হিজর আয়াত ৫০
وَاَنَّ عَذَابِيْ هُوَ الْعَذَابُ الْاَلِيْمُ ( الحجر: ٥٠ )
Wa anna 'azaabee uwal 'azaabul aleem (al-Ḥijr ১৫:৫০)
English Sahih:
And that it is My punishment which is the painful punishment. (Al-Hijr [15] : 50)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আর আমার শাস্তি- তা বড়ই ভয়াবহ শাস্তি। (হিজর [১৫] : ৫০)
1 Tafsir Ahsanul Bayaan
এবং আমার শাস্তিই হল অতি মর্মন্তুদ শাস্তি।’
2 Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর নিশ্চয় আমার শাস্তিই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি!
3 Tafsir Bayaan Foundation
আর আমার আযাবই যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
4 Muhiuddin Khan
এবং ইহাও যে, আমার শাস্তিই যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।
5 Zohurul Hoque
আর আমার শাস্তি, -- তা অতি মর্মন্তুদ শাস্তি।
6 Mufti Taqi Usmani
এবং এটাও জানিয়ে দাও যে, আমার শাস্তিই মর্মন্তুদ শাস্তি।
7 Mujibur Rahman
আর আমার শাস্তি! তা অতি মর্মন্তদ শাস্তি।
8 Tafsir Fathul Mazid
২৬-৫০ নং আয়াতের তাফসীর:
প্রথম দু’ আয়াতে মূলত মানুষ ও জিনকে কোন্ পদার্থ থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে সে কথা বলা হয়েছে। মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে শুস্ক ঠনঠনে মাটি থেকে আর জিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রখর শিখাযুক্ত অগ্নি হতে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ وَخَلَقَ الْجَآنَّ مِنْ مَّارِجٍ مِّنْ نَّارٍ)
“মানুষকে (আদমকে) তিনি সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির মত শুকনো মাটি হতে, আর জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নি শিখা হতে।” (সূরা আর রহমান: ৫৫:১৪-১৫)
অর্থাৎ মানুষ হল মাটির তৈরি জাতি আর জিন হল আগুনের তৈরি জাতি।
صَلْصَالٍ হল এমন মাটি যা শুকিয়ে গেলে তাতে ঠনঠন শব্দ হয়।
(حَمَإٍ مَّسْنُوْنٍ)
হল এমন মাটি যা দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার ফলে তার রং ও গন্ধ পরিবর্তন হয়ে গেছে। جن অর্থ ঢাকা, জিনেরা যেহেতু মানুষের চোখের আড়ালে থাকে তাই তাদেরকে الْجَآنَّ বা জিন বলা হয়। السَّمُوْمِ বলা হয় আগুন যার কোন ধোঁয়া নেই। مِنْ قَبْلُ বলতে মানুষের পূর্বে, অর্থাৎ মানুষের পূর্বে আল্লাহ তা‘আলা প্রখর আগুন থেকে জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। হাদীসে এসেছে: ফেরেশতাদেরকে নূর হতে সৃষ্টি করা হয়েছে, জিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে শিখাযুক্ত আগুন হতে আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে যা তোমাদের সামনে বর্ণনা করা হল। (সহীহ বুখারী হা: ২৯৯৬)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আদমের সৃষ্টি সমাপ্ত করার পর সকল ফেরেশতাকে নির্দেশ দিলেন তাকে সিজদা করার জন্য। সকল ফেরেশতা সিজদা করেছে শুধুমাত্র ইবলীস তাকে সিজদা করেনি। এখানে সিজদা মূলত ইবাদত করার উদ্দেশ্যে ছিল না, বরং আদমের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা বুঝানোর জন্য এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইবলীস সে অহংকার করল, সিজদা করতে অস্বীকার করল এবং যুক্তি পেশ করল যে, আমাকে আগুন দ্বারা তৈরি করা হয়েছে আর আদমকে মাটি দ্বারা, আগুনের কাজ ওপরে উঠা আর মাটির কাজ নিচে নামা। সুতরাং আমি তাকে সিজদা করতে পারি না।
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সম্পর্কে বলেন:
(وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلٰ۬ئِکَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْٓا اِلَّآ اِبْلِیْسَﺚ اَبٰی وَاسْتَکْبَرَﺡ وَکَانَ مِنَ الْکٰفِرِیْنَ)
“আর (স্মরণ কর) আমি যখন ফেরেশতাগণকে বললাম, তোমরা আদমকে সিজদা কর, তখন ইবলিস ব্যতীত সকলে সিজদা করেছিল। সে অস্বীকার করল ও অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।” (সূরা বাক্বারাহ ২:৩৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(إِلَّآ إِبْلِيْسَ ط اِسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكٰفِرِيْنَ)
“কেবল ইবলীস ব্যতীত। সে অহঙ্কার করল এবং কাফিরদের দলভুক্ত হয়ে গেল।” (সূরা সোয়াদ ৩৮:৭৪)
ইবলীসের যুক্তি সম্পর্কে মহান আল্লাহর বাণী:
(قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ ط قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ ج خَلَقْتَنِيْ مِنْ نَّارٍ وَّخَلَقْتَه۫ مِنْ طِيْنٍ)
“তিনি (আল্লাহ) বললেন: ‘আমি যখন তোমাকে আদেশ দিলাম তখন কিসে তোমাকে সিজদা দিতে বারণ করল?’ সে বলল: ‘আমি তার অপেক্ষা উত্তম; আপনি আমাকে অগ্নি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে কর্দম দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আ‘রাফ ৭:১২)
এরূপ সূরা সোয়াদের ৭৫-৭৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা ইবলীসকে যে জান্নাতে বসবাস করতে দিয়েছিলেন তার এই অবাধ্য হওয়ার কারণে তাকে সেই জান্নাত থেকে বের করে দিলেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قَالَ فَاهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُوْنُ لَكَ أَنْ تَتَكَبَّرَ فِيْهَا فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ الصّٰغِرِيْنَ)
“তিনি বললেন: ‘এ স্থান হতে নেমে যাও, এখানে থেকে অহঙ্কার করবে, এটা হতে পারে না। সুতরাং বের হয়ে যাও, তুমি অধমদের অন্তর্ভুক্ত।’’ (সূরা আ‘রাফ ৭:১৩) এবং আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর অভিশম্পাত করলেন।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَّإِنَّ عَلَيْكَ لَعْنَتِيْٓ إِلٰي يَوْمِ الدِّيْنِ)
“এবং তোমার প্রতি আমার অভিশাপ ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত।” (সূরা স্ব-দ ৩৮:৭৮)
ইবলীস অভিশপ্ত হয়ে জান্নাত থেকে যখন বহিষ্কৃত হল তখন আল্লাহ তা‘আলার কাছে সে কিয়ামত পর্যন্ত জীবন আয়ুর অবকাশ দেয়ার জন্য প্রার্থনা করল। আল্লাহ তা‘আলা তাকে الْوَقْتِ الْمَعْلُوْمِ বা কিয়ামত পর্যন্ত জীবন আয়ুর অবকাশ দিলেন। ইবলীস শপথ করে বলেছিল, ‘‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি যে জন্য আমাকে বিপথগামী করেছেন সেজন্য আমি পৃথিবীতে মানুষের নিকট পাপকর্মকে অবশ্যই শোভন করে তুলব এবং আমি তাদের সকলকেই বিপথগামী করব।”
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ)
“সে বলল: তোমার ইযযতের শপথ! আমি তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করবই।” (সূরা স্ব-দ ৩৮:৮২)
কিভাবে পথভ্রষ্ট করবে তা অন্যত্র বলা হয়েছে, সে মানুষের কাছে পাপ কাজসমূহকে সৌন্দর্যমণ্ডিত ও চাকচিক্যময় করে তুলে ধরবে। ফলে মানুষ তাতে লিপ্ত হবে।
আল্লাহ তা‘আলা ইবলীসের কথা তুলে ধরে বলেন:
(ثُمَّ لَاٰتِيَنَّهُمْ مِّنْۭ بَيْنِ أَيْدِيْهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَنْ شَمَا۬ئِلِهِمْ ط وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شٰكِرِيْنَ)
