৯৩-৯৮ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী মুহাম্মাদ (সঃ)-কে নির্দেশ নিচ্ছেন যে, শাস্তি অবতীর্ণ হওয়ার সময় তিনি যেন দু'আ করেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আপনি যদি আমার বিদ্যমানতায় ঐ অসৎ লোকদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করেন তবে আমাকে ঐ শাস্তি হতে বাঁচিয়ে নিন। যেমন হাদীসে এসেছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যখন আপনি কোন কওমকে ফিৎনায় পতিত করার ইচ্ছা করেন তখন ফিৎনায় পতিত করার পূর্বেই আমাকে আপনার নিকট উঠিয়ে নেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) এবং ইমাম তিরিমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে বিশুদ্ধ বলেছেন)
আল্লাহ পাক স্বীয় নবী (সঃ)-কে এই শিক্ষা দেয়ার পর বলেনঃ আমি তাদেরকে যে বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি তা আমি তোমাকে দেখাতে অবশ্যই সক্ষম। অর্থাৎ আমার পক্ষ থেকে ঐ কাফিরদের উপর যে শাস্তি ও বিপদ-আপদ আসবে তা ইচ্ছা করলে আমি তোমাকে দেখাতে পারি।
এরপর মহান আল্লাহ তাঁর রাসূল (সঃ)-কে এমন কথা শিখিয়ে দিচ্ছেন যা সমস্ত কঠিন সমস্যা ও বিপদ-আপদ দূর করতে সক্ষম। তা হলো, তুমি মন্দের মুকাবিলা কর যা উত্তম তা দ্বারা; তারা যা বলে আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবগত। অর্থাৎ যারা তোমার সাথে মন্দ ব্যবহার করে তুমি তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার কর যাতে তাদের শত্রুতা বন্ধুত্বে এবং ঘৃণা প্রেম-প্রীতিতে পরিবর্তিত হয়। যেমন অন্য আয়াতে তিনি বলেছেনঃ اِدْفَعْ بِالَّتِیْ هِیَ اَحْسَنُ فَاِذَا الَّذِیْ بَیْنَكَ وَ بَیْنَهٗ عَدَاوَةٌ كَاَنَّهٗ وَلِیٌّ حَمِیْمٌ ـ وَ مَا یُلَقّٰىهَاۤ اِلَّا الَّذِیْنَ صَبَرُوْا وَمَا یُلَقّٰىهَاۤ اِلَّا ذُوْ حَظٍّ عَظِیْمٍ অর্থাৎ “মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা; ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। এই গুণের অধিকারী করা হয় শুধু তাদেরকেই যারা ধৈর্যশীল; এই গুণের অধিকারী করা হয় শুধু তাদেরকেই যারা। মহা ভাগ্যবান।” (৪১:৩৪-৩৫)
মানুষের অনিষ্ট থেকে বাঁচবার উত্তম পন্থা বলে দেয়ার পর মহান আল্লাহ, শয়তানের অনিষ্ট হতে বাঁচবার উপায় বলে দিচ্ছেনঃ বল, হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করি শয়তানের প্ররোচনা হতে। কেননা, তার প্ররোচনা হতে বাঁচবার অস্ত্র এই প্রার্থনা ছাড়া তোমাদের অধিকারে আর কিছুই নেই। সদাচরণ দ্বারা সে মানুষের বশে আসতে পারে না। আশ্রয় প্রার্থনা করার বর্ণনায় আমরা লিখে এসেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) পাঠ করতেনঃ اَعُوْذُ بِاللّٰهِ السَّمِيْعِ الْعَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ مِنْ هَمْزِهٖ وَنَفْخِهٖ وَنَفْثِهٖ অর্থাৎ “আমি শ্রোতা ও জ্ঞাতা আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তানের প্ররোচনা, কুমন্ত্রণা ও ফুৎকার হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
আল্লাহ তা'আলার উক্তিঃ وَاَعُوْذُبِكَ رَبِّكَ اَنْ يَّحْضُرُوْنَ অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি আমার নিকট তাদের উপস্থিতি হতে। শয়তান যেন আমার কোন কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে।
সুতরাং প্রত্যেক কাজের প্রারম্ভে আল্লাহর স্মরণ ঐ কাজের মধ্যে শয়তানের প্রবেশকরণকে সরিয়ে রাখে। পানাহার, সহবাস, যবেহ ইত্যাদি প্রত্যেকটি কাজের শুরুতে আল্লাহকে স্মরণ করা উচিত। বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিম্নের দু'আটিও পাঠ করতেনঃ اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَرَمِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَدَمِ وَمِنَ الْغَرَقِ وَاَعُوْذُ بِكَ اَنْ يَتَخَبَّطَنِيَ الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি অতি বার্ধক্য হতে, আশ্রয় চাচ্ছি পিষ্ট হয়ে (আকস্মিকভাবে) মৃত্যুবরণ করা হতে ও ডুবে মরা হতে এবং শয়তান যেন আমাকে আমার মৃত্যুর সময় বিভ্রান্ত করতে না পারে সে জন্যে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা কছি।” (এটা ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আমর ইবনে শশাআইব (রাঃ) তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে একটি দু'আ শিখাতেন যেন ওটা আমা ঘুমোবার সময় পাঠ করি যাতে উদ্বেগের কারণে নিদ্রা ভঙ্গ হয়ে যাওয়ার রাগে দূর হয়ে যায়। তা হলোঃ بِسْمِ اللّٰهِ اَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ غَضَبِهٖ وَعِقَابِهٖ وَمِنْ شَرِّ عِبَادِهٖ وَمَنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِيْنِ وَاَنْ يَّحْضُرُوْنَ
অর্থাৎ “আমি আল্লাহর নামে তাঁর পূর্ণ কালেমার মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি তার গযব হতে, তার শাস্তি হতে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্ট হতে, শয়তানদের প্ররোচনা হতে এবং আমার নিকট তাদের উপস্থিতি হতে।”
হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর নীতি ছিল এই যে, তিনি তাঁর প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদেরকে উপরোক্ত দু'আটি শিখিয়ে দিতেন এবং এটা লিখে অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের গলায় লটকিয়ে দিতেন। (ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু দাঊদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) ইমাম নাসাঈও (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান গারীব বলেছেন)