৩-৪ নং আয়াতের তাফসীর:
(وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ.....)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা একশ্রেণির মানুষের একটা মন্দ অভ্যাসের বর্ণনা দিচ্ছেন। তারা সঠিক দলীল প্রমাণ ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে এমন কথা বলে ও মন্তব্য করে যা তাঁর সত্তার সাথে উপযোগী নয়। যেমন বলে থাকে, আল্লাহ তা‘আলার স্ত্রী-সন্তান রয়েছে, আল্লাহ স্ব-সত্তায় সর্বত্র বিরাজমান, কুরআন হল পূর্ব যুগের কল্প-কাহিনী ইত্যাদি। মূলত এরা শয়তানের অনুসারী, শয়তান তাদের কাছে এসকল খারাপ চিন্তা-চেতনা জাগিয়ে দেয় যাতে সঠিক পথের অনুসারীদের সাথে বিবাদ করতে পারে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী।
(وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يُّجَادِلُ فِي اللّٰهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّلَا هُدًي وَّلَا كِتٰبٍ مُّنِيْرٍ - وَإِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوْا مَآ أَنْزَلَ اللّٰهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَا وَجَدْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَا ط أَوَلَوْ كَانَ الشَّيْطٰنُ يَدْعُوْهُمْ إِلٰي عَذَابِ السَّعِيْرِ)
“মানুষের মধ্যে কতক এরূপও আছে, যারা আল্লাহ সম্পর্কে বাক-বিতণ্ডা করে কোন জ্ঞান, কোন পথনির্দেশ ও কোন উজ্জ্বল গ্রন্থ ছাড়াই। আর যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা তার অনুসরণ কর যা আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন, তখন তারা বলে, বরং আমরা তার অনুসরণ করব, যার ওপর আমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছি। যদিও শয়তান তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে আহ্বান করতে থাকে তবুও কি?” (সূরা লুকমান ৩১:২০-২১)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِنَّ الشَّيٰطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ إِلٰٓي أَوْلِيَا۬ئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْ ج وَإِنْ أَطَعْتُمُوْهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ)
“নিশ্চয়ই শয়তানেরা তাদের বন্ধুদেরকে তোমাদের সাথে বিবাদ করতে গোপনীয়ভাবে জানিয়ে দেয়; যদি তোমরা তাদের কথামত চল তবে তোমরা অবশ্যই মুশরিক হবে।” (সূরা আন‘আম ৬:১২১)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সতর্ক করে বলছেন, এ কথা পূর্বেই লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে, যে ব্যক্তি শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, শয়তান তাকে পথভ্রষ্ট করে ফেলবে এবং তাকে জাহান্নামের পথে পরিচালিত রবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَمَنْ يَّتَّبِعْ خُطُوٰتِ الشَّيْطٰنِ فَإِنَّه۫ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَا۬ءِ وَالْمُنْكَرِ)
“আর কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করলে শয়তান তো অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়।” (সূরা নূর ২৪:২১) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ عَدُوًّا ط إِنَّمَا يَدْعُوْا حِزْبَه۫ لِيَكُوْنُوْا مِنْ أَصْحٰبِ السَّعِيْرِ)
“নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্র“, সুতরাং তাকে তোমরা শত্র“রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে শুধু এজন্যই আহ্বান করে, যেন তারা (পথভ্রষ্ট হয়ে) দোযখীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।” (সূরা ফাতির ৫:৬)
অতএব কখনো শয়তানের অনুসরণ করা যাবে না। কারণ সে মানুষের প্রকাশ্য শত্র“। সে সবর্দা মানুষের ক্ষতি সাধন করার চেষ্টা করে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কোন বিষয়ে জ্ঞান না থাকলে ঐ বিষয়ে কথা বলা উচিত নয়।
২. শয়তানের অনুসরণ করা যাবে না। কারণ সে মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।