৪৩-৪৬ নং আয়াতের তাফসীর:
এখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আরো কিছু ক্ষমতার কথা বর্ণনা করেছেন, যা কেবলমাত্র তিনিই করতে সক্ষম। এ ব্যাপারে আর কেউ ক্ষমতাবান নয়। يُزْجِيْ অর্থ-হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া, سَحَابًا অর্থ খণ্ড খণ্ড মেঘ, يُؤَلِّفُ অর্থ খণ্ড খণ্ড মেঘগুলোকে একত্রিত করা। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা খণ্ড খণ্ড মেঘগুলো হাকিয়ে নিয়ে একত্রিত করে পাহাড়ের ন্যায় মেঘমালায় পরিণত করেন, অতঃপর তা থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। এছাড়া তিনি আকাশের শিলাস্তুপ হতে শিলা বর্ষণ করেন। এর দ্বারা কাউকে আঘাত হানেন আবার কাউকে এর আঘাত হতে রক্ষা করেন।
আবার কেউ এর অর্থ নিয়েছেন যে, এ আঘাত বলতে শিলাবৃষ্টি দ্বারা ক্ষেতের সব ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়া। আর যার ওপর রহমত করেন তাকে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হওয়ার আযাব থেকে বাঁচিয়ে দেন।
আর এ মেঘমালার মধ্যে এমন বিদ্যুৎ ঝলক রয়েছে যাতে মানুষের দৃষ্টিশক্তি প্রায় কেড়ে নেয়ার উপক্রম হয়। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(يَكَادُ الْبَرْقُ يَخْطَفُ أَبْصَارَهُمْطكُلَّمَآ أَضَآءَ لَهُمْ مَّشَوْا فِيْهِ لاق وَإِذَآ أَظْلَمَ عَلَيْهِمْ قَامُوْا ط وَلَوْ شَآءَ اللّٰهُ لَذَهَبَ بِسَمْعِهِمْ وَأَبْصَارِهِمْ ط إِنَّ اللّٰهَ عَلٰي كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ)
“মনে হয় যেন বিদ্যুৎ চমক তাদের দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নিবে, যখন তিনি তাদের জন্য একটু আলো (বিদ্যুৎ) প্রজ্জ্বলিত করেন তখন তাতে তারা চলতে থাকে এবং যখন তাদের ওপর অন্ধকারাচ্ছন্ন করেন তখন তারা দাঁড়িয়ে থাকে। আর যদি আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন নিশ্চয় তাদের শ্রবণ শক্তি ও তাদের দর্শন শক্তি হরণ করতে পারেন। নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সর্ব বিষয়ের ওপর শক্তিমান।” (সূরা বাকারাহ ২:২০)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তিনিই একমাত্র প্রতিপালক যিনি দিবস ও রাত্রির পরিবর্তন ঘটান। যার ফলে কখনো রাত বড় হয়, আবার কখনো দিন বড় হয়। অথবা কখনো দিনের উজ্জ্বলতাকে কালো করে দেন মেঘের অন্ধকার দিয়ে এবং রাতের অন্ধকারকে চাঁদের আলো দিয়ে বদলে দেন। যারা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন তাদের জন্য এগুলোর মাঝে শিক্ষা রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّ فِيْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَاٰيٰتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ)
“নিশ্চয়ই আসমান ও জমিনের সৃষ্টির মধ্যে এবং দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলী রয়েছে”। (সূরা আলি ইমরান ৩:১৯০)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তিনি বিভিন্ন প্রজাতির সকল জীব-জন্তু ও তরুলতা পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন। তাদের সৃষ্টির মূল উপাদান হল পানি, যে সকল প্রাণীর প্রজননের মাধ্যমে জন্ম হয় তারা বীর্য দ্বারা সৃষ্টি হয় যা হল পানি। আর যেসকল তরুলতা মাটি থেকে সৃষ্টি হয় তার মূল উপাদান হল মানুষের সেচ দেয়া পানি অথবা আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত পানি।
(فَمِنْهُمْ مَّنْ يَّمْشِيْ عَلٰي بَطْنِه)
অর্থাৎ যেমন সাপ পেটের ওপর ভর করে চলে, মানুষ ও অনেক প্রাণি দু’পায়ের ওপর চলাচল করে। গরু, ছাগল ও অনেক প্রাণি চার পায়ের ওপর চলাচল করে। তবে অনেক প্রাণি আছে যাদের পা চারের অধিক। সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা পরে বলেছেন, তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَا مِنْ دَآبَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا طَا۬ئِرٍ يَّطِيْرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلَّآ أُمَمٌ أَمْثَالُكُمْ ط مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتٰبِ مِنْ شَيْءٍ ثُمَّ إِلٰي رَبِّهِمْ يُحْشَرُوْنَ)
“ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণশীল যত জীব আছে এবং উভয় ডানার সাহায্যে উড্ডয়নশীল যত পাখী আছে সবই তাদের মত একটি জাতি। কিতাবে (লাওহে মাহফূজে) কোন কিছুই আমি বাদ দেইনি। অতঃপর স্বীয় প্রতিপালকের দিকে তাদেরকে একত্র করা হবে।” (সূরা আনআম ৬:৩৮)
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ইচ্ছামত যা খুশি তাই সৃষ্টি করতে পারেন। এগুলো দেখে যারা সুপথ পাওয়ার তারা সুপথ পায়, আর যারা গোমরাহ হওয়ার তারা গোমরাহ হয়ে যায়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সকল বস্তুর সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
২. আকাশে শিলাস্তুপ রয়েছে।
৩. দিবা-রাত্রি পরিবর্তনশীল।
৪. পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রকার প্রাণী রয়েছে যারা পেট দিয়ে, দু’পা দিয়ে আবার কোন প্রজাতি চার পা দিয়েও চলাফেরা করে।