রা'দ আয়াত ২৪
سَلٰمٌ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِۗ ( الرعد: ٢٤ )
Salaamun 'alaikum bimaa sabartum; fani'ma 'uqbad daar (ar-Raʿd ১৩:২৪)
English Sahih:
"Peace [i.e., security] be upon you for what you patiently endured. And excellent is the final home." (Ar-Ra'd [13] : 24)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
‘‘তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, কারণ তোমরা ধৈর্যধারণ করেছিলে। কতই না উত্তম পরকালের এই ঘর!’’ (রা'দ [১৩] : ২৪)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
(তারা বলবে,) তোমরা ধৈর্যধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি! কতই না ভাল এই পরিণাম।
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
এবং বলবে, ‘তোমরা ধৈর্য্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি; আর আখেরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম [১]!’
[১] এরপর তাদের আরও একটি আখেরাতের সাফল্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, ফিরিশতারা তাদেরকে সালাম করতে করতে প্রত্যেক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে এবং বলবেঃ সবরের কারণে তোমরা যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট থেকে নিরাপত্তা লাভ করেছ। [ফাতহুল কাদীর] এটা আখেরাতের কতই না উত্তম পরিণাম। অর্থাৎ তারা তাদেরকে এ সুখবর দেবে যে, এখন তোমরা এমন জায়গায় এসেছো যেখানে পরিপূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজমান। এখন তোমরা এখানে সব রকমের আপদ-বিপদ, কষ্ট, কাঠিন্য, কঠোর পরিশ্রম, শংকা ও আতংকমুক্ত। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ্র সৃষ্টির মধ্যে প্রথম যে দলটি জান্নাতে যাবে তারা হলেন দরিদ্র মুহাজিরগণ। যাদের দ্বারা সীমান্ত পাহারা দেয়া হয়। খারাপ অবস্থায় তাদের সাহায্য নেয়া হয়। তাদের অনেকেই এমনভাবে মারা যায় যে, তাদের মনে অনেক অপূর্ণ বাসনা রয়েই গেছে। আল্লাহ্ তা’আলা ফেরেশতাদের বলবেনঃ তোমরা যাও এবং তাদেরকে সালাম-সম্ভাষণ জানাও। ফেরেশতাগণ বলবেনঃ আমরা আপনার আসমানের বাসিন্দা, আপনার শ্রেষ্ট সৃষ্টির অন্যতম তারপরও কি আপনি আমাদেরকে তাদেরকে সম্মান জানানোর জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন। আল্লাহ্ বলবেনঃ তারা আমার এমন বান্দা ছিল যারা কেবলমাত্র আমার ইবাদত করত। আমার সাথে সামান্যও শির্ক করেনি। তাদের দ্বারা সীমান্ত পাহারা দেয়া হতো এবং বিপজ্জনক সময়ে তাদের সাহায্য নেয়া হত। তারা এমনভাবে মারা গেছে যে, তাদের মনের বাসনা মনেই রয়ে গেছে তা তারা পূরণ করতে পারেনি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন ফেরেশতাগণ তাদের কাছে বিভিন্ন দরজা দিয়ে প্রবেশ করে তাদেরকে সাদর-সম্ভাষণ জানাবে। ‘তোমরা ধৈর্য্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি; কত ভাল এ পরিণাম’ [মুসনাদে আহমাদঃ ২/১৬৮]
3 Tafsir Bayaan Foundation
(আর বলবে) ‘শান্তি তোমাদের উপর, কারণ তোমরা সবর করেছ, আর আখিরাতের এ পরিণাম কতই না উত্তম’।
4 Muhiuddin Khan
বলবেঃ তোমাদের সবরের কারণে তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর তোমাদের এ পরিণাম-গৃহ কতই না চমৎকার।
5 Zohurul Hoque
''শান্তি বর্ষিত হোক তোমাদের উপরে যেহেতু তোমরা অধ্যবসায় অবলন্বন করেছিলে, কাজেই কত ভাল এই চরমোৎকর্ষ আবাস!’’
6 Mufti Taqi Usmani
তোমরা (দুনিয়ায়) যে সবর অবলম্বন করেছিলে, তার বদৌলতে এখন তোমাদের প্রতি কেবল শান্তিই বর্ষিত হবে এবং (তোমাদের) প্রকৃত নিবাসে এটা কতই না উৎকৃষ্ট পরিণাম।
7 Mujibur Rahman
(তারা বলবেঃ) তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছ বলে তোমাদের প্রতি শান্তি (সালাম)! কতই না ভাল এই পরিণাম!
