব।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
অন্য এক রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাবীআ'হ্ (রাঃ) বলেনঃ “আমি আমার পিতার সাথে ছিলাম, আমার তখন যৌবন কাল। আমি দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক একটি লোকের কাছে যাচ্ছেন আর লোকেদেরকে বলছেনঃ “হে লোক সকল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছি। আমি তোমাদেরকে বলছি যে, তোমরা এক ও অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সাথে কাউকে শরীক করবে না। তোমরা আমাকে সত্যবাদী বলে বিশ্বাস করো এবং আমাকে শত্রুদের কবল হতে রক্ষা করো, তাহলে আল্লাহ তাআলা আমাকে যে কাজের জন্যে প্রেরণ করেছেন সে কাজ আমি করতে পারবো।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) যেখানেই এ পয়গাম পৌছাতেন, পরক্ষণেই আবু লাহাব সেখানে পৌছে বলতোঃ “হে অমুক গোত্রের লোকেরা! এ ব্যক্তি তোমাদেরকে লাত, উয্যা থেকে দূরে সরাতে চায় এবং বানু মালিক ইবনে আকইয়াসের ধর্ম থেকে তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেয়াই তার উদ্দেশ্য। সে নিজের আনীত গুমরাহীর প্রতি তোমাদেরকেও টেনে নিতে চায়। সাবধান! তার কথা বিশ্বাস করো না।”
আল্লাহ তাআলা এ সূরায় বলছেনঃ আবু লাহাবের দুই হস্ত ধ্বংস হোক! না তার ধন-সম্পদ তার কোন কাজে এসেছে, না তার উপার্জন তার কোন উপকার করেছে।
হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন তার। স্বজাতিকে আল্লাহর পথে আহ্বান জানালেন তখন আবু লাহাব বলতে লাগলোঃ “যদি আমার ভাতিজার কথা সত্য হয় তবে আমি কিয়ামতের দিন আমার ধন সম্পদ আল্লাহকে ফিদিয়া হিসেবে দিয়ে তার আযাব থেকে আত্মরক্ষা করবো।" আল্লাহ তাআলা তখন এ আয়াত অবতীর্ণ করেন যে, তার ধন সম্পদ ও তার উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি।
এরপর মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ অচিরে সে দগ্ধ হবে লেলিহান অগ্নিতে এবং তার স্ত্রীও। অর্থাৎ আবু লাহাব তার স্ত্রীসহ জাহান্নামের ভয়াবহ আগুনে প্রবেশ করবে। আবু লাহাবের স্ত্রী ছিল কুরায়েশ নারীদের নেত্রী। তার কুনিয়াত ছিল উম্মু জামীল, নাম ছিল আরওয়া বিনতু হারব ইবনে উমাইয়া। সে আবূ সুফিয়ান (রাঃ) এর বোন ছিল। তার স্বামীর কুফরী, হঠকারিতা এবং ইসলামের শত্রুতায় সে ছিল সহকারিণী, সহযোগিণী। এ কারণে কিয়ামতের দিন সেও স্বামীর সঙ্গে আল্লাহর আযাবে পতিত হবে। কাঠ বহন করে নিয়ে সে তা ঐ। আগুনে নিক্ষেপ করবে যে আগুনে তার স্বামী জ্বলবে। তার গলায় থাকবে আগুনের পাকানো রশি।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ যে ইন্ধন বহন করে, তার গলদেশে পাকানো রঞ্জু। অর্থাৎ সে স্বামীর ইন্ধন সগ্রহ করতে থাকবে।