“অতঃপর আমি তাদের নিকট আসবই তাদের সম্মুখ, পশ্চাৎ , ডান ও বাম দিক হতে এবং তুমি তাদের অধিকাংশকে কৃতজ্ঞ পাবে না।’’ (সূরা আ‘রাফ ৭:১৭)
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(قَالَ أَرَأَيْتَكَ هٰذَا الَّذِيْ كَرَّمْتَ عَلَيَّ ز لَئِنْ أَخَّرْتَنِ إِلٰي يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَأَحْتَنِكَنَّ ذُرِّيَّتَه۫ٓ إِلَّا قَلِيْلًا)
“সে বলেছিল: আপনি কি বিবেচনা করেছেন, আপনি আমার ওপর এ ব্যক্তিকে মর্যাদা দান করলেন, কিয়ামতের দিন পর্যন্ত যদি আমাকে অবকাশ দেন তাহলে আমি অল্প কয়েকজন ব্যতীত তার বংশধরগণকে অবশ্যই কর্তৃত্বাধীন করে ফেলব।’’ (সূরা ইসরা ১৭:৬২)
তবে যারা আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা তারা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে পথভ্রষ্ট হবে না।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ)
“কিন্তু তাদের মধ্যে যারা তোমার একনিষ্ঠ বান্দা, তাদের ছাড়া।” (সূরা সোয়াদ ৩৮:৮৩)
সে কেবল যারা অন্যায় কাজে লিপ্ত থাকবে তাদেরকেই পথভ্রষ্ট করবে, অন্যদেরকে নয়।
আল্লাহ তা‘আলার সৎ বান্দাদের ওপর তার কোনই কর্তৃত্ব থাকবেনা। এর অর্থ এই নয় যে, তাদের দ্বারা কোন পাপ কাজ হবে না। বরং উদ্দেশ্য হল তারা এমন কোন পাপ করবে না, যার পর তারা লজ্জিত হবে না বা তাওবা করবে না। কারণ সে পাপই মানুষের ধ্বংসের কারণ হয় যার পর মানুষ অনুতপ্ত হয় না এবং তাওবাও করে না। মানুষ পাপ করতে পারে এটাই স্বাভাবিক, তবে পাপ কাজ করার পর তাওবা করলে তাকে পাকড়াও করা হবে না। কোন ব্যক্তির ভুলবশত পাপ হয়ে যাওয়ার পর তাওবা করলে আল্লাহ তা‘আলা তার চেয়ে বেশি খুশি হন যেমন মরুভূমিতে কারো খাদ্য ও পানীয়সহ বাহন হারিয়ে যাওয়ার পর তা ফিরে পেলে খুশি হয়।
আর যারা ইবলীসের অনুসরণ করবে তারাই হবে বিভ্রান্ত। আর তারাই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
سَبْعَةُ أَبْوَابٍ
অর্থাৎ প্রত্যেক দরজা এক এক ধরনের বিশেষ লোকদের জন্য নির্দিষ্ট হবে। যেমন একটি হবে মুশকিরকদের জন্য, একটি হবে নাস্তিকদের জন্য, একটি হবে ধর্মদ্রোহীদের জন্য, একটি হবে ব্যভিচারীদের জন্য, একটি হবে সুদখোর ও চোর-ডাকাতদের জন্য, এরূপ আলাদা আলাদা হবে। অথবা সাতটি দরজা বলতে জাহান্নামের সাতটি স্তরকে বুঝানো হয়েছে। প্রথমটির নাম জাহান্নাম, তারপর লাযা, তারপর হুতামাহ, তারপর সায়ীর, তারপর সাকার, তারপর জাহীম, তারপর হাবিয়াহ। সবার উপরের স্তরটি আল্লাহ তা‘আলার একত্বে বিশ্বাসীদের জন্য হবে। তাদেরকে পাপ অনুপাতে কিছুদিন শাস্তি দিয়ে অথবা সুপারিশ করার পর বের করা হবে। দ্বিতীয়টি ইয়াহূদী, তৃতীয়টি খ্রিস্টান, চতুর্থটি সাবী, পঞ্চমটি অগ্নিপূজক, ষষ্ঠটি মুশরিকদের জন্য এবং সর্বনিম্ন স্তর সপ্তমটি মুনাফিকদের জন্য। (ফাতহুল কাদীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
পক্ষান্তরে আল্লাহ তা‘আলার সৎ বান্দাগণ নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে থাকবে, সকল বিপদাপদ থেকে শান্তি এবং সকল প্রকার ভয় হতে নিরাপত্তায় থাকবে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
“যা তাদের প্রতিপালক তাদেরকে প্রদান করবেন; তা তারা গ্রহণ করবে। নিশ্চয়ই তারা ইতোপূর্বে সৎকর্মপরায়ণ ছিল। তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রাবস্থায় অতিবাহিত করত। রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত। এবং তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতের হক্ব।” (সূরা যারিআত ৫১:১৫-১৯)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
“মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে উদ্যান ও ঝর্ণার মাঝে, তারা পরিধান করবে মিহি ও পুরু রেশমী বস্ত্র এবং তারা মুখোমুখী হয়ে বসবে, এরূপই ঘটবে; তাদেরকে বিবাহ দিয়ে দেব বড় বড় চক্ষুবিশিষ্ট পরমা সুন্দরীদের সাথে। সেখানে তারা প্রশান্ত চিত্তে বিবিধ ফল-মূল আনতে বলবে। প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেখানে আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না। তিনি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করবেন তোমার প্রতিপালকের নিজ অনুগ্রহে। এটাই তো মহা সাফল্য।” (সূরা দুখান ৪৪:৫১-৫৭)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
“নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতে ও ভোগ-বিলাসে, তাদের প্রতিপালক তাদেরকে যা দিবেন তারা তা উপভোগ করবে এবং তিনি তাদেরকে রক্ষা করবেন জাহান্নামের আযাব হতে তোমরা তৃপ্তির সাথে পানাহার কর, তোমরা যা করতে তার প্রতিদানস্বরূপ। তারা শ্রেণীবদ্ধভাবে সজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসবে; আমি তাদের বিয়ে দেব সুনয়না (বড় বড় চক্ষুবিশিষ্ট) হূরের সঙ্গে।” (সূরা তুর ৫২:১৭-২০) এছাড়া অসংখ্য আয়াত রয়েছে।
(وَنَزَعْنَا مَا فِيْ صُدُوْرِهِمْ مِّنْ غِلٍّ)
অর্থাৎ পৃথিবীতে তাদের মধ্যে যে হিংসে-বিদ্বেষ, ঘৃণা বা শত্র“তা ছিল, তা তাদের অন্তর থেকে বের করে নেয়া হবে। যার ফলে তাদের অন্তর হবে একে অপরের জন্য আয়নার মত স্বচ্ছ ও পরিস্কার।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَنَزَعْنَا مَا فِيْ صُدُوْرِهِمْ مِّنْ غِلٍّ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهِمُ الْأَنْهٰرُ ج وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ هَدٰنَا لِهٰذَا)
“আমি তাদের অন্তর হতে হিংসে-বিদ্বেষ দূর করে দিব, তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হবে নদী এবং তারা বলবে, ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই যিনি আমাদেরকে এর পথ দেখিয়েছেন।” (সূরা আ‘রাফ ৭:৪৩)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মু’মিনদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দানের পর জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্থলে অবস্থিত পুলের উপর আটক করা হবে এবং দুনিয়ায় যে তারা একে অপরের উপর জুলুম করেছিল তারা একে অপর হতে প্রতিশোধ গ্রহণ করবে। অতঃপর তারা যখন হিংসে-বিদ্বেষ মুক্ত অন্তরের অধিকারী হয়ে যাবে তখন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী হা: ৬৫৩৫)
مُّتَقٰبِلِيْنَ অর্থাৎ জান্নাতীরা জান্নাতের খাটের ওপর মুখোমুখি হয়ে বসবে।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(عَلٰی سُرُرٍ مَّوْضُوْنَةٍﭞﺫ مُّتَّکِئِیْنَ عَلَیْھَا مُتَقٰبِلِیْنَﭟ یَطُوْفُ عَلَیْھِمْ وِلْدَانٌ مُّخَلَّدُوْنَﭠﺫ بِاَکْوَابٍ وَّاَبَارِیْقَﺃ وَکَاْسٍ مِّنْ مَّعِیْنٍﭡ)
“তারা থাকবে স্বর্ণখচিত আসনসমূহে, তার ওপরে হেলান দিয়ে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে বসবে। তাদের সেবায় ঘোরাফেরা করবে চির কিশোরেরা। পানপাত্র, ঘটি ও শরাবে পরিপূর্ণ পেয়ালা নিয়ে, (এরা হাজির হবে।) (সূরা ওয়াকিয়া ৫৬:১৫-১৮)
জান্নাতে মু’মিনদের কোন কষ্ট থাকবে না, তারা সেখানে চিরস্থায়ীরূপে থাকবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(الَّذِيْٓ أَحَلَّنَا دَارَ الْمُقَامَةِ مِنْ فَضْلِه۪ ج لَا يَمَسُّنَا فِيْهَا نَصَبٌ وَّلَا يَمَسُّنَا فِيْهَا لُغُوْبٌ)
“যিনি স্বীয় অনুগ্রহে আমাদেরকে অনন্ত নির্বাসে স্থান দিয়েছেন, সেখানে আমাদেরকে কোন কষ্টও স্পর্শ করে না এবং সেথায় আমাদেরকে কোন ক্লান্তিও স্পর্শ করে না।” (সূরা ফাতির ৩৫:৩৫)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ کَانَتْ لَھُمْ جَنّٰتُ الْفِرْدَوْسِ نُزُلًا﮺ﺫ خٰلِدِیْنَ فِیْھَا لَا یَبْغُوْنَ عَنْھَا حِوَلًا﮻)
“নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের আপ্যায়নের জন্য আছে ফিরদাউসের উদ্যান, সেথায় তারা স্থায়ী হবে, তা হতে স্থানান্তর কামনা করবে না।” (সূরা কাহফ ১৮:১০৭-১০৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: জান্নাতীদেরকে বলা হবে যে, হে জান্নাতীগণ! তোমরা চিরকাল সুস্থ থাকবে, কখনো রোগাক্রান্ত হবে না; সর্বদা জীবিত থাকবে কখনো মৃত্যুবরণ করবে না; সর্বদা যুবকই থাকবে কখনো বৃদ্ধ হবে না; চিরকাল এখানেই থাকবে কখনো বের হবে না। (সহীহ মুসলিম হা: ২৮৩৭)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নির্দেশ দিচ্ছেন সকলকে জানিয়ে দেয়ার জন্য যে, আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমাশীল ও দয়ালু, আবার তিনি কঠিন শাস্তিদাতাও।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
لَوْ يَعْلَمُ الْمُؤْمِنُ مَا عِنْدَ اللّٰهِ مِنَ الْعُقُوبَةِ، مَا طَمِعَ بِجَنَّتِهِ أَحَدٌ، وَلَوْ يَعْلَمُ الْكَافِرُ مَا عِنْدَ اللّٰهِ مِنَ الرَّحْمَةِ، مَا قَنَطَ مِنْ جَنَّتِهِ أَحَدٌ
মু’মিন যদি জানত আল্লাহর কাছে কত কঠিন শাস্তি রয়েছে তাহলে কেউ জান্নাতের আশা করত না। কাফির যদি জানত আল্লাহর কাছে কত রহমত রয়েছে তাহলে কেউ জান্নাত থেকে নিরাশ হত না। (সহীহ মুসলিম হা: ২৭৫৫)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَي قَلْبِ بَشَرٍ
আমি আমার বান্দার জন্য এমন কিছু তৈরি করে রেখেছি যা কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কান শোনেনি এমনকি কোন মানুষের অন্তরে কল্পনায় আসেনি। (সহীহ বুখারী হা: ৩২৪৪, সহীহ মুসলিম হা: ২৮২৪)
সুতরাং এ নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত তাদের জন্যই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে চলবে এবং সৎআমল করবে। সুতরাং আমাদের উচিত সর্বদা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে চলা এবং বেশি বেশি সৎ আমল করা।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে আর জিনকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন থেকে।
২. সর্বপ্রথম যুক্তি পেশ করেছিল ইবলীস।
৩. আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ মানার ব্যাপারে কোন প্রকার যুক্তি-তর্ক পেশ করা চলবে না।
৪. জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে।
৫. শয়তান মানুষের মাধ্যমে খারাপ কাজ করানোর জন্য সর্বদা ওঁৎ পেতে রয়েছে।
৬. ইবলীস থেকে আল্লাহ তা‘আলার সৎ বান্দাদের ক্ষমতা অনেক বেশি।
৭. মুত্তাকিদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা এমন নেয়ামতপূর্ণ জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন যা কল্পনাতীত।
9 Fozlur Rahman
আর আমার শাস্তিই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
10 Mokhtasar Bangla
৫০. আপনি তাদেরকে আরো জানিয়ে দিন যে, নিশ্চয়ই আমার শাস্তি খুবই যন্ত্রণাদায়ক। তাই তারা যেন আমার ক্ষমা পাওয়া ও আমার শাস্তি থেকে নিরাপদে থাকার জন্য তাওবা করে।
11 Tafsir Ibn Kathir
৪৫-৫০ নং আয়াতের তাফসীর