8 Tafsir Fathul Mazid
১৯-২৪ নং আয়াতের তাফসীর:
উক্ত আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা ঐ সমস্ত জ্ঞানী ও সৎ লোকদের গুণাবলী বর্ণনা করছেন যারা আখিরাতে সৌভাগ্যবান হবে, তাদের পরিণাম হবে শুভ। তারা তাদের সৎ পিতা-মাতা, স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে জান্নাতে থাকবে। তাদের গুণাবলী হল
(১) তারা কুরআনের সঠিকতা ও সত্যতার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। এরা তাদের মত নয় যারা অন্ধ অর্থাৎ কুরআনের সত্যতার ব্যাপারে সন্দিহান, সত্য সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না এবং সে অনুপাতে আমলও করে না।
(২) যারা আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিপূর্ণ করে। অর্থাৎ আল্লাহ যেসকল বিধি-নিষেধ দিয়েছেন তারা তা মেনে চলে। অথবা সে অঙ্গীকার যা আদম (عليه السلام) এর পৃষ্টদেশ থেকে বের করে সকল আদম সন্তানের নিকট থেকে নিয়েছেন “আমি কি তোমাদের প্রতিপালনকারী নই?” (সূরা আ‘রাফ ৭:১৭২)
بِعَهْدِ اللّٰهِ অর্থাৎ সে সকল সন্ধি, চুক্তি ও প্রতিশ্রুতি যা মানুষ পরস্পর করে থাকে। অথবা তাদের মাঝে এবং আল্লাহ তা‘আলার মাঝে স্বেচ্ছায় যেসকল প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
(৩) আল্লাহ যাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন তারা তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে। তথা নাবী-রাসূল, মু’মিন মু’মিনাত, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশিসহ সকলেই এতে শামিল।
(৪) তারা তাদের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে এবং ভয় করে কঠোর শাস্তিকে। তাই শাস্তির ভয়ে এবং প্রতিদানের আশায় তারা ভাল আমল করে।
(৫) তারা আল্লাহ তা‘আলাকে আখিরাতে দেখার জন্য বা তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য সকল আদেশ পালনে এবং নিষেধ বর্জনে ধৈর্য ধারণ করে। কাউকে দেখানোর জন্য কোন আমল করে না।
(৬) আর তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, সালাতের সময়-সীমা বহাল রাখে, বিনয়-নম্রতার সাথে এবং ধীর-স্থির চিত্তে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পদ্ধতিতে আদায় করে, নিজের মনগড়া পদ্ধতিতে নয়।
(৭) প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে তাদেরকে যে রিযিক দেয়া হয়েছে তা হতে তারা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। এতে ওয়াজিব ও নফল সকল দান শামিল।
(৮) তাদের সাথে কেউ কোন মন্দ ব্যবহার করলে তারা উত্তমভাবে তার জবাব দেয় কিংবা ধৈর্য ধারণ করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ط اِدْفَعْ بِالَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِيْ بَيْنَكَ وَبَيْنَه۫ عَدَاوَةٌ كَأَنَّه۫ وَلِيٌّ حَمِيْمٌ)
“ভাল এবং মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা; ফলে, তোমার সাথে যার শত্র“তা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত।” (হা-মীম-সাজদাহ ৪১:৩৪)
সুতরাং যারা এই সমস্ত গুণ অর্জন করতে পারবে তাদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম। তারা এবং তাদের সৎ স্ত্রী-পুত্র, পিতা-মাতাসহ জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুনিয়াতে যারা সৎকর্ম করে জান্নাতে তাদের সৎ কর্মশীল আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আল্লাহ তা‘আলা সাক্ষাত করিয়ে দিবেন যাতে তাদের চক্ষু শীতল হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِإِيْمَانٍ أَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَآ أَلَتْنٰهُمْ مِّنْ عَمَلِهِمْ مِّنْ شَيْءٍ ط كُلُّ امْرِئٍۭ بِمَا كَسَبَ رَهِيْنٌ)
“এবং যারা ঈমান আনে আর তাদের সন্তান-সন্ততিও ঈমানে তাদের অনুসারী হয়, তাদের সাথে মিলিত করব তাদের সন্তান-সন্ততিকে এবং আমি তাদের কর্মফলের ঘাটতি করব না, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ কৃতকর্মের জন্য দায়ী।” (সূরা তুর ৫২:২১)
সুতরাং যারা ঈমান আনবে ও সৎ আমল করবে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা জান্নাতে গেলে একত্রে বসবাস করতে পারবে। আর ঈমান না থাকলে আত্মীয়-স্বজন যতই জান্নাতে যাক তাদের পক্ষে কোন দিন জান্নাতে যাওয়া সম্ভব হবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. জান্নাতী সৌভাগ্যশীল ব্যক্তিদের ৮টি গুণ পেলাম।
২. যার আমল কাউকে পিছে ফেলে রেখেছে তার বংশ-মর্যাদা তাকে এগিয়ে নিতে পারবে না।
৩. যারা দুনিয়াতে সৎআমল করেছে তারা আখিরাতে সৎ আত্মীয়দের সাথে জান্নাতে থাকবে।
৪. পিতা-মাতা ও সন্তান-সন্ততির সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে।
9 Fozlur Rahman
(আর বলবে) “তোমরা যেহেতু ধৈর্যধারণ করেছিলে, তাই তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক! পরিণাম হিসাবে কতই উত্তম এই আবাস!”