حَمَّالَةَ الْحَطَبِ এর ‘গীবতকারিণী' অর্থও করা হয়েছে। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এ অর্থই পছন্দ করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) প্রমুখ গুরুজন বর্ণনা করেছেন যে, আবু লাহাবের স্ত্রী জঙ্গল থেকে কাটাযুক্ত কাঠ কুড়িয়ে আনতে এবং ঐ কাঠ রাসূলুল্লাহর চলার পথে বিছিয়ে দিতো। এটাও বলা হয়েছে যে, এ নারী রাসুলুল্লাহকে ভিক্ষুক বলে তিরস্কার করতো। এ কারণে তাকে কাষ্ঠ বহনের পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রথমোক্ত কথাই নির্ভুল। এ সব ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
সাঈদ ইবনে মুসাইয়াব (রঃ) বলেন যে, আবু লাহাবের স্ত্রীর কাছে একটি সুন্দর গলার মালা ছিল সে বলতোঃ “আমি এ মালা বিক্রী করে তা মুহাম্মদ (সঃ)-এর বিরোধিতায় ব্যয় করবো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তা'আলা বলেন যে, তার গলদেশে থাকবে পাকানো রঞ্জু। অর্থাৎ তার গলদেশে আগুনের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।
مَسَد শব্দের অর্থ হলো খেজুর গাছের আঁশের রশি। উরওয়া (রঃ) বলেন যে, এটা হলো জাহান্নামের শিকল, যার এক একটি কড়া সত্তর গজের হবে। সওরী (রঃ) বলেন যে, এটা জাহান্নামের শিকল, যা সত্তর হাত লম্বা। জওহরী (রঃ) বলেন যে, এটা উটের চামড়া এবং পশম দিয়ে তৈরি করা হয়। মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এটা লোহার বেড়ী বা শিকল।।
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “এ সূরা অবতীর্ণ হওয়ার পর ধাঙ্গড় নারী উম্মু জামীল বিনতু হারব নিজের হাতে কারুকার্য খচিত, রং করা পাথর নিয়ে কবিতা আবৃত্তির সূরে নিম্নলিখিত কথাগুলো বলতে বলতে রাসূলুল্লাহর নিকট আগমন করেঃ
مُذَمِّمًا اَبَيْنَا وَدِيْنُهٗ قَلِيْنَا ـ وَاَمْرُهٗ عَصَيْنَا
অর্থাৎ “আমি মুযাম্মামের (নিন্দনীয় ব্যক্তির) অস্বীকারকারিণী, তার দ্বীনের দুশমন এবং তার হুকুম অমান্যকারিণী।" রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঐ সময় কা'বা গৃহে বসেছিলেন। তাঁর সাথে আমার আব্বা হযরত আবু বকর (রাঃ) ছিলেন। আমার আব্বা তাকে এ অবস্থায় দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সে আসছে, আপনাকে আবার দেখে না ফেলে!” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বললেনঃ “হে আবু বকর (রাঃ)! নিশ্চিন্ত থাকো, সে আমাকে দেখতে পাবেই না। তারপর তিনি ঐ দুষ্টা নারীকে এড়ানোর উদ্দেশ্যে কুরআন তিলাওয়াত শুরু করলেন। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَ اِذَا قَرَاْتَ الْقُرْاٰنَ جَعَلْنَا بَیْنَكَ وَ بَیْنَ الَّذِیْنَ لَا یُؤْمِنُوْنَ بِالْاٰخِرَةِ حِجَابًا مَّسْتُوْرًا
অর্থাৎ ‘যখন তুমি কুরআন পাঠ কর তখন আমি তোমার মধ্যে এবং যারা পরকালে বিশ্বাস করে না তাদের মধ্যে গোপন পর্দা টেনে দিই।" (১৭:৪৫) ডাইনী নারী হযরত আবু বকরের (রাঃ) কাছে এসে দাড়ালো। রাসূলুল্লাহও (সঃ) তখন হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর পাশেই ছিলেন। কিন্তু কুদরতী পর্দা তার চোখের সামনে পড়ে গেল। সুতরাং সে আল্লাহর রাসূল (সঃ) কে দেখতে পেলো না। ডাইনী নারী হযরত আবু বকর (রাঃ) কে বললোঃ “আমি শুনেছি যে, তোমার সাথী (সঃ) আমার দুর্নাম করেছে অর্থাৎ কবিতার ভাষায় আমার বদনাম ও নিন্দে করেছে। হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ “কা’বার প্রতিপালকের শপথ! রাসূলুল্লাহ (সঃ) তোমার কোন নিন্দে করেননি।” আবু লাহাবের স্ত্রী তখন ফিরে যেতে যেতে বললোঃ “কুরায়েশরা জানে যে, আমি তাদের সর্দারের মেয়ে।”
