১৪-১৫ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ হে ঐ লোক সকল! যারা হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর ব্যাপারে মুখে মন্দ ও অশোভনীয় কথা উচ্চারণ করেছে, জেনে রেখো যে, তোমাদের উপর যদি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ না থাকতো, এইভাবে যে, তিনি দুনিয়ায় তোমাদের তাওবা কবূল করেছেন এবং আখিরাতে তোমাদের ঈমানের কারণে তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন, তবে তোমরা তোমাদের মুখ দিয়ে যে কথা বের করেছে এ কারণে তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি স্পর্শ করতো। এই আয়াতটি ঐ লোকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যাদের অন্তরে ঈমান ছিল, কিন্তু ত্বরা প্রবণতার কারণে তাদের মুখ দিয়ে ঐ কথা বেরিয়ে গিয়েছিল। যেমন হযরত মিসতাহ (রাঃ), হযরত হাসসান (রাঃ) এবং হযরত হিমনাহ (রাঃ)! কিন্তু যাদের অন্তর ছিল ঈমান শূন্য, যারা ঐ তুফান উঠিয়েছিল, যেমন আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সাল প্রমুখ মুনাফিকরা এই হুকুম বহির্ভূত। কেননা, না তাদের অন্তরে ঈমান ছিল, না তারা সকার্য সম্পাদন করতো। এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, যে অপরাধ ও পাপের উপর যে শাস্তির ভয় দেখানো হয় তা তখনই স্থির হয়ে যায় যদি ওর মুকাবিলায় তাওবা না থাকে বা ঐরূপ অথবা ওর চেয়ে বড় পুণ্য না থাকে।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যখন তোমরা মুখে মুখে এটা ছড়াচ্ছিলে অর্থাৎ এক মুখ হতে আর এক মুখে এবং আর এক মুখ হতে অন্য আর এক মুখে এভাবে খবরটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল।
হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর কিরআতে রয়েছে اِذْ تَلْقَوْنَهٗ অর্থাৎ যখন তোমরা ঐ মিথ্যা কথা ছড়িয়ে দিচ্ছিলে। প্রথমটি জমহূরের কিরআত এবং ঐ কিরআতটি হলো তাদেরই কিরআত যাঁদের এই আয়াতের জ্ঞান বেশী ছিল।
মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা এমন বিষয় মুখে উচ্চারণ করছিলে যার কোন জ্ঞান তোমাদের ছিল না। তোমরা একথাটিকে হালকা মনে করেছিলে, কিন্তু আল্লাহর নিকট এটা ছিল গুরুতর বিষয়। কোন মুসলমানের স্ত্রীর এরূপ অপবাদ রচনা করা গুরুতর অপরাধ। আর ইনি হলেন আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর পবিত্র স্ত্রী। তাহলে তার সম্পর্কে এই অপবাদ রচনা করা কত বড় অপরাধ হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। এ কারণেই স্বীয় নবী (সঃ)-এর মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য করে আল্লাহ তা'আলা আয়াত নাযিল করতঃ নবী (সঃ)-এর সতী-সাধ্বী স্ত্রীর পবিত্রতা ও সতীত্ব প্রমাণ করেন। প্রত্যেক নবীর স্ত্রীকেই মহান আল্লাহ এই নির্লজ্জতাপূর্ণ কাজ হতে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কাজেই এটা কি করে সম্ভব যে, সমস্ত নবীর স্ত্রীদের চেয়ে উত্তম ও তাদের নেত্রী এবং সমস্ত নবী হতে উত্তম ও সমস্ত আদম সন্তানের নেতা হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর স্ত্রী এই নির্লজ্জতাপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়বেন। এটা কখনই সম্ভব হতে পারে না।
মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা এটাকে তুচ্ছ মনে করেছিলে, কিন্তু আল্লাহ তা'আলার কাছে ছিল এটা গুরুতর বিষয়। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, কোন কোন সময় মানুষ আল্লাহ তা'আলার অসন্তুষ্টির কোন কথা মুখে বলে ফেলে যার কোন গুরুতু তার কাছে থাকে না। কিন্তু ঐ কারণে সে জাহান্নামের এতো নিম্নস্তরে পৌঁছে যায় যতো নিম্নস্তরে আকাশ হতে যমীন রয়েছে। এমন কি তার চেয়েও নিম্নস্তরে চলে যায়।