10 Mokhtasar Bangla
২৪. যখনই ফিরিশতারা তাদের নিকট প্রবেশ করবে তখন তাদেরকে “সালামুন আলাইকুম” বলে সম্ভাষণ জানাবে। মানে, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। কেননা, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য এবং তাঁর তিক্ত ফায়সালার উপর ধৈর্য ধারণ করেছো, তাঁর বিরুদ্ধাচরণ থেকে দূরে থেকেছো। ফলে সকল বিপদ থেকে তোমরা রক্ষা পেয়েছো। সুতরাং তোমাদের পরিণতি কতোই না সুন্দর। আর তা হলো জান্নাত।
11 Tafsir Ibn Kathir
২০-২৪ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তাআ’লা ঐ মহান ব্যক্তিদের প্রশংসনীয় গুণাবলীর বর্ণনা দিচ্ছেন এবং তাঁদের ভাল পরিণামের খবর দিচ্ছেন যারা আখেরাতে বেহেশতের মালিক হবেন এবং দুনিয়াতেও যাদের পরিণাম হবে অতি উত্তম। তাঁরা মুনাফিকদের মত নন যারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও বিশ্বাসঘাতকতা করে। এটা মুনাফিকদেরই স্বভাব যে, তারা কোন ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করবে, ঝগড়ায় কটু বাক্য প্রয়োগ করবে, কথা মিথ্যা বলবে এবং আমানতে খিয়ানত করবে। আর ঐ উত্তম গুণের অধিকারী মুমিনমু’মিনদের স্বভাব এই যে, তারা আত্মীয়তার সম্পর্ক যুক্ত রাখেন, তাদের সাথে সদাচরণ করেন, অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্র লোকদেরকে দান করেন এবং সকলের সাথে সদয় ব্যবহার করেন। তারা আল্লাহর নির্দেশ ক্রমেই এগুলো করে থাকেন।
আল্লাহ তাআ’লার উক্তিঃ ‘তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে’ অর্থাৎ তারা সৎ কাজ করেন আল্লাহর নির্দেশ মনে করে এবং অসৎ কার্য পরিত্যাগ করেন আল্লাহর নির্দেশ মনে করেই। তাঁরা আখেরাতের কঠোর হিসাবকে ভয় করেন। এ জন্যেই তারা মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকেন, সৎ কার্যের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন, মধ্যম পথকে তারা কোন সময়ই পরিত্যাগ করেন না। সর্বাবস্থায়ই আল্লাহ তাআ’লার প্রতি লক্ষ্য রাখেন। হারাম কাজ এবং আল্লাহর নাফরমানীর দিকে প্রবৃত্তি তাদেরকে আকর্ষণ করলেও তারা প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং আখেরাতের সওয়াবের কথা স্মরণ করে এবং আল্লাহ তাআ’লার সন্তুষ্টি কামনা করে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ থেকে বিরত থাকেন। তারা নামাযের পূর্ণরূপে হিফাযত করেন। রুকু ও সিজদার সময় শরীয়ত অনুযায়ী বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করে থাকেন। আল্লাহ যাদেরকে দান করতে বলেছেন তাদেরকে তারা আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ থেকে দান করে থাকেন। দরিদ্র, অভাবী ও মিসকীন নিজেদের মধ্যকার হোক বা দূর সম্পৰ্কীয় হোক, তাদের বরকত থেকে তারা বঞ্চিত হন না। গোপনে ও প্রকাশ্যে, সময়ে-অসময়ে তারা আল্লাহর পথে খরচ করে থাকেন। তারা মন্দকে ভাল দ্বারা এবং শক্রতাকে বন্ধুত্ব দ্বারা দূরীভূত করে থাকেন। কেউ তাঁদের সাথে অসদাচরণ করলে তারা তার সাথে সদাচরণ করেন। তাঁদের সামনে কেউ মস্তক উত্তোলন করলে তারা মস্তক অবনত করেন। তাঁরা অন্যদের যুলুম সহ্য করে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করেন। কুরআন কারীমের শিক্ষা হচ্ছেঃ “মন্দকে ভাল দ্বারা দূরীভূত কর, তাহলে তোমার মধ্যে ও তার মধ্যে যে শত্রুতা ছিল তা দূর হয়ে গিয়ে এমন হবে যে, সে যেন তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। ধৈর্যশীল ও সৌভাগ্যবান ব্যক্তিই এই মর্যাদা লাভ করে থাকে।” এই রূপ লোকদের জন্যেই উত্তম পরিণাম রয়েছে।
সেই উত্তম পরিণাম এবং উত্তম ঘর হচ্ছে জান্নাত, যা অবিনশ্বর ও চিরস্থায়ী। হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, জান্নাতের একটি প্রাসাদের নাম ‘আদন’। তাতে মিনার ও কক্ষ রয়েছে। তাতে রয়েছে পাঁচ হাজার দরজা। প্রত্যেক দরজার উপর পাঁচ হাজার ফেরেশতা রয়েছেন। ঐ প্রাসাদটি নবী, সিদ্দীক ও শহীদদের জন্যে নির্দিষ্ট। যহাক (রঃ) বলেন যে, এটা জান্নাতের শহর। এতে থাকবেন নবীগণ, শহীদগণ এবং হিদায়াতের ইমামগণ। তাদের আশে পাশে অন্যান্য লোকেরা থাকবেন। ওর চতুর্দিকে অন্যান্য বেহেশত রয়েছে। ওখানে তারা তাঁদের প্রিয়জনকেও তাদের সাথে দেখতে পাবেন। তাদের সাথে থাকবেন তাঁদের মুমিনমু’মিন পিতা, পিতামহ, পুত্র, পৌত্র, স্ত্রী ইত্যাদি আত্মীয় স্বজন। তারা সুখে শান্তিতে অবস্থান করবেন এবং তাঁদের চক্ষুগুলি ঠাণ্ডা হবে। এমন কি তাদের মধ্যে কারো কারো আমল যদি তাকে ঐ উচ্চ মর্যাদায় পৌছাবার যোগ্যতা নাও রাখে, তবুও আল্লাহ তাআ’লা তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং ঐ উচ্চ মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দেবেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ وَ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ اتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّیَّتُهُمْ بِاِیْمَانٍ اَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّیَّتَهُمْ অর্থাৎ “যারা ঈমান এনেছে” এবং তাদের সন্তানরা ঈমানের মাধ্যমে তাদের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের সাথে তাদের সন্তানদেরকে মিলিত করবো।” (৫২:২১)।
তাঁদেরকে মুবারকবাদ ও সালাম জ্ঞাপনের জন্যে সদাসর্বদা প্রত্যেকটি দরজা দিয়ে ফেরেশতাগণ যাতায়াত করবেন। এটাও আল্লাহ তাআ’লার একটি নিয়ামত। এর ফলে তাঁরা সব সময় খুশী থাকবেন এবং সুসংবাদ শুনবেন। এটা ফেরেশতাদের সৌভাগ্যের কারণ যে, তাঁরা শান্তির ঘরে নবী, সিদ্দীক ও শহীদদের সংস্পর্শে থাকতে পাবেন। এতে তারা নিজেদের জীবনকে ধন্য মনে করবেন।
হযরত আমর ইবনুল আস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম কে জান্নাতে যাবে তা তোমরা জান কি?” সাহাবীগণ উত্তরে বলেনঃ “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) ভাল জানেন।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ আল্লাহও সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম জান্নাতে যাবে দরিদ্র মুহাজিরগণ, যারা দুনিয়ার ভোগ বিলাস হতে দূরে ছিল, কষ্ট ও বিপদ-আপদের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতো। যাদের মনের বাসনা মনেই রয়ে গিয়েছিল এমতাবস্থায় তারা মৃত্যুবরণ করেছিল। রহমতের ফেরেশতাদেরকে বলা হবেঃ “যাও, তাদেরকে মুবারকবাদ দাও।” ফেরেশতাগণ বলবেনঃ “হে আল্লাহ! আমরা আপনার আকাশের অধিবাসী উত্তম মাখলুক। আপনি কি আমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আমরা গিয়ে তাদেরকে সালাম করবো এবং মুবারকবাদ জানাবো?” উত্তরে আল্লাহ তাআ’লা বলবেনঃ “এরা হচ্ছে আমার সেই বান্দা যারা শুধু আমারই ইবাদত করতো, আমার সাথে অন্য কাউকেও শরীক করে নাই, পার্থিব সুখ-সম্ভোগ হতে বঞ্চিত ছিল এবং কষ্ট ও বিপদ-আপদের মধ্য দিয়ে কালাতিপাত করেছিল। তাদের কোন মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় নাই। এতত্সত্ত্বেও তারা ধৈর্য ধারণ করেছে ও কৃতজ্ঞ থেকেছে।” তখন ফেরেশতারা তাড়াতাড়ি অতি আগ্রহের সাথে তাদের দিকে দৌড় দিবেন। এদিক ওদিকের প্রত্যেক দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন এবং সালাম করে তাদেরকে মুবারকবাদ জানাবেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “সর্বপ্রথম যে সব লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে তারা হচ্ছে দরিদ্র মুহাজিররা। তারা কষ্ট ও বিপদ-আপদের মধ্যে পতিত ছিল। যখনই তাদেরকে যে হুকুম করা হয়েছে তখনই তারা তা পালন করেছে। বাদশাহদের কাছে তাদের প্রয়োজন হতো। কিন্তু মৃত্যু পর্যন্ত তাদের প্রয়োজন পুরা হয় নাই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআ’লা জান্নাতকে সামনে আসতে বলবেন। জান্নাত তখন সুন্দর সাজে সজ্জিত হয়ে আল্লাহ তাআ’লার সামনে হাজির হবে। ঐ সময় আল্লাহ তাআ’লা ঘোষণা করবেনঃ “আমার যে সব বান্দা আমার পথে জিহাদ করতো, আমার পথে যাদেরকে কষ্ট দেয়া হতো তারা আজ কোথায়? তোমরা এসো, বিনা হিসাবে জান্নাতে চলে যাও।” ঐ সময় ফেরেশতারা আল্লাহর সামনে সিজদায় পড়ে যাবেন এবং আরয করবেনঃ “হে আমাদের প্রতিপালক! এরা কারা যাদেরকে আপনি আমাদের উপরও ফযীলত দান করলেন?” মহামহিমান্বিত আল্লাহ উত্তরে বলবেনঃ “এরা আমার ঐ বান্দা যারা আমার পথে জিহাদ করেছে এবং আমার পথে কষ্ট সহ্য করেছে।” ফেরেশতারা তখন তড়িৎ গতিতে এদিকে ওদিকের দরজা দিয়ে তাদের কাছে পৌঁছে যাবেন, তাদেরকে সালাম করবেন এবং মুবারকবাদ জানিয়ে বলবেনঃ “আপনারা আপনাদের ধৈর্য ধারনের কতই না উত্তম বিনিময় লাভ করেছেন।”
আবু উমামা (রাঃ) বলেনঃ “মু'মিন বেহেশতের মধ্যে নিজের আসনের উপর আরামে অত্যন্ত শান শওকতের সাথে হেলান দিয়ে বসে থাকবে। সেবক দল সারি সারি ভাবে এদিকে ওদিকে দাঁড়িয়ে থাকবে। যে দরজার খাদেমের কাছে ফেরেশতা অনুমতি চাইবেন, তিনি তাঁর পার্শ্ববর্তী খাদেমকে বলবেন। তিনি আবার অন্যকে বলবেন এবং তিনি আবার অপরকে বলবেন। শেষ পর্যন্ত মুমিনমু’মিনকে জিজ্ঞেস করা হবে। মুমিনমু’মিন আসার অনুমতি দেবে। এইভাবে একে অপরের কাছে পয়গাম পৌছাবে এবং সর্বশেষ খাদেম ফেরেশতাকে অনুমতি দেবে ও দরজা খুলে দেবে। ফেরেশতা তখন প্রবেশ করে সালাম করতঃ চলে যাবেন।
অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) প্রত্যেক বছরের মাথায় শহীদদের কবরের কাছে আসতেন এবং বলতেনঃ سَلٰمٌ عَلَیْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ
অর্থাৎ “তোমরা ধৈর্য ধারণ করেছে বলে তোমাদের প্রতি শান্তি, কতই উত্তম এই পরিণাম।” এইরূপই হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত উসমান (রাঃ) করতেন।