একবার এ দুষ্টা রমনী নিজের লম্বা চাদর গায়ে জড়িয়ে তাওয়াফ করছিল, হঠাৎ পায়ে চাদর জড়িয়ে পিছনে পড়ে গেল। তখন বললোঃ “মুযাম্মাম ধ্বংস হোক।” তখন উম্ম হাকীম বিনতু আবদিল মুত্তালিব বললোঃ “আমি একজন পূত পবিত্র রমনী। আমি মুখের ভাষা খারাপ করবো না। আমি বন্ধুত্ব স্থাপনকারিণী, কাজেই আমি কলঙ্কিনী হবো না এবং আমরা সবাই একই দাদার সন্তান, আর কুরায়েশরাই এটা সবচেয়ে বেশী জানে।”
আবু বকর বার (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ যখন تَبَّتْ یَدَاۤ اَبِیْ لَهَبٍ এ সূরাটি অবতীর্ণ হয়। তখন আবু লাহাবের স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর নিকট আগমন করে। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) বসেছিলেন এবং তার সাথে হযরত আবু বকরও (রাঃ) ছিলেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ঐ যে সে আসছে, আপনাকে সে কষ্ট দেয়। না কি!” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তুমি নিশ্চিন্ত থাকো, সে আমাকে দেখতে পাবে না।” অতঃপর আবু লাহাবের স্ত্রী হযরত আবু বকর (রাঃ) কে বললোঃ “তোমার সাথী (কবিতার ভাষায়) আমার দুর্নাম রটনা করেছে।” হযরত আবু বকর (রাঃ) তখন কসম করে বললেমঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) কাব্য চর্চা করতে জানেন না এবং তিনি কবিতা কখনো বলেননি।” দুষ্টা নারী চলে যাওয়ার পর হযরত আবু বকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সে কি আপনাকে দেখতে পায়নি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তার চলে যাওয়া পর্যন্ত ফেরেশতা আমাকে আড়াল করে দাঁড়িয়েছিলেন। কোন কোন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেছেন যে, উম্মু জামীলের গলায় আগুনের রশি লাগিয়ে দেয়া হবে এবং ঐ রশি ধরে টেনে তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে, তারপর রশি ঢিলে করে তাকে জাহান্নামের গভীর তলদেশে নিক্ষেপ করা হবে এ শাস্তিই তাকে ক্রমাগতভাবে দেয়া হবে।
ঢোলের রশিকে আরবের লোকেরা مَسَد বলতো। আরবী কবিতায় এ শব্দটি এ অর্থেই ব্যবহৃত হতো। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, এ সূরা আমাদের প্রিয় নবী (সঃ)-এর নবুওয়াতের একটি উচ্চতর প্রমাণ। আবু লাহাব এবং তার স্ত্রী দুস্কৃতির এবং পরিণতির যে সংবাদ এ সূরায় দেয়া হয়েছে। বাস্তবেও তা-ই ঘটেছে। এ দম্পতির ঈমান আনয়নের সৌভাগ্য হয়নি। তারা প্রকাশ্য বা গোপনীয় কোনভাবেই মুসলমান হয়নি। কাজেই, এ সূরাটি রাসূলুল্লাহর (সঃ) নবুওয়াতের উজ্জ্বল ও সুস্পষ্ট প্রমাণ।