জাহান্নামবাসীদের বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ তাআলা এখানে জান্নাতবাসীদের বর্ণনা দিচ্ছেন। তিনি বলছেন যে, জান্নাতবাসীরা এমন বাগানে অবস্থান করবে যেখানে প্রস্রবণ ও নদী প্রবাহিত হবে। সেখানে তাদেরকে সুসংবাদ জানিয়ে বলা হবেঃ “এখন তোমরা সমস্ত বিপদ আপদ থেকে বেঁচে গেছো। তোমরা সর্বপ্রকারের ভয়ভীতি ও দুশ্চিন্তা থেকে নিরাপত্তা লাভ করেছে। এখানে না আছে নিয়ামত নষ্ট হওয়ার ভয়, না আছে এখান থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার আশংকা এবং না আছে কিছু কমে যাওয়ার ও ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনা।”
মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি তাদের হতে ঈর্ষা দূর করবো। তার ভ্রাতৃভাবে পরম্পর মুখোমুখি হয়ে অবস্থান করবে। আবু উমামা (রাঃ) বলেন, জান্নাতবাসীরা জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্বেই আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তর হতে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে দিবেন।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মু'মিনদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দানের পর জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যস্থলে অবস্থিত পুলের উপর আটক করা হবে এবং দুনিয়ায় যে তারা একে অপরের উপর যুলুম করেছিল তার প্রতিশোধ তারা একে অপর হতে গ্রহণ করবে। অতঃপর তারা যখন হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত অন্তরের অধিকারী হয়ে যাবে তখন তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে।”
ইবনু সীরীন (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আশতারা (নামক একটি লোক) হযরত আলীর (রাঃ) নিকট প্রবেশ করার অনুমতি প্রার্থনা করে। এ সময় তাঁর নিকট হযরত তালহার (রাঃ) পুত্র বসে ছিলেন। তাই কিছুক্ষণ বিলম্বের পর তাকে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দেন। তাঁর কাছে প্রবেশের পর সে বলেঃ “এঁর কারণেই বুঝি আমাকে আপনি আপনার নিকট প্রবেশের অনুমতি দানে বিলম্ব করেছেন।” উত্তরে তিনি বলেনঃ “হা (এ কথা সত্য বটে)।” সে পুনরায় বলেঃ “আমার মনে হয় যদি আপনার কাছে হযরত উসমানের (রাঃ) পুত্র থাকতেন। তবে তাঁর কারণেও আমাকে আপনার কাছে প্রবেশের অনুমতি দান করতে অবশ্যই বিলম্ব করতেন?” হযরত আলী (রাঃ) জবাবে বলেনঃ “হাঁ, অবশ্যই। আমি তো আশা রাখি যে, আমি এবং হযরত উসমান (রাঃ) ঐ লোকদেরই অন্তর্ভূক্ত হবো যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি তাদের অন্তর হতে ঈর্ষা দূর করবো। তারা ভ্রাতৃভাবে পরপর মুখোমুখি হয়ে অবস্থান করবে। (এটা ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য আর একটি রিওয়ায়েতে আছে যে, ইমারান ইবনু তালহা (রাঃ) উষ্ট্রির যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীদের থেকে মুক্ত হয়ে হযরত আলীর (রাঃ) নিকট আগমন করেন। হযরত আলী (রাঃ) তাঁকে সাদর সম্ভাষণ জানান এবং বলেনঃ “আমি আশা রাখি যে, আমি এবং তোমার আব্বা ঐ লোকদেরই অন্তর্ভূক্ত হবো যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমি তাদের অন্তর হতে ঈর্ষা দূর করবো। তারা ভ্ৰাতৃভাবে পরম্পর মুখোমুখি হয়ে অবস্থান করবে।” অন্য একটি বর্ণনায় আছে যে, তাঁকে বলেনঃ “আল্লাহ তাআলার ন্যায় বিচার-এর চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে যে, যাকে আপনি কাল হত্যা করলেন তাঁরই আপনি ভাই হয়ে যাবেন।” হযরত আলী (রাঃ) তখন রাগান্বিত হয়ে বলেনঃ “এই আয়াত দ্বারা যদি আমার ও তালহার (রাঃ) মত লোককে বুঝানো হয়ে না থাকে তবে আর কাদেরকে বুঝানো হবে?”
অন্য একটি রিওয়ায়েতে আছে যে, হামাদান গোত্রের একটি লোক উপরোক্ত উক্তি করেছিল এবং হযরত আলী (রাঃ) তাকে এত জোরে ধমক দিয়েছিলেন যে, প্রাসাদ নড়ে উঠেছিল। আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, ঐ উক্তিকারীর নাম ছিল হারিস আওয়ার এবং হযরত আলী (রাঃ) তার একথায় ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁর হাতে যা ছিল তা দিয়ে তিনি তাকে মাথায় আঘাত করেছিলেন। অতঃপর তিনি তাঁর উপরোক্ত উক্তি করেছিলেন। হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত যুবাইর (রাঃ) ইবনু জারমুয হযরত আলীর (রাঃ) দরবারে উপস্থিত হলে দীর্ঘ ক্ষণ পর তিনি তাকে তার কাছে যাওয়ার অনুমতি দেন। তাঁর কাছে এসে সে হযরত যুবাইর (রাঃ) ও তাঁর সাথীদের সম্পর্কে ‘বালওয়াঈ’ বলে কটুক্তি করলে তিনি তাকে। বলেনঃ “তোমার মুখে মাটি পড়ুক। আমি, তালহা (রাঃ) এবং যুবাইর (রাঃ) তো ইনশাআল্লাহ ঐ লোকদের অন্তর্ভূক্ত হবো যাদের ব্যাপারে মহান আল্লাহর উক্তি রয়েছেঃ “আমি তাদের অন্তর হতে ঈর্ষা দূর করে দেবো। তারা ভ্ৰাতৃভাবে পরম্পর মুখোমুখি হয়ে অবস্থান করবে।”
অনুরূপভাবে হযরত হাসান বসরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহর শপথ! وَ نَزَعْنَا مَا فِیْ صُدُوْرِهِمْ مِّنْ غِلٍّ اِخْوَانًا عَلٰى سُرُرٍ مُّتَقٰبِلِیْنَ এই আয়াতটি আমাদের বদরী সাহাবীদের ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে।”
কাসীরুন্নাওয়া বলেনঃ “আমি আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনু আলীর (রাঃ) । নিকট গমন করি এবং বলিঃ “আমার বন্ধু আপনারও বন্ধু, আমার সাথে মেলামেশাকারী আপনার সাথেও মেলামেশাকারী, আমার শত্রু আপনারও শত্রু এবং আমার সাথে যুদ্ধকারী আপনার সাথেই যুদ্ধকারী। আল্লাহর কসম! আমি হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত উমার (রাঃ) হতে মুক্ত। আমার এ কথা শুনে তিনি বলেনঃ “যদি আমি এরূপ করি তবে আমার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট অরি কেউই থাকবে না। এ অবস্থায় আমার হিদায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে। হে কাসীর! তুমি এই দুব্যক্তি অর্থাৎ হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত উমারের (রাঃ) প্রতি ভালবাসা রাখবে, এতে যদি পাপ হয় তবে, আমিই তা বহন করবো।” অতঃপর তিনি এই আয়াতের اِخْوَانًا عَلٰى سُرُرٍ مُّتَقٰبِلِیْنَ এ অংশটুকু পাঠ করলেন এবং বলেনঃ “এই আয়াতটি নিম্ন লিখিত দশজন লোকের ব্যাপারে অবর্তীণ হয়েছেঃ ১, “হযরত আবু বকর (রাঃ), ২. হযরত উমার (রাঃ), ৩. হযরত উসমান (রাঃ), ৪.হযরত আলী (রাঃ), ৫. হযরত তালহা (রাঃ), ৬. হযরত যুবাইর (রাঃ), ৭. হযরত আবদুর রহমান ইবনু আউফ (রাঃ), (৮, হযরত সা’দ ইবনু আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) , ৯. হযরত সাঈদ ইবনু যায়েদ (রাঃ) এবং ১০. হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) ”। এঁরা মুখোমুখি হয়ে বসবেন যাতে কারো দিকে কারো পিঠ না হয়। এ ব্যাপারে মারফু হাদীস রয়েছে। হযরত যায়েদ ইবনু আবি আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের নিকট বের হয়ে এসে اِخْوَانًا عَلٰى سُرُرٍ مُّتَقٰبِلِیْنَ এই আয়াতটি পাঠ করেন। অর্থাৎ একে অপরের দিকে তাকাতে থাকবে। সেখানে তাদের কোন দুঃখ-কষ্ট হবে না। (এ হাদীসটি ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন হযরত খাদীজা’কে (রাঃ) বেহেশতের সোনার একটি ঘরের সুসংবাদ প্রদান করি যেখানে কোন শোরগোল থাকবে না এবং কোন দুঃখ-কষ্টও থাকবে না।”
এই জান্নাতীদেরকে জান্নাত থেকে বের করা হবে না। যেমন হাদীসে এসেছে যে, জান্নাতীদেরকে বলা হবেঃ “হে জান্নাতীগণ! তোমরা চিরকাল সুস্থ থাকবে, কখনো রোগাক্রান্ত হবে না; সর্বদা জীবিত থাকবে, কখনো মৃত্যু বরণ করবে না, সর্বদা যুবকই থাকবে, কখনো বৃদ্ধ হবে না, চিরকাল এখানেই অবস্থান করবে, কখনো এখান হতে বের হবে না।” অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “তারা তথায় চিরকাল অবস্থান করবে, স্থান পরিবর্তনের আকাংখা তারা করবে না।”
মহান আল্লাহ বলেনঃ “(হে নবী (সঃ)! আমার বান্দাদেরকে খবর দিয়ে দাওঃ “নিশ্চয় আমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু, আবার আমার শাস্তি যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিও বটে।” এই ধরনের আরো আয়াত ইতিপূর্বে গত হয়েছে। এগুলি দ্বারা উদ্দেশ্য এই যে, মুমিনদেরকে (জান্নাতের শান্তির) আশার সাথে সাথে (জাহান্নামের শাস্তির) ভয়ও রাখতে হবে। হযরত মুসআব ইবনু সাবিত (রাঃ) বলেনঃ “(একদা) রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর সাহাবীদের এমন এক দল লোকের পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন যারা হাসতে ছিলেন। তখন তিনি তাঁদেরকে বললেনঃ “তোমরা জান্নাত ও জাহান্নামকে স্মরণ করো।” ঐ সময় উপরোক্ত আয়াত অর্থাৎ -
نَبِّئْ عِبَادِیْۤ اَنِّیْۤ اَنَا الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ ـ وَ اَنَّ عَذَابِیْ هُوَ الْعَذَابُ الْاَلِیْمُ
অবতীর্ণ হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং এটা মুরসাল)
ইবনু আবি রাবাহ (রাঃ) নবীর (সঃ) সাহাবীদের এক ব্যক্তি হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) বানু শায়বার দরজা দিয়ে আমাদের নিকট আত্মপ্রকাশ করেন এবং বলেনঃ “আমি তো তোমাদেরকে হাসতে দেখছি।” এ কথা বলেই তিনি ফিরে যান এবং হাতীমের নিকট থেকে পুনরায় আমাদের নিকট আগমন করেন এবং বলেনঃ “যখন আমি বের হয়েছি তখনই হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমার কাছে এসে বলেনঃ “হে মুহাম্মদ (সঃ)! নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমার বান্দাদেরকে নিরাশ করছো কেন? আমার বান্দাদের সংবাদ দিয়ে দাওঃ নিশ্চয়ই আমি ক্ষমাশীল ও দয়ালু, আবার আমার শাস্তিও বেদনাদায়ক শাস্তি বটে।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনু জারীর বর্ণনা করেছেন)
অন্য হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যদি আল্লাহ তাআলার ক্ষমার পরিমাণ অবগত হতো তবে সে হারাম থেকে বেঁচে থাকা পরিত্যাগ করতো। পক্ষান্তরে যদি সে আল্লাহর শাস্তির পরিণাম অবগত হতো তবে সে নিজেকে ধ্বংস করে ফেলতো।”