৭১-৭২ নং আয়াতের তাফসীর
এখানে ইমাম দ্বারা উদ্দেশ্য নবী। প্রত্যেক উম্মতকে কিয়ামতের দিন তাদের নবীসহ ডাকা হবে যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ وَ لِكُلِّ اُمَّةٍ رَّسُوْلٌ فَاِذَا جَآءَ رَسُوْلُهُمْ قُضِیَ بَیْنَهُمْ بِالْقِسْطِ وَ هُمْ لَا یُظْلَمُوْنَ অর্থাৎ “প্রত্যেক উম্মতেরই রাসূল রয়েছে, যখন তাদের রাসূল আসবে তখন তাদের ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করে দেয়া হবে এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।” (১০:৪৭)
পূর্ব যুগীয় কোন কোন মনীষীর উক্তি রয়েছে যে, এতে আহলে হাদীসের খুবই বড় মর্যাদা রয়েছে। কেননা, তাঁদের ইমাম হলেন হযরত মুহাম্মদ (সঃ)। ইবনু যায়েদ (রঃ) বলেন যে, এখানে ইমাম দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর কিতাব যা তাদের শরীয়তের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছিল। ইমাম ইবনু জারীর (রঃ) এই তাফসীরকে খুবই পছন্দ করেছেন এবং এটাকেই মনোনীত বলেছেন। মজাহিদ (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের কিতাব। সম্ভবতঃ কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহর আহকামের কিতাব অথবা আমলনামা অর্থ নিয়েছেন। আবুল আলিয়া (রঃ), হাসান (রঃ) এবং যহহাক ও (রঃ) এটাই বলেন। আর এটাই বেশী প্রাধান্য প্রাপ্ত উক্তি। মহান আল্লাহ বলেনঃ وَ كُلَّ شَیْءٍ اَحْصَیْنٰهُ فِیْۤ اِمَامٍ مُّبِیْنٍ অর্থাৎ আমি প্রত্যেক বিষয়কে এক সমুজ্জ্বল কিতাবে সংরক্ষিত করে রেখেছি।” (৩৬:১২) অন্য আয়াতে আছেঃ
وَ وُضِعَ الْكِتٰبُ فَتَرَى الْمُجْرِمِیْنَ مُشْفِقِیْنَ مِمَّا فِیْهِ অর্থাৎ “কিতাব অর্থাৎ আমলনামা মধ্যস্থলে রেখে দেয়া হবে, এ সময় তুমি দেখবে যে, পাপীরা ওর মধ্যে লিখিত বিষয় দেখে ভীত সন্ত্রস্ত থাকবে।” (১৮:৪৯) অন্য আয়াতে রয়েছেঃ “প্রত্যেক উম্মতকে তুমি হাঁটুর ভরে পড়ে থাকতে দেখবে, প্রত্যেক উম্মতকে তার কিতাবের দিকে ডাকা হবে, (এবং বলা হবেঃ) আজ তোমাদেরকে তোমাদের কৃতকর্মের প্রতিফল দেয়া হবে। এটাই হচ্ছে। আমার কিতাব যা তোমাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করবে, তোমরা যা কিছু করতে আমি বরাবরই তা লিখে রাখতাম।” এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, এই তাফসীর প্রথম তাফসীরের বিপরীত নয়। একদিকে আমলনামা হাতে থাকবে, অপর দিকে স্বয়ং নবী সামনে বিদ্যমান থাকবেন। যেমন কুরআন কারীমে ঘোষিত হয়েছেঃ وَ اَشْرَقَتِ الْاَرْضُ بِنُوْرِ رَبِّهَا وَ وُضِعَ الْكِتٰبُ وَ جِایْٓءَ بِالنَّبِیّٖنَ وَ الشُّهَدَآءِ অর্থাৎ “যমীন স্বীয় প্রতিপালকের নূরে উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, আমলনামা রেখে দেয়া হবে এবং নবীদেরকে ও সাক্ষীদেরকে হাজির করে দেয়া হবে।” (৩৯:৬৯) অন্য একটি আয়াতে আছেঃ فَكَیْفَ اِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ اُمَّةٍۭ بِشَهِیْدٍ وَّ جِئْنَا بِكَ عَلٰى هٰۤؤُلَآءِ شَهِیْدًا অর্থাৎ “ঐ সময়েই বা কি অবস্থা হবে? যখন আমি প্রত্যেক উম্মত হতে এক একজন সাক্ষী উপস্থাপিত করবো এবং তোমাকে তাদের উপর সাক্ষীরূপে উপস্থিত করবো।” (৪:৪১) কিন্তু এখানে ইমাম দ্বারা আমলনামাই উদ্দেশ্য। এজন্যেই এরপরেই আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ যাদেরকে দক্ষিণ হস্তে তাদের আমলনামা দেয়া হবে তারা তাদের আমলনামা পাঠ করবে। এমন কি খুশীতে অন্যদেরকেও দেখাবে ও পাঠ করাবে। এরই আরো বর্ণনা সূরায়ে اَلْحَاقَّة তে রয়েছে।فَتِيْل দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ঐ লম্বা সুতা যা খেজুরের আঁটির মধ্যে থাকে।
বাযযার (রঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেছেনঃ “একটি লোককে ডেকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেয়াহবে। তখন তার দেহ বেড়ে যাবে, চেহারা উজ্জ্বল হবে এবং মাথায় উজ্জ্বলহীরার মুকুট পরিয়ে দেয়া হবে। সে তার দলীয় লোকদের দিকে এগিয়ে যাবে। তারা তাকে ঐ অবস্থায় আসতে দেখে সবাই আকাংখা করে বলবেঃ “হে আল্লাহ! আমাদেরকেও এটা দান করুন এবং আমাদেরকে এতে বরকত দিন।” ঐ লোকটি তাদের কাছে এসেই বলবেঃ “তোমরা আনন্দিত হও। তোমাদের প্রত্যেককেও এটা দেয়া হবে।” কিন্তু কাফিরের চেহারা কালো ও মলিন হয়ে যাবে এবং তারও দেহ বেড়ে যাবে। তাকে দেখে তার সঙ্গীরা বলবেঃ “আমরা তার থেকে আল্লাহ তাআলার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি, তার দুষ্কৃতি থেকে আমরা আশ্রয় প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! তাকে আমাদের কাছে আনয়ন করবেন না।” ইতিমধ্যে সে সেখানে চলে আসবে। তারা তখন তাকে বলবেঃ “আল্লাহ তোমাকে অপদস্থ করুন।” সে জবাবে তাদেরকে বলবেঃ “তোমাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করুন! এটা আল্লাহর মার। এটা তোমাদের সবারই জন্যে অবধারিত রয়েছে।”এই দুনিয়ায় যারা আল্লাহ তাআলার আয়াত সমূহ হতে, তাঁর কিতাব হতে এবং তাঁর হিদায়াতের পথ হতে চক্ষু ফিরিয়ে নিয়েছে, পরকালে বাস্তবপক্ষেই তারা অন্ধ হয়ে যাবে এবং দুনিয়ার চেয়েও বেশী পথভ্রষ্ট হবে। আমরা এর থেকে মহান